সিরিয়ায় ইসরায়েলের বিমান হামলাকে কেন্দ্র করে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে৷ মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ গিল মার্সিয়ানো এই দ্বন্দ্ব এবং এতে জার্মানির ভূমিকা কী হতে পারে এ নিয়ে মতামত জানিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে ইরান আসলে ঐ অঞ্চলে নিজেদের শক্তিমত্তা জাহির করতে চাচ্ছে বলে মনে করেন মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ গিল মার্সিয়ানো৷ তারা চাইছে, সিরিয়ায় নৌ ও বিমানঘাঁটি স্থাপন করতে এবং হেজবুল্লাহকে শক্তিশালী করতে৷ অন্যদিকে, ইসরায়েলের আশঙ্কা সিরিয়া সীমান্তে থেকে ইরান ভবিষ্যতে তার দেশে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে৷ এ কারণে ইসরায়েল তাদের নীতি পুরোপুরি পরিবর্তন করে ফেলেছে এবং বড় ধরনের ঝুঁকি নেয়ার পরিকল্পনা করছে৷
জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন বেড়েছে
জার্মানির অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা বিএএমএফ বলছে, মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিলে রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Shkullaku
২.৩ শতাংশ বৃদ্ধি
জার্মানির অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা বিএএমএফ এর সবশেষ পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিল মাসে মোট ৫৯,৬৮০টি আবেদন পড়েছে৷ মার্চ মাসে সংখ্যাটি ছিল ৫৮,৩১৫, অর্থাৎ ১,৩৬৫টি কম৷
ছবি: Brian Leli
শীর্ষে সিরিয়া
সবচেয়ে বেশি আবেদন করেছেন সিরিয়ার নাগরিকরা৷ ২৫,৭৯১ জন৷ অবশ্য মার্চ মাসে সংখ্যাটি ছিল সাড়ে সাত শতাংশ বেশি৷ ২৭,৮৭৮ জন৷
ছবি: Fotolia
প্রথম চার মাসেও শীর্ষে সিরিয়া
২০১৬ সালের প্রথম চার মাসে এক লক্ষ ১৬ হাজার ৮২৬ জন সিরীয় নাগরিক জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন৷ আর সব দেশ মিলিয়ে আবেদনের সংখ্যা দুই লক্ষ ৪৬ হাজার ৩৯৩ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Nietfeld
ইরাকিদের সংখ্যা বেড়েছে
মোট হিসেবে সিরিয়ার পরেই আছে ইরাক৷ তবে সিরিয়ার ক্ষেত্রে আবেদনের সংখ্যা এপ্রিলের চেয়ে মার্চে বেশি হলেও ইরাকের ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো৷ অর্থাৎ মার্চের চেয়ে এপ্রিলেই বেশি ইরাকি আবেদন করেছেন৷ ৯,৫০৫ জন৷ মার্চে ছিল ৮,৯৮২ জন৷
ছবি: DW/R. Shirmohammadi
তৃতীয় স্থানে আফগানিস্থান
সিরিয়া ও ইরাকের পর তালিকায় তিন নম্বরে আছে আফগানিস্তান৷ এপ্রিলে ৮,৪৫৮ জন আফগান রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন৷ মার্চ মাসের চেয়ে সংখ্যাটি ১১.৮ শতাংশ বেশি৷
ছবি: DW/Omid
জাতীয়তা জানা নেই
জাতীয়তা ‘অস্পষ্ট’ এমন আবেদনের সংখ্যা এপ্রিলে ছিল ১,২৯৯ জন৷ সংখ্যাটি মার্চ মাসে ছিল আরও বেশি৷ ১,৮৬৯ জন৷
ছবি: Reuters/A.Konstantinidis
পাঁচ নম্বরে ইরান
১,৯৮১ আবেদন নিয়ে তালিকায় ইরানের নাম আছে পাঁচ নম্বরে৷ ছয়-এ আছে আলবেনিয়া (১,১৮৮ জন)৷ পাকিস্তানি আবেদনের সংখ্যা ১,০৩৮; আর ইরিত্রিয়ার ১,১৫২৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Shkullaku
7 ছবি1 | 7
তবে ইসরায়েল এখনও ইরানের সাথে সরাসরি সংঘাতে জড়ানোর চেষ্টা করছে না৷ কিন্তু এভাবে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ চলতে থাকলে ভবিষ্যতে এটি বড় সংঘাতে রূপ নেবে৷ এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইসরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে এবং কখন তা বাস্তবায়ন করবে৷ কেননা, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পরপর ইরানের ওপর সিরীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছিল৷ কিন্তু এখন সিরিয়া নিজেকে বাঁচাতে অনেকটাই ইরানের উপর নির্ভরশীল৷ তাই ইসরায়েলকে জবাব দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে ইরান সিরিয়ার উপর নির্ভর করতে হবে না৷
কয়েক মাস আগে সিরিয়ায় ইরানের একজন চিফ অফ স্টাফ কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে হাজির হয়েছিলেন৷ এর মধ্যে ছিল অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত কিছু অধিকার দাবি৷
তবে এটাও ঠিক, সিরীয় সরকার বর্তমানে যে অবস্থায় আছে, তাতে ইসরায়েলের সাথে তারাও সরাসরি সংঘাতে যেতে চাইছে না, পাশাপাশি ইরানকে সাথে রাখতে চাইছে তারা৷ অন্যদিকে, রাশিয়ার সমর্থনও ইরানের দিকে৷ যদিও সিরিয়া ইস্যুতে রাশিয়ার পাওয়ার কিছু নেই, বরং হারানোর সম্ভাবনাটাই বেশি৷
এক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশেষ করে জার্মানি স্বতন্ত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷ জার্মানি বলতে গেলে ইসরায়েলের বন্ধু রাষ্ট্র এবং ইরানের সাথেও তাদের একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে৷ পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে একমাত্র জার্মানির অভিজ্ঞতা আছে ইসরায়েল, ইরান এবং হেজবুল্লাহ ইস্যুতে মধ্যস্থতা করার৷
কোণঠাসা হলেও ফুরিয়ে যায়নি আইএস
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট সিরিয়া ও ইরাকে তাদের মূল ক্ষমতাকেন্দ্রে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে৷ তবে মিশর, লিবিয়া, আফগানিস্তানের মতো দেশেও তাদের প্রভাব কম নয়৷ ইউরোপে আইএস ভাবধারায় অনুপ্রাণিত ব্যক্তিদের কার্যকলাপের ঝুঁকিও বাড়ছে৷
ছবি: Reuters/Rodi Said
সিরিয়া ও ইরাকে জমি হাতছাড়া
রাকা শহরকে কেন্দ্র করে বিশাল খিলাফত গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিল আইএস৷ সিরিয়া ও ইরাকের বিস্তীর্ণ অংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে এসে গিয়েছিল৷ মার্কিন নেতৃত্বে কোয়ালিশন বাহিনীসহ একাধিক শত্রুর চাপে তারা অনেক এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে৷
ছবি: Reuters
আর্থিক সংকট
‘খিলাফত’ স্থাপন করতে অর্থের প্রয়োজন৷ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের মতোই এলাকা দখল করে কর বাবদ টাকা তুলে, সেখানকার প্রাকৃতিক ও অন্যান্য সম্পদ বিক্রি করে এসেছে আইএস৷ তাদের যোদ্ধা ও কর্মীদের বেতন-ভাতাও এসেছে সেখান থেকে৷ বর্তমানে জমি হারিয়ে চরম অর্থাভাবে ভুগছে আইএস৷
ছবি: Reuters/Rodi Said
লিবিয়ায় আবার মাথাচাড়া দেবার প্রচেষ্টা
যেখানেই অরাজকতা, সেখানেই সুযোগ খোঁজার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে আইএস৷ সিরিয়া ও ইরাকে ধাক্কা খেয়ে লিবিয়ায় আবার উপস্থিতি বাড়াতে চাইছে তারা৷ সে দেশের একনায়ক গাদ্দাফির বিরুদ্ধে সংগ্রামের পর অনেক চরম ইসলামপন্থি গোষ্ঠী আইএস-এর ছত্রছায়ায় চলে আসে৷ প্রাথমিক সাফল্যের পর সেখানেও জমি হারায় তারা৷ এবার নতুন করে উপস্থিতি বাড়াতে চাইছে আইএস৷
ছবি: Reuters/I. Zitouny
ইয়েমেনে কঠিন লড়াই
অরাজকতার সুযোগ নিয়ে ইয়েমেনেও পা রাখতে চেয়েছিল আইএস৷ কিন্তু সেখানে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কম নয়৷ আল-কায়েদা ও শিয়া বিদ্রোহীদের দৌরাত্ম্যের মাঝে জায়গা করে নিতে আইএস-কে বেগ পেতে হয়েছে৷ শিয়া-সুন্নি সংঘাতের বৃহত্তর কালো ছায়া তাদের অ্যাজেন্ডা অনেকটা দাবিয়ে রেখেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y.Arhab
মিশরে উপস্থিতি
মিশরের সিনাই উপদ্বীপে আইএস ঘাঁটি গেড়েছে৷ খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে তারা মিশরের প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলছে৷ দু’টি গির্জার উপর সাম্প্রতিক হামলার পর সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে৷
ছবি: Reuters/A. Aboulenein
আফগানিস্তানে তালেবানকে চ্যালেঞ্জ
দুর্বল রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নিয়ে এতকাল আফগানিস্তানে চরমপন্থি সন্ত্রাস চালিয়ে এসেছে তালিবান৷ তাদের শক্তিক্ষয়ের ফলে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তার অনেকটাই দখল করতে এগিয়ে এসেছে আইএস৷ জেহাদি ভাবধারার সওদাগর হিসেবে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চাইছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/TTP
অনুপ্রেরণার উৎস
সরাসরি এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ পরিচালনা ছাড়াও ভাবাদর্শ ও জেহাদি রপ্তানির কাজেও সাফল্য দেখিয়েছে আইএস৷ কোনো দেশে সন্ত্রাসী হামলার ডাক দিয়ে এমনকি অচেনা মানুষকেও উদ্বুদ্ধ করে লক্ষ্য হাসিল করেছে এই গোষ্ঠী৷ নিস, প্যারিস, বার্লিন, লন্ডন, স্টকহোম-এর মতো শহরে হামলার ক্ষেত্রে এমনটা দেখা গেছে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বনাম আইএস
পূর্বসূরি বারাক ওবামা-র কড়া সমালোচনা করে ডোনাল্ড ট্রাম্প আইএস-কে নির্মূল করার ব্রত নিয়েছেন৷ ক্ষমতায় আসার পর ইয়েমেন ও আফগানিস্তানে সরাসরি আইএস-এর বিরুদ্ধে সামরিক হামলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷ তবে এক্ষেত্রে কোনো সার্বিক নীতি এখনো স্পষ্ট নয়৷