মন্তব্যের জেরে একদল ছাত্র ক্যাম্প শেষ হওয়ার আগেই সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
বিজ্ঞাপন
সোমবার জার্মান পুলিশ জানিয়েছে, বার্লিনের সামান্য দূরে ব্র্যান্ডেনবুর্গে একটি স্কুলের অংকের ক্যাম্পের আয়োজন হয়েছিল। সেখানেই এই ঘটনা ঘটেছে। ওই ক্যাম্পে সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে সংখ্যালঘু জনজাতি সম্প্রদায়ের বেশ কিছু ছাত্র যোগ দিয়েছিল। আর তাদের লক্ষ্য করেই বর্ণবাদী মন্তব্য করা হয়। তার জেরে ওই ক্যাম্প শেষ না করেই বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্ররা।
টাইমলাইন: উগ্র-ডানপন্থিদের সন্ত্রাসী হামলা
গত দশ বছরে উগ্র-ডানপন্থিদের অসংখ্য হামলা করেছে৷ এর মধ্যে কয়েকটি বড় ঘটনার দিকে ফিরে তাকিয়েছে ডয়চে ভেলে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA Wire/D. Lawson
জার্মানি ২০০৯: ড্রেসডেন কোর্টে নারীকে ছুরিকাঘাত
২০০৯ সালের ১ জুলাই, ড্রেসডেনের জেলা জজ আদালতে মারওয়া এল-শেরবিনি নামের নারীকে ছুরির আঘাতে হত্যা করা হয়৷ ঐ নারী ছিলেন একজন ফার্মাসিস্ট৷ স্বামী ও ছেলে সন্তান নিয়ে ড্রেসডেনে থাকতেন৷ ২৮ বছর বয়সি এক রাশিয়ান-জার্মানের বিরুদ্ধে কোর্টে কটূক্তির অভিযোগের সাক্ষ্য দেয়ায়, যুবক হামলা চালান৷ ঐ যুবক মারওয়াকে ‘সন্ত্রাসী’ ও ‘উগ্র মুসলিম’ বলে গাল দিয়েছিলেন৷ মারওয়া জার্মানিতে ইসলামবিদ্বেষের প্রথম হত্যার শিকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hiekel
নরওয়ে ২০১১: ব্রাইভিকের গণহত্যা
২০১১ সালের ২২ জুলাই অ্যান্ডার্স বেহরিং ব্রাইভিক নামের এক উগ্র ডানপন্থি যুবক একাই দু’টি ঘটনায় ৭৭ জনকে হত্যা করেন৷ তিনি প্রথমে অসলোর সরকারি ভবনে বোমা বিস্ফোরণ করেন এবং এরপর উটোয়া দ্বীপে নিরীহ তরুণদের এক সামার ক্যাম্পে গিয়ে গুলিবর্ষণ করেন৷ হামলার আগে তিনি একটি ইশতাহার প্রকাশ করেন৷ সেখানে তিনি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ‘ইউরোপের ইসলামীকরণ’-এর নিন্দা করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Berit
যুক্তরাষ্ট্র ২০১৫: চ্যাপেল হিল শ্যুটিং
২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ৪৬ বছর বয়সি এক ব্যক্তি প্রতিবেশী তিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করেন৷ নিহতরা হলেন দেয়াহ বারাকাত, তাঁর স্ত্রী ইউসর আবু-সালহা ও তাঁর বোন রাজান আবু-সালহা৷ হামলাকারী হত্যাকাণ্ডের আগে নিজেকে একটি সংঘবদ্ধ ধর্মের বিরোধী বলে উল্লেখ করেন৷ এই হত্যাকাণ্ডে অনলাইনে ব্যাপক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়৷ টুইটারে #MuslimLivesMatter নামে হ্যাশট্যাগ জনপ্রিয় হয়৷
২০১৫ সালের ১৭ জুন যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলাইনার চার্লেস্টনে এমানুয়েল আফ্রিকান মেথডিস্ট এপিস্কোপাল চার্চে এক শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণপন্থি গুলিবর্ষণ শুরু করেন৷ এটি যুক্তরাষ্ট্রে কালোদের সবচেয়ে পুরোনো চার্চ৷ গুলিতে নয়জন নিরীহ আফ্রিকান-অ্যামেরিকান মারা যান৷ এর মধ্যে একজন যাজকও ছিলেন৷ ২১ বছর বয়সি সেই হত্যাকারীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিদ্বেষমূলক অপরাধে দণ্ডিত করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/J. Raedle
জার্মানি ২০১৬: মিউনিখে গুলি
২০১৬ সালের ২২ জুলাই মিউনিখের ১৮ বছর বয়সি এক তরুণ একটি শপিং মলে ঢুকে গুলি করা শুরু করেন৷ এতে ১০ জন নিহত ও ৩৬ জন আহত হন৷ নিহতদের মধ্যে ঐ হামলাকারীও ছিলেন৷ হামলাকারী একজন ইরানি বংশোদ্ভুত জার্মান নাগরিক ছিলেন৷ পুলিশ জানায়, হামলাকারী বর্ণবাদী মন্তব্য করছিলেন৷ তিনি অভিবাসীদের উপর প্রতিশোধ নিতে চাইছিলেন৷
ছবি: Getty Images/J. Simon
যুক্তরাজ্য ২০১৭: ফিন্সবুরি পার্ক মসজিদে হামলা
২০১৭ সালের ১৯ জুন, ৪৭ বছর বয়সি এক ব্যক্তি উত্তর লন্ডনের ফিন্সবুরি মসজিদের সামনে ভ্যান চালিয়ে দিয়ে একজনকে হত্যা ও ১০ জনকে আহত করেন৷ আক্রান্তরা সবাই মুসলিম ছিলেন এবং রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন৷ ইসলামবিদ্বেষী ওই ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/F. Augstein
