জার্মানির বার্লিনে একটি অভিজাত স্কুলের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী গত কয়েকমাস ধরে ইহুদিবিদ্বেষমূলক আচরণের শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে৷ এ ধরনের নিপীড়ন বন্ধে নির্দিষ্ট কয়েকটি স্কুলে বিশেষজ্ঞ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে সরকার৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির পরিবারমন্ত্রী ফ্রানৎসিস্কা গিফাই বলেছেন, সরকারি খরচে ১৭০ জন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়া হবে, যাঁরা স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিপীড়নমূলক আচরণের বিরুদ্ধে কথা বলবেন৷ বৃহস্পতিবার ‘রাইনিশে পস্ট' পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানান মন্ত্রী৷
ইহুদিবিরোধী হামলার সংখ্যা বৃদ্ধি ঠেকাতে এই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে পত্রিকাটি জানিয়েছে৷
জার্মান স্কুলগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে বৈরীতার সম্পর্ক আছে এমন দেশগুলো থেকে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ইহুদিবিদ্বেষ সমস্যা বাড়ছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে গিফাই বলেন, ‘‘স্কুলগুলোতে ইহুদিবিদ্বেষ একটি বড় সমস্যা৷''
ক্লাসরুম কিংবা স্কুল প্রাঙ্গনে ধর্মীয় নিপীড়নের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে বলেও মন্তব্য করেন পরিবারমন্ত্রী৷
উল্লেখ্য, ‘বার্লিনার সাইটুং' পত্রিকায় গত জুন মাসের শেষে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের আংশিক অর্থায়নে পরিচালিত জন এফ. কেনেডি স্কুলের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে গত কয়েকমাস ধরে ইহুদিবিদ্বেষমূলক নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে৷ স্কুলে যাওয়া আসার পথে তাকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য ছোঁড়া হয়েছে৷ এছাড়া তার কয়েকজন ক্লাসমেট তার মুখে সিগারেটের ধোঁয়া ছড়িয়ে নাৎসিদের গ্যাস চেম্বারের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে৷ আর ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল সরকারের নেয়া কিছু পদক্ষেপের বিরোধিতা করায় কেউ কেউ তাকে ‘ভালো ইহুদি' নয় বলেও মন্তব্য করেছে৷
জার্মানি-ইসরায়েল: একটি বিশেষ সম্পর্ক
নাৎসি আমলের ইহুদি নিধন যজ্ঞে প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের অপমৃত্যুর জের ধরে আত্মপ্রকাশ ঘটে ইসরায়েলের৷ তাই ঐতিহাসিক কারণে জার্মানি ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্কের চরিত্র একেবারে অনন্য৷ কিছু মানুষের জীবন জুড়েও রয়েছে এ দুটি ভূখণ্ড...
গল্পগুচ্ছ
জার্মান লেখক সারা স্ট্রিকার ইসরায়েলে প্রায় পাঁচ বছর কাটিয়েছেন৷ সেখানেই লিখেছেন নিজের প্রথম উপন্যাসটি৷ আর সম্প্রতি ইসরায়েলি এবং জার্মান লেখকদের কাজ নিয়ে তৈরি অভিনব একটি গল্পগুচ্ছে একটি ছোট গল্পও লিখেছেন তিনি৷
ছবি: Win Schumacher
মানুষ, প্রকৃতি, ভবিষ্যৎ
এত দীর্ঘ একটা সময় ইসরায়েলে থাকার কারণে সেখানকার মানুষ, এমনকি প্রকৃতিকেও ভালোবেসে ফেলেছেন সারা৷ তাঁর মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফেডারেল জার্মান প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে, বেড়ে চলেছে সহযোগিতা৷ তাই সারা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী৷
ছবি: Win Schumacher
