রাশিয়া বিশ্বকাপের মতো কাতার বিশ্বকাপেরও প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়লো জার্মানি৷ সামনে নিশ্চয়ই এর কারণ খোঁজার চেষ্টা হবে৷ তবে সম্ভবত একটা সাধারণ সত্য হচ্ছে, জার্মানি আর যথেষ্ট ভালো দল নয়৷
বিজ্ঞাপন
পরপর দুই বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড থেকে এবং মাঝে ইউরো ২০২০-এ দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বাদ পড়ে জার্মানি একটি বিষয় প্রমাণ করেছে: তারা আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো দল নয়৷
নিকলাস ফ্যুলক্রুগের সেরা চেষ্টার পরও জার্মানির আসলে ক্লাসিক নম্বর নাইন খেলোয়াড় নেই৷ রক্ষণভাগে হুমেলসদের উত্তরসূরি হিসেবে ব়্যুডিগার কিছুটা ভালো খেলেছেন৷ কিমিশ মাঝমাঠে চলে যাবার পর রাইট ব্যাকে শূন্যতা তৈরি হয়েছে৷ আর উইংব্যাক পজিশনে ভালো খেলোয়াড়ের অভাবও জার্মানিকে ভুগিয়েছে৷
কাঠামোগত ইস্যু
এই শতাব্দীর শুরুতে জার্মানিতে ফুটবলার গড়ে তোলার লক্ষ্যে অনেক অ্যাকাডেমি গড়ে তোলা হয়৷ এ কারণে মেধাবী ও কৌশলগত স্মার্ট ফুটবলারদের একটি প্রজন্ম পেয়েছিল জার্মানি৷ ২০১৪ বিশ্বকাপ জেতায় তাদের একটা ভূমিকা ছিল৷ কিন্তু তারপর থেকে জার্মানির চেয়ে বাকি বিশ্ব এগিয়ে গেছে৷ সংস্কার শুরু হয়েছে, কিন্তু ফল পেতে এক দশক অপেক্ষা করতে হবে৷
কোচিংও একটা ইস্যু৷ সাবেক কোচ ইওয়াখিম ল্যোভের আমলে ওঠানামার মধ্যে ছিল জার্মানি৷ তিনি দায়িত্ব ধরে রেখে জার্মানিকে শেষ দুটি টুর্নামেন্টে নিয়ে গেছেন, কিন্তু জার্মানিকে নতুন যুগে নিয়ে যেতে পারেননি৷
বর্তমান কোচ হানসি ফ্লিক জার্মানির দায়িত্বে আসার আগে অল্প সময়ের জন্য বায়ার্ন মিউনিখের কোচ ছিলেন৷ ঐ সময়ের মধ্যে তিনি বায়ার্নকে ঝুঁকি নিতে সক্ষম ও নিয়মিত জয় পাওয়া দলে পরিণত করেছিলেন৷ ফলে তিনি জার্মানির দায়িত্ব নেয়ার পর বড় আশা জেগেছিল৷ কিন্তু কাতার বিশ্বকাপে জার্মানি কখনোই খুব ভালো কিছু দেখাতে পারেনি৷ সমস্যা এখনো রয়ে গেছে৷ আর উদ্ভাবনী শক্তিরও অভাব আছে৷ খেলোয়াড় বাছাইয়ে কয়েকটি প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তের জন্য ফ্লিককে কিছুটা দায় নিতে হবে৷ ফ্লিককে মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে যে, জার্মানি বায়ার্ন মিউনিখ নয়৷
মানের অভাব
আন্তর্জাতিক ফুটবলের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, জার্মানি আর শীর্ষ দল নয়৷ তারা অন্য আরেকটি দল মাত্র৷ শেষ ১০ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের মাত্র তিনটিতে জিতেছে জার্মানি৷ জাপানের কাছে হারের পর নয়ার ও গুনডোয়ানের কথায়ও তার প্রমাণ মিলেছে৷
প্রমাণ বলছে, জার্মানি আর এলিট টিম নয়৷
ফ্লিক সম্ভবত কোচের দায়িত্বে থেকে যাবেন৷ দেড় বছর পর জার্মানিতে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ হবে৷ সেখানে ভালো কিছু করে দেখানোর সুযোগ পাবেন তিনি৷
কোস্টারিকার সঙ্গে খেলা শেষে ম্যুলার জাতীয় দল থেকে অবসরে যাওয়ার আভাস দিয়েছেন৷ গুনডোয়ান, গ্যোৎসে এমনকি নয়ারও তেমনটা করতে পারেন৷ চরম পরিবর্তনের চাকা ইতিমধ্যে ঘোরা শুরু করেছে৷
যে সত্যটা অনেকদিন ধরে পেছনে লুকিয়ে ছিল, তা বের হয়ে এসেছে এবং এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, জার্মানি এখন আর কোনো শীর্ষ দল নয়৷
বিশ্বকাপ ২০২২ : গ্যালারিতে ও বাইরে কত রাজনীতি
