হংকংয়ে চীনের বিতর্কিত নতুন নিরাপত্তা আইন চালু হয়েছে গত সপ্তাহে৷ এরপর থেকে আন্দোলনকারীদের আটক করছে পুলিশ৷ গণতন্ত্রপন্থি কর্মী জশোয়া উওং চাইলেন জার্মানির সহায়তা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Kumm
বিজ্ঞাপন
আধা-স্বায়ত্বশাসিত হংকংয়ে বিক্ষোভ-সহিংসতা চলছে কয়েক মাস ধরেই৷ আন্দোলনকারীদের দাবি হংকংয়ের বিশেষ মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে চীনের অধীনে নিয়ে আসতেই এই নতুন আইন৷ জার্মান দৈনিক বিল্ডকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আন্দোলনের কর্মী জশোয়া উওং বলেন, ‘‘আমি জার্মান সরকারকে বলছি, হংকংয়ে কী ঘটছে দেখুন, সত্যি কথাটা বলুন৷''
তিনি বলেন, গনতন্ত্রপন্থিদের আন্দোলনে ‘ইউরোপের সমর্থন প্রয়োজন'৷
এ সপ্তাহের শুরুতে ২৩ বছর বয়সি উওং ডোমোসিসতো নামের একটি গণতন্ত্রপন্থি গ্রুপের শীর্ষ পদ থেকে সরে দাঁড়ান৷ তার ভয় ছিল নতুন এই আইনের ফলে প্রতিষ্ঠানটিই টার্গেটে পরিণত হতে পারে৷ অবশ্য পরে সংগঠনটিই বিলুপ্ত করে দেয়া হয়৷
তবে উওং বিল্ডকে জানান, তিনি হংকংয়েই থাকবেন এবং গণতন্ত্রের আন্দোলনে সামনের কাতারেই থাকবেন৷
হংকং সীমান্তে কেন চীনা সেনা?
হংকং ও চীনের সীমান্তের কাছে শেনঝেনে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে চীন৷ হংকং এ চলমান প্রতিবাদের আবহাওয়ায় কেন এই মহড়া?
ছবি: Reuters/T. Peter
প্রতিবাদের পরিবেশ
গত ১০ সপ্তাহ ধরে হংকং এ চলছে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ৷ ১৯৯৭ সালের পর থেকে হংকঙে গণতন্ত্রের প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে বর্তমানের এই বিক্ষোভ৷ প্রথমে প্রত্যর্পণ চুক্তিতে বদলের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা হংকং এ সার্বিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে পরিণত হয়৷ গণতন্ত্রের দাবিতে পথে নামা জনতা ইতিমধ্যে স্তব্ধ করেছে হংকংগামী বিমান চলাচলও৷
ছবি: picture-alliance/AP/V. Thian
অপেক্ষায় ট্যাঙ্কার
চীনের ‘পিপলস আর্মড পুলিশ'এর শতাধিক আধাসামরিক ট্যাঙ্ক ও ট্রাকসহ কয়েকশ সামরিক সদস্য বর্তমানে সীমান্তবর্তী শহর শেনঝেনে রয়েছেন৷
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, এর সাথে রয়েছে দু'টি জলকামানও৷
ছবি: Reuters/T. Peter
সামরিক অভিযান?
বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে হংকঙে চীনের সামরিক অভিযানের আশঙ্কার কথা৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতামত, এমনটা হবে না৷ গোটা বিষয়টা আসলেই স্রেফ মহড়া৷
ছবি: Getty Images/AFP/Str
কেন নয় সামরিক অভিযান?
গত চার দশক ধরে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে বড় অবদান রয়েছে হংকঙের, বলছেন ডয়চে ভেলের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ক্লিফর্ড কুনান৷ তাঁর মতে, অর্থনৈতিক সংস্কারের কাজ চীনে কিছুটা হলেও ধুঁকছে৷ এঅবস্থায় হংকং থেকে প্রাপ্য আর্থিক স্বস্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে চায়না চীন৷ তাই আপাতত সীমান্তেই অবস্থান করছে চীনা সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters/T. Peter
আন্তর্জাতিক চাপ?
হংকং চীনের অভ্যন্তরেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও চীনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়৷ চীনা বাজারে লগ্নি করতে চাওয়া আন্তর্জাতিক সংস্থারা বেইজিং এর কঠোর হংকং-নীতির ফলে বেঁকে বসতে পারে বলে মতামত কুনানের৷
ছবি: Getty Images/AFP/Str
সামরিক মহড়ায় কী প্রাপ্তি?
বিক্ষোভ সংযত করতে বেইজিং জানিয়েছে যে, এই প্রতিবাদকে তারা দেখছে প্রায় সন্ত্রাসবাদের সমতুল্য হিসাবে৷ এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবাদকারীদের চাপে রাখতে ও কিছুটা ভয় দেখাতেই এই মহড়ার আয়োজন, মনে করেন নানইয়াং ইন্সটিটিউট অফ টেকনলজির সামরিক বিশেষজ্ঞ জেমস চার৷
ছবি: Getty Images/AFP
6 ছবি1 | 6
অনেকে হংকং ছাড়ছেন
উওং হংকংয়ে থাকার প্রত্যয়ের কথা জানালেও তার সহআন্দোলনকারীদের অনেকেই হংকং ছেড়ে চলে যাচ্ছেন৷ ডোমোসিসতোর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাথান ল জানিয়েছেন, তিনি শহর ছেড়ে চলে যাবেন৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নতুন আইন ‘আন্দোলনকারীদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে৷'
চীন বলছে এই আইন বিচ্ছিন্নতাবাদ, সন্ত্রাস ও বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্র ঠেকানোর জন্য করা হয়েছে৷ কিন্তু সমালোচকেরা বলছেন খুব সহজেই এই আইনের বিভিন্ন ধারার মাধ্যমে আধা-স্বায়ত্বশাসিত শহরটিতে চীনা মতের বিরোধিতাকারী যে কাউকে দমন করা সম্ভব৷
বুধবার নতুন আইনের অধীনে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়৷
ডেমোসিসতো দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে আসছে৷ ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত একটি ব্রিটিশ শাসনে উপনিবেশ হিসেবে ছিল হংকং৷ এরপর তা চীনের কাছে হস্তান্তর করা হয়৷ ব্রিটেন ও চীনের মধ্যে চুক্তি অনুসারে হংকংকে কিছু স্বায়ত্বশাসন ও জনগণের জন্য বিশেষ অধিকার দিয়ে ‘এক দেশ, দুই নীতি' চালু করে চীন৷ নতুন আইনকে সেই চুক্তির লঙ্ঘন বলে মনে করেন আন্দোলনকারীরা৷