জার্মানি কি ইউক্রেনে ‘যুদ্ধরত একটি পক্ষ' হয়ে পড়ছে?
১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
জার্মানি ইউক্রেনকে ট্যাঙ্ক সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের অনেকে তাই প্রশ্ন তুলছেন বিষয়টি রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের সংঘাতে জার্মানিকে একটি পক্ষ করে তুলেছে কিনা।
বিজ্ঞাপন
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস দীর্ঘ দ্বিধা-দ্বন্দ্বের পর গত সপ্তাহে ইউক্রেনে লেপার্ড-২ যুদ্ধট্যাংক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর রুশ সরকারের কাছ থেকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া আসে।
"জোট [ন্যাটো] বা ইউরোপীয় দেশগুলো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা কিছু করছে, সেটা সংঘাতের সাথে সরাসরি জড়িত হিসাবে মস্কোর কাছে বিবেচিত হবে,” বৃহস্পতিবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এ কথা বলেন।
মস্কোর দিক থেকে অভিযোগ উত্থাপিত হবে যে জার্মানি এখন ইউক্রেনের যুদ্ধে সরাসরি পক্ষ; অথচ এমন পরিস্থিতি এড়ানোর চেষ্টা করছিলেন শলৎস। শেষ পর্যন্ত তিনি তা এড়াতে পারলেন না।
বুধবার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম জেডডিএফের সঙ্গে আলাপকালে শলৎস রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জার্মানি সরাসরি জড়িত এমন ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, "না, একেবারেই না। রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে কোনো যুদ্ধ হওয়া উচিত নয়।”
তবে ইউক্রেনে জার্মানির অস্ত্র সরবরাহ ও ইউক্রেনীয় সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেয়ার পর জার্মানি রাশিয়ার রোষের মুখে পড়তে পারে - এমন উদ্বেগ রয়েছে।
অন্যদিকে জার্মান বিশেষজ্ঞরাও দাবি করেছেন যে, রাশিয়াই একমাত্র দেশ যারা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টা কীভাবে দেখছেন এবং এর প্রতিক্রিয়া তিনি কীভাবে জানাতে পারেন।
ইয়েন্স থুরাউ/একেএ
লিওপার্ড টু ট্যাঙ্ক কী, ইউক্রেন কেন তা চাইছে?
যুদ্ধ তাড়াতাড়ি শেষ করতে জার্মানির তৈরি লিওপার্ড টু ট্যাঙ্ক চাইছে ইউক্রেন৷ কিন্তু জার্মানি তা দিতে চাইছে না৷ কিন্তু কেন, আর কেনইবা লিওপার্ড টু ট্যাঙ্ক এত গুরুত্বপূর্ণ?
ছবি: Philipp Schulze/dpa/picture-alliance
লিওপার্ড টু ট্যাঙ্ক চায় ইউক্রেন
ইউক্রেন ও তার মিত্ররা মনে করছে, রাশিয়া ইউক্রেনের যে অংশগুলো দখল করেছে সেগুলো থেকে রুশদের সরাতে পারলে যুদ্ধ তাড়াতাড়ি শেষ করা যাবে৷ কিন্তু সেটা করতে হলে জার্মানির তৈরি লিওপার্ড টু এর মতো ট্যাঙ্ক দরকার বলে জানিয়েছে ইউক্রেন৷ কারণ তাদের কাছে থাকা ট্যাঙ্কগুলো সেই সোভিয়েত আমলের৷
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance
কেন লিওপার্ড টু?
১৯৭৯ সাল থেকে এই ট্যাঙ্ক ব্যবহৃত হয়ে আসছে৷ এটি প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে৷ সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৬৮ কিলোমিটার৷ এতে ১২০ মিমি নলের বন্দুক ছাড়াও আছে দুটি লাইট মেশিন গান৷ যুক্তরাষ্ট্রের আব্রামস ট্যাঙ্কের চেয়ে লিওপার্ড টু চালাতে কম জ্বালানি লাগে বলে ইউক্রেনের জন্য এটি বেশি উপযোগী মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Moritz Frankenberg/dpa/picture-alliance
ইউরোপে বহুল ব্যবহৃত
ইউরোপের এক ডজনেরও বেশি দেশে বর্তমানে দুই হাজারেরও বেশি লিওপার্ড টু ব্যবহৃত হচ্ছে৷ ক্যানাডাও এটি ব্যবহার করছে৷ কসোভো, বসনিয়া, আফগানিস্তান ও সিরিয়া এটি ব্যবহৃত হয়েছে৷
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance
জার্মানির চাওয়া
জার্মানি এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে সাঁজোয়া যানসহ অনেক অস্ত্র দিলেও একা লিওপার্ড ২ ট্যাঙ্ক দিতে রাজি হচ্ছে না৷ কারণ তারা মনে করছে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে যা দেয়া হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হচ্ছে লিওপার্ড টু- যা একটি সমস্যার বিষয় বলে মনে করছে জার্মানি৷ তবে কোনো জোটের আওতায় ইউক্রেনকে ট্যাঙ্ক দেয়া হলে তার অংশ হিসেবে লিওপার্ড টু দেয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে জার্মানি৷
ছবি: Moritz Frankenberg/dpa/picture-alliance
পোল্যান্ড দিতে চায়
পোল্যান্ড বলেছে তারা ইউক্রেনকে লিওপার্ড টু দিবে৷ কিন্তু জার্মানির অনুমতি ছাড়া পোল্যান্ড সেটি ইউক্রেনকে দিতে পারবে না৷ তবে রোববার জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক জানিয়েছেন, পোল্যান্ড ইউক্রেনকে ওই ট্যাঙ্ক পাঠালে জার্মানি আপত্তি করবে না৷
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture-alliance
৩০০, নাকি ১০০?
ইউক্রেন বলছে, তাদের ৩০০টি লিওপার্ড টু ট্যাঙ্ক দরকার৷ তবে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ১০০টি ট্যাঙ্ক হলেই যুদ্ধের ভারসাম্যে পরিবর্তন আনা সম্ভব হতে পারে৷