জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় #রিউমার্সঅ্যাবাউটজার্মানি নাম দিয়ে একটি নতুন ওয়েবসাইট চালু করেছে৷ মানুষপাচারকারীরা অভিবাসন প্রত্যাশীদের যে ধরণের ভুয়া খবর দিয়ে থাকে, সে বিষয়ে সচেতন করাই হলো এই ওয়েবসাইটের উদ্দেশ্য৷
বিজ্ঞাপন
‘‘বাস্তব তথ্যগুলো পরখ করে দেখুন – অভিবাসীদের যা জানা দরকার, তা এখানে রয়েছে,’’ বলছে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নতুন ওয়েবসাইট৷ নাইজেরিয়া, আলজেরিয়া বা পাকিস্তানের মানুষরা জার্মানি ও ইউরোপ সম্পর্কে অনেক ভুয়া খবর শুনে থাকেন, যা তাদের ইউরোপে আসতে প্ররোচিত করে৷ অভিবাসনপ্রত্যাশীরা এসব খবরের সত্যতা যাচাই না করে, সরল মনে তা বিশ্বাস করেন৷
#রিউমার্সঅ্যাবাউটজার্মানি বা ‘জার্মানি সম্পর্কে গুজব’ হোমপেজটি ইংরেজি, ফরাসি বা আরবি ভাষায় দেখা যায়৷ ‘‘সাইটিটি স্মার্টফোন থেকে অ্যাক্সেস করা যায়; সাইটের ভাষা সহজ ও স্পষ্ট; এর লক্ষ্য হলো সেই সব মানুষ, যাঁরা জার্মানিতে আসার কথা ভাবছেন বা আসতে শুরু করেছেন কিংবা ইতিমধ্যেই এখানে এসে পৌঁছেছেন,’’ বলেন ফেডারাল পররাষ্ট্র দপ্তরে কৌশলগত যোগাযোগ বিভাগের প্রতিনিধি আন্ড্রেয়াস কিন্ডল৷
স্টার্ট পেজটিতে তিনটি ট্যাব আছে, যেগুলি পাঠককে তাঁর ব্যক্তিগত পরিস্থিতি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিভাগটিতে নিয়ে যায়৷
‘দেশ ছাড়ার ব্যাপারে নিশ্চিত তো?’
প্রথম ট্যাবটির নাম ‘সিওর অ্যাবাউট লিভিং’ বা ‘দেশ ছাড়ার ব্যাপারে নিশ্চিত তো?’ এই ট্যাবটি থেকে যে তথ্য দেওয়া হয়, তা মানুষ পাচারকারীদের প্রচার করা ভুয়া খবর সম্পর্কে সাবধান করে দেয়৷ যেমন মানুষ পাচারকারীরা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভাব্য অভিবাসীদেরবলে থাকে যে, তাঁদের এমন সব জাহাজে করে ইউরোপে নিয়ে যাওয়া হবে, যেগুলি খুব বড় ও যেগুলিতে সুইমিং পুল, এমনকি সিনেমা হলও আছে৷ এছাড়া মানুষ পাচারকারীরা উদ্বাস্তুদের বলে যে, তাঁরা ইউরোপে এলেই ২,০০০ ইউরো ও একটি চাকরি ও বাসাবাড়ি পাবে৷
‘পথে’
দ্বিতীয় ট্যাবটি হলো ‘অন ইওর ওয়ে’৷ এর উদ্দেশ্য হলো উদ্বাস্তুদের যাত্রা ও যাত্রাপথ সম্পর্কে সাবধান করে দেওয়া৷ এখানে যে ধরণের প্রশ্ন রয়েছে, তার নমুনা হলো: ‘‘একটি রাবার বোটে দু'ঘণ্টা কাটানোর পর কি আপনাকে উদ্ধার করা হবে?’’ যার স্পষ্ট উত্তরও সঙ্গে দেওয়া রয়েছে, ‘‘না৷’’
‘ফেরা দরকার’
তৃতীয় ট্যাবটি হলো ‘নিড টু রিটার্ন’ বা ‘ফেরা দরকার’৷ এখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে স্বেচ্ছায় স্বদেশে প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে খবরাখবর থাকে, যেমন সেক্ষেত্রে জার্মান সরকারের কাছ থেকে কী ধরণের সাহায্য পাওয়া যেতে পারে৷ জর্ডান, লেবানন, তুরস্ক বা সুদানে জার্মান সরকারের যেসব ত্রাণ প্রকল্প আছে, সে বিষয়েও এই ট্যাব থেকে তথ্য পাওয়া যেতে পারে৷
