জার্মানি এক স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য ‘সুবজ ক্লাসরুম' চালু করেছে৷ এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিষয়ে উৎসাহী করে তোলা হচ্ছে৷ কর্তৃপক্ষের আশা, স্কুলে শেখা বিষয় শিক্ষার্থীরা নিজেদের বাড়িতেও কাজে লাগাবে৷
বিজ্ঞাপন
সবুজ ক্লাসরুমের শিক্ষার্থীরা ঘাস কাটার একটি যন্ত্রকে কীভাবে পরিবেশবান্ধব করে তোলা যায় তা শেখে৷ সৌরশক্তি দিয়ে যন্ত্রটি চালানোর পাশাপাশি সেটি যেন নির্দিষ্ট স্থানের মধ্যে চলাফেরা করে তা নিশ্চিত করতে স্কুলের মাঠের চারপাশে মাটির নীচে তার বসিয়ে দেয়া হয়৷
স্কুলের ছাত্র টোবিয়াস ব়্যুলকে বলছে, ‘‘মাটির নীচে বসানো এই তার ঘাস কাটা রোবট যন্ত্রের জন্য সীমানা হিসেবে কাজ করবে৷ যন্ত্রটি এই তারের কাছে আসা মাত্র দিক পরিবর্তন করবে৷''
ব়্যুলকে ও তার বন্ধুরা পারশিম শহরে তাদের হাইস্কুলের একটি পরিবেশবাদী গোষ্ঠীর সদস্য৷
শিক্ষকরাও এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত৷ ব্যার্বেল ল্যুডকে জীববিজ্ঞান ও রসায়ন পড়ান৷ তিনি তাঁর শিক্ষার্থীদের পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে চান৷ ফাঁকা সময়েও সবুজ ক্লাসরুমে কাজ করেন তিনি৷ ল্যুডকে বলেন, ‘‘আমি চাই, আমরা শিক্ষার্থীদের এখানে যা শেখাচ্ছি সেটা তারা বাসায়ও কাজে লাগাক৷ যেমন, যেখানে সেখানে সবকিছু ছুড়ে না ফেলা, বাগানে ময়লা না পোড়ানো কিংবা পরিবেশ দূষণ করে এমন গাড়ি না চালানো, ইত্যাদি৷ কীভাবে সম্পদ সংরক্ষণ করতে হয় তা তাদের জানা প্রয়োজন৷''
অনেক কিছু শেখায় ‘সুবজ ক্লাসরুম’
04:31
স্কুলের সাবেক ছাত্র হানেস ফ্যোলশ এখন স্থানীয় এক কোম্পানিতে জ্বালানি উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন৷ স্কুলের সৌরশক্তি ব্যবস্থার নকশায় সহায়তা করছেন তিনি৷ নিজের সাবেক স্কুলের কাজ দেখে খুবই সন্তুষ্ট হানেস৷ তিনি বলেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ যে এমন একটা প্রকল্প গুরুত্ব সহকারে বাস্তবায়ন করছে, সেটা প্রশংসাযোগ্য৷ এটা শুধু অর্থের ব্যাপার নয়৷ এখানে তারা সেটা পেয়েছে৷ আর এখান থেকে আরও ছোট ছোট প্রকল্প শুরু হয়েছে৷ যেমন ঘাস কাটার এই যন্ত্র৷''
স্কুলের ছাদে অনেক সৌরপ্যানেল বসানো হয়েছে৷ এটি একদিকে পরিবেশবান্ধব, অন্যদিকে খরচ কমায়৷ পুরো স্কুলের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটায় এটি৷ বাকিটা গ্রিডে পাঠানো হয়৷
এছাড়া একটি অ্যাপের সাহায্যে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রয়োজন না থাকলে লাইটের সুইচ বন্ধ করতে উৎসাহিত করা হয়৷ এ সম্পর্কে কালভিন এমকে বলেন, ‘‘যতবার আপনি এরকম এতটি কিউআর কোড স্ক্যান করবেন, একটি পয়েন্ট পাবেন৷ যে বেশি পয়েন্ট পাবে সে জ্বালানি সাশ্রয়ের চ্যাম্পিয়ন হবে৷''
উদ্দেশ্য, কিশোর-কিশোরীদের পরিবেশ ও পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে আগ্রহী করে তোলা৷
ভূগোল এমন একটা বিষয় যেখানে অনেক কিছু একসঙ্গে শেখা যায়৷ টোবিয়াস ব়্যুলকে বলছে, ‘‘বৈশ্বিক উষ্ণতা মানে হচ্ছে পোলার বেয়ার আর পেঙ্গুইনরা উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে তাদের আবাস হারাচ্ছে৷'' নেলে রেশ বলছে, ‘‘ভূগোল আমাদের শেখায়, আরাল সাগর একসময় হারিয়ে যেতে পারে৷''
ছোটদের চোখে আজ থেকে ৫০ বছর পরের পৃথিবী
জলবায়ু পরিবর্তন ইতিমধ্যেই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, আরো ৫০ বছরে কী হবে কে জানে৷ আজকের কচিকাঁচাদের অনেকেই তখন এই পৃথিবীতেই থাকবে৷ কেমন হবে সে পৃথিবী? তারা নিজেরাই এঁকে দেখানোর চেষ্টা করেছে৷
ছবি: DW/I. Banos
জলমগ্ন পৃথিবী
দশ বছর বয়সের সামুয়েল ইতিমধ্যেই জানে, আমাদের সুপরিচিত গ্রহের কী দশা হতে চলেছে: সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে উপকূলের মানুষদের জীবিকা ও জীবন বিপন্ন করবে৷ কিন্তু কেন তা ঘটবে? ‘‘চরম পরিবেশ দূষণের কারণে’’, বলে সামুয়েল৷
ছবি: DW/I. Banos
শেষ সূর্যাস্ত?
