জার্মানির রুর অঞ্চলে ‘‘বিশ্ব থিয়েটার’’ উৎসব
২০ জুলাই ২০১০এ বছর ম্যুলহাইম ও এসেন শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই উৎসব৷ এসেছিলেন বিশ্বের নানা দেশের শিল্পী ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী৷ ৩০ শে জুন থেকে ১৭ই জুলাই পর্যন্ত জার্মানির রুর অঞ্চলকে সরগরম করে রেখেছিল বিশ্ব থিয়েটার উৎসব৷ এবার রুর অঞ্চল ইউরোপের অন্যতম সাংস্কৃতিক রাজধানী৷ সেই আয়োজনের অংশ হিসেবেই বিশ্ব থিয়েটার৷ যোগ দিয়েছিলেন ২৫টি দেশের শিল্প ও সংস্কৃতি অঙ্গনের পুরোনো ও নতুন শিল্পীরা৷ উপস্থাপন করেছেন তাঁদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির ভান্ডার৷ পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার একটা সুযোগ এনে দেয় এই থিয়েটার উৎসব৷ দর্শকরা পেতে পারেন ভিন্ন দেশের ভিন্ন সংস্কৃতির স্বাদ৷
উৎসবের পরিচালক বেলজিয়ামের ফ্রি লেইসেন এক থিয়েটার পাগল মানুষ৷ অবশ্য চিরাচরিত থিয়েটারের বাইরে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও প্রকল্প গড়ে তোলায় ব্যস্ত তিনি৷ স্বদেশ বেলজিয়াম থেকে শুরু করে আরবের বিভিন্ন দেশে তাঁর পদচারণা৷ প্রিটোরিয়া, বুয়েনস আইরেস বা টোকিওর তরুণ শিল্পীদের কাজকর্ম, তাদের থিয়েটার সম্পর্কে ব্যাপক উৎসাহ তাঁর৷ জার্মান থিয়েটার ও মিউজিয়ামগুলি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বহুদিন ধরে কাজ করলেও ফ্রি-র কাছে তা অসম্পূর্ণ মনে হয়৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘পশ্চিমি সংস্কৃতির বাইরে ভিন্ন দেশের সমকালীন সংস্কৃতির সঙ্গে খুব কমই পরিচিত হয় জার্মানির মানুষ৷'' তাই ফ্রি লেইসেন চুপ করে বসে থাকেননি৷ ২৫টি দেশের ৩২টি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি রুর অঞ্চলের বিশ্ব থিয়েটার উৎসবে৷ সব মিলিয়ে এসেছিলেন ৩৮৫ জন শিল্পী৷ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বলে তাঁর পক্ষে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা সহজ হয়েছে৷ জার্মান দর্শকদের দৃষ্টির সীমা প্রসার করতে চান তিনি৷ তাঁরা যেন মিশর, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, রাশিয়া এমনকি সামোয়ার সংস্কৃতির সঙ্গেও পরিচিত হতে পারে, এটাই লেইসেনের লক্ষ্য৷ তিনি বলেন, ‘‘এই উৎসবে যে কথাটি বার বার উঠে এসেছে, তা হল ‘ভিন্ন চোখে দেখা'৷ কয়েক শ বছর ধরে আমরা শেক্সপিয়ার বা বাইবেল নিয়ে বিভিন্ন দেশে গিয়েছি এবং সেখানকার মানুষকে বোঝাবার চেষ্টা করেছি, ‘এগুলো পড়ুন তাহলেই আপনি সভ্য হয়ে যাবেন'৷ কিন্তু সেসব দেশের মানুষরা কী রকম, তাদের সাহিত্য, সংগীত ও ইতিহাসই বা কেমন, সে সম্পর্কে জানার জন্য কোনো সময় ব্যয় করিনি আমরা৷''
শুধু থিয়েটার নয়, নাচ, অপেরা, ছায়াছবি, চিত্রকলা সংস্কৃতি জগতের প্রায় সব কিছুরইআয়োজন ছিল এই উৎসবে৷ আর এসব অনুষ্ঠিত হয়েছে থিয়েটার ও সিনেমা হলে, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বা পরিত্যক্ত কোনো কয়লা খনির অফিস ঘরে৷
উৎসবের মূল আকর্ষণ ছিল মনটেজুমা অপেরার মঞ্চায়ন৷ ১৭৫৫ সালে জার্মানির কার্ল হাইনরিশ গ্রাউন রচিত এই অপেরায় মেক্সিকোতে স্প্যানিশ দখলদারির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, দেখানো হয়েছে, কী ভাবে আদিবাসী অ্যাজটেক জাতির রাজার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে৷ মেক্সিকোর নির্দেশক ক্লাউডিও কুরির পরিচালনায় ও ল্যাটিন অ্যামেরিকার তরুণ শিল্পীদের অভিনয় ও সংগীতে অনবদ্য হয়ে উঠেছিল অপেরাটি৷ এ প্রসঙ্গে এক দর্শক জানান, ‘‘চীনের কিংবা ল্যাটিন অ্যামেরিকার শিল্পীরা ইউরোপীয় সংগীত এত সুন্দর ভাবে আয়ত্ত করতে পারায় বলা যায়, সংস্কৃতির প্রসার ঘটেছে৷ এখন আর বলা যায়না যে, এই সংস্কৃতিটা আমাদের৷ এই ধরনের অপেরা সংগীতের বিকাশ হয়েছে ইউরোপে৷ কিন্তু এখন তা সবারই৷ ভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির মানুষরা ইউরোপীয় সংস্কৃতিটা এত ভাল ভাবে তুলে ধরতে পারায়, বলা যায় এটি এখন বিশ্ব সংগীতে পরিণত হয়েছে৷''
থাইল্যান্ডের ছায়ানাট্য কিংবা লিথুয়েনিয়ান ভাষান্তরে আন্তন চেখভের ড্রামা -চেরি বাগান দর্শকদের মুগ্ধ করেছে৷ এক দর্শক বলেন, ‘‘মিশরের অ্যানিমেশন ফিল্মটি আমার দেখতেই হবে৷ এটা খুব উত্তেজনাকর৷ আবার আমার একটু শংকাও হয়, যদি এখানকার প্রতিষ্ঠিত থিয়েটার দেখার জন্য আর টাকা না থাকে? স্থানীয় থিয়েটারও দেখতে যাই আমি আগ্রহ ভরে৷'' ফ্রি লেইসেনের এতে আপত্তি থাকার কথা নয়৷
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক