পোল্যান্ড থেকে শরণার্থীরা জার্মানিতে ঢুকছে, এই অভিযোগে পোল সীমান্তে পাহারার ব্যবস্থা করেছিল একটি জার্মান অতি-দক্ষিণপন্থি সংগঠন।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি পোল্যান্ড এবং বেলারুশের মধ্যে শরণার্থী নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়েছে। পোল্যান্ড শরণার্থীদের বেলারুশে পাঠিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ। তারই মধ্যে রোববার জার্মান-পোল সীমান্তেও উত্তেজনা দেখা গেল। একটি অতি-দক্ষিণপন্থি জার্মান গোষ্ঠীর অভিযোগ, পোল্যান্ড জার্মানিতেও শরণার্থীদের পাঠানোর চেষ্টা করছে। সীমান্ত পেরিয়ে ওই শরণার্থীরা জার্মানির বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ছে। শরণার্থীদের ঠেকাতে তাই অস্ত্র নিয়ে নিজেরাই নেমে পড়েছিল ওই গোষ্ঠীর সদস্যরা। রোববার পুলিশ তাদের আটক করে।
জার্মানিতে অস্ত্র কোথায় যায়, কোথা থেকে আসে
সেনাবাহিনীর অস্ত্রাগার থেকে খোয়া গেছে বিপুল পরিমাণ গুলি ও বিস্ফেরক৷ অন্যদিকে গত তিন বছরে প্রচুর অবৈধ অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ৷কোথায় গেল গুলি, বিস্ফোরক; পুলিশের উদ্ধার করা অস্ত্রের উৎসই বা কী?
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Seidel
সেনাবাহিনীর গুলি ও বিস্ফোরক চুরি!
জার্মানির সেনাবাহিনীর কমান্ডো ইউনিট কেএসকে-র অস্ত্রাগার থেকে ৬০ হাজার রাউন্ড গুলি এবং অন্তত ৬২ কিলোগ্রাম ওজনের বিস্ফোরক লাপাত্তা! গত মাসে খোদ জার্মান সেনাবাহিনীই জানিয়েছে এই তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/Chromorange/bilderbox
কোথায়, কার কাছে গেল?
এত বিপুল পরিমাণ গুলি ও বিস্ফোরক কোথায়, কার হাতে গেল এই নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে জার্মানিতে৷ সম্প্রতি কেএসকে-র সঙ্গে চরম ডানপন্থিদের সম্পৃক্ততার খবর জার্মানিতে বেশ সাড়া জাগায়৷এ কারণে কেএসকে-র কিছু সেনাকে বরখাস্ত করেছে জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gollnow
চরম ডানপন্থিদের উত্থান
সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানিতে চরম ডানপন্থিদের সক্রিয়তা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে৷ গত জুলাই মাসে এক প্রতিবেদনে জার্মানির অভ্যন্তরীন গোয়েন্দা সংস্থা বিএফভিও-ও এমন তথ্যই তুলে ধরেছে৷ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে জার্মানিতে ৩২ হাজার ৮০ জন সক্রিয় চরম ডানপন্থিকে চিহ্নিত করে বিএফভি৷ ২০১৮ সালে সংখ্যাটি ছিল ২৪ হাজার ১০০৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Pfeiffer
চরম ডানপন্থিদের হামলা
গত বছর হানাউ এবং হালেতে হামলা চালায় চরম ডানপন্থি বন্দুকধারী৷
সে বছর বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ ভাল্টার ল্যুবক৷ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আটক দুই চরম ডানপন্থির বিচার সম্প্রতি ফ্রাঙ্কফুর্টে শুরু হয়েছে৷
ছবি: AFP/J. McDougall
বাজেয়াপ্ত অস্ত্রের বিষয়ে অনেক তথ্য অজানা
এদিকে ২০১৭ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে জার্মানির বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধ অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ৷ অস্ত্রগুলোর বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন জার্মানির বাম দলের সাংসদ মার্টিনা রেনার৷ অস্ত্রগুলো কোনো চরম ডানপন্থিদের কাছে পাওয়া গিয়েছিল কিনা, সেগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে কিনা তা জানতে কয়টি তদন্ত হয়েছে - এমন ২০টি প্রশ্নের ১৪টিরই জবাব পাননি৷ সংসদে জানানো হয়েছে, এসব বিষয়ে সরকার এখনো অন্ধকারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Seidel