কিন্ডল বলেন, ‘‘আমরা বাস্তবধর্মী উপায়ে বুঝিয়ে দিই যে, জার্মানিতে নতুন জীবন শুরু করা অনেকে যতটা ভাবেন, ঠিক ততটা সহজ নয়৷ কিন্তু তাই বলে আমরা শুধু নেতিবাচক দৃষ্টান্ত দিই না৷’’
‘‘#রিউমার্সঅ্যাবাউটজার্মানি-র সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হলো, তথ্য সরবরাহের দায়িত্ব শুধু মানুষ পাচারকারীদের হাতে ছেড়ে না দেওয়া৷ বাস্তব তথ্যের ভিত্তিতে আমরা যাঁরা উদ্বাস্তু বা অভিবাসী ও ইতিমধ্যেই যাত্রা শুরু করেছেন, তাঁদের সঠিক খবরের একটা বুনিয়াদ দিয়ে বিষয়টিতে স্বচ্ছতা আনতে চাই,’’ যোগ করেন তিনি৷
মানসী গোপালকৃষ্ণান/এসি
অভিবাসীদের যৌন শিক্ষা দিচ্ছে জার্মানি
যৌন শিক্ষা বিষয়ক এক ওয়েবসাইট নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে জার্মানিতে৷ মূলত অভিবাসীদের জন্য তৈরি এই সাইটটিতে যৌনাঙ্গ থেকে শুরু করে গর্ভধারণ, হস্তমৈথুন, যৌন সুখের মতো বিষয়গুলি চিত্রলিপিতে দেখানো হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
যৌনতা এক ‘নিষিদ্ধ’ বিষয়
আরবি, তুর্কি, ইংরেজি, জার্মানসহ মোট ১২টি ভাষায় যৌনতা বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য এবং চিত্রলিপি প্রকাশ করেছে জার্মান সরকার৷ অভিবাসীদের নারী, পুরুষের দেহ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিতেই এই উদ্যোগ৷ কেননা, সরকার মনে করছে, তারা এমন অনেক দেশ থেকে এসেছে, যেখানে যৌনতা নিষিদ্ধ এক বিষয়৷ চলুন দেখে নেই সাইটটিতে ঠিক কী আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Wuestenhagen
বিভিন্ন যৌন সমস্যার সমাধান
মোট ছয়টি বিভাগে যৌনতা, যৌন মিলন, সম্ভোগের রকমফের, যৌনতা বিষয়ক অধিকারের কথা তুলে ধরা হয়েছে সাইটটিতে৷ তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে ‘সেক্স’ বিভাগটি নিয়ে৷ এতে প্রথমবার সেক্স, কুমারিত্ব, যৌনাসন এবং বিভিন্ন যৌন সমস্যার সমাধান চিত্রলিপির মাধ্যমে ব্যাখা করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
আকার গুরুত্বপূর্ণ নয়, যৌনাঙ্গচ্ছেদ নিষিদ্ধ
ওয়েবসাইটটির ‘বডি’ অংশে নারী-পুরুষের দেহের ধরন, যৌনাঙ্গ, বীর্য ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা দেয়া হয়েছে৷ পুরুষাঙ্গের আকার বা গড়ন যে যৌন সুখের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, তা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এই বিভাগে৷ রয়েছে নারীর যৌনাঙ্গচ্ছেদ যে ইউরোপে পুরোপুরি নিষিদ্ধ, সেই কথাও৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গর্ভধারণ ও যৌন মিলন
সন্তান জন্মদানের পুরো প্রক্রিয়া এই বিভাগে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে৷ সাথে গর্ভধারণের পর কতদিন এবং কিভাবে যৌন সম্পর্ক অব্যাহত রাখা যায়, তা-ও জানানো হয়েছে৷ বলা হয়েছে, কেউ যদি ভুল করে গর্ভধারণ করেন, তাহলে চাইলে গর্ভপাত না করে বাচ্চাটি জন্মের পর দত্তক দেয়া যেতে পারে৷ তবে গর্ভপাতে কোনো বাধা নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
কনডম যেভাবে পরবেন
