বৃহস্পতিবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিমান পৌঁছেছে বার্লিনে। শুক্রবার তাকে এই সম্মান দেবেন জার্মান প্রেসিডেন্ট।
বিজ্ঞাপন
নভেম্বর নির্বাচনের আগে সম্ভবত শেষ জার্মানি সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই সফরে তাকে সর্বোচ্চ জার্মান সম্মানে ভূষিত করা হবে। জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ভাল্টার স্টাইনমায়ার মার্কিন প্রেসিডেন্টকে গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য অর্ডার অফ মেরিট সম্মান প্রদান করবেন। সাধারণত, রাষ্ট্রপ্রধানদের এই সম্মানে ভূষিত করে জার্মানি। বাইডেনের আগে সিনিয়র বুশ অর্থাৎ, জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশ এই সম্মান পেয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে।
জার্মান বাহিনীর দীর্ঘতম অভিযান: কী ভাবছেন জার্মানরা?
03:01
জার্মান প্রেসিডেন্টের অফিস সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, বাইডেনের আমলে জার্মানি-অ্যামেরিকার বন্ধুত্ব এবং ট্রান্স অ্যাটলান্টিক জোটকে স্বীকৃতি দিতে চায় বার্লিন। খেয়াল রাখতে হবে, এই সময়েই ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ঘটনা ঘটেছে।
এর আগে ঠান্ডা যুদ্ধের পর জার্মানির ইউনিফিকেশনে সিনিয়র বুশ সহযোগিতা করেছিলেন বলে তাকে এই সম্মান জানানো হয়েছিল। সে সময় জার্মানির চ্যান্সেলর ছিলেন হেলমুট কোল।
ইউক্রেন আলোচনা
মার্কিন কূটনীতিক মাইকেল কার্পেনটর ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, বাইডেনের এই জার্মান সফর ভূরাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ''ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে সার্বিকভাবে ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে এই সফরে আলোচনা করবেন বাইডেন। জার্মানি এবং অ্যামেরিকা দুই দেশই ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ সাহায্য করেছে, এবং করছে।'' পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হওয়ার কথা এই বৈঠকে। বস্তুত, জার্মান প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শলৎসের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার কথা বাইডেনের।
কার্পেনটরের বক্তব্য, বাইডেন এবং শলৎসের সম্পর্ক কেবল কূটনৈতিক নয়। তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে। এবং দুই নেতাই একে অপরের কাজের গুণগ্রাহী। বাইডেন পরবর্তী সময়েও ইউরোপের সঙ্গে অ্যামেরিকার সম্পর্ক যাতে একইরকম ভাবে বজায় থাকে, তা নিয়েও এই বৈঠকে আলোচনা হবে।
ম্যার্কেল ও মার্কিন প্রেসিডেন্টদের রসায়ন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির বিশেষ সম্পর্কের ভিত্তি যথেষ্ট মজবুত হলেও শীর্ষ নেতাদের সম্পর্কের রসায়নের উপর তার বিবর্তন অনেকটাই নির্ভর করে৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেল তাঁর ক্ষমতাকালে চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের দেখা পেলেন৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
প্রথম সাক্ষাৎ
২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে আঙ্গেলা ম্যার্কেল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন৷ সে সময়ে জার্মান চ্যান্সেলর ছিলেন গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার৷
ছবি: AP
চ্যান্সেলর ও প্রেসিডেন্ট
২০০৮ সালের জুন মাসে বার্লিনের কাছে মেসেব্যার্গ-এ জার্মান সরকারের অতিথি নিবাসে মিলিত হয়েছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ৷ বুশ দুই দিনের সফরে জার্মানি এসেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Bergmann
পারিবারিক পরিবেশে বুশ-ম্যার্কেল
২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় জর্জ ডাব্লিউ বুশ ম্যার্কেলকে নিজের খামারবাড়িতে স্বাগত জানান৷ স্ত্রী লরা ও ম্যার্কেলের স্বামী ড. ইওয়াখিম সাউয়ারকে সঙ্গে নিয়ে নিজেই গাড়ি চালিয়েছিলেন বুশ৷
