জার্মানির রাজনীতিক ভাল্টার ল্যুবকে হত্যার তদন্ত চলার মধ্যে কোলন শহরের মেয়রসহ কয়েকজন শরণার্থী সমর্থক রাজনীতিককে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
কাসেলের শরণার্থী সমর্থক প্রেসিডেন্ট ল্যুবকে-কে হত্যার সঙ্গে উগ্র-ডানপন্থীরা জড়িত বলে সন্দেহ তদন্তকারীদের৷ এর মধ্যে বুধবার পুলিশ জানিয়েছে, কোলনের মেয়র হেনরিয়েটে রেকারকে হত্যার হুমকি পেয়েছেন৷
পুলিশের বরাত দিয়ে কোলনের বহুল প্রচারিত পত্রিকা ‘বিল্ড' জানিয়েছে, মেয়রকে হুমকি দেওয়ার পেছনেও উগ্র-ডানপন্থীদের কেউ জড়িত থাকতে পারে৷ তবে, দুইটি ঘটনা একইসূত্রে গাঁথা কি-না, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷
জুনের শুরুতে গুপ্তহত্যার শিকার হন কাসেলের আঞ্চলিক প্রেসিডেন্ট ল্যুবকে৷ শরণার্থী ইস্যুতে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের নীতির পক্ষে ছিলেন তিনি৷ হত্যার পর থেকে উগ্র-ডানপন্থী এএফডি দলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুলছে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো৷
এর আগে ২০১৫ সালে ভোটের প্রচারের সময় এক হামলার গুরুতর আহত হয়েছিলেন মেয়র হেনরিয়েটে রেকার৷ ডানপন্থী এক উগ্রবাদী তাঁর উপর ছুরি নিয়ে হামলা চালিয়েছিল৷ শরণার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় তাঁকে টার্গেট করার কথা জানিয়েছিল হামলাকারী৷
ইউরোপের জনপ্রিয় মুসলিম রাজনীতিবিদরা
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিতে কয়েকজন মুসলমান উপরের সারিতে অবস্থান করে নিয়েছেন৷ ছবিঘরে থাকছে তাঁদের কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Hirschberger
ব্রিটিশ রাজনীতির সম্ভ্রান্ত নারী
ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার প্রথম মুসলিম নারী সৈয়দা ওয়ারসি৷ ২০১০-২০১২ সালে তিনি কনজারভেটিভ পার্টির সহকারী প্রধান বা কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করেন৷ ওয়ারসি কনজারভেটিভ পার্টিতে ইসলাম ভীতি নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মে’কে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Scarff
ফ্রান্স ও ইউরোপের রাজনীতিতে মুসলিম
পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সে সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসবাস৷ ধর্মানুসারীদের সংখ্যার দিক থেকে দেশটিতে ইসলামের অবস্থান দ্বিতীয়৷ তবে সেই তুলনায় রাজনীতিতে মুসলিমদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম৷ রাশিদা দাতি তাঁদের মধ্যে একজন, যিনি দেশটির রাজনীতির সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছেন৷ ২০০৭-২০০৯ সালে এই নারী ফ্রান্সের আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Huguen
ধর্মান্তরিত মুসলিম রাজনীতিবিদ
ডাচ রাজনীতিবিদ জোরাম ফন ক্লাভেরিন একসময় কট্টর মুসলিম সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন৷ পার্টি ফর ফ্রিডমের এই আইনপ্রণেতা ইসলাম ধর্মবিরোধী প্রচারও চালিয়েছেন৷ কিন্তু ইসলাম বিরোধী একটি বই লিখতে গিয়ে তিনি হঠাৎই নিজেকে ধর্মান্তরিত হিসেবে ঘোষণা দেন৷ তাঁর দলের সাবেক প্রধান ইসলামের কট্টর সমালোচক গেয়ার্ট ভিল্ডার্স এ নিয়ে বলেছেন, ব্যাপারটি একজন নিরামিষভোজীর কসাইখানায় চাকরি নেয়ার মতো৷
ছবি: AFP/Getty Images/ANP/B. Czerwinski
নেদারল্যান্ডসের জনপ্রিয় মেয়র
২০০৯ সালে ডাচ শহর রটারডামের মেয়র নির্বাচিত হন আহমেদ আবুতালেব৷ তিনি দেশটির প্রথম অভিবাসী মেয়র৷ পশ্চিমা দেশগুলোতে আসার পর যেসব মুসলিম সেখানকার মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দেয়, তাদের বিরুদ্ধে তিনি ভীষণ সরব৷ ২০১৫ সালে বার্তা সংস্থা এএনপির জরিপে সবচেয়ে জনপ্রিয় ডাচ রাজনীতিবিদ নির্বাচিত হয়েছেন আবুতালেব৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Maat
ব্রিটেনেও মুসলিম মেয়র
২০১৬ সাল থেকে লন্ডনের মেয়রের দায়িত্ব পালন করে আসছেন সাদিক খান৷ এর আগে ২০০৫-২০১৬ পর্যন্ত তিনি লেবার পার্টির সংসদ সদস্য ছিলেন৷ ব্রেক্সিট গণভোটে ব্রিটেনের ইউরোপে থাকার পক্ষের প্রচারকারীদের মধ্যে ছিলেন সামনের সারিতে৷ তিনি সমকামী বিবাহেরও সমর্থক৷ ২০১৬ সালে ব্রিটিশ মুসলিম অ্যাওয়ার্ডের বর্ষসেরা রাজনীতিবিদের খেতাব পান সাদিক৷ ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ধর্মানুরাগী এবং নিয়মিত মসজিদে নামাজ পড়েন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yui Mok
‘ধর্মনিরপেক্ষ মুসলিম’ রাজনীতিবিদ
জার্মান রাজনীতিতে গ্রিন পার্টির সবচেয়ে পরিচিত মুখ চেম ও্যজদেমির৷ ২০০৮-২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি দলের সহকারী প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন৷ বাবা-মার জন্মভূমি তুরস্ক হলেও রেচেপ তাইয়্যিপ এর্দোয়ানের অধীনে থাকা তুরস্ককে ইইউর সদস্যপদ দেয়ার বিরোধী তিনি৷ নিজেকে তিনি ‘ধর্মনিরপেক্ষ মুসলিম’ হিসেবে অভিহিত করেন৷ জার্মানিতে গাঁজার বৈধতা দেয়ার জন্যেও প্রচার চালিয়েছেন এই রাজনীতিবিদ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Hirschberger
6 ছবি1 | 6
হুমকি পাওয়া অন্য রাজনীতিকরা
হেনরিয়েটে ছাড়া আরো কয়েকজন শরণার্থী সমর্থক রাজনীতিক হত্যার হুমকি পেয়েছেন বলে জানিয়েছে জার্মানির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম৷
স্থানীয় পাবলিক ব্রডকাস্টার ভেডেএয়া জানিয়েছে, হত্যার হুমকি পাওয়া রাজনীতিকদের মধ্যে পশ্চিমের শহর আল্টেনার মেয়র আন্ড্রিয়াস হলস্টেইন রয়েছেন৷ রেকারের মতো হলস্টেইনও ২০১৭ সালে একটি দোকানে অভিবাসন-বিরোধী এক ব্যক্তির হামলায় আহত হয়েছিলেন৷
সব ঘটনার তদন্ত তদারক করছে করছে রাজধানী বার্লিনের তদন্তকারীরা৷ ল্যুবকে হত্যার ঘটনায় আটক আছেন এক ব্যক্তি, যাকে উগ্র-ডানপন্থী সমর্থক হিসাবে মনে করা হচ্ছে৷