জন্মের আগেই শিশুর শরীরে ত্রুটি শনাক্ত করার প্রযুক্তি মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে৷ ডাউন সিন্ড্রোমের আশঙ্কা থাকলে জার্মানিতে মায়েরা সাধারণত গর্ভপাতের পথ বেছে নেন৷ নতুন এক পরীক্ষাও এই বিতর্ককে আরও উসকে দিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
আখেন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে জন্মের আগে শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন ড. টামে গ্যোকে৷ চিকিৎসাবিদ্যার অগ্রগতির ফলে এখন তিনিও আগেভাগেই রোগ প্রায় নিখুঁতভাবে শনাক্ত করতে পারেন৷ এখন তিনি জেনেটিক বিশ্লেষণ প্রক্রিয়াও কাজে লাগাচ্ছেন৷
গর্ভপাত৷ অনাকাঙ্খিত সন্তান না নিতে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই চলছে ভ্রুণ হত্যা৷ আর্জেন্টিনায় গর্ভপাত নিষিদ্ধ৷ তারপরও গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন, অনেকে আর কোনোদিন মা হতে পারছেন না৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
স্বাধীনতা...
‘শরীরটা আমার নিজের’ – আর্জেন্টিনার মেয়েরা এখনো স্বাধীনভাবে এ কথা ভাবতে পারেন না৷ গর্ভপাত সেখানে নিষিদ্ধ৷ তা সত্ত্বেও গর্ভপাত চলছে৷ ২৭ বছর বয়সি ক্যামিলাও গর্ভপাত ঘটিয়েছেন, তারপর নিজের ঘাড়ে এঁকেছেন উল্কি, সেখানে লেখা, ‘স্বাধীনতা’৷ তাঁর এ ছবি ‘১১ সপ্তাহ, ২৩ ঘণ্টা, ৫৯ মিনিট – আর্জেন্টিনায় অবৈধ গর্ভপাত’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে দেখানো হচ্ছে৷
ছবি: Goméz Verdi, Franz, Meurice
নববর্ষের প্রাক্কালে...
এ ছবিতে মারা নামের একটি মেয়ের জীবনের গল্প বলার চেষ্টা করা হয়েছে৷ ২১ বছর বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে মারাকে তাঁর বয়ফ্রেন্ডের পরিবার, ‘গর্ভপাত ঘটালে আমরা অভিযোগ দায়ের করবো’ – বলে শাসিয়েছিল৷ হুমকি দিলেও ছেলেবন্ধুর সটকে পড়া কিন্তু তাঁরা ঠেকাননি৷ সঙ্গী চলে যাওয়ার ১২ সপ্তাহ পর বাধ্য হয়ে মারা ব্যাপারটি খুলে বলেন মাকে৷ তারপর ২০০২ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবৈধভাবে গর্ভপাত ঘটিয়ে আবার নতুন জীবন শুরু করেন মারা৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
পুরুষেরও ভোগান্তি
গর্ভপাত অনেক সময় পুরুষদেরও বিপদে ফেলে৷ ফোটোগ্রাফার লিসা ফ্রানৎস, গুয়াদালুপে গোমেজ এবং লেয়া মরিসের কাজগুলো তেমন গল্পগুলোই তুলে ধরছে৷ পেদ্রো নামের এই তরুণ গর্ভপাতের ব্যাপারে তাঁর গার্লফ্রেন্ডকে শুধু সমর্থনই করেননি, তাঁকে ক্লিনিকেও নিয়ে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু গর্ভপাত ঘটানোর পর বিষয়টি নিয়ে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে কথাও বলতে পারেননি৷ সবার আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল, পেদ্রো যেন খুব বড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছেন!