সাত বছর বয়সের ডানিয়েল সূর্যকে খুব পছন্দ করে – কিন্তু ৫০ বছর পরে সূর্য বলে কি কিছু থাকবে? সূর্য খুব বেশি বদলাবে না বলেই ডানিয়েলের আশা, নয়ত এমন অপরূপ সব সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত আসবে কোথা থেকে? তবে ডানিয়েল ইতিমধ্যেই তার বাবা-মাকে বাড়িতে সব কিছু রিসাইকেল করতে বলেছে৷ সাবধানের মার নেই!
ছবি: DW/I. Banos
উড়ন্ত গাড়ি
দশ বছর বয়সের পালোমার কল্পনায় ভবিষ্যতের গাড়ি রাস্তায় না চলে, আকাশে চলবে – তবে গাড়ির ধোঁয়া থেকে বায়ুদূষণ একই থাকবে, পালোমার ছবি দেখলে যা বোঝা যায়৷ অপরদিকে গাছপালার চিহ্নমাত্র বাকি নেই৷ ছবির ডান কোণায় একটা জাহাজ – সেটা কি খরায় আটকে পড়েছে, নাকি সাগরের পানি বেড়ে শহরে ঢুকে পড়েছে?
ছবি: DW/I. Banos
বড্ড গরম!
সাত বছরের এমা সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ঘুরে এসেছে: সেখানে আর সবই ভালো, শুধু গরমটা একটু বেশি৷ এমা তার মায়ের কাছ থেকে শুনেছে যে, পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে৷ কাজেই এমার কল্পনায় ভবিষ্যতে সূর্য জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যাবে আর পৃথিবীর মানুষরা রকেটে চড়ে অন্য গ্রহে পালাতে বাধ্য হবে৷
ছবি: DW/I. Banos
চলো মঙ্গলগ্রহে যাই
বারো বছর বয়সের লিনুস-এর মতে ৫০ বছর বাদে পৃথিবী আর মানুষের বাসযোগ্য থাকবে না, কাজেই লিনুস মঙ্গলগ্রহে বাস করার স্বপ্ন দেখছে – সেটাও স্বপ্ন না দুঃস্বপ্ন, বলা মুশকিল, কেননা মানুষ দৃশ্যত মঙ্গলগ্রহেও একই রকম পরিবেশ দূষণ চালাবে৷ তাহলে কি কোনো আশাই নেই? ‘‘আমরা এখনও তা বন্ধ করতে পারি’’, বলছে লিনুস৷
ছবি: DW/I. Banos
প্রকৃতির বদলে প্রযুক্তি
বারো বছরের ইয়ান-এর মতে ২০৬৭ সালের মধ্যে পৃথিবীতে প্রকৃতির স্থান দখল করবে প্রযুক্তি৷ তাই ইয়ান-এর কল্পনায় ভবিষ্যতে আকাশছোঁয়া বাড়ির চারপাশে নানা আজগুবি যান ঘুরে বেড়াবে আর হলিউডের ওপর দিয়ে উড়ে যাবে স্যামসাং গ্যালাক্সির প্লেন৷
ছবি: DW/I. Banos
কার্বন ফুটপ্রিন্ট নয়, হ্যান্ডপ্রিন্ট
‘কার্বন পায়ের ছাপ’ – ছয় বছরের আস্ট্রিড কথাটা স্কুলে শুনেছে ও ঠিকই শুনেছে৷ তবে আস্ট্রিডের কল্পনায় সেই কার্বন পায়ের ছাপ আমাদের কার্বন হাতের ছাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কাজেই আস্ট্রিডের ছবিতে ভবিষ্যতের পৃথিবী আমাদের পরিবেশ দূষণের প্রায় অদৃশ্য হাতের ছাপ বহণ করছে৷
ছবি: DW/I. Banos
যন্ত্রদানব
দশ বছরের মিগেল-এর ছবিতে একটি যান্ত্রিক রোবটের মুখ থেকে রশ্মি বেরিয়ে বাড়িঘর ধ্বংস করছে৷ এই রোবট যেমন একদিকে আমাদের যন্ত্রসভ্যতার প্রতীক, অপরদিকে সে হয়ত হাল আমলের ফ্যাংকেনস্টাইনের মতো মানুষের সৃষ্ট আর্টিফিসিয়্যাল ইন্টেলিজেন্স, যা শেষমেষ মানুষকেই আক্রমণ করছে৷
ছবি: DW/I. Banos
ট্র্যাজেডি
সাত বছরের ইউডিথ-এর কল্পনায় একদিন না একদিন অন্য গ্রহের জীবরা মহাকাশযানে চড়ে এসে পৃথিবীর সব মানুষকে, এমনকি পশুপাখিদেরও মেরে ফেলবে৷ তা বলে ইউডিথ যে পরিবেশ সচেতন নয়, এমন কথা কেউ বলতে পারবে না৷ ইতিমধ্যেই সে প্রতি পাতার দু’পাশেই ছবি আঁকে...৷