জার্মানির স্কুলে সমান সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে উন্নতি
২৩ অক্টোবর ২০১৮
জার্মানিতে বেশিরভাগ স্কুলে সুবিধাবঞ্চিতদের সন্তানরা, সচ্ছ্বল পরিবারগুলোর সন্তানদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ে৷ তবে ওইসিডি'র নতুন প্রতিবেদন বলছে, এই অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের পরিবারের অবস্থা তাদের পারফরম্যান্সে বড় ভূমিকা রাখে বলে ধারণা করা হয়৷ মঙ্গলবার অর্গানাইজেশন ফর ইকনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) তাদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে৷
গবেষণায় দেখা গেছে, নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানরা জার্মানিতে সুবিধাবঞ্চিতই থেকে যায় এবং এই হার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি৷ তবে ধীরে ধীরে এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে৷
গবেষণায় যা দেখা গেছে
জার্মানিতে নিম্ন আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীরা সাধারণ বিজ্ঞানে সচ্ছ্বল পরিবারের শিক্ষার্থীদের তুলনায় গড়ে সাড়েতিন বছর পিছিয়ে থাকে৷ তবে গত ১০ বছরে এ অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও সচ্ছ্বল পরিবারের সন্তানদের বেশি সুযোগ পেতে দেখা গেছে৷ স্কুল পাশ করেনি এমন বাবা-মায়ের সন্তানদের মাত্র ১৫ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করতে পারেন৷ অন্যান্য দেশে গড়ে এ হার ২১ শতাংশ৷ জার্মানিতে চার জনের মধ্যে অন্তত একজন তাঁদের বাবা-মায়ের তুলনায় উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেন৷
সন্তান লালন-পালনে অনেক ক্ষেত্রে পুরনো ‘নিয়মই’ ভালো
ছোটরা আর আগের মতো বড়দের শ্রদ্ধা করে না– এরকম কথা আজকাল প্রায়ই শোনা যায়৷ জার্মানির কিন্ডার গার্টেন বা শিশুদের স্কুলের শিক্ষকরাও শিশুদের আচরণে খুব সন্তুষ্ট নন৷ কেন এমনটা হচ্ছে এবং কিভাবে এর সমাধান সম্ভব?
ছবি: Fotolia/Nicole Effinger
কিন্ডার গার্টেন
কিন্ডার গার্টেনে তিন বছরের শিশুদের যা করতে বলা হয় তাই করার কথা, কিন্তু না, ওরা নিজের ইচ্ছা মতোই খেলছে, অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষক যা বলছেন শিশুরা ঠিক তার উল্টোটা করছে৷ অথচ শিক্ষক তেমন কিছুই বলতে পারছেন না৷ এরকম ঘটনা প্রায়ই ঘটছে বলে জানিয়েছেন কিন্ডার গার্টেনের একজন শিক্ষক৷
ছবি: Fotolia/photophonie
প্রাইমারি স্কুল
প্রাইমারি স্কুলেও প্রায় একই অবস্থা৷ শিক্ষকের কথা শুনতে পাচ্ছে না এমন ভাব আজকাল অনেক শিশুর মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Weigel
সমীক্ষা যা বলছে
শিক্ষক এবং শিশু লালন-পালন বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফোর্সা-র করা এক সমীক্ষায় জানা যায়, আজকের শিশুদের মধ্যে অমনোযোগিতা, ‘অভদ্র’ আচরণ এবং সামাজিকভাবে মিশতে অক্ষমতা লক্ষ্য করা যায়৷
ছবি: Fotolia/somenski
অনেক মা-বাবার যা ধারণা
অনেক বাড়িতেই সেরকম কোনো নিয়ম কানুন নেই৷ কারণ, তাঁরা মনে করেন, বাড়িতে বেশি শাসন করলে শিশুরা মুক্তভাবে বড় হতে পারবে না, কিংবা ‘শাসন’ শিশুদের স্বাধীন চিন্তার মানুষ হওয়া কঠিন করবে৷
সন্তানকে আগের দিনের মতো শাসন করা উচিত, সন্তানের সব ইচ্ছা মেনে নেওয়া সন্তান মানুষ করার সঠিক পন্থা নয়–এমনটি অনেক শিশুও মনে করে৷ সমীক্ষাটি করা হয়েছে আট থেকে ১৫ বছর বয়সি ছেলে-মেয়েদের নিয়ে৷ সেখানে অনেক শিশুই বলেছে এ কথা৷
ছবি: imago/photothek/M. Gottschalk
‘না’ কে মেনে নেয়া
এ বিষয়ে পরিবার বিষয়ক জার্মান এক বিশেষজ্ঞ বেশ স্পষ্ট করেই বলেছেন, বড়দের প্রতি সম্মান দেখানো এবং তাঁদের শ্রদ্ধা করা শৈশব থেকেই শিখতে হয়৷ শিখতে হয় শাসন মেনে নেয়া৷ তাছাড়া শাসন করতে গিয়ে যখন ‘না’ করা হয়, সেই ‘না’ মেনে নেয়াও শিখতে হয়৷ যদিও এই ‘না’ করার কারণে মা, বাবা অনেক সময় সন্তানের কাছে সাময়িকভাবে অপ্রিয়ও হতে পারেন৷
ছবি: Imago/E. Umdorf
মা-বাবাকেই উদ্যোগী হতে হবে
শিশুরা হোমওয়ার্ক থেকে শুরু করে সারাদিন আর কী কী করবে তার একটা তালিকা করে দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ এবং রাতের খাবার একসাথে খাওয়া উচিত, যাতে সারাদিন কে কী করেছে তা নিয়ে আলোচনা করা যায়৷ নিয়ম তৈরি করে দেওয়া মানে নিজের সন্তানকে নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা দেওয়া৷
ছবি: DW/G. Hamann
ক্লিয়ার রুলস
নিয়মের মধ্যে থেকেও মানুষ মুক্তচিন্তার, উদার মানসিকতার হতে পারে৷ বাড়িতে কিছু নিয়ম-কানুন আর শাসন থাকলে সন্তানরা যে কোনো জায়গায় সহজে খাপ খাওয়াতে পারে৷ যাদের বাড়িতে নিয়মের কোনো বালাই নেই, তাদের সন্তানদের কর্মজীবনেও নিয়ম মেনে চলতে অসুবিধা হয়৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন সুস্থ মানুষ হতে শিশুদের প্রয়োজন ‘ক্লিয়ার রুলস’৷
ছবি: Fotolia/runzelkorn
8 ছবি1 | 8
গবেষণায় দেখা গেছে, আর্থ-সামাজিক অবস্থা ততটা ভালো নয়, এমন এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ তাঁদের সামাজিক অবস্থা এবং স্কুলে যেতে পারার বিষয়টি নিয়ে সন্তুষ্ট৷ তাঁদের মধ্যে পরীক্ষায় পাশের কোনো ভয় কাজ করে না৷
স্কুলে সমঅধিকারের দিক থেকে বিশ্বে এগিয়ে আছে দক্ষিণ কোরিয়া, এরপর রয়েছে ফিনল্যান্ড৷
নতুন এই গবেষণাটি পোগ্রাম ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অ্যাসেসমেন্ট বা পিআইএসএ-র আওতায় ৭২টি দেশে পরিচালনা করা হয়েছে৷ এতে অংশ নিয়েছে এসব দেশের ১৫ বছর বয়সি ৫ লাখ ৪০ হাজার শিশু৷