1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির সবচেয়ে দরিদ্র শহরে এএফডিবিরোধী লড়াই

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জার্মানির রুর অঞ্চল এক সময় ছিল এসপিডি দলের ঘাঁটি৷ অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ার পর সেখানে এসেছে জনতুষ্টিমূলক, চরম ডানপন্থি দল এএফডি৷ গেলজেনকির্শেন শহরে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে মানুষ৷

জার্মানির গেলজেনকির্শেন শহরে এএফডির সমাবেশ
২০০৭ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা বাড়লে রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া থেকে বহু মানুষ এই অঞ্চলে আসেন৷ তাদের অনেকেই এখন পর্যন্ত সমাজে মিশতে পারেননি৷ আর এই প্রবণতাই রাজনৈতিক সুযোগ তৈরি করছে চরম ডানপন্থিদের জন্যছবি: FrankxOppitz/IMAGO

রুর অঞ্চলের গেলজেনকির্শেন জার্মানির সবচেয়ে দরিদ্র শহর৷ রাস্তার আনাচেকানাচে পড়ে থাকতে দেখা যায় আবর্জনা, ফাঁকা ঘর-বাড়িও চোখে পড়ে হামেশাই৷ প্রতি চারজনের একজন  সরকারি আর্থিক সাহায্য পান৷ গোটা দেশে সবচেয়ে কম বার্ষিক গড় আয় এই শহরে৷ গেলজেনকির্শেনের মানুষের গড় বার্ষিক আয় ১৮ হাজার ইউরো৷ আর এখানে বেকারত্বের হার দেশে সর্বোচ্চ (১৪ শতাংশ)৷

এই শহরে সবচেয়ে কঠিন কাজ এখানকার মেয়র কারিন ভেলগের৷

ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আর পাঁচটা জার্মান শহর থেকে এই শহরের ইতিহাস একদম আলাদা৷ খুব দ্রুত বিত্তবান হয়েছিল এই শহর৷ আর তারপরই খুব দ্রুত ভেঙে পড়ে এর কাঠামো৷ ১৯৬০ সালের আগে, এখানে প্রায় চার লাখ মানুষ বাস করতেন৷ কিন্তু কাঠামোগত বদল আসার পর, তা কমে আড়াই লাখের কাছাকাছি হয়৷ যেসব চাকরি থেকে সামাজিক নিরাপত্তার খরচ আসতো, তার অর্ধেক কমে যায়৷''

১৯৫০ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত উন্নয়নের পথেই ছিল এই শহর৷ অতিথি কর্মীরা কাজ করতে আসতেন পোল্যান্ড, ইটালি, তুরস্ক থেকে৷ ইউরোপের অন্যতম কয়লা উৎপাদনকারী শহর ছিল গেলজেনকির্শেন৷

কয়লা খাত এখন জার্মানির জন্য অতীতের বিষয়৷ তাই অনেক জার্মান শহরের মতো গেলজেনকির্শেনের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ নেই৷ এবং খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি মানুষকে নিয়োগ করা বা নতুন কোনো দিকে বিনিয়োগ করারও উপায় নেই শহর কর্তৃপক্ষের কাছে, জানান ভেলগে৷

পরিস্থিতির ফায়দা লুটছে এএফডি

২০০৭ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা বাড়লে রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া থেকে বহু মানুষ এই অঞ্চলে আসেন৷ তাদের অনেকেই এখন পর্যন্ত সমাজে মিশতে পারেননি৷ আর এই প্রবণতাই রাজনৈতিক সুযোগ তৈরি করছে চরম ডানপন্থিদের জন্য৷

যে রুর অঞ্চল এক সময় এসপিডির ঘাঁটি ছিল, যে দলের সদস্য মেয়র কারিন ভেলগে নিজে, সেই দল এখন আর আগের মতো নির্বাচনে ৬০ শতাংশ ভোট পায় না৷

সাম্প্রতিক সময়ে এখানে বাড়ছে চরম ডানপন্থি দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি বা এএফডিরভোট৷ ২০১৭ সাল থেকে কর্তৃপক্ষের প্রতি অনাস্থা ও ইসলামোফোবিয়া ব্যাপকভাবে বাড়ছে এই অঞ্চলে৷

ডানপন্থার বিরুদ্ধে নাগরিক প্রতিরোধ

৭৯ বছর বয়সি রাইনহোল্ড অ্যাডযাম কিশোর বয়স থেকেই এই শহরের খনন কাজের সাথে যুক্ত৷ এক সময় এখানে খনন শিল্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে পরে নর্ডস্টার্ন খনিতে ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজও করেছিলেন তিনি৷ আজ এই সাবেক খনি এলাকায় আগ্রহী পর্যটকদের গাইডেড ট্যুর দেন তিনি৷ ক্যানাডা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা পর্টকদের চোখে জল চলে আসে যখন তিনি ফেলে আসা দিনগুলোর গল্প, তার খনি শ্রমিক সাথীদের গল্প বলেন৷

১৯৯৩ সালে খনিটি বন্ধ হয়ে গেলে তাকে পার্কে পরিণত করা হয়, যেখানে প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ মানুষ বেড়াতে আসেন৷

কিন্তু এমন আরো নানা কর্মসূচি নেওয়া সত্ত্বেও গেলজেনকির্শেনে জীবন আকর্ষণীয় নয় সবার কাছে৷ ২০২৪ সালে ইউরোপিয়ান সংসদ নির্বাচনে এই অঞ্চলের প্রায় ২২ শতাংশ মানুষ এএফডিকে ভোট দেন৷ মাত্র এক হাজার ৬০০ ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয় স্থানে ছিল তারা৷

শুধু রাজনৈতিক লড়াই দিয়ে হবেনা, অ্যাডামের মতে, মানুষের ভেতরে থাকা ভ্রান্তি ঠেকাতে এগিয়ে আসতে হবে স্থানীয়দেরকেও৷

এমনই আরেক নাগরিক প্রতিরোধের উদাহরণ শহরের ইউকেনডর্ফ পাড়া৷ যেখানে চারদিকে পরিত্যক্ত ভবনের ছড়াছড়ি৷ কিন্তু সেখানেই হতাশার অতীতকে পেছনে ফেলে নতুন ভবিষ্যতের আশায় গড়ে উঠছে নানা ধরনের ক্যাফে, আর্ট গ্যালারি, গির্জা ইত্যাদি৷

অনেক স্বেচ্ছাসেবী এই পাড়াকে নতুন উদ্যম ফিরিয়ে দিতে সচেষ্ট৷ এমনই এক স্বেচ্ছাসেবী কার্স্টেন লিপকা বলেন, ‘‘অনেক শিক্ষার্থীরা এখন কোলোনের মতো বড় শহরে মূল্যবৃদ্ধির কারণে এখানে এসে থাকতে চায়৷ বার্লিন থেকেও অনেকে আসেন এখানে৷ এই এলাকার একটা সারল্য রয়েছে৷''

তিনি আরো যোগ করে বলেন, ‘‘দশকের পর দশক ধরে এখানে সবাই হতাশায় থাকতো৷ মনে হতো, সব কিছু ভেঙে পড়ছে, কিছুই হচ্ছে না৷ একটা মানসিক দিক থেকে দেখলে, স্থানীয়দের জন্যেও এটা দরকার দেখা যে এখানেও কিছু হচ্ছে, কিছু করা সম্ভব৷ কিন্তু অনেকটা পথ বাকি৷ এখনও সবাই বলেননা যে ‘গেলজেনকির্শেন ছেড়ে যাব কেন?' এই শহর তো ভালোই৷''

অলিভার পিপার/এসএস

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