জার্মানির মৌলিক আইন
৩১ মে ২০১৭![Das deutsche Grundgesetz Englisch](https://static.dw.com/image/38943229_800.webp)
কোন ধরনের নৈতিক মূল্যবোধ, কী কী আইন বা বিধি এখনকার জার্মান সমাজের মূলভিত্তি হিসাবে কাজ করে? প্রাথমিক ধারণার জন্য ‘গ্রুন্ডগেজেৎস' বা ‘বেসিক ল' দেখে নিতে পারেন৷ ১৯৪৯ সালের ২৩ মে এ আইন কার্যকর হয়৷ এখানে কিছু দৃষ্টান্ত দেয়া হলো৷
মানবসত্ত্বার মর্যাদা অগ্রাধিকারে
২৩ মে জার্মানির মৌলিক আইনের ৬৮তম জন্মদিন৷ এই আইনের ১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মানবসত্ত্বার মর্যাদা অগ্রাধিকারে৷ মানবসত্ত্বার মর্যাদা সর্বোচ্চে স্থান পাবে৷ জনগণের সুরক্ষা প্রদান করে জার্মানি৷ সকল মানুষ সমান৷ মানবসত্ত্বার মর্যাদাই ধর্মীয় স্বাধীনতা, সমতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার ভিত্তি৷ মানবসত্ত্বার মর্যাদা লঙ্ঘিত হলে যে কেউ তার অধিকারের জন্য মামলা করতে পারেন৷ যদি কখনো সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সাথে মানবসত্ত্বার মর্যাদার সংঘাত হয়, তাহলে মর্যাদাই প্রাধান্য পাবে৷
অনুচ্ছেদ-১
(১) মানবসত্ত্বার মর্যাদা অগ্রাধিকারে৷
সকলের সমান অধিকার
আইনে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে৷ অর্থাৎ আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান বিবেচিত হবেন, নর-নারী নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে৷ জার্মানিতে ভোটাধিকার প্রয়োগ, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাগ্রহণে নারীর অধিকার নিশ্চিত করা রয়েছে৷ এরপরও লিঙ্গ সমতা অর্জনে এখনো অনেকদূর যেতে হবে৷ কখনো কখনো নারীকে কম পারিশ্রমিক দেয়া হয়, কখনো নারী একই সুযোগ পান না৷ সংসদকে এই অধিকারকে বাস্তবায়ন করতে হবে৷ জার্মান মৌলিক আইন এর সুরক্ষা দেয়৷
অনুচ্ছেদ-৩
(১) সবাই আইনের দৃষ্টিতে সমান বিবেচিত হবে৷
ধর্ম পালনে স্বাধীনতা
জার্মানিতে কোনো রাষ্ট্রীয় ধর্ম নেই৷ যে কেউ নিজের মতো করে ধর্ম বেছে নিতে পারবে এবং ব্যক্তি জীবনে তা পালন করতে পারবে৷
সকলেরই নিজ ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে৷ তবে তারপরও ধর্মীয় প্রতীকের ব্যবহার মাঝে মাঝে বিতর্কের জন্ম দেয়৷ শিক্ষকরা মাথায় হিজাব পরতে পারবেন কিনা, তা সকল স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই ঠিক করতে পারবে৷ কিন্তু এক্ষেত্রে সাধারণ নিষেধাজ্ঞা অসাংবিধানিক বিবেচিত হবে৷
অনুচ্ছেদ ৪
(১) বিশ্বাস ও নীতিবোধের স্বাধীনতা, ধর্মীয় বা দার্শনিক বিশ্বাসের স্বাধীনতা অগ্রাধিকার পাবে৷
মত প্রকাশের স্বাধীনতা
জার্মানিতে মৌলিক আইনের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে৷ তবে এই সুযোগ কুৎসা ও পরনিন্দা করা যাবে না৷ হলোকস্টকে অস্বীকার করারও সুযোগ নাই৷
বলে, লিখে, ছবিতে সকলের নিজ মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে৷ মুক্তভাবে তিনি তার মত প্রচার করতে পারেন৷ জার্মানিতে সকলের কথা বলার স্বাধীনতা রয়েছে৷ কিন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতার মানে যে কোনো কিছু বলে দেয়া নয়৷ ঘৃণা ছড়ানো, হলোকস্ট অস্বীকার করা, অন্যান্য মিথ্যা এবং অপমান শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ কখনো কখনো আদালত মত প্রকাশের স্বাধীনতার সীমা নির্ধারণ করে দেবেন৷ অনুচ্ছেদ ৫ (১) অনুযায়ী সকলে মুক্তভাবে কথায়, লিখে বা ছবিতে মত প্রকাশ করতে পারেন এবং তা প্রচার করতে পারেন৷
নাগরিকত্ব
জার্মান পিতা-মাতার ঘরে জন্মগ্রহণকারী শিশুও জার্মান৷ এটা সাধারণ নিয়ম হলেও অন্য কিছুও হতে পারে৷ এই জন্ম-অধিকার দাবি করারও নিয়ম রয়েছে৷
যার জার্মান নাগরিকত্ব রয়েছে তিনিই জার্মান৷ পিতা-মাতার মধ্যে অন্তত একজন জার্মান হলে তিনি জার্মান নাগরিকত্ব পেতে পারেন৷ মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার জার্মানিতে থাকা সকলের জন্য প্রযোজ্য৷ কিন্তু কেবল জার্মান নাগরিকরাই ভোট দিতে পারবেন এবং সরকারি দপ্তরে কাজ করতে পারবেন৷ জার্মানিতে আট বছর বসবাস, ভাষা ও আইন-কানুন জানা থাকলে জার্মান পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যায়৷
অনুচ্ছেদ ১১৬
(১) জার্মান তিনিই, যার জার্মান নাগরিকত্ব রয়েছে৷
জনগণের ক্ষমতা
রাষ্ট্রীয় সকল কর্তৃত্ব জনগণ কর্তৃক প্রদত্ত৷ জার্মানি একটি গণতান্ত্রিক দেশ৷ এখানে সিদ্ধান্ত হবে অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে৷ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আইন বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগের মধ্যে ভাগ করা আছে৷ সংবিধান লঙ্ঘণ করে এমন কোনো সিদ্ধান্ত সংসদ নিলে জার্মানির সর্বোচ্চ আদালত তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রের প্রধান৷ তিনি বিদেশে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন৷ চ্যান্সেলর নীতি নির্ধারণ করেন৷ তিনি সরকার প্রধান৷ সংসদ কর্তৃক তিনি নির্বাচিত হবেন৷ জার্মান সংসদ নির্বাচিত হবে জনগণের ভোটে৷
অনুচ্ছেদ ২০
(২) রাষ্ট্রীয় সকল কর্তৃত্ব জনগণ কর্তৃক প্রদত্ত
চ্যান্সেলর মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগ দিতে পারেন৷ কিন্তু বিচারকদের চাকুরিচ্যূত করতে পারেন না৷ মৌলিক আইনে চ্যান্সেলর, রাষ্ট্রপতি, সংসদ এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট করে বলা আছে৷ জার্মানি যে গণতান্ত্রিকভাবে চলবে, সেটাও সেখানে বলা আছে৷
হেলেনা কাশেল/এসএন