ফুটবল বিশ্বকাপের গ্যালারিতে এমন চিত্র আর দেখা যায়নি আগে৷ কাতারের গ্যালারিতে নিয়মিত উঠছে নারীর স্বাধীনতা, কিংবা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবি৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুটবল উৎসবকে ঘিরে কূটনীতির খেলাও জমজমাট৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Evrim Aydin/AA/picture alliance
কাতারে তুরস্ক আর মিশরের কূটনীতি
বিশ্বকাপ ২০২২ অনেক দেশের জন্য স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নতুন করে আলোচনা শুরুর সুযোগ নিয়ে এসেছে৷ উদ্বোধনের দিনে এমন সুযোগ ছাড়েননি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এর্দোয়ান এবং মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ এল-সিসি৷ কাতারের রাজধানী দোহায় তাদের এই সৌজন্য সাক্ষাতে দ্বিপাক্ষিক বেশ কিছু বিষয়েই কথা হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন৷
ছবি: Turkish Presidency/AP Photo/picture alliance
আর্জেন্টিনা নয়, কাতারের বন্ধু সৌদি আরব
ছবিতে (মাঝে) কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানিকে কাতারের জার্সি তুলে ধরতে দেখা যাচ্ছে৷ তবে শেখ তামিম বেশি আলোচিত হয়েছেন সৌদি আরবের পতাকা গলায় জড়িয়ে৷ সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনার হার দেখে নাকি এমন কাণ্ড করেছেন তিনি৷ কে বলবে কিছুদিন আগেও সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মিশরের সঙ্গে কাতারের প্রায় সাপে-নেউলে সম্পর্ক ছিল!
ছবি: MANAN VATSYAYANA/AFP
ইরান সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
দু মাস ধরে মাহসা আমিনি হত্যার প্রতিবাদ, বিক্ষোভ চলছে ইরানে৷ কাতার বিশ্বকাপেও লেগেছে তার ঢেউ৷ আল থুমামা স্টেডিয়ামে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচ চলার সময় ‘ নারী, জীবন, মুক্তি’ লেখা টি-শার্ট পরে এভাবেই সেই বিক্ষোভে যোগ দেন এক ইরানি নারী৷
ছবি: Luca Bruno/AP/picture alliance
ইরানে হত্যা বন্ধের দাবি
আল রাইয়ানের আহমাদ বিন আলী স্টেডিয়ামে সেদিন ওয়েল আর ইরানের ম্যাচ চলছে৷ গ্যালারিতে এক ইরানী নারীকে এভাবেই ‘স্টপ কিলিং আস’ লেখা মাস্ক পরে দেশজুড়ে হত্যা বন্ধের দাবি জানাতে দেখা যায়৷
ছবি: Charlotte Bruneau/REUTERS
সরকার সমর্থকরাও গ্যালারিতে
শুধু বিরোধী নয়, ইরানের সরকারপন্থিদেরও দেখা মিলছে কাতারে৷ ওয়েলস-ইরান ম্যাচের দিনে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ছবি সম্বলিত টি-শার্ট পরে এসেছিলেন একজন৷
ছবি: Charlotte Bruneau/REUTERS
হাত যার প্রতিবাদের পোস্টার
ইরানের এই নারীর হাতটাই যেন প্রতিবাদের পোস্টার, সেখানে লেখ ‘নারী, জীবন, মুক্তি’৷ ইরান-ওয়েলস ম্যাচের সময় তিনিও ছিলেন গ্যালারিতে৷
ছবি: Charlotte Bruneau/REUTERS
কাতারে পুসি রায়ট!
ইরান-যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচের দিনে এরক টি-শার্ট পরে আল থুমামা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে হাজির ছিলেন কযেকজন তরুণী৷ নিজেদের পুসি রায়ট গ্রুপের সদস্য বলে পরিচয় দেন তারা৷
ছবি: Ciaran Fahey/AP/picture alliance
নীরব সমর্থন
মাহসা আমিনি হত্যার প্রতিবাদ কাতারের মাঠেও হয়েছে৷ গত ২১ নভেম্বর ইংল্যান্ডের বিপক্ষের ম্যাচের আগে জাতীয় সংগীতের সময় নীরব থেকে মাহসা হত্যার বিচার ও ইরানে সবার নিরাপদ জীবনের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবির প্রতি সমর্থন জানান ইরানের ফুটবলাররা৷