এক সময় চরম বৈরি ছিল দু'দেশের সম্পর্ক৷ সময় বদলেছে৷ জার্মানি আর ইসরায়েল এখন পরস্পরের বন্ধু৷ তাই ‘বন্ধুত্বের' পঞ্চাশ বছর পূর্তির এ সময়ে একটি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে দুই দেশ৷
বিজ্ঞাপন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যে হারে ইহুদি নিধন হয়েছিল, তাতে একটা সময় পর্যন্ত জার্মানির সঙ্গে ইসরায়েলের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা কল্পনা করাও ছিল কঠিন৷ সেই কঠিন পথে যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৫ সালে৷ সে বছর থেকেই শুরু দু'দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের প্রত্যক্ষ উদ্যোগ৷ জার্মানির জন্য শুরুটা সুখপ্রদ ছিল না৷ সে বছর প্রথম জার্মান রাষ্ট্রদূত হিসেবে ইসরায়েলে যান রল্ফ পাউলস৷ তাঁকে টমেটো ছুড়ে ‘স্বাগত' জানিয়েছিলেন ইসরায়েলের মানুষ৷
জার্মানি-ইসরায়েল: একটি বিশেষ সম্পর্ক
নাৎসি আমলের ইহুদি নিধন যজ্ঞে প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের অপমৃত্যুর জের ধরে আত্মপ্রকাশ ঘটে ইসরায়েলের৷ তাই ঐতিহাসিক কারণে জার্মানি ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্কের চরিত্র একেবারে অনন্য৷ কিছু মানুষের জীবন জুড়েও রয়েছে এ দুটি ভূখণ্ড...
গল্পগুচ্ছ
জার্মান লেখক সারা স্ট্রিকার ইসরায়েলে প্রায় পাঁচ বছর কাটিয়েছেন৷ সেখানেই লিখেছেন নিজের প্রথম উপন্যাসটি৷ আর সম্প্রতি ইসরায়েলি এবং জার্মান লেখকদের কাজ নিয়ে তৈরি অভিনব একটি গল্পগুচ্ছে একটি ছোট গল্পও লিখেছেন তিনি৷
ছবি: Win Schumacher
মানুষ, প্রকৃতি, ভবিষ্যৎ
এত দীর্ঘ একটা সময় ইসরায়েলে থাকার কারণে সেখানকার মানুষ, এমনকি প্রকৃতিকেও ভালোবেসে ফেলেছেন সারা৷ তাঁর মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফেডারেল জার্মান প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে, বেড়ে চলেছে সহযোগিতা৷ তাই সারা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী৷
ছবি: Win Schumacher
রন্ধনশিল্প
২০১৩ সালে জার্মানির টম ফ্রাঞ্জ ইসরায়েলের একটি বিখ্যাত রান্নার অনুষ্ঠান তথা প্রতিযোগিতা ‘মাস্টার শেফ’-এ প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলেন৷ আর তখন থেকেই ইসরায়েলে তিনি একটি অতি পরিচিত নাম৷
ভালোবাসার টানে
ইসরায়েল আর সেখানকার মানুষদের সঙ্গে এতটাই মিলেমিশে গিয়েছিলেন টম যে, আট বছর আগে ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি৷ হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন৷ এ অঘটনটা ঘটেছিল ভালোবাসার টানেই৷ প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি৷ বর্তমানে টমকে জেরুসালেমের একটি ছোট্ট সিনাগগে প্রতিদিন স্ত্রীর সঙ্গে প্রার্থনা করতে দেখা যায়৷
রাঁধুনি পরিবার
স্ত্রীর পরিবারেই থাকেন টম৷ তাঁরাও যে রান্নায় এক-একজন ওস্তাদ৷ তাই তাঁদের সঙ্গে রান্নাঘরে দারুণ সময় কাটে টমের৷ কত কী যে শিখেছেন তিনি এখানে৷ আসলে জেরুসালেমের খাবার-দাবার নিয়ে একটি বই লিখতেই তিনি এসেছিলেন ইসরায়েলে৷