যুক্তরাষ্ট্র ২০১৭: শার্লটসভিলেতে নব্যনাৎসিদের ওপর গাড়ি হামলা
২০১৭ সালের ১২ আগষ্ট ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলেতে এক শ্বেতাঙ্গ নাগরিক বিরোধী শিবিরে হামলা চালান৷ বিরোধী শিবিরটিও সাদাদের ছিল এবং সেখানে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী ও নব্য নাৎসিরা জড়ো হন৷ এতে এক নারী নিহত ও অনেকে আহত হন৷
ছবি: Getty Images/AFP/P.J. Richards
ক্যানাডা ২০১৭: কুইবেকে মসজিদে হামলা
২০১৭ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে কুইবেকের ইসলামিক কালচারাল সেন্টারে এক বন্দুকধারী সন্ধ্যার দিকে নামাজ পড়ার সময় হামলা চালান৷ এতে ছয় জন নিহত ও এক ডজনেরও বেশি মানুষ আহত হন৷ ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই হামলাকে জঙ্গি হামলা বলে অভিহিত করেন৷
ছবি: Reuters/M. Belanger
যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮: সিনাগগে হামলা
২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর ৪৬ বছর বয়সি এক বন্দুকধারী পিটসবুর্গের ইহুদীদের একটি উপাসনালয়ে হামলা চালান৷ এতে ১১ জন নিহত ও ৭ জন আহত হন৷ হামলাকারী হামলার সময় বারবার ইহুদীবিদ্বেষী মন্তব্য করতে থাকেন৷ মার্কিন ইতিহাসে ইহুদীদের ওপর এটাই সবচেয়ে বড় হামলা৷
ছবি: picture-alliance/AP/M. Rourke
জার্মানি ২০১৯: নববর্ষে বোট্রোপ ও এসেনে হামলা
মধ্যরাতের কিছু পর যখন সবাই নিউইয়ার উদযাপন করছিলেন, তখন ৫০ বছর বয়সি এক ব্যক্তি জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলের দু’টি শহর বোট্রোপ ও এসেনে হামলা চালান৷ তিনি তার গাড়ি উদযাপনরত অভিবাসীদের ওপর চালিয়ে দেন৷ বোট্রোপে গাড়ি উঠিয়ে দেন সিরিয়ান ও আফগান দু’টি পরিবারের সদস্যদের ওপর৷ এতে আট জন আহত হন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kusch
নিউজিল্যান্ড ২০১৯: ক্রাইস্টচার্চে দুই মসজিদে হামলা
ক্রাইস্টচার্চে দুই মসজিদে জোড়া হামলায় কমপক্ষে ৫০ জন নিহত এবং আরো অনেকে আহত হয়েছেন৷ একে উগ্র ডানপন্থিদের জঙ্গি হামলা বলে চিহ্নিত করেছে কর্তৃপক্ষ৷ বন্দুকধারী ব্যক্তি তার বর্ণবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী ইশতাহার অনলাইনে প্রকাশ করেন এবং হামলার ঘটনা লাইভস্ট্রিম করেন৷ কিউই প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন ঘটনাকে নিউজিল্যান্ডের ‘একটি অন্ধকারতম দিন’ বলে মন্তব্য করেন৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA Wire/D. Lawson
11 ছবি1 | 11
পুলিশ গিয়ে ওই ছাত্রদের এসকর্ট করে ক্যাম্প থেকে বার করে নিয়ে যায়। রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে যে অফিসাররেরা কাজ করেন, তাদের এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখনো পর্যন্ত ২৮ জন ছাত্রের নাম লিখেছে পুলিশ। তবে তাদের সকলের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
ওই ক্যাম্পের আয়োজকেরাও ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। বিষয়টিকে জেনোফোবিয়া এবং বর্ণবাদ বলে উল্লেখ করেছেন তারা।
বার্লিনের শিক্ষামন্ত্রী ক্যাটারিনা গুন্টার উনশ বলেছেন, যারা বর্ণবাদের স্বীকার হয়েছে, তাদের মনোবিদের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। বর্ণবাদী আক্রমণের স্মৃতি তারা যাতে কাটিয়ে উঠতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হবে। সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নেতা লুডউইগ শিৎজ বলেছেন, এই ঘটনাই প্রমাণ করে বার্লিনের স্কুলগুলিতে বর্ণবাদবিরোধী শিক্ষা দেওয়া কতটা জরুরি। পাঠক্রমে বিষয়গুলি থাকলেও তা ছাত্রদের বোঝানো যাচ্ছে না বলে তিনি মনে করেন।
শিৎজের বক্তব্য, দক্ষিণপন্থা এবং বর্ণবাদকে আর কোনোভাবেই অবজ্ঞা করা যাবে না। গোটা সমাজের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ছে। ব্র্যান্ডেনবুর্গের বেশ কয়েকটি স্কুলে দক্ষিণপন্থা মাথা চাড়া দিচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। কোনো কোনো ছাত্র নাৎসি স্যালুটও করছে বলে জানা গেছে। বস্তুত, দক্ষিণপন্থি এএফডি দল ওই অঞ্চলে অত্যন্ত প্রভাবশালী বলেও জানা গেছে।