জার্মানরা সসেজ পছন্দ করেন৷ আর সেটা যদি টমেটো সস, ‘কারি' পাউডার আর মুচমুচে আলু ভাজা দিয়ে পরিবেশন করা হয়, তাহলে তো কথাই নেই! হ্যাঁ, গত প্রায় ২৬ বছর ধরে মধ্যাহ্নভোজে এ খাবারই জার্মানদের সবচেয়ে প্রিয়৷
বিজ্ঞাপন
কারিভুর্স্ট – লম্বা, পুরু সসেজ, গ্রিল বা ভাজা করা৷ তার ওপর টমেটো কেচাপ এবং ‘কারি' পাউডার ছড়ানো৷ জার্মানির ক্যান্টিনগুলোয় ঐতিহ্যবাহী এই কারিভুর্স্ট আজও খাদ্যরসিকদের রসনাকে তৃপ্ত করে চলছে৷ বলছে জার্মানির নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের একটি ক্যাটারিং কোম্পানি ‘আপেটিটো'৷
কোম্পানিটি প্রতি বছরই নানারকম সমীক্ষা করে থাকে৷ ২০১৭ সালে তারা জার্মানির বিভিন্ন ক্যান্টিন বা ক্যাফেটেরিয়ার জনপ্রিয় খাবার নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছিল৷ এই অনুসন্ধানই বলছে, কারিভুর্স্ট এর সঙ্গে আলু ভাজা বা মুচমুচে চিপসের রাজযোটক বন্ধন অগণিত জিহ্বার স্বাদ মিটিয়ে টানা ২৫ বছর ধরে শীর্ষে অবস্থান করে এবার ২৬তম বছরে পৌঁছিয়েছে৷
রসনার বিচারে দ্বিতীয় স্থানে দখল করেছে আলু ভাজার সঙ্গে ঐতিহ্যশালী শ্নিটসেল৷ আর গতবছর থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইটালির ‘স্প্যাগেটি বোলোনেসে'৷ বলা বাহুল্য, জার্মান ক্যান্টিনগুলোতে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ডিশের মিশ্রণ দেখা যায়৷
ঐতিহ্যশালী স্বাদ
কিন্তু জার্মানির বিভিন্ন ক্যান্টিনের মালিকদের মধ্যে অনেকেই অবশ্য এই তালিকার সঙ্গে একমত নন, বিশেষ করে সাবেকি খাওয়ার বা ছোটদের কথা ধরা হলে৷ তাঁদের কথায়, স্কুল এবং কিন্ডারগার্টেনের বাচ্চারা ভাত এবং মিট বল দিয়ে টমেটো সুপ খেতে পছন্দ করে৷ নিরামিষ রাভিওলি এবং নিরামিষ মুসুর ডালের সুপও পছন্দ করে তারা৷
দুপুরে যা খেতে ভালোবাসেন জার্মানরা
ক্যাটারিং কোম্পানি ‘কম্পাস’ জার্মানদের কাছে জানতে চেয়েছিল, দুপুরে, অর্থাৎ মধ্যাহ্নভোজে তাঁদের প্রিয় খাবার কী কী? সেই উত্তরের ভিত্তিতেই তৈরি করা হয়েছে এই ছবিঘরটি৷
ছবি: ARC/Fotolia
সবচেয়ে প্রিয় শ্নিটসেল
দুপুরে জার্মানরা শ্নিটসেল খেতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন৷ কম্পাস গ্রুপের সমীক্ষা থেকে জানা গেছে এ তথ্য৷ এমনকি ডয়চে ভেলের ক্যান্টিনে, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ দুপুরের খাবার খেতে যান, সবচেয়ে বেশি চাহিদা জার্মান এই ডিশটিরই৷
ছবি: ARC/Fotolia
জার্মানদের ‘সসেজ’
কারিভুর্স্ট – ব্রাটভুর্স্ট, যা টমেটো কেচাপ এবং ‘কারি’ পাউডার দিয়ে পরিবেশন করা হয় – মধ্যাহ্নভোজে এটা জার্মানদের দ্বিতীয় পছন্দ৷ ডয়চে ভেলে ক্যান্টিনের প্রধান হ্যারমান ম্যুলার বলেছেন, ‘‘আমরা নিজস্ব পছন্দ না হলেও, এটা খদ্দেরদের জন্য তৈরি করতে হয়৷’’ কারিভুর্স্টের চাহিদা খুব বেশি বলে জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Fotolia/koi88
জনপ্রিয় আমদানি