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
বাড়িতেই গর্ভপাত
অন্তঃসত্ত্বার পেটে ঘুষি মেরে ভ্রুণ হত্যা, তারপর কাপড়ের হ্যাঙার আর কাপড় সেলাই করার সুঁচ ব্যবহার করে ‘জঞ্জাল’ সাফ করে দেওায়া – আর্জেন্টিনার অনেক অঞ্চলে এভাবেই ঘরে ঘরে হয় গর্ভপাত৷ কোনো ডাক্তার বা নার্স নয়, ঘরের মেয়েরাই এভাবে কাজ সারেন৷ ফলে অকালে ঝরে যায় অনেক নারীর প্রাণ৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
বছরে অন্তত একশ জন...
গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে আর্জেন্টিনায় প্রতিবছর ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজারের মতো নারী জটিল সমস্যায় পড়ে হাসপাতালে ভর্তি হন৷ তাঁদের মধ্যে কমপক্ষে একশ জন সন্তানের আগমন রুখতে গিয়ে নিজেদেরই মৃত্যু ডেকে আনেন৷ আর্জেন্টিনার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মনে করে, বিশেষত দরিদ্র অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে নিজেদের জীবনও বিপন্ন করছেন মেয়েরা৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
১৫০০ ইউরোয় মুশকিল আসান
গর্ভপাত আইনত দণ্ডনীয় হলেও আর্জেন্টিনায় টাকা দিলে এ কাজ সহজেই হয়৷ টাকাটা অবশ্য বেশিই লাগে, কোনো কোনো ডাক্তার এ জন্য ১০ হাজার পেসো বা ১৫০০ ইউরোও নিয়ে থাকেন গর্ভপাত ঘটাতে ইচ্ছুক নারীদের কাছ থেকে৷ জার্মান কারদোসো একজন সার্জন৷ তবে আর্জেন্টাইন ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হয়েও তিনি লড়ছেন গর্ভপাতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার দাবির পক্ষে৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
নারীর পাশে নারী
‘ডিম্বাশয় থেকে তোমার গোলাপরেণু সরিয়ে নাও’ – এভাবেই গর্ভপাতকে আইনসিদ্ধ করানোর আন্দোলনের পক্ষে সোচ্চার আর্জেন্টিনার নারী অধিকার সংগঠন ‘লা রেভুয়েলতা’৷ ক্যাথলিক খ্রিষ্টান প্রধান দেশ আর্জেন্টিনায় বেশ কিছু মানবাধিকার সংগঠন এ দাবির পক্ষে৷ ‘লা রেভুয়েলতা’ শুধু দাবি আদায়ে সোচ্চার নয়, গর্ভপাতে ইচ্ছুক নারীদের উপযুক্ত পরামর্শ দিয়ে গর্ভপাতে সহায়তাও করে তারা৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
দিকনির্দেশনার অভাব
এলুনের বয়স এখন ২১৷ ‘লা রেভুয়েলতা’-র সহায়তায় তিনি গর্ভপাত ঘটিয়েছেন৷ ‘কখন মা হবো, এ সিদ্ধান্ত আমিই নেবো’ – এলুনে এমন কথা বলেছেন ঠিকই, তবে এতদিনে তিনি জেনে গেছেন যে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গর্ভপাত ঘটানোও তাঁর দেশে খুব একটা নিরাপদ নয়৷ ডাক্তাররা ওষুধ কখন, কিভাবে খেতে হবে তা না বলেই বিক্রি করে দেন৷ ফলে অজ্ঞতার ঝুঁকি থেকেই যায়, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সহায়তা নিতে চেয়েও মৃত্যু এড়াতে পারেন না অনেক নারী৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
জেলখানায় গর্ভপাত
সোনিয়া সানচেজ ছিলেন পতিতা৷ অবৈধভাবে পতিতাবৃত্তির অভিযোগে জেল খেটেছেন অনেকবার৷ কারাবন্দি অবস্থায় গর্ভপাতও ঘটিয়েছেন৷ এক খদ্দের তাঁর মা হতে চাওয়া, না চাওয়ার স্বাধীনতাকেও কিনে নিয়েছিলেন৷ পতিতালয়ের মালিককে বাড়তি টাকা দেয়ায় কনডম ছাড়াই তিনি মিলিত হতেন৷ ফলশ্রুতিতে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন সোনিয়া৷ এই তরুণী এখন নেমেছেন গর্ভপাতের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে৷ ইতিমধ্যে সাফল্যের দেখাও পেয়েছেন৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
আর নীরবতা নয়...