গায়িকা হওয়ার স্বপ্ন
নাম: রিলি উইলো৷ বয়স: ৩৪৷ স্বপ্ন: দাদির মতো মস্ত গায়িকা হওয়ার৷ রিলির দাদি একসময় বার্লিনের বিখ্যাত গায়িকা ছিলেন৷ তাই রিলি ইসরায়েল ছেড়ে আজ পরবাসী৷ বহুদিন হলো বার্লিনেই ঘর বেঁধেছেন তিনি, সানন্দেই৷ যদিও নাৎসিদের কুখ্যাত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প আউশভিৎসে হত্যা করা হয়েছিল তাঁর প্রিয় দাদিকে৷
বার্লিনের আড্ডা
এটা ইসরায়েল নয়, জার্মানির ছবি৷ রাজধানীর ক্রয়েৎসব্যার্গ এলাকার একটা পাবে বসে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা মারছেন রিলি উইলো আর তাঁর স্বামী বেনেডিক্ট বিন্ডেভাল্ড৷ বার্লিনের এ অঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী নয়ক্যোলন এলাকায় বহু তরুণ ইসরায়েলির বাস৷
হালকা হাসির পাল্লা
ইসরায়েল থেকে আসা রিলি উইলো আর বন্ধু শাহাগ শাপিরা একটা বিষয়ে একমত৷ আর সেটা হলো: ইহুদি বুদ্ধিমত্তা আর ইসরায়েলি ব্যঙ্গ আসলেই অতীতের কালো অধ্যায়টাকে হালকা করতে সাহায্য করেছে অনেকটাই৷
ছবি: Win Schumacher
সোজা প্রশ্ন
পেশায় সাংবাদিক শাপিরার বয়স মাত্র ২৭৷ কিন্তু আজকের জার্মান সমাজে ইহুদিদের কীভাবে দেখা হয়, সেটা জানতে তাঁর দারুণ আগ্রহ৷ তাই পথে-ঘাটে কারুর সাথে দেখা হলেই তিনি প্রশ্ন করে বসেন: আচ্ছা, আপনি কি ইহুদি বিদ্বেষী?
হাসতে তো মানা নেই!
বার্লিনের হলোকস্ট মেমোরিয়ালটি দেখতে যাঁরাই আসেন, তাঁরাই নিজের মোবাইল ফোনটা দিয়ে একটা ‘সেল্ফি’ তুলতে ভোলেন না৷ ‘‘এখানে সেল্ফি তোলা নিষেধ’’ – না, সত্যি সত্যি না৷ দর্শনার্থিদের সঙ্গে দুষ্টুমি করে শাপিরা প্রায়ই এমনটা বলেন৷ আর লোকজন সব ঘাবড়ে গেলে, হো হো করে হেসে ওঠেন তিনি৷
10 ছবি1 | 10
তবে তারপর থেকে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে৷ এক সময় শিল্প, সাহিত্য, চলচ্চিত্র এবং সংগীতে পারস্পরিক আগ্রহ গড়ে ওঠে৷ নানা উৎসব এবং প্রদর্শনীকে ঘিরে শুরু হয় শিল্পীদের যাতায়াত৷ বার্লিনসহ জার্মানির অনেক শহরে বসবাসে আগ্রহী হয়ে ওঠেন ইসরায়েলিরা৷ এই মু্হূর্তে শুধু বার্লিনেই বাস করেন প্রায় ২০ হাজারের মতো ইসরায়েলি৷
তার মানে এই নয় যে, ইসরায়েলের সব কিছুই জার্মানির মানুষ সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন৷ ইসরায়েল ফিলিস্তিনে হামলা চালালে ঠিকই প্রতিবাদ, বিক্ষোভ হয় জার্মানির শহরে শহরে৷ বার্লিনে কোনো ফুটবল ম্যাচে কেউ ইসরায়েলের পতাকা ওড়ালে পুলিশ ঠিকই বাধা দেয়৷
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অবশ্য দু'দেশের সম্পর্ক ভারসাম্যপূর্ণ৷ ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট রভে রিভলিন এখন জার্মানি সফর করছেন৷ দু'দেশের বন্ধুত্বের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যেই তাঁর এ সফর৷ তবে বাণিজ্যও গুরুত্ব পাচ্ছে সফরে৷ ইসরায়েল চারটি যুদ্ধ জাহাজ কিনছে জার্মানির কাছ থেকে৷ এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করা শেষ৷ চলমান সফরে জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে বৈঠকও করছেন রভে রিভলিন৷