ইটালির ‘স্প্যাগেটি বোলোনেসে’ রয়েছে তালিকার তৃতীয় অবস্থানে৷ বলা বাহুল্য, জার্মান ক্যান্টিনগুলোতে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ডিশের মিশ্রণ দেখা যায়৷ ‘স্প্যাগেটি বোলোনেসে’ অবশ্য জার্মানির সাধারণ দোকান বা সুপারমার্কেটগুলোতেও ‘ফ্রোজেন ফুড’ হিসেবে বা ঠান্ডা অবস্থায় পাওয়া যায়৷
ছবি: dapd
মাংসও পছন্দ অনেকের
জার্মানরা মাংস খেতে পছন্দ করেন৷ আর তাই হ্যামবার্গার এবং মিটবলের অবস্থান চতুর্থ৷ ট্যুরিঙ্গেন এবং ন্যুরেমব্যার্গের সসেজের সঙ্গে আলু ভর্তা – এই ডিশটির অবস্থান পঞ্চম৷ আর ‘চিকেন সিজার’-এর অবস্থান ষষ্ঠ৷
ছবি: anweber - Fotolia
নিরামিষাশীদের জন্য
পিৎসা ও পাস্তার অবস্থান যথাক্রমে সপ্তম এবং অষ্টম৷ শাক-সবজি (মাংসও দেয়া যায়) সেদ্ধ করে তৈরি ‘আইনটফ’ নামের একটি খাবারও বেশ জনপ্রিয়৷ জার্মান ভেজিটেরিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান সেবাস্টিয়ান জ্যোশ জানান, জার্মান ক্যান্টিনগুলোর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ডিশ ভেজিটেরিয়ান বা ভেগানদের জন্য উপযুক্ত৷
ছবি: AP
বিশাল ব্যবসা
প্রতি কার্য দিবসে গড়ে ১৩ মিলিয়ন মানুষ জার্মান ক্যান্টিনগুলোতে দুপুরের খাবার খান, জানান জ্যোশ৷ প্রতিদিন জার্মানির ক্যান্টিনগুলোতে প্রায় ৩৩ মিলিয়ন ইউরো ব্যয় করে মানুষ৷ ক্যান্টিনের ব্যবসা তাই রমরমা এ জার্মনিতে৷
ছবি: Fotolia/WavebreakMediaMicro
6 ছবি1 | 6
‘আপেটিটো' অবশ্য এ কথাও বলছে যে, ছোটরা এবং টিনেজাররা খাবারদাবারে বৈচিত্র্য পছন্দ করে৷ যে
তুলনায় বড়রা অনেক বেশি প্রথামাফিক বা সাবেক খাবারদাবার পছন্দ করেন৷ যেমন বয়স্করা সকলেই একবাক্যে ‘বিফ রোলাডে' পছন্দ করেন৷ গরুর মাংস, সেদ্ধ আলু আর লাল বাঁধাকপি সহযোগে এই সাবেক খাবার তাই প্রথম স্থান দখল করেছে বড়দের মধ্যে৷ দ্বিতীয় স্থানে আছে মিটলোফের সঙ্গে পার্সলে প্যাটি এবং সাওয়ারক্রাউটের যুগলবন্দী৷ আর বিফ সহযোগে সবুজ বিনের স্টু হচ্ছে তৃতীয় সেরা সাবেক খাবার৷
স্বাদ বনাম স্বাস্থ্য
তবে খাবারের স্বাদই যে শেষ কথা নয়, সেটাও জানা গেল জার্মান পুষ্টিবিদের কাছ থেকে৷ জার্মান নিউট্রিশনাল অ্যাসোসিয়েশনের (ডিজিই) বিশেষজ্ঞ সুজান লাইটজেন দুপুরবেলার আহারে এই সব খাবার থেকে মানুষকে দূরে থাকার পরামর্শই দিয়েছেন৷ তাঁর মতে, মানুষ খাবারের পাতে শাকসবজি এবং যৌগিক শর্করা গ্রহণ করেই দিব্যি সুস্থ থাকতে পারেন৷
ডিজিই-র সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, জার্মানির দুই তৃতীয়াংশ পুরুষ এবং প্রতি দু'জনের মধ্যে একজন নারী অতিরিক্ত ওজনের শিকার৷ সত্যি বলতে, জার্মানিতে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মারাত্মকরকম অতিরিক্ত ওজনবিশিষ্ট৷
কাজেই কোনটা খাওয়া উচিত আর উচিত নয়, সেটা সবসময় স্বাদ বিচার করে বলা যাবে না৷
ভিন্ন দেশের পরিচয়ে পরিচিত ৮ খাবার
জন্মদাতা এক, অথচ পরিচিত অন্য কারো নামে! সব কিছুর মতো খাবারের ক্ষেত্রেও এ রকম রয়েছে৷ এ সব খাবারের জন্ম বা উৎস এক দেশে, অথচ তা পরিচিত ও জনপ্রিয় অন্যদেশের খাবার হিসেবে৷ চলুন সেরকম জনপ্রিয় আটটি খাবার দেখে আসা যাক...
ছবি: picture-alliance/dpa/Weng Lei
তুরস্ক থেকে আসা সুইডিশ মিটবল!