ছবিতে দেখা যাচ্ছে মনিকা নামের এক নারীর শরীরের অনাবৃত একটি অংশ৷ লিসা ফ্রানৎস, গুয়াদালুপে গোমেজ এবং লেয়া মরিসের তোলা ছবি নিয়ে ‘১১ সপ্তাহ, ২৩ ঘণ্টা, ৫৯ মিনিট – আর্জেন্টিনায় অবৈধ গর্ভপাত’ শীর্ষক যে প্রদর্শনী চলছে, সেখানে এ ছবিটিও দেখানো হচ্ছে৷ নিজের এমন একটা ছবি দেখানোর অনুমতি দেয়া মনিকা গর্ভপাতের পক্ষে নিজ বক্তব্য তুলতে গিয়ে শুধু বলেছেন, ‘এটা আমার দেহ’৷
ছবি: Lisa Franz, Guadalupe Gómez Verdi, Léa Meurice
10 ছবি1 | 10
‘প্রি-নাটাল ডায়াগনোসিস'-এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি খোঁজ পড়ে ‘ডাউন সিনড্রোম-এর৷ ভবিষ্যৎ সন্তানের শরীরে এটা ধরা পড়লে জার্মানিতে প্রায় ৯০ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা নারী গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নেন৷ ড. টামে গ্যোকে বলেন, ‘‘এটা একটা কঠিন পরিস্থিতি৷ কারণ গর্ভবতী নারীর অবশ্যই নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেবার, নিজের ভবিষ্যৎ স্থির করার অধিকার রয়েছে৷ আমাদেরও সেটা মেনে নিতে হয়৷ অন্যদিকে আমাদের মূল কাজ জীবন রক্ষা করা – অনেকটা ভাবী শিশুর হয়েও ওকালতি করা৷''
ফার্স্ট ট্রিমেস্টার স্ক্রিনিং-এর ক্ষেত্রেও ডাউন সিন্ড্রোম রোগের ঝুঁকি নির্ণয় করা হয়৷ এর জন্য আলট্রা-সাউন্ড ও রক্ত পরীক্ষা করা হয়৷ ড. গ্যোকে বলেন, ‘‘ফার্স্ট ট্রিমেস্টার স্ক্রিনিং-এর আলট্রা-সাউন্ড পরীক্ষায় আমরা মূলত শিশুর উচ্চতা মেপে দেখি৷ তার আকার ও অবয়ব ভালো করে লক্ষ্য করি৷ নিউকাল স্ক্যান করাও খুব জরুরি৷ নাকের হাড়ের মতো অঙ্গগুলির উপরও নজর রাখতে হয়, যাতে ভবিষ্যতে ঝুঁকি বিশ্লেষণের সময় এগুলিও বিবেচনা করা যায়৷''
নাকের হাড় ছোট হলে সেটা ডাউন সিন্ড্রোমের ইঙ্গিত হতে পারে৷ সেইসঙ্গে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ হৃদযন্ত্রের ত্রুটিও এই পরীক্ষায় ধরা পড়ে৷
ডাক্তাররা অন্তঃসত্ত্বা নারীর রক্ত পরীক্ষায় দু'রকম বায়োকেমিকাল ভ্যালু খোঁজেন৷ সেই পরীক্ষা থেকেও আগাম ধারণা পাওয়া যায়৷ ড. গ্যোকে বলেন, ‘‘প্রায় ৯৫ শতাংশ নারীর ফার্স্ট ট্রিমেস্টার স্ক্রিনিং-এর ক্ষেত্রে কোনো অস্বাভাবিক ফল পাওয়া যায় না৷''
পরীক্ষায় কোনো শিশুর ক্রোমোজোমের ত্রুটির ঝুঁকি ধরা পড়লে অ্যামনিয়টিক ফ্লুইড পরীক্ষায় স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়৷ কিন্তু সেটা করতে গেলে গর্ভপাতের ভয় থাকে৷ ড. গ্যোকে বলেন, ‘‘তখন আমরা দেখি, সূচ কী ভাবে অ্যামনিয়টিক ফ্লুইড পর্যন্ত ঢুকে গেছে৷ এখানে সমস্যা হলো কিছু ক্ষেত্রে শিশুও জখম হতে পারে৷''