কখনো জানতে চেয়েছেন কনডম কী? ওয়েবসাইটটির এই বিভাগে কনডম ব্যবহারের উপায় চিত্রলিপিতে পরিষ্কারভাবে দেখানো হয়েছে৷ পাশাপাশি অনিরাপদ যৌন জীবনের ফলে নারী ও পুরুষের কী কী রোগ হতে পারে এবং কী করলে তা থেকে মুক্তি সম্ভব, সে কথাও জানানো হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/chromorange
সঙ্গীকে দোষ না দিয়ে কথা বলুন
হোক সে যৌন জীবন কিংবা যৌথ সম্পর্কের অন্য কোনো দিক, যে কোনো বিষয়ে সঙ্গীর সঙ্গে সময় নিয়ে খোলামেলা আলোচনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে ওয়েবসাইটে৷ তবে আলোচনায় একে-অপরকে দোষ না দিয়ে বরং কার কী প্রত্যাশা সেদিকে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে৷ প্রয়োজনে সমস্যা সমাধানে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়ার উপায়ও জানানো হয়েছে সাইটটিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যৌনসম্মতির বয়স ১৮ বছর
জার্মানিতে ১৪ বা ১৫ বছরের একটি ছেলে বা মেয়ে একই বয়সের সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে পারে৷ কিন্তু সেই বয়সের একটি ছেলে বা মেয়ের সঙ্গে ১৬ বা তার বেশি বয়সের কেউ যৌন সম্পর্কে জড়ালে সেটা অপরাধ৷ এমনকি কম বয়সি সঙ্গী সম্মতি দিলেও৷ যৌন মিলনের জন্য নিরাপদ বয়স কমপক্ষে আঠারো৷
ছবি: picture-alliance/Beyond
অভিবাসীদের কি যৌন শিক্ষার দরকার আছে?
এই প্রশ্নটা অনেকেই করছেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে৷ এর মানে কি অভিবাসীরা যৌন মিলন সম্পর্কে অজ্ঞাত? এ সব প্রশ্নের জবাবে নির্মাতার জানিয়েছেন, বিশ্বের অনেক দেশে যৌনতা নিয়ে আলোচনা এক ‘নিষিদ্ধ বিষয়’৷ তাই দরকার এমন একটা সাইট৷ বাংলা ভাষাতেও এ রকম একটি সাইটের দরকার বলে ফেসবুকে লিখেছেন একাধিক বাংলা ব্লগার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিত্রলিপির ‘কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ, শেতাঙ্গ নারী’
ওয়েবসাইটটিতে প্রদর্শিত যৌন মিলনের কিছু চিত্রলিপিতে পুরুষকে কৃষ্ণবর্ণে এবং নারীকে শ্বেতবর্ণে দেখানো হয়েছে৷ আর এটা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আপত্তি করেছেন অনেকে৷ কারো কারো মতে, শরণার্থী বা অভিবাসীদের যৌনশিক্ষা, যেমন কনডম পরানো শেখানোর মাধ্যমে আসলে বোঝানো হয়েছে যে, তারা কিছুই জানে না, যা একধরনের ‘বৈষম্যমূলক মনোভাব’৷
ছবি: Andreas Wolf/Fotolia
যারা তৈরি করেছেন
বেলজিয়ামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে জার্মানির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যশিক্ষা কেন্দ্র ‘জানজু ডটডিই’ ওয়েবসাইটটি তৈরি করেছে৷ এ জন্য সময় লেগেছে তিন বছর৷ মূলত অভিবাসীদের বিভিন্ন প্রশ্ন এবং প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে সাইটটি তৈরি করা হয়৷ তিন সপ্তাহ আগে প্রকাশের পর থেকে প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার মানুষ এটি ‘ভিজিট’ করছেন৷