ইকেয়া রেস্তোরাঁ সারা দুনিয়ায় সুইডিশ মিটবলকে জনপ্রিয় করে তুলেছে৷ সুইডেন অবশ্য বলছে, এই খাবারের রেসিপি এসেছে তুরস্ক থেকে৷ অটোমান সাম্রাজ্যের সময়, অর্থাৎ ১৮ শতকে, রাজা দ্বাদশ চার্লস নাকি এটি স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে নিয়ে এসেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইংলিশ মাফিনের আবিষ্কারক অ্যামেরিকা
ইংলিশ মাফিন কিন্তু ইংল্যান্ড থেকে নয়, অ্যামেরিকা থেকে এসেছে৷ যদিও এই বিশেষ পিঠার প্রস্তুতকারী স্যামুয়েল বাথ থমাস ১৮৭৪ সালে ইংল্যান্ড থেকে অ্যামেরিকা পাড়ি জমিয়েছিলেন৷ থমাস অ্যামেরিকায় গিয়ে এই পিঠা আবিষ্কারের পর খুব জনপ্রিয় হয়৷ ওভেনে নয়, তাওয়ায় তৈরি এই পিঠা দীর্ঘদিন খোদ ব্রিটেনই অ্যামেরিকা থেকে আমদানি করেছে দীর্ঘদিন৷
ছবি: picture-alliance/Food and Drink/J. Murphy
ডোনার কাবাব
সারা পৃথিবীতেই এই কাবাব এখন প্রসিদ্ধ৷ বলা হয়, জার্মানিতে এটি প্রথম তৈরি ও চালু হয়৷ কাদির নুরমান নামের বার্লিনের এক তুর্কি বাবুর্চি এটি প্রথম তৈরি করেন৷ যদিও অনেকেই মনে করেন কাদির এটি প্রথম তৈরি করেননি৷ তাতে অবশ্য কিছু যায় আসে না৷ কেননা ১৯৭২ সালে চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত জার্মানদের খাদ্য তালিকায় সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারের এটি৷
ছবি: picture-alliance/chromorange/E. Weingartner
ক্রোয়াসঁ
ফ্রেঞ্চ বেকারিগুলোর প্রসিদ্ধ খাবার হলেও ফ্রান্সে এটি অস্ট্রিয়া থেকে নিয়ে এসেছিল সামরিক বাহিনির এক আর্টিলারি অফিসার৷ অস্ট্রিয়ায় এটি ‘কিপফার্ল’ নামে পরিচিত৷ যদিও মজার ব্যাপার হলো, এই কিপফার্ল নামটার সাথে জার্মানি অথবা তুরস্কের সংযোগ থাকতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/Food and Drink Photos
ফাহিতাস এবং চিমিচাঙ্গাস
স্প্যানিশ শব্দ ‘ফাহা’-র অর্থ বেষ্টনি৷ ডিশে ব্যবহৃত টুকরো টুকরো গরুর মাংসের বেষ্টনিকেই বলে ফাহিতা৷ বর্তমানে ম্যাক্সিকোয় জনপ্রিয় এ খাবারটির সাথে পশ্চিম টেক্সাসের গবাদি পশুর খামার মালিকদের নাম জড়িয়ে আছে৷ এ রকম আরেকটি খাবার চিমিচাঙ্গাস আসলে কড়া মাংস ভাজি বা ‘বরিতো’, যেটি টেক্সাসের কিংবা মেক্সিকোর নয়, বরং অ্যারিজোনায় উদ্ভাবিত একটি খাবার৷
ছবি: picture-alliance/Food and Drink Photos/M. Johnson
বেগেল
মাঝখানে ফুটো করে প্রথমে সিদ্ধ করা হয়, এবং তারপর সেঁকা হয় বেগেলকে৷ এটি অ্যামেরিকার খাবার হিসেবে পরিচিত হলেও এর মূল পোলান্ডে৷ পোলান্ডের ইহুদীরা অ্যামেরিকা পাড়ি দেওয়ার সময় এই খাবারটি সেখানে নিয়ে যান৷
ছবি: picture alliance/Photoshot
ফর্চুন কুকিজ
মাঝখানে গর্তওয়ালা এই বিস্কুটগুলো সারা বিশ্বের চায়নিজ রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায়৷ গর্তে নানা ধরনের উপদেশ বাণী আর ভবিষ্যত সংক্রান্ত দার্শনিক মন্তব্য থাকে৷ তবে মজার ব্যাপার হলো এটি চীনা খাবার হিসেবে সারা পৃথিবীতে পরিচিত হলেও, চীনে কিন্তু বিস্কুটে করে এই ভবিষ্যদ্বাণীর কোনো ঐতিহ্য নেই৷ এর জন্মও চীনে নয়, বরং অ্যামেরিকায় জাপানি অভিবাসীরা এটি ১৯ শতকের প্রথমে বা ২০ শতকের শুরুতে চালু করেছিল৷
ছবি: picture-alliance/ dpa/dpaweb
হুমুস
হুমুস রেসিপি খুব সহজ৷ ছোলা বা মটর ডানার মতো ডাল, জলপাই তেল, লেবু, আদা আর লবণ দিয়ে এটি তৈরি করা হয়৷ এর আবিষ্কারের মালিকানা নিয়ে লেবানন ও ইসরায়েলিদের মধ্যে তর্ক রয়েছে৷ তবে ভূমধ্যসাগর আর মধ্যপ্রাচ্যে এটি খুব জনপ্রিয় খাবার৷