জার্মানিতে বিদেশি বংশোদ্ভূত শিশুরা
ফটোগ্রাফার মার্টিনা হেন্সকে ও লেখক টাটিয়ানা লাইশারিং জার্মানির বিভিন্ন জায়গা স্কুল ঘুরে বিদেশি বংশোদ্ভূত শিশুদের ছবি তুলেছেন৷ এই ছবিঘরে সেই শিশুরাই জানাচ্ছে ওরা কিভাবে জার্মানির জীবনধারার সাথে একাত্ম বোধ করে৷
ছবি: Martina Henschke
আমার দেশ খুবই সুন্দর!
লাউরা ওর নিজের দেশ পর্তুগালকে নিয়ে খুব গর্ব বোধ করে৷ ‘‘টেলিভিশনে পর্তুগালের ছবি দেখে আমার সেখানে যেতে ইচ্ছে করে৷’’ লাউরার জন্ম জার্মানিতে হলেও ও পর্তুগালে গিয়ে পর্তুগিজ ভাষা শিখেছে৷ তবে ওর বাবা ওকে পর্তুগিজে প্রশ্ন করলে লাউরা জার্মানে উত্তর দেয়৷ জার্মানিতে জন্ম নেওয়া বেশিরভাগ বাচ্চার ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য৷ ঠিক এ বিষয়টিই হিল্ডেসহাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রদর্শনীতে দেখানো হয়েছে৷
ছবি: Martina Henschke
‘সোমালিয়া আমার জীবনের অঙ্গ’
দিকার ভাষায়, ‘‘আমি সোমালীয়, ইংরেজি, জার্মান ভাষা জানি, জানি কিছুটা ফ্রেঞ্চ, আরবী এবং অল্প কিছুটা তুর্কি ভাষাও৷’’ দিকার মতে, ভাষগুলোর মধ্যে কিছুটা মিল রয়েছে৷ তাছাড়া ও এটাও লক্ষ্য করছে যে, ওর পরিবারের মানুষজন আফ্রিকান এবং আরবী – এই দুই ভাষা মিলিয়ে কথা বলে৷
ছবি: Martina Henschke
মাঝে মাঝে অসুবিধা হয়
বিভিন্ন ভাষা জানার যে বিশেষ সুবিধা রয়েছে, সে কথাই বোঝানো হয়েছে হিল্ডেসহাইম বিশ্ববিদ্যলয়ের এই প্রদর্শনীটিতে৷ ফেরিদে অনেকগুলো ভাষা শোনার মধ্য দিয়েই বেড়ে উঠছে৷ ওর ভাষায়,‘‘জার্মান এবং তুর্কি ভাষা আমি জানি আর ইংরেজি জানি সামান্য, স্কুলে শিখছি৷’’ মায়ের সাথে ফেরিদে খুব কমই তুর্কি ভাষায় কথা বলে৷ ভাই-বোনদের সাথে তুর্কি/জার্মান দুটোই আর তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান বন্ধুদের সাথে শুধু জার্মান ভাষায় কথা বলে সে৷
ছবি: Martina Henschke
খেলার মাঠে ভাষা চর্চা
বাড়ির কাছেই খেলার মাঠে বিভিন্ন দেশের মানুষ একসাথে হলে তাদের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা হয়৷ ইব্রাহিমের কিন্তু এভাবেই ভাষা শেখার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে৷ ইব্রাহিম বসনীয় এবং জার্মান – এই দুই ভাষার মধ্য দিয়েই বড় হচ্ছে৷ তবে ইটালিয়ান ভাষা শিখতে ইব্রাহিম খুবই আগ্রহী, কারণ ওর বেশিরভাগ বন্ধুই যে এই ভাষায় কথা বলে!
