জার্মানির আল্টেনা শহরের মেয়র আন্দ্রেয়াস হলস্টাইনকে সোমবার সন্ধ্যায় ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে৷ অবশ্য জখম খুব গুরুতর নয়৷ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তিনি বাড়ি ফিরে গেছেন৷
বিজ্ঞাপন
আল্টেনা শহরটি নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের অন্তর্গত৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আরমিন লাশেট মেয়রের উপর হামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যায়িত করেছেন৷
হামলার সময় মেয়র হলস্টাইন একটি কাবাবের দোকানে ছিলেন৷ অনলাইন সংবাদমাধ্যম ডাব্লিউএজেড বলছে, হামলাকারী মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন৷ হামলার আগে তিনি হলস্টাইনের কাছে জানতে চান, তিনিই মেয়র কিনা৷
উল্লেখ্য, হলস্টাইন শরণার্থীবান্ধব বলে পরিচিত৷ শরণার্থীদের দেখাশোনায় ভালো কাজের জন্য তাঁর শহর চলতি বছর জার্মান সরকারের পুরস্কার পেয়েছে৷ ১৭ হাজার অধিবাসীর আল্টেনা শহর ৩৭০ জন শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে৷ অর্থাৎ, কোটার চেয়ে ১০০ জন বেশি শরণার্থী গ্রহণ করেছে শহরটি৷ আল্টেনার অনেক বাসিন্দা শরণার্থীদের নিজেদের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন৷ কেউ আবার বিনামূল্যে শরণার্থীদের জার্মান শিখিয়েছেন৷
হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ৫৭ বছর বয়সি হলস্টাইন বলেন, ‘‘এখনও বেঁচে আছি বলে আমি খুশি৷''
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের সদস্য হলস্টাইন৷ তাঁর উপর হামলার ঘটনায় ম্যার্কেল মর্মাহত হয়েছেন৷ মুখপাত্রের মাধ্যমে ম্যার্কেল বলেন, ‘‘মেয়র আন্দ্রেয়াস হলস্টাইনের উপর ছুরি হামলার ঘটনা শুনে আমি আতঙ্কিত৷ তবে তিনি আবার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবেন শুনে স্বস্তিবোধ করছি৷''
নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আরমিন লাশেট জানান, ‘‘হামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতধরে নিয়ে কর্তৃপক্ষ তদন্তে অগ্রসর হচ্ছে৷'' সরকারি কর্মকর্তাদের উপর হামলা ও রাজ্যে চরম ডানপন্থিদের দৌরাত্ম বেড়ে যাওয়ার সমালোচনা করেছেন তিনি৷ ‘‘নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়ায় ঘৃণা ও সহিংসতার কোনো স্থান নেই৷ বৈচিত্র্য আমাদের রাজ্যের একটি অলংকার,'' বলেন লাশেট৷
উল্লেখ্য, বছর দুয়েক আগে কোলনের মেয়র হেনরিয়েটে রেকারের উপর হামলা হয়েছিল৷
আলেকজান্ডার পেয়ারসন/জেডএইচ
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে উদ্বেগ এবং উদ্যোগ
জার্মানিতে প্রতিদিনই বাড়ছে অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেলও বলেছেন, বছর শেষে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে৷ জার্মানির ওপর চাপ এত বেশি না রেখে, ইইউভুক্ত অন্য দেশগুলোকেও শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Zavoral
সমালোচনা ও চাপের মুখে ম্যার্কেল
অভিবাসন প্রত্যাশীদের ব্যাপারে ম্যার্কেল সরকারের উদ্যোগ ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি৷ তারপরও জার্মানিতে ম্যার্কেল সমালোচিত৷ সরকার বিরোধীদের একটা অংশ মনে করে, ম্যার্কেল প্রশাসন ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করে সংকট ঘণীভূত করছে৷ জার্মানিতে শরণার্থী বিরোধী ক্ষোভও দেখা দিয়েছে৷ সব মিলিয়ে শরণার্থী ইস্যু নিয়ে বেশ চাপে আছে ম্যার্কেল সরকার৷
ছবি: Reuters/H. Hanschke
সবচেয়ে বড় সংকট!
