লেনি ক্রাউট৷ বয়স ১১৷ জার্মানির এই শিশু নিজ উদ্যোগে তার শহরের কাছে একটি বন গড়ে তুলছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যে সংকট তৈরি হচ্ছে তা কমাতে সে নিজে কিছু করতে চেয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
তিনটি ফুটবল মাঠের সমান জায়গায় প্রায় ১৭ হাজার চারা রোপন করেছে লেনি৷ নিজ শহর কারবেনে এই বন গড়ে তুলছে সে৷
লেনি জানায়, পরিবারের সঙ্গে গ্রিসের ক্রিট দ্বীপে ঘুরতে গিয়ে এই পরিকল্পনা তার মাথায় আসে৷ সে বলছে, ‘‘পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে ক্রিটে গিয়েছিলাম৷ সেখানকার মাটি অনেক শুষ্ক৷ ফেরার পথে আমরা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কথা বলেছিলাম৷ এই সংকট কাটাতে আমি কিছু করতে চেয়েছিলাম৷ আমি চাইনি আমার শহরও এমন হয়ে উঠুক৷ তাই অর্থ সংগ্রহ করা শুরু করি৷''
অনেক মানুষই ভাবেন, তাদের কিছু করা উচিত, কিন্তু লেনি সেটা করে ফেলেছে৷ দুই বছরে সে প্রায় ৩২ হাজার ইউরো তুলেছিল৷ এই অংকটা ৪০ হাজার করে দিয়েছিল তার শহরের কর্তৃপক্ষ, আর জমিও দিয়েছে৷
স্থানীয় বন বিভাগের কর্মী একহার্ড রিশটার সেরা গাছ বাছতে সহায়তা করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে বিষয়টা দারুণ লেগেছে৷ ৩০ বছর ধরে বন বিভাগে কাজ করছি৷ এত বড় এলাকায় পুনর্বনায়নের সুযোগ আগে কখনও হয়নি৷ আগে এটা শস্যক্ষেত ছিল৷ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখানে ইতিমধ্যে পড়েছে৷ অনেক বিচ গাছ দুর্বল হয়ে গেছে, কিছু মরে গেছে৷ স্প্রুস গাছ প্রায় হারিয়েই গেছে৷যে গাছগুলো লাগানো হয়েছে সেগুলো শুষ্ক ও উষ্ণ আবহাওয়ায় ভালো থাকে৷’’
১১ বছর বয়সে ১৭ হাজার গাছ লাগিয়েছে যে পরিবেশকর্মী
03:37
লেনি তার নিজ হাতে গড়া অফিসে বসে প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছে৷ পোস্টার এঁকেছে, পরবর্তী করণীয় ঠিক করেছে৷ গত দুই বছরে প্রকল্পটা শুধু বড় হয়েছে৷ পরিকল্পনা করার পর প্রথমে সে মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছে বলে জানিয়েছে৷ লেনি বলছে, ‘‘প্রথমে মেয়রের সঙ্গে কথা বলি, কারণ, আমিতো আর যেখানে মন চায় সেখানে গাছ লাগাতে পারি না৷ এরপর তহবিল সংগ্রহ শুরু করি, আর কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করি৷ এরপর টিভি থেকে একটা দল আসে, যদিও আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিনি৷ তারাই আমার কাছে এসেছিল!’’
লেনি পুরো শহরের মানুষের সমর্থন পেয়েছে- আর তার মা-বাবার কাছ থেকেতো অবশ্যই৷ তারা তার সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগের বিষয়টি দেখাশোনা করেছেন৷
লেনির মা-বাবা তাকে নিয়ে গর্বিত৷ ‘‘আমরা লেনিকে নিয়ে গর্বিত, কারণ, সে শুধু পরিকল্পনা করে বসে না থেকে কাজ করেছে৷ দুই বছর ধরে সে কাজ করছে, দমে যায়নি৷ একটা শিশুর জন্য এই সময়টা অনেক দীর্ঘ,'' বলেন লেনির মা কিম ক্রাউট৷
লেনির লাগানো গাছ এখনো ছোট থাকলেন এগুলো এখনই পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নিয়ে জলবায়ুকে সহায়তা করছে৷
ইয়েন্স ফন লারখার/জেডএইচ
আট হাজার গাছ দিয়ে মণ্ডপ করে পরিবেশ বাঁচানোর বার্তা
মণ্ডপ তৈরি হয়েছে আট হাজার গাছ দিয়ে। উষ্ণায়ণের বিশ্বে গাছ লাগিয়ে প্রাণ বাঁচানোর, গাছ বাঁচানোর বার্তা দিচ্ছে এই পুজো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
লালাবাগানের পুজোর থিম পরিবেশরক্ষা
কলকাতার মানিকতলার ঘিঞ্জি ও জনবহুল এলাকায় আট হাজার গাছ দিয়ে তৈরি হয়েছে একটা সবুজ পুজো। লালাবাগানে এই পুজোর বার্তা একটাই, নিজে বাঁচতে গেলে, বিশ্বকে বাঁচাতে গেলে গাছ লাগান, তাকে সন্তানের স্নেহে যত্ন করুন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
প্রতিমাতেও গাছের ব্যবহার