ছবি: Martina Henschke
‘আমি কিন্তু সুপারম্যান হতে চাই’
রামসেস বাড়িতে ওর মায়ের সাথে স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলে৷ তবে ওর দুটো পাসপোর্ট – জার্মান এবং কলোম্বিয়ান৷ রামসেস-এর ভাষায়, ‘‘আমার জন্ম যেখানেই হোক না কেন, আমি মনে করি আমি জার্মানিতেই জন্মেছি, ভাষা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই৷’’ তবে ওর সমস্ত ভাবনা জুড়ে রয়েছে শুধু একটাই, রামসেস-এর ভাষায়, ‘‘আমি সুপারম্যান হয়ে আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখি৷’’
ছবি: Martina Henschke
স্বপ্ন দুই ভাষায়ই দেখি
এরমালের জন্ম জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট শহরে৷ ও এখন ক্লাস ওয়ানে পড়ে৷ এরমানের সবচেয়ে ভালো লাগে বই পড়তে আর অঙ্ক করতে৷ ‘‘আমার নিজের কোনো বই নেই, তবে আমি প্রতি সপ্তাহেই লাইব্রেরি থেকে একসাথে অনেকগুলো ডাইনোসরাসের বই নিয়ে আসি৷’’ এরমাল ওর বাবা-মায়ের সাথে বেশিরভাগ সময় আলবেনীয় ভাষায় কথা বললেও ও স্বপ্ন দেখে জার্মান এবং আলবেনীয় ভাষাতে৷ ‘‘আমি তো এর চেয়ে বেশি ভাষা জানি না’’, বলে এরমাল৷
ছবি: Martina Henschke
‘‘আমি কিন্তু কিছুটা জার্মান’’
হাজার নামের এই মেয়েটির স্বপ্ন যে, ও বড় হয়ে ডাক্তার অথবা উকিল হবে৷ হাজার ওর ভাই-বোন এবং স্কুলের বন্ধুদের সাথে জার্মান ভাষায় কথা বলেলেও বাবা-মায়ের সাথে সে কথা বলে বার্বার ভাষায়৷ স্কুলে অবশ্য ইংরেজি শিখছে হাজার৷ ওর জন্ম জার্মানিতে, তবে বাবা-মা এসেছেন মরক্কো থেকে৷ হাজার নিজের সম্পর্কে বলে, ‘‘আমি মরোক্কান হলেও এখন অবশ্যই কিছুটা জার্মান৷’’
ছবি: Martina Henschke
‘আমার বন্ধুরা টিউনিশিয়ায়’
ইহেব্স-এর বাবা এসেছে টিউনিশিয়ায় থেকে আর মা ও নানা জার্ডান থেকে৷ ইহেব্স-এর আরবী ভাষা জানা থাকায় টিউনেশিয়ায় অনেকের সাথে ওর বন্ধুত্ব হয়েছে৷ ওর ভাষায়, ‘‘আমি আসলে টিউনেশিয়ান, জার্মান নই৷’’ ওর ধারণা ও যেহেতু সবসময় জার্মান ভাষায় কথা বলে না, তাই সে জার্মান নয়৷ ভাষার মাধ্যমেই নিজের পরিচয় দিতে পছন্দ করে ইহেব্স৷ তবে ও সারা জীবন পরিবারের সাথে জার্মানিতেই কাটাতে চায়৷
ছবি: Martina Henschke
সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে
ইওয়ানে-র প্রিয় বিষয় জার্মান ভাষা আর সাঁতার কাটা৷ ওর মতে, জার্মান ভাষাটাই ও ভালো জানে৷ এর কারণ, ইওয়ানে-র জন্ম জার্মানিতে৷’’ ও কখনো থাইল্যান্ডে না গেলেও মায়ের সাথে থাই ভাষাতেই কথা বলে৷ তবে ওদের পরিবারের লোকজন বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে৷ ফলে সবার সাথে যোগাযোগ রাখাটা প্রায় সম্ভবই হয়ে ওঠে না৷ ‘‘আমার ‘কাজিন’ থাকে লন্ডনে, আর আমি জার্মানিতে৷ কাজেই আমরা একে অপরের সাথে নিয়মিত কথা বলতে পারি না৷
ছবি: Martina Henschke
জায়গা পরিবর্তন
ক্রিস্টিয়ান প্রথমে নাস্তা করে, তারপর দাঁত ব্রাশ করে তার দিন শুরু করে৷ পরে আবারো বিছানায় শুয়ে আরাম করে একটু গড়িয়ে নেয়৷ আচ্ছা, ‘‘জার্মান বলতে আসলে কাদের বোঝায়? যাঁদের জন্ম জার্মনিতে আর যাঁদের বাবা-মা জার্মান, তাঁদের?’’ প্রশ্ন তার৷ এর ব্যাতিক্রমও রয়েছে কিন্তু বলে সে৷ ক্রিস্টিয়ান লক্ষ্য করেছে, অনেকেই অন্যান্য দেশ থেকে জার্মানিতে আসেন, টাকা-পয়সা রোজগার করে ভালোভাবে জীবন কাটাতে৷
ছবি: Martina Henschke
10 ছবি1 | 10
সম্প্রতি অ্যামনিয়টিক ফ্লুইড পরীক্ষার বিকল্প খুঁজে পাওয়া গেছে৷ তখন থেকে জার্মানিতে ট্রাইসোমি রক্ত পরীক্ষা শুরু হয়েছে৷ ভাবী বাবা-মায়েদের এর জন্য প্রায় ৬৪০ ইউরো গুনতে হয়, যা স্বাস্থ্য বিমার আওতার বাইরে৷ ড. গ্যোকে বলেন, ‘‘ফিটাল ডিএনএ টেস্টের ক্ষেত্রে মায়ের শরীরে সূচ ঢুকিয়ে রক্ত বার করা হয় না৷ এই রক্তে শিশুর কোষের অংশ থাকে৷ তা পরীক্ষা করে জানা যায় – তার ক্রোমোজোমে কোনো অস্বাভাবিক বিষয় ধরা পড়ছে কি না৷''
এই রক্ত পরীক্ষার সমালোচকদের আশঙ্কা, শিশুর শরীরে ডাউন সিন্ড্রোম ধরা পড়লে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের উপর গর্ভপাতের জন্য চাপ বাড়বে৷ কারণ এই পরীক্ষা খুবই সহজ৷ ড. গ্যোকে বলেন, ‘‘বিষয়টি অত্যন্ত ভেবে চিন্তে মূল্যায়ন করতে হবে৷ আমার মতে, বিচ্ছিন্নভাবে শুধু এই পরীক্ষার উপর নির্ভর করলে চলবে না৷ এতে শুধু ক্রোমোজোমের অনুপাত পরীক্ষা করা যায়৷ তার সঙ্গে আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ত্রুটি ধরা পড়বে, যা আরও ঘনঘন দেখা যায়৷''
শুরু থেকেই হাসপাতালে ট্রাইসোমি রক্ত পরীক্ষার চাহিদা বাড়ছে৷ প্রতিবন্ধীদের সংগঠন বিষয়টি সম্পর্কে অত্যন্ত সন্দিহান৷ কারণ অনেক অন্তঃসত্ত্বা নারী ডাউন সিন্ড্রোম সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন নন৷ তখন তাঁদের কাছে মনে হয়, গর্ভপাতই একমাত্র পথ৷