5 ছবি1 | 5
দ্য থার্ড ওয়ে নামে ওই গোষ্ঠীর সদস্যদের কাছ থেকে পেপার স্প্রে বা গোলমরিচের স্প্রে, লাঠি, বেয়োনেট এবং কাঁটা লাগানো অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। শরণার্থীরা সীমান্ত পেরনোর চেষ্টা করলেই ওই অস্ত্র নিয়ে তাদের রুখে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল ওই গোষ্ঠীর। জার্মানির সীমান্ত শহর গুবেন থেকে পুলিশ তাদের আটক করে। সবমিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশজন ওই কাজ করছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাদের কাছ থেকে সমস্ত অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
শুধু গুবেন নয়, জার্মান সীমান্তের বহু জায়গায় এমন গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। নিজেদের হাতে আইন তুলে নিয়ে তারা পাহারার ব্যবস্থা করেছে বলে জানা গেছে। মিউনিখ-বার্লিনের মতো বড় শহরেও এমন গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে।
জার্মানিতে নিরাপত্তা শঙ্কায় মুসলিমরা
জার্মানির হেসে রাজ্যের হানাও শহরে দক্ষিণপন্থি সন্ত্রাসীর গুলিতে নয় জন মারা গেছেন৷ দু’দিন আগেই নাশকতার পরিকল্পপনা করা কয়েকজন দক্ষিণপন্থিকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ মুসলিম সমাজ সরকারের কাছে নিরাপত্তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Probst
বারে গুলি
১৯ ফেব্রুয়ারি জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে হানাও শহরের একাধিক স্থানে হামলায় নয়জন প্রাণ হারান৷ পরে হামলাকারী ও তার মা-কে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ৷
ছবি: Reuters/R. Orlowski
নিরাপত্তা শঙ্কায় মুসলিমরা
ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জার্মানিতে মুসলিমদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মহাসচিব আবদাসসামাদ এল ইয়াজিদি বলেন, মুসলিমরা ‘খুবই অনিরাপদ’ বোধ করছেন৷ তিনি বলেন, দক্ষিণপন্থার এমন উত্থান আগে কখনো দেখা যায়নি৷
ছবি: imago images/IPON
দেশজুড়ে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা
এই ঘটনার দু’দিন আগে জার্মান পুলিশ দেশটির ছয় রাজ্যে ১৩টি স্থানে অভিযান চালিয়ে এক ডজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে৷ অভিযোগ রয়েছে, এরা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, আশ্রয়প্রার্থী ও মুসলিমদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন৷ তারা চেয়েছিলেন জার্মানিতে একটি গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Stein
নাশকতা পরিকল্পনার মূল হোতা পাঁচ উগ্র ডানপন্থি
জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ ঘটনার তদন্তকারীদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই পরিকল্পনার মূল হোতা ছিলেন পাঁচ জন উগ্র ডানপন্থি সন্ত্রাসী৷ বাকিরা এদের অর্থ জোগাচ্ছিলেন৷ এদের সবাই জার্মান ও পুরুষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Deck
অস্ত্রের খোঁজে
যে ছয় রাজ্যে অভিযান চালানো হয় তা হলো: বাডেন-ভ্যুটেমব্যার্গ, বাভেরিয়া, লোয়ার স্যাক্সনি, নর্থ-রাইন ওয়েস্টফালিয়া, রাইনল্যান্ড-পালাটিনাটে এবং স্যাক্সনি-আনহাল্ট৷ দলটি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তৈরি করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ পুলিