সংসদ নির্বাচনের পর তিনটি দলের প্রাথমিক আলোচনায় সাফল্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার থেকে জোট সরকার গড়ার লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হচ্ছে৷ বড়দিনের আগেই সরকার গঠন করতে চান ওলাফ শলৎস৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে কোয়ালিশন সরকার গড়ার প্রক্রিয়া বিশাল কর্মযজ্ঞ৷ এবার বিশেষ করে দুটির বদলে তিনটি দলের অংশগ্রহণের কারণে সেই প্রক্রিয়ায় প্রায় ৩০০ জন অংশ নেবে৷ অর্থাৎ প্রত্যেক দল থেকে ৯৬ জন প্রতিনিধি আলোচনায় উপস্থিত থাকবেন৷ বৃহস্পতিবার প্রস্তুতি পর্ব শেষ হলে সম্ভবত আগামী সোমবার থেকে থেকে দলীয় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে মোট ২২টি গোষ্ঠী বিভিন্ন ক্ষেত্রে আগামী সরকারের রূপরেখা তৈরির কাজে নেমে পড়বে৷ তাদের মধ্যে সমন্বয়ের কাজ করবেন কয়েকজন নেতা৷ স্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনীতি, পরিবহণ থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে আগামী সরকারের অভিন্ন কর্মসূচি স্থির হলে মন্ত্রণালয়ের বণ্টন নিয়ে দরকষাকষি হবার কথা৷ শেষ পর্যন্ত সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি, উদারপন্থি এফডিপি ও পরিবেশবাদী সবুজ দল সন্তুষ্ট হলে তবেই ওলাফ শলৎসের নেতৃত্বে জার্মানির আগামী সরকার গঠিত হবে৷ তিন দল ঐকমত্য অর্জনে বিফল হলে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা যাবে৷
আগামী সরকারের কার্যকালে তিন শরিক দলের কর্মসূচি রূপায়ন করতে গেলে যে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে, বাড়তি ঋণ ছাড়া তা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন এসপিডি ও সবুজ দলের নেতারা৷ তবে এফডিপি দল বাজেট ঘাটতির সাংবিধানিক সীমা লঙ্ঘন করার ঘোর বিরোধিতা করায় বাকি দুই দলও বাধ্য হয়ে সেই নিয়ম মেনে চলার আশ্বাস দিচ্ছে৷ এমনিতেই সেই সীমা বদলাতে হলে সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থনের প্রয়োজন৷ ইউনিয়ন শিবির এমন পদক্ষেপের বিরোধিতা করবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ এফডিপির আপত্তির কারণে করের বোঝা বাড়ানোও সম্ভব হবে না৷ তা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে আমূল সংস্কার ও জার্মানির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগের স্বার্থে অর্থের বিকল্প উৎসের খোঁজ চলছে৷ ‘অপ্রয়োজনীয়' ভর্তুকি বন্ধ করেও সেই ব্যবস্থা করা যেতে পারে৷ সবুজ দলের নেতা রোব্যার্ট হাবেকের মতে, বছরে কমপক্ষে বাড়তি পাঁচ হাজার কোটি ইউরোর প্রয়োজন হবে৷
নির্বাচনের পর তিন দলের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ও ত্রিপাক্ষিক স্তরে প্রাথমিক আলোচনার পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম ছিল৷ শীর্ষ নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল৷ কড়া গোপনীয়তার বেড়াজালের কারণে তাদের মধ্যে কোনো কথা ফাঁস হয়নি৷ এবার জোট সরকার গড়ার লক্ষ্যে মূল আলোচনায় এমন অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ বিশেষ করে এফডিপি দলের একাংশ যেভাবে আগেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপর দাবি জানিয়ে চলেছে, তার ফলে এসপিডি ও সবুজ দল বিরক্তি প্রকাশ করেছে৷ প্রাথমিক আলোচনার পর ভবিষ্যৎ জোট সরকারের রূপরেখা হিসেবে যে খসড়া পেশ করা হয়েছে, তার ভিত্তিতেই কোয়ালিশন গড়া প্রক্রিয়ার উপর জোর দিচ্ছে দলগুলি৷ এ ক্ষেত্রে সংসদে তিন দলের আসনসংখ্যা, অর্থাৎ রাজনৈতিক শক্তি শেষ পর্যন্ত অভিন্ন কর্মসূচির উপর প্রভাব রাখবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)