ক’দিন আগেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় সংকট মনে করা হতো গ্রিসের অর্থনৈতিক বিপর্যয়কে৷ সেই বিপর্যয় এখনো কাটেনি৷ তবে আতঙ্কে আরো বড় হয়ে উঠেছে শরণার্থী সংকট৷ জার্মানিতে প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা বৃদ্ধির চাপ৷ জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল একাধিকবার বলেছেন, ইউরোপে গ্রিসের চেয়ে বড় সংকট হয়ে দেখা দিতে পারে শরণার্থী ইস্যু৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Dilkoff
করণীয়
বর্তমান হারে চলতে থাকলে ২০১৫ সালে আগত শরণার্থীর সংখ্যা যে বছর শেষে ৮ থেকে ১০ লাখ দাঁড়াবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ রবিবার ম্যার্কেল বলেছেন, এতদিন শরণার্থীদের স্বাগত জানিয়ে এলেও এ হারে চাপ বাড়তে থাকলে আগামীতে জার্মানির পক্ষে খুব বেশি ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে না৷ ইইউভুক্ত অন্য সব দেশকে তাই দ্রুত আরো উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ এ লক্ষ্যে জরুরি বৈঠক আয়োজনের জন্য ইইউ-র প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/I. Fassbender
নড়েচড়ে বসছে ইইউ
ইউরোপীয় ইউনিয়ন শরণার্থী সংকট মোকাবিলার জন্য দু’সপ্তাহের মধ্যে সদস্য দেশগুলোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের জরুরি বৈঠকের আয়োজন করবে৷ ইইউ-ও মনে করে, ব্যাপক হারে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমন সংকটকে ভয়াবহ করে তুলছে৷
ছবি: Getty Images/Afp/A. Tzortzinis
জার্মানিতে শরণার্থী বিরোধী ক্ষোভ
জার্মানির কিছু অঞ্চলে শরণার্থীদের প্রতি ক্ষোভ, অসন্তোষ বেশ বেড়েছে৷ শরণার্থী শিবিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেই চলেছে৷ এ পর্যন্ত ১০০টি এমন ঘটনা ঘটেছে৷ গত সপ্তাহান্তে ড্রেসডেনের কাছের হাইডেনাউ শহরে শরণার্থীবিরোধীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে৷ সংঘর্ষে ৩০ জন পুলিশ আহত হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Meyer
সাধারণ মানুষ শরণার্থীদের পাশে
জার্মানির অধিকাংশ মানুষই শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল৷ নানা স্থানে সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছায় শরণার্থীদের সহায়তায় এগিয়ে আসছে৷ ড্রেসডেনে শরণার্থীবিরোধী বিক্ষোভের পর ৫ হাজার মানুষ নেমে আসে রাস্তায়৷ শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় যুদ্ধ কিংবা অভাবের তাড়ণায় মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং এশিয়া থেকে আসা অসহায় মানুষদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন তাঁরা৷ ওপরে শরণার্থীদের জন্য আয়োজিত এক মেলার ছবি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Zavoral
কেউ খাওয়াচ্ছেন স্যুপ
ভিলহাইমের এই তরুণী ঘরে তৈরি ভেজিটেবল স্যুপ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন শরণার্থী শিবিরে৷ নিজে উপস্থিত থেকে সেই স্যুপ খাইয়েছেন শরণার্থীদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Fischer
কেউ শেখাচ্ছেন ভাষা
ছবির এই দুই অভিবাসনপ্রত্যাশী এসেছেন সোমালিয়া থেকে৷ বায়ার্নের থানহাউসেনে পৌঁছানোর পর জার্মান ভাষাও শিখতে শুরু করেছেন৷ সাবেক এক জার্মান শিক্ষক নিজের উদ্যোগে স্কুল খুলে ভাষা শেখাচ্ছেন শরণার্থীদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Puchner
নাচো-গাও
ড্রেসডেনে নব্যনাৎসি বিরোধী সংগঠন ‘ড্রেসডেন নাৎসিফ্রাই’ শরণার্থীদের জন্য অভিবনব এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল৷ অনুষ্ঠানে অভিবাসনপ্রত্যাশী এবং তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল জার্মানরা একসঙ্গে নেচেছেন, গেয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Willnow
প্রবাসেই সুখী
অনেক শরণার্থীই শুরু করেছেন নতুন জীবন৷ শঙ্কা, উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তা সরিয়ে সুযোগ পেলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দও করছেন তাঁরা৷ সিরিয়া থেকে আসা এই পরিবারটি অবসর সময়ে চলে যায় সমুদ্র সৈকতে৷ প্রবাসেও তাঁরা বেশ সুখী৷