জার্মানির রুশ নীতির উপর শ্র্যোডারের প্রভাব নিয়ে সংশয়
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিনের বন্ধু প্রাক্তন জার্মান চ্যান্সেলর শ্র্যোডার কি জার্মানির রাশিয়া নীতির উপর প্রভাব রাখছেন? শ্র্যোডারের বিতর্কিত মন্তব্য ও সরকারের প্রধান শরিক দলের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের কারণে এ প্রশ্ন উঠছে৷
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সামরিক তৎপরতা সত্ত্বেও জার্মানি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের প্রতি তেমন কড়া মনোভাব দেখাচ্ছে না, এমন অপবাদ ঘোঁচাতে তৎপর হয়ে উঠেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস৷ ওয়াশিংটন সফরে গিয়ে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সে দেশের সংসদের প্রভাবশালী সদস্যদের কাছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান ও পশ্চিমা বিশ্বের ঐক্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন৷ ইউরোপেও জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে শলৎস সেই একই বার্তা দেবার উদ্যোগ নিচ্ছেন৷
কিন্তু জার্মান চ্যান্সেলরের যাবতীয় উদ্যোগের উপর কিছুটা কালো ছায়া ফেলছে তারই এক পূর্বসূরি ও দলের নেতার ভূমিকা৷ প্রাক্তন চ্যান্সেলর ও এসপিডি দলের নেতা গেরহার্ড শ্র্যোডার বার বার বর্তমান সংঘাত সম্পর্কে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন এবং রাশিয়ার অবস্থানের প্রতি বাড়তি সহানুভূতি দেখিয়ে সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে চলেছেন৷ উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে চ্যান্সেলর হিসেবে বিদায় নেবার পর থেকেই তিনি পুটিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে চলেছেন এবং ‘নর্ড স্ট্রিম ২’প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ পদে সক্রিয় থেকেছেন৷ এবার রাশিয়ার গাসপ্রম কোম্পানির পরিচালকমণ্ডলীতেও তিনি স্থান পেতে পারেন, এমন সম্ভাবনা উজ্জ্বল হচ্ছে৷
বিষয়টি শুধু এক প্রাক্তন জার্মান চ্যান্সেলরের বিতর্কিত রাশিয়া-ঘেঁষা অবস্থানের মধ্যে সীমিত থাকলে হয়ত তেমন জলঘোলা হতো না৷ শলৎস-সহ সরকার ও দলের অনেক নেতা শ্র্যোডারের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছেন৷ কিন্তু সম্প্রতি জানা গেছে যে জানুয়ারি মাসের শুরুতে শ্র্যোডার এসপিডি দলের একাধিক রাজনীতিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন৷ বিরোধী ইউনিয়ন শিবিরের এক সংসদ সদস্যের প্রশ্নের ভিত্তিতে বর্তমান জোট সরকারের প্রধান শরিক দলের সদস্যদের সঙ্গে শ্র্যোডারের যোগাযোগ সম্পর্কে জানা গেছে৷ সরকারের রাশিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রাক্তন কর্মকর্তাও তাঁদের মধ্যে ছিলেন৷ ফলে প্রশ্ন উঠছে প্রাক্তন চ্যান্সেলর বর্তমান সরকারের রাশিয়া সংক্রান্ত নীতির উপর প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছেন কিনা৷
সরকারের রাশিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রাক্তন কর্মকর্তা ইওহান সাটহফ জানিয়েছেন, ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে তিনি আর আগের দায়িত্ব পালন করছেন না৷ সাধারণ সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি ৫ই জানুয়ারি শ্র্যোডারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন৷ রাশিয়ার নাগরিক সমাজের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতেই তিনি অভিজ্ঞ মানুষদের সঙ্গে এক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বলেন সাটহফ৷ শ্র্যোডারও সেই আলোচনায় অংশ নেন৷
বিরোধী ইউনিয়ন শিবির প্রাক্তন জার্মান চ্যান্সেলরের সঙ্গে বর্তমান সরকারি জোটের প্রতিনিধিদের ‘ঘনিষ্ঠতা’ সম্পর্কে বিরক্তি প্রকাশ করেছে৷ বিশেষ করে সদ্য সরকারের ভার নিয়ে কিয়েভ ও মস্কোর সঙ্গে আলোচনার ঠিক আগে শ্র্যোডারের মতো বিতর্কিত ব্যক্তির ‘পরামর্শ’ নেওয়া সমীচিন ছিল না বলে শিবিরের নেতা টরস্টেন ফ্রাই মন্তব্য করেন৷ তিনি বর্তমান চ্যান্সেলর শলৎসের উদ্দেশ্যে এ বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থানের ডাক দিয়েছেন৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)
সত্যিই কি যুদ্ধপরিস্থিতিতে অস্ত্র পাঠায় না জার্মানি?