ছবি: AP
উষ্ণতার বহিঃপ্রকাশ
২০০৮ সালেই রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে জি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে জর্জ ডাব্লিউ বুশ আচমকা ম্যার্কেল-এর কাঁধ মালিশ করে বসেন৷ তাঁর এই স্বতঃস্ফূর্ত উষ্ণতার প্রকাশে ম্যার্কেল অবশ্য কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন৷
নতুন সম্পর্ক
২০০৯ সালে জার্মানির বাডেন বাডেন শহরে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ ম্যার্কেল তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
ম্যার্কেল-ওবামা রসায়ন
একই বছর ওয়াশিংটন সফরে জান ম্যার্কেল৷ ধীরে ধীরে ওবামা ও ম্যার্কেলের ব্যক্তিগত উষ্ণতা গড়ে উঠতে শুরু করে৷
ছবি: AP
বিশেষ সম্মান
২০১১ সালে ওয়াশিংটন সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘মেডেল অফ ফ্রিডম’ হাতে পান আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ কিন্তু তার ঠিক পরে এনএসএ কেলেঙ্কারির ফলে ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে ম্যার্কেলের সম্পর্ক কিছুটা শীতল হয়ে পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নতুন পরিস্থিতি
২০১৫ সালে বাভেরিয়ার মনোরম পরিবেশে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আসেন ওবামা৷ ততদিনে ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে বেড়ে চলা সংঘাতের কারণে রাশিয়া একঘরে হয়ে পড়েছে৷
ছবি: Reuters/M. Kappeler
আবেগঘন বিদায়
২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কার্যকালের শেষ পর্যায়ে বার্লিন সফরে আসেন বারাক ওবামা৷ পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে তিনি ম্যার্কেলের নাম উল্লেখ করেন৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
নতুন চ্যালেঞ্জ
২০১৭ সালটি অ্যামেরিকা ও জার্মানি – দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷ জানুয়ারি মাসে ওয়াশিংটনে ক্ষমতায় এলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ ম্যার্কেলও আবার ক্ষমতায় এলেন।
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler/R. Sachs
বিরোধ
২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ট্রাম্পের আমলে অ্যামেরিকা ও জার্মানির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। ন্যাটো নিয়ে ট্রাম্প ও ম্যার্কেলের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। ট্রাম্পের অ্যামেরিকা ফার্স্ট নীতিও ম্যার্কেল মানতে পারেননি। জার্মানি থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করেছেন ট্রাম্প। ফলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Vucci
বাইডেনের আমলে
২০২১ সালে জি৭ বৈঠকের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে ম্যার্কেলের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। এবার ম্যার্কেল অ্যামেরিকা গেছেন। চ্যান্সেলার হিসাবে তার সম্ভবত এটাই শেষ সফর। বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে করবেন তিনি। সেখানে কি সম্পর্কের বরফ গলবে?
ছবি: Adam Schultz/White House/Planet Pix/Zuma/picture alliance
12 ছবি1 | 12
ইউক্রেনকে আরো সাহায্য
ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলির ভূমিকা এবং ইউক্রেনকে আরো সাহায্যের বিষয়ে বাইডেনের আলোচনা করার কথা। জার্মান নেতৃত্ব ছাড়াও ন্যাটোর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে এই সফরে বৈঠক করবেন বাইডেন। এই সফরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
শুক্রবার ইউরোপের একাধিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন বাইডেন। মূলত ইউক্রেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়েই আলোচনা হওয়ার কথা।
বাইডেনের এই জার্মানি সফর আরো আগেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ফ্লোরিডা উপকূলে হারিকেন মিলটনের জন্য বাইডেন সফর পিছয়ে দেন।