এই পুজোর প্রতিমাও অভিনব। দেবী মূর্তি ও তার পাশে পাতার ব্যবহার করা হয়েছে শৈল্পিকভাবে। উদ্দেশ্য মানুষকে সচেতন করা। নান্দনিক বোধের সঙ্গে পরিবেশ সচেতনতা এখানে মিশে গেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আট হাজারের বেশি গাছ
লালাবাগানের পরিবেশবান্ধব এই পুজোয় আট হাজারের বেশি গাছ দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। ১৫টিরও বেশি প্রজাতির গাছ রয়েছে। মেদিনীপুরের গ্রামে এই গাছগুলিকে যত্ন করে বড় করা হয়েছে। তারপর নিয়ে আসা হয়েছে মণ্ডপে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পাঁচমাস ধরে
গত পাঁচমাস ধরে তৈরি হয়েছে এই অভিনব মণ্ডপ। ধীরে ধীরে তা রূপ পেয়েছে। গত দুই মাস ধরে গাছগুলিকে মণ্ডপে আনা হয়েছে। সেগুলিকে রক্ষা করাও ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। পুজো শেষ হওয়ার পর সেগুলিকে বাঁচিয়ে রাখাও বড় দায়িত্ব।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
নানা ধরনের গাছ
নানান ধরনের গাছ ব্যবহার করা হয়েছে এই মণ্ডপসজ্জায়। ফার্ন, মস, পান, বিভিন্ন ধরনের পাতাবাহার সবই আছে। এত গাছের উপস্থিতিতে মণ্ডপ সবুজ ও সুন্দর হয়েছে তাই নয়, তা দৃষ্টিনন্দনও হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
প্রবল ভিড়
সকাল থেকেই লালাবাগানের এই পুজোয় থাকছে ঠাসা ভিড়। মায়ের মোহময়ী রূপ ক্যামেরাবন্দি করছেন দর্শনার্থীরা। কলকাতার হাজারো থিমের মাঝে লালাবাগানের সবুজায়নের থিম আকর্ষণ করছে মানুষকে। মণ্ডপ দেখতে এসে ক্যামেরায় তা ধরে রাখছেন দর্শকেরা। যেমন এই যুগলও মণ্ডপ ও প্রতিমার সঙ্গে নিজেদের ছবি তুলছেন। তবে এই ছবিতে একটা মুহূর্ত ধরা থাকে। আসল কথা হলো, এই সচেতনতাকে হৃদয়ে ধরে রাখা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কেন এই থিম?
এই পুজোর উদ্যোক্তা লালাবাগান নবাঙ্কুরের সুমন মালাকার বলেন, ''আমাদের বার্তা বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপক্ষে। গাছকে সন্তানের মত লালন পালন করতে হবে। এই গাছগুলো আমরা গত চার-পাঁচ মাস ধরে লালন পালন করেছি। গাছ যদি ঠিকভাবে প্রতিপালন করা হয় তা আমাদের জন্যই ভালো।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
দর্শক কী বলছেন?
মুচিপাড়ার বাসিন্দা তথা মণ্ডপ পরিদর্শনকারী বিতান ঘোষ বলেন, ''ইকো সিস্টেমের জন্য গাছ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গাছ দিনের পর দিন কমে যাচ্ছে। তাই পরিবেশ রক্ষা করতে আমাদেরও গাছ লাগানো উচিত।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বার্তা যাবে
আরেক দর্শক শ্রীজা চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, ''আবাসন তৈরি ও শিল্পায়নের জন্য এখন গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এই থিম থেকে সবুজ বাঁচানোর বার্তা যাবে।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
৬৫ বছরের পুজোয়
লালাবাগান নবাঙ্কুরের সম্পাদক তাপস রায় বলেন, ''আমাদের এবছর ৬৫ বছরের পুজো। আমাদের শিল্পী প্রশান্ত পাল। আমাদের ভাবনা 'লালাবাগানে নবাঙ্কুর'। প্রায় আট হাজার গাছ দিয়ে আমাদের মাতৃ মন্ডপ তৈরি হয়েছে। গাছকে সন্তানের মত লালন পালন করতে হবে এই বার্তা আমরা দিতে চেয়েছি। তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভালো থাকবে।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই
পুজো কমিটির সদস্য সৌমিত্র সাহা জানিয়েছেন, ''উন্নয়নের জন্য মানুষ দূষণ সৃষ্টি করছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য উৎসবের মাধ্যমে এই বার্তা দিতে চেয়েছি। গাছ লাগানো ও তা বাঁচিয়ে রাখাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মণ্ডপের মাথায় পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। গাছের জন্য যে জল,আলো দরকার তা এখানে পাচ্ছে। এটা আমাদের এক বছরের পরিশ্রমের ফসল।''