দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশগুলো থেকে মাদকের বিনিময়ে জার্মানি থেকে তারা অর্থ পাচার করে বলে স্বীকার করেছে গ্যাংটি৷ প্যারিসে এই গ্যাং-এর সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানি শুরু হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান সরকারি চ্যানেল এনডেএর, ভেডেএর এবং স্যুডডয়চে সাইটুং পত্রিকাকে সুযোগ দেয়া হয়েছিল এই মামলার নথিপত্র দেখার৷ এগুলো দেখে সাংবাদিকরা নিশ্চিত যে, বিশ্বব্যাপী কোকেন এবং অর্থপাচারে এই গ্যাং-এর নেটওয়ার্ক রয়েছে৷
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি ডিইএ সন্দেহভাজন গ্যাং সদস্য এবং কলম্বিয়ার মাদক পাচারকারীদের কথোপকথোন রেকর্ড করতে সফল হয়৷ একই ধরনের ঘটনা নিয়ে তদন্ত করছিলো ফ্রান্সের কর্তৃপক্ষ৷ তারা এ ধরনের কয়েকশ' টেলিফোন কথোপকথোন রেকর্ড করেছিল৷ দুই পক্ষের আলোচনা থেকে তারা এটা নিশ্চিত হন যে ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলে এই গ্যাং-এর সদস্যরা ছড়িয়ে রয়েছে৷ তবে এদের নেটওয়ার্ক রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ অ্যামেরিকায়৷
মাদকপাচারের মাধ্যমে ইউরোপ থেকে লাখ লাখ ইউরো পাচারের অভিযোগে এখন পর্যন্ত ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে৷ এদের প্রায় সবাই লেবাননের নাগরিক অথবা লেবানিজ বংশোদ্ভূত৷ তদন্তকর্মকর্তাদের ধারণা এই গ্যাংটি ইউরোপে কর্মকাণ্ড চালালেও মূলত লেবানন থেকে এদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷
প্যারাডাইস পেপার্সে নাম আসা ক’জন প্রভাবশালী ব্যক্তি
আলোচিত ‘প্যারাডাইস পেপার্স’-এ বেশ কয়েকজন উচ্চ পর্যায়ের রাজনীতিবিদ, তারকা ও ধনী ব্যক্তির নাম এসেছে৷ জার্মানির স্যুড ডয়চে সাইটুং পত্রিকা এ সংক্রান্ত গোপন নথি সংগ্রহে সক্ষম হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D.-L. Olivas
বোনো
ইউটু খ্যাত বোনোর নাম আছে প্যারাডাইস পেপার্সে৷ তিনি নুড এস্টেটস নামে মাল্টার এক কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিলেন৷ কোম্পানিটি লিথুয়ানিয়ার একটি শপিং মল নিয়ে হওয়া সন্দেহজনক চুক্তির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে৷ মাল্টা উদার কর নীতির জন্য পরিচিত৷ বোনোর মুখপাত্র অবশ্য কোনো অপরাধের কথা অস্বীকার করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gombert
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী
রুশ গ্যাস কোম্পানি সিবুর-এ উইলবার রসের বিনিয়োগ রয়েছে৷ তবে মার্কিন প্রশাসনে তাঁর দায়িত্ব নিশ্চিতকরণের শুনানিতে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে৷ তবে রস বলছেন, রুশ ঐ কোম্পানিটির উপর যেহেতু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নেই তাই তিনি সেই তথ্য জানাননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Harnik
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ
প্যারাডাইস পেপার্স বলছে, বারমুডা ও কেম্যান দ্বীপের কয়েকটি ‘অফশোর অ্যাকাউন্ট’-এ ১০ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করেছে ব্রিটিশ রানির ব্যক্তিগত এস্টেট ‘দ্য ডাচি অফ ল্যাংকাস্টার’৷ তবে এস্টেট বলছে, এই বিনিয়োগ বৈধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D.-L. Olivas
