সম্প্রতি জার্মানি ঘুরে গেলেন বাংলাদেশের একদল সাংবাদিক, যাঁদের কয়েকজন এসেছিলেন দুদক-এর মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড জয় করে৷ দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে বিশেষ এই অ্যাওয়ার্ড, মনে করেন সংশ্লিষ্টরা৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির বন শহরে গত ১৩ থেকে ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হয় গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম৷ ডয়চে ভেলের উদ্যোগে আয়োজিত বাৎসরিক এই ফোরামে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন৷ চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে আসা অতিথিদের মধ্যে ছিলেন দুদক-এর মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড জয়ী পাঁচ সাংবাদিক এবং অ্যাওয়ার্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জার্মান ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন (জিআইজেড), প্রেস ইন্সটিটিউট অফ বাংলাদেশ (পিআইবি) এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহযোগিতায় দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ক রিপোর্টিং-এর জন্য সাংবাদিকদের দুদক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড দেয়া হচ্ছে ২০১৩ সালে৷ চলতি বছরের বিজয়ীরা হচ্ছেন কুন্তাল রয়, সোহেল আহমেদ, মো. মাহবুবুল আলম, ওয়াহিদুজ্জামান, কাজল হাজরা৷
দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ার পাঁচ কৌশল
বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইন্ডিকেটরস গ্রুপ’-এর পরিচালক আওগুস্তো লোপেজ-কার্লোস এক ব্লগ পোস্টে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ার কয়েকটি কৌশল আলোচনা করেছেন৷ ছবিঘরে থাকছে সে’সব কথা৷
ছবি: Getty Images
সরকারি চাকুরেদের জন্য ভালো বেতন
যাঁরা সরকারি চাকরি করেন তাঁদের বেতন যদি খুব কম হয়, তাহলে আয় বাড়াতে তাঁরা ‘অনানুষ্ঠানিক’ পথ অবলম্বন করতে পারেন৷ বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে সরকারি চাকুরেদের কম বেতন ও দুর্নীতির মধ্যে সম্পর্ক পাওয়া গেছে৷
ছবি: DW
অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা
যে সমস্ত দেশের নাগরিকদের সরকারি কর্মকাণ্ড পর্যালোচনার সুযোগ আছে সেসব দেশে দুর্নীতি কম হয়৷ অর্থাৎ যেখানে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, শিক্ষিতের হার বেশি এবং সক্রিয় সুশীল সমাজ রয়েছে সেখানে দুর্নীতির হার কম৷ কেননা এর ফলে বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়, সরকারের নীতি নিয়ে আলোচনা করা যায়৷
ছবি: Colourbox/Hin255
লাল ফিতার দৌরাত্ম কমানো
বিশ্বব্যাংকের ‘ডুয়িং বিজনেস’ প্রতিবেদন বলছে, যে সব দেশে ব্যবসা শুরু করতে, সম্পত্তি নিবন্ধন করতে, আন্তর্জাতিক ব্যবসায় জড়িত হতে নানা ধরনের সার্টিফিকেট, আইন, লাইসেন্স ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সে’সব দেশে দুর্নীতি বেশি হয়৷ তাই বিশ্বব্যাংকের এক গবেষক দুর্নীতির জন্ম দিতে পারে এমন আইনকানুন বাদ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷
ছবি: DW
ভর্তুকি নয়
জ্বালানি খাতে ভর্তুকির নানা সমস্যা আছে৷ প্রায়ই এর সুবিধাভোগী হন ধনীরা৷ এছাড়া ভর্তুকি মূল্যে কেনা জ্বালানি চোরাচালানের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হন অনেকে৷ তাই ভর্তুকির মতো ব্যয়বহুল পদ্ধতির চেয়ে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মানুষদের অর্থ সহায়তা দেয়া যেতে পারে৷
ছবি: DW/W.Jantschits
স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহার
সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নাগরিকদের সরাসরি যোগাযোগ যত কমানো যাবে, দুর্নীতি কমানো ততই সম্ভব হবে৷ এক্ষেত্রে বিভিন্নক্ষেত্রে ইন্টারনেটের সহায়তা নেয়া যেতে পারে৷ সরকারি কেনাকাটার ক্ষেত্রে অনলাইনে টেন্ডার আহ্বানের মতো বিষয়াদি চালু করলে দুর্নীতির সুযোগ কমবে৷