রন্ধনশিল্প
২০১৩ সালে জার্মানির টম ফ্রাঞ্জ ইসরায়েলের একটি বিখ্যাত রান্নার অনুষ্ঠান তথা প্রতিযোগিতা ‘মাস্টার শেফ’-এ প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলেন৷ আর তখন থেকেই ইসরায়েলে তিনি একটি অতি পরিচিত নাম৷
ভালোবাসার টানে
ইসরায়েল আর সেখানকার মানুষদের সঙ্গে এতটাই মিলেমিশে গিয়েছিলেন টম যে, আট বছর আগে ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি৷ হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন৷ এ অঘটনটা ঘটেছিল ভালোবাসার টানেই৷ প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি৷ বর্তমানে টমকে জেরুসালেমের একটি ছোট্ট সিনাগগে প্রতিদিন স্ত্রীর সঙ্গে প্রার্থনা করতে দেখা যায়৷
রাঁধুনি পরিবার
স্ত্রীর পরিবারেই থাকেন টম৷ তাঁরাও যে রান্নায় এক-একজন ওস্তাদ৷ তাই তাঁদের সঙ্গে রান্নাঘরে দারুণ সময় কাটে টমের৷ কত কী যে শিখেছেন তিনি এখানে৷ আসলে জেরুসালেমের খাবার-দাবার নিয়ে একটি বই লিখতেই তিনি এসেছিলেন ইসরায়েলে৷
গায়িকা হওয়ার স্বপ্ন
নাম: রিলি উইলো৷ বয়স: ৩৪৷ স্বপ্ন: দাদির মতো মস্ত গায়িকা হওয়ার৷ রিলির দাদি একসময় বার্লিনের বিখ্যাত গায়িকা ছিলেন৷ তাই রিলি ইসরায়েল ছেড়ে আজ পরবাসী৷ বহুদিন হলো বার্লিনেই ঘর বেঁধেছেন তিনি, সানন্দেই৷ যদিও নাৎসিদের কুখ্যাত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প আউশভিৎসে হত্যা করা হয়েছিল তাঁর প্রিয় দাদিকে৷
বার্লিনের আড্ডা
এটা ইসরায়েল নয়, জার্মানির ছবি৷ রাজধানীর ক্রয়েৎসব্যার্গ এলাকার একটা পাবে বসে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা মারছেন রিলি উইলো আর তাঁর স্বামী বেনেডিক্ট বিন্ডেভাল্ড৷ বার্লিনের এ অঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী নয়ক্যোলন এলাকায় বহু তরুণ ইসরায়েলির বাস৷
হালকা হাসির পাল্লা
ইসরায়েল থেকে আসা রিলি উইলো আর বন্ধু শাহাগ শাপিরা একটা বিষয়ে একমত৷ আর সেটা হলো: ইহুদি বুদ্ধিমত্তা আর ইসরায়েলি ব্যঙ্গ আসলেই অতীতের কালো অধ্যায়টাকে হালকা করতে সাহায্য করেছে অনেকটাই৷
ছবি: Win Schumacher
সোজা প্রশ্ন
পেশায় সাংবাদিক শাপিরার বয়স মাত্র ২৭৷ কিন্তু আজকের জার্মান সমাজে ইহুদিদের কীভাবে দেখা হয়, সেটা জানতে তাঁর দারুণ আগ্রহ৷ তাই পথে-ঘাটে কারুর সাথে দেখা হলেই তিনি প্রশ্ন করে বসেন: আচ্ছা, আপনি কি ইহুদি বিদ্বেষী?
হাসতে তো মানা নেই!
বার্লিনের হলোকস্ট মেমোরিয়ালটি দেখতে যাঁরাই আসেন, তাঁরাই নিজের মোবাইল ফোনটা দিয়ে একটা ‘সেল্ফি’ তুলতে ভোলেন না৷ ‘‘এখানে সেল্ফি তোলা নিষেধ’’ – না, সত্যি সত্যি না৷ দর্শনার্থিদের সঙ্গে দুষ্টুমি করে শাপিরা প্রায়ই এমনটা বলেন৷ আর লোকজন সব ঘাবড়ে গেলে, হো হো করে হেসে ওঠেন তিনি৷
10 ছবি1 | 10
এদিকে, কয়েকটি স্কুলে মুসলিম শিক্ষার্থীদের দ্বারা ইহুদিবিদ্বেষমূলক আচরণ বা হামলার খবর পাওয়া গেছে৷
গত মে মাসে প্রকাশিত সরকারি এক তথ্য বলছে, উগ্র ডানপন্থিদের দ্বারা ৯০ শতাংশের বেশি ইহুদিবিদ্বেষমূলক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে৷
জার্মানির ইহুদিবিদ্বেষ বিষয়ক কমিশনার ফেলিক্স ক্লাইন মে মাসে বলেছিলেন, ইহুদিবিদ্বেষমূলক হামলার সঙ্গে মুসলিমদের অনেক বেশি জড়িত থাকার তথ্যটি সঠিক নয়৷
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ১,৫০৪টি ইহুদিবিদ্বেষমূলক অপরাধ ঘটেছে৷ আগের বছরের তুলনায় সংখ্যাটি ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি৷