জার্মান নির্বাচন ২০২১: জোট সরকারের সম্ভাবনা ও যত উপায়
২৬ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে জার্মানির যে-কোনো দুটি দল জোট বেঁধেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না৷ মতামত জরিপ থেকে তেমন ইঙ্গিতই মিলছে৷ সেক্ষেত্রে তিন দলের অনেক ধরনের জোটেরই সম্ভাবনা রয়েছে৷ ছবিঘরে এক নজরে দেখুন পাঁচ বিকল্প৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Hörhager
রংয়ের রহস্য
মধ্য ডানপন্থি দল খ্রিস্টান ডেমোক্র্যাটিক - সিডিইউ এবং তাদের বাভারিয়ান সহযোগী খ্রিস্টান সোশ্যাল ইউনিয়ন - সিএসইউ-এর প্রতীকী রং কালো৷ মধ্য বামপন্থি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট - এসপিডি ব্যবহার করে লাল রং৷ অন্যদিকে মুক্ত বাজারপন্থি ফ্রি ডেমোক্র্যাটস-এফডিপির রং হলুদ৷ আর পরিবেশবাদী সবুজ দলের রং যে সবুজ তা তো বলাই বাহুল্য৷ জোট বোঝাতে জার্মানির গণমাধ্যমে অনেক সময় নামের বদলে দলগুলোকে তাদের রং দিয়ে উল্লেখ করা হয়৷
ছবি: Fotolia/photocrew
কালো, লাল, সবুজ-কেনিয়া জোট
খ্রিস্টান ডেমোক্র্যাট এবং সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের জোট গত আট বছর ধরে জার্মানির ক্ষমতায়৷ আসন্ন নির্বাচনে যদি এই দুই দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারে তাহলে সবুজ দলকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর জোট হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে তাদের জোটের রংটি কেনিয়ার পতাকার রংয়ের সঙ্গে মিলে৷ এই জোটের চ্যান্সেলর কে হতে পারেন তা এসপিডি ও সিডিইউ/সিএসইউ এর মধ্যে কাদের বেশি আসন থাকবে তার উপর নির্ভর করতে পারে৷
ছবি: Fotolia/aaastocks
কালো, হলুদ, সবুজ-জ্যামাইকা জোট
আঞ্চলিক ও জাতীয় নির্বাচনে সিডিইউ গত কয়েক বছরে অপেক্ষাকৃত ছোট দল ফ্রি ডেমোক্র্যাট - এফডিপিরর সঙ্গেও জোট বেঁধেছে৷ তার সঙ্গে সবুজ দলকে নিয়ে আরেকটি বিকল্প জোটের সম্ভাবনাও অনেক সিডিইউ নেতার কাছে আকর্ষণীয়৷ এই তিন দলের রং রয়েছে জ্যামাইকার পতাকাতে৷ তবে সবুজ ও এফডিপির মধ্যে মতবিরোধের কারণে ২০১৭ সালে সরকার গঠনের এমন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
কালো, লাল, হলুদ-জার্মানি জোট
মধ্য ডানপন্থি সিডিইউ/সিএসইউ ও মধ্য বামপন্থি এসপিডি এর সঙ্গে মুক্ত বাজারপন্থি এফডিপি যোগ দিলে এমন একটি জোট হতে পারে৷ এই তিন দলের রং জার্মানির পতাকার তিনটি রংয়ে৷ মতপার্থক্য দূর করে এক হতে পারলে তারা অনায়াসেই পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ ব্যবসায়ী নেতা ও উচ্চ আয়ের মানুষের কাছে এটি কাঙ্খিত এক জোট৷
ছবি: imago/blickwinkel/McPhoto/K. Steinkamp
লাল, লাল, সবুজ
সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা সবুজ দলের সঙ্গে জোট করেও যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, তাহলে বামপন্থি দল ডি লিংকে-কে কাছে টানতে পারে৷ সেক্ষেত্রে পার্লামেন্টে যেতে ডি লিংকের অন্তত পাঁচ শতাংশ ভোট পেতে হবে৷ কিন্তু এসপিডি ও ডি লিংকের সম্পর্কের অতীত খুব একটা ভালো নয়৷ বিশেষ করে ডি লিংকের কট্টর পররাষ্ট্রনীতি এই সম্ভাবনা ভেস্তে দিতে পারে৷
ছবি: Imago/C. Ohde
লাল, হলুদ সবুজ-ট্রাফিক লাইট জোট
মুক্ত বাজারের সমর্থক এফডিপি এর আগে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট ও সবুজ দলের সঙ্গে জোট বাঁধতে আগ্রহী হয়নি৷ তবে এই বছর কোনো সম্ভাবনাই তারা বাতিল করছে না৷ বড় দলগুলো যেভাবেই হোক ক্ষমতায় ফিরতে চাইবে, তা যে রংয়ের জোটই হোক না কেন৷