ছবি: Getty Images
5 ছবি1 | 5
প্রতিযোগিতা সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য হচ্ছে সাংবাদিকদের দুর্নীতি প্রতিরোধের উপরে কাজ করতে আরো উৎসাহ দেয়া৷ বাংলাদেশে দুর্নীতি নিয়ে অনেক রিপোর্ট হয়েছে, তবে প্রতিরোধের বিষয়টি মাথায় রেখে তেমন একটা কাজ হচ্ছিল না৷ এই অ্যাওয়ার্ড দুর্নীতি প্রতিরোধকে গুরুত্ব দিচ্ছে৷''
দুদক-এর পুরস্কারজয়ী সাংবাদিকদের সঙ্গে জার্মানি সফর করেন প্রতিযোগিতার অন্যতম সহযোগী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন প্রফেসর মো. মফিজুর রহমান৷ তিনি জানান, সবাই চায় সমাজ প্রতিটি পর্যায়ে দুর্নীতিমুক্ত হোক৷ এ জন্য যে কোনো উদ্যোগই ভালো৷
তবে প্রফেসর রহমান মনে করেন, মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডের মাধ্যমে স্বল্পসময়ের জন্য একটি প্রভাব সৃষ্টি করা গেলেও দীর্ঘমেয়াদে সমাজে প্রভাব সৃষ্টিতে আরো উদ্যোগ প্রয়োজন৷ তিনি বলেন, ‘‘অ্যাওয়ার্ড দিয়ে সাময়িক সময়ের জন্য একটা ইম্প্যাক্ট তৈরি করা যেতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সমাজে একটা প্রভাব আনতে গেলে সেই আকাঙ্খাটা সাংবাদিকদের মধ্য থেকে আসতে হবে৷ এবং গণমাধ্যমের মালিকানার দিক থেকে আসতে হবে৷''
দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক ড. মো. সামসুল আরেফিন জানান, মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড সাংবাদিকদের মধ্যে দুর্নীতি প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করতে উৎসাহ বাড়াচ্ছে৷ আর পুরস্কার বিজয়ীরা এই বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদে কাজও করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘যারা পুরস্কার পাচ্ছে, আমি মনে করি না তাঁরা শুধু পুরস্কারের জন্যই প্রতিবেদনগুলো ছাপেন৷ নিজেদের মনের তাগিদ থেকে তাঁরা সেগুলো ছাপেন৷ দেশের প্রতি তাঁদের দায়িত্ববোধ, সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের বলিষ্ঠ অবস্থান – এগুলো থেকেই তাঁরা আসলে রিপোর্টটা করে থাকেন৷''
প্রতিবেদনটি নিয়ে আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখে জানান, নীচের ঘরে৷
সেরা দশ দুর্নীতির দেশ, সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ
এক সময়ের দুর্নীতির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ এবার হয়েছে ১৩তম৷ চলুন দেখা যাক ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি)-র প্রতিবেদনে এবার কোন কোন দেশ আছে দুর্নীতির সেরা দশে আর কোন দশটি দেশে এখন দুর্নীতি সবচেয়ে কম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Antonisse
৮ থেকে ১০ নম্বরে কঠিন লড়াই
টিআইবি-র এবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমান ১৮ পয়েন্ট করে পাওয়ায় সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দশটি দেশের তালিকায় ৮ নাম্বার থেকে ১০ নাম্বার পর্যন্ত স্থানে রয়েছে উজবেকিস্তান, লিবিয়া এবং ইরিত্রিয়া৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
দুর্নীতির সপ্তম স্বর্গে তুর্কমেনিস্তান
উজবেকিস্তান, লিবিয়া এবং ইরিত্রিয়ার চেয়ে মাত্র এক পয়েন্ট কম হওয়ায় দুর্নীতিতে সেরা দশটি দেশের মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে তুর্কমেনিস্তান৷
ছবি: DW
ইরাকের দুরবস্থা
যুদ্ধ, হানাহানির মাঝে ইরাকে দুর্নীতিও চলছে পুরোদমে৷ তাই ১৬ পয়েন্ট নিয়ে তারা এখন দুর্নীতিতে সেরা দেশগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে৷
ছবি: Reuters
পঞ্চম স্থানে দক্ষিণ সুদান
ইরাকের পরেই রয়েছে সদ্য স্বাধীন দেশ দক্ষিণ সুদান৷ তারা পেয়েছে ১৫ পয়েন্ট৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Karumba
আফগানিস্তান দুর্নীতিরও স্থান
দুর্নীতিরও স্থান না হলে আফগানিস্তান কি আর ১২ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বের চতুর্থ সেরা দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হতো?