সংকটকালে জার্মানির কাছে অস্ত্র চেয়েছিল ইউক্রেন। কিন্তু জার্মানি জানিয়েছে তারা যুদ্ধপরিস্থিতিতে অস্ত্র পাঠায় না। সত্যি কি তাই?
ইউক্রেন সংকট শুরু হওয়ার পর জার্মানি সে দেশের সেনার জন্য বেশ কিছু যুদ্ধের হেলমেট পাটিয়েছিল। এরপর ইউক্রেন জার্মানির কাছে একাধিক প্রতিরক্ষার অস্ত্র চায়। কিন্তু জার্মানি জানিয়েছে, সংকটকালে, যুদ্ধপরিস্থিতিতে তারা অস্ত্র পাঠায় না। এটা জার্মানির নীতি।
ছবি: Getty Images
জার্মানির বক্তব্য
জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শোলৎস এবং জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক জানিয়েছেন, জার্মানি যুদ্ধপরিস্থিতিতে অস্ত্র পাঠায় না। তাতে যুদ্ধের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অস্ত্র পাঠাতে হলে সকলে মিলে ঘটনার মূল্যায়ন করতে হয়। ইউক্রেন সংকটের ক্ষেত্রে জোট সরকারের কেউই অস্ত্র পাঠানোর পক্ষে নয়।
ছবি: Pavlo Palamarchuk/AP/dpa/picture alliance
ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া
জার্মানির এই পদক্ষেপ মোটেই ভালো চোখে দেখছে না ইউক্রেন। বেয়ারবকের সঙ্গে বৈঠক করেননি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
ছবি: LEILA GORCHEV/AFP/Getty Images
সমাজমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
সমাজমাধ্যমে বহু মানুষ বলছেন, অতীতে যুদ্ধপরিস্থিতিতে অস্ত্র পাঠিয়েছে জার্মানি। তখন কোথায় ছিল তাদের নীতি? সৌদি আরব, তুরস্ক, মিশর, আরব আমিরাত সর্বত্র যুদ্ধে জার্মান অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে বলে অভিযোগ।
ছবি: Carsten Rehder/dpa/picture alliance
ফ্যাক্ট চেক: মিশর
জার্মানির অর্থ এবং পরিবেশ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট বলছে বহুদিন ধরে মিশরকে নিয়মিত অস্ত্র পাঠাচ্ছে জার্মানি। যে অস্ত্র মিশর ইয়েমেন এবং লিবিয়ার যুদ্ধে ব্যবহার করছে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র গত এক বছরে জার্মানি মিশরকে চার দশমিক তিন চার বিলিয়ন ইউরোর অস্ত্র বিক্রি করেছে।
ছবি: U.S. Navy/AP Photo/picture alliance
ফ্যাক্ট চেক: আরব
পরিসংখ্যান বলছে, ২০০২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে জার্মানি সৌদি আরবের কাছে কয়েকশো কোটি ইউরোর অস্ত্র বিক্রি করেছে। এর মধ্যে শুধু প্রতিরক্ষার অস্ত্র নয়, আক্রমণের অস্ত্রও আছে। ২০১৮ সালে সৌদি আরবকে ৪১ কোটি ৬০ লাখ ইউরোর অস্ত্র পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু জামাল খাশগজি খুনের পর অস্ত্র পাঠানোয় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জার্মানি। তারপরেও ২০২০ সালে সৌদি আরব তিন কোটি ৮০ লাখ ইউরোর জার্মান অস্ত্র পেয়েছে।
ছবি: Viktor Tolochko/Sputnik/dpa/picture alliance
আরব কী করে
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আরবও ওই অস্ত্র ইয়েমেনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। একাধিক মানবাধিকার রিপোর্ট বলছে, জার্মানির ওই অস্ত্র ব্যবহার করে আরব মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। কিন্তু জার্মানি অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করেনি।
ছবি: Viktor Tolochko/Sputnik/dpa/picture alliance
ফ্যাক্ট চেক: তুরস্ক
সাম্প্রতিককালে জার্মানির সঙ্গে তুরস্কের একাধিক বিষয়ে মতবিরোধ হয়েছে। কিন্তু তার জন্য তুরস্কের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ হয়নি। ওই অস্ত্র তুরস্ক লিবিয়া বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। কুর্দ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে দিনের পর দিন ধরে ওই অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নানা কথা হয়েছে।