লুইস হ্যামিল্টন
ফর্মুলা ওয়ান চ্যাম্পিয়ন হ্যামিল্টন তাঁর ব্যক্তিগত জেট কেনার সময় কর ফাঁকি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে প্যারাডাইস পেপার্স৷ ২০১৩ সালে ব্রিটিশ ‘আইল অফ ম্যান’-এ একটি জেট আমদানি করার মাধ্যমে ৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন পাউন্ড ট্যাক্স রিফান্ড পেয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/A. Boyers
গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার
২০০৯ সালে সাবেক এই জার্মান চ্যান্সেলর রুশ-ব্রিটিশ জ্বালানি কোম্পানি টিএনকে-বিপি’তে একটি দায়িত্বে ছিলেন৷ কোম্পানিটি ট্যাক্স হ্যাভেনখ্যাত ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে নিবন্ধিত৷ রুশ এনার্জি জায়ান্ট রোসনেফ্ট ২০১৩ সালে টিএনকে-বিপি কিনে নেয়৷ শ্র্যোডার এখন ঐ কোম্পানির একজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট পরিচালক৷
ছবি: Reuters/O. Astakhova
হুয়ান মানুয়েল সান্টোস
বার্বাডোজের দু’টি অফশোর কোম্পানির পরিচালক হিসেবে নাম এসেছে কলম্বিয়ার এই নোবেলজয়ী প্রেসিডেন্টের৷ ২০০০ সালে অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি ঐ দুই কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
ম্যাডোনা
মেডিকেল পণ্য সরবরাহকারী এক প্রতিষ্ঠানে ম্যাডোনার সন্দেহজনক বিনিয়োগের প্রমাণ পেয়েছে প্যারাডাইস পেপার্স৷
ছবি: Picture alliance/AP Photo/K. Wigglesworth
অমিতাভ বচ্চন
প্যারাডাইস পেপার্সে অমিতাভসহ ৭১৪ জন ভারতীয়ের নাম রয়েছে৷ কর ফাঁকি দেয়ার জন্য তাঁরা বিদেশে লগ্নি করেছেন বলে অভিযোগ৷ এ প্রসঙ্গে নিজের এক ব্লগে ‘বিগ বি’ লিখেছেন, ‘‘এই বয়সে আমি শুধু শান্তি চাই৷’’
ছবি: picture alliance/dpa/J. Kalaene
8 ছবি1 | 8
প্রতি সপ্তাহে জার্মানিসহ অন্যান্য দেশ থেকে ১০ লাখ ইউরো ইউরোপের বাইরে পাচার করত তারা৷ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বড় ধরনের একটি তদন্ত হয় এ বিষয়ে৷ ছ'টি দেশে সন্দেহভাজনদের বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ৷ সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ৮ লাখ নগদ ইউরো জব্দ করে তারা৷ জার্মানি থেকে চারজন আটক হয়৷
এই সদস্যদের মধ্যে কাজ ভাগ করা থাকে৷ যেমন আখেনের কাছ থেকে যে ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছিল, সে জার্মানি, বেলজিয়া, স্পেন, ইটালি এবং ফ্রান্সে নগদ অর্থের বিনিময়ে মাদক বিক্রি করত৷ এরপর সেই অর্থ সে অন্য সদস্যদের ভাগ করে দিয়ে তাদের অলংকার, দামি ঘড়ি এবং দামি গাড়ি কিনতে বলত৷ এরপর তারা সেগুলো লেবাননে নিয়ে বিক্রি করত৷ এরপর সেই অর্থ সরাসরি চলে যেত দক্ষিণ অ্যামেরিকার মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে৷
কর্তৃপক্ষ এখন তদন্ত করছে এই গ্যাং-এর সদস্যরা হেজবুল্লাহর হয়ে কাজ করছে কিনা৷ যদিও এখন পর্যন্ত তারা এমন কোনো তথ্য পাননি যে এই অর্থ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে৷
জার্মানির ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এই মামলা করেছে৷ গত বছর ৬০ হাজার ইউরো অর্থ পাচারের মামলা করেছে তারা৷ প্যারিসে এই মামলার অভিযোগের শুনানি এ মাসের শেষ পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা৷