ছবি: Getty Images/AFP/S. Marai
দক্ষিণ সুদানের চেয়ে দুর্নীতিতে এগিয়ে সুদান
সুদান থেকে আলাদা হয়ে দক্ষিণ সুদান শুধু মানচিত্রেই নয়, দুর্নীতিতেও কিছুটা ব্যবধান দেখাতে পেরেছে৷ দক্ষিণ সুদান যখন সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে পঞ্চম স্থানে, সুদান তখন ১১ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয়৷ দুর্নীতিতে এগিয়ে থাকা তো আর ভালো কথা নয়!
ছবি: getty / C. Bouroncle
উত্তর কোরিয়া আর সোমালিয়া
সমাজতন্ত্র কায়েমের পথে হোঁচট খেয়ে প্রায় মুখ থুবড়ে পড়লেও দুর্নীতিতে খুব এগিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ আফ্রিকার দারিদ্র্য জর্জরিত দেশ সোমালিয়াও কম যায় না৷ ৮ পয়েন্ট করে নিয়ে এই দুই দেশই আছে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে৷
ছবি: picture alliance/dpa/R. Sinmun
সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ ডেনমার্ক
নারীর জন্য সবচেয়ে ভালো দেশ হওয়ার পর, এবার সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশও হয়েছে ডেনমার্ক৷ স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এই দেশ পেয়েছে ৯২ পয়েন্ট৷
ছবি: Reuters/N. Ahlmann Olesen
দ্বিতীয় নিউজিল্যান্ড, তৃতীয় ফিনল্যান্ড
সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশগুলোর মাঝে নিউজিল্যান্ড ৯১ পয়েন্ট নিয়ে আছে দ্বিতীয় স্থানে আর ৮৯ পয়েন্ট পেয়ে ফিনল্যান্ড দ্বিতীয় স্থানে৷
ছবি: picture alliance / Robert Harding
চতুর্থ স্থানে সুইডেন
আরেক স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ সুইডেনও কম দুর্নীতিগ্রস্থ দেশগুলোর মাঝে খুব ভালো অবস্থানে৷ তাদের পয়েন্ট ৮৭, অবস্থান চতুর্থ৷
ছবি: DW/T. Mehretu
নরওয়ে আর সুইজারল্যান্ডে সমতা
৮৬ পয়েন্ট করে পেয়েছে নরওয়ে আর সুইজারল্যান্ড৷ ফলে দেশ দু’টি আছে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ স্থানে৷
ছবি: EBU
একের হেরফেরে সাত থেকে দশ
সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দশ দেশের তালিকায় সপ্তম থেকে দশম স্থানে আছে যথাক্রমে সিঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবুর্গ এবং ক্যানাডা৷ সপ্তম থেকে দশম, অষ্টম, নবম ও দশমে মাত্র এক পয়েন্ট করে ব্যবধান৷ সিঙ্গাপুরের ৮৪, নেদারল্যান্ডসের ৮৩, লুক্সেমবুর্গের ৮২ এবং ক্যানাডার পয়েন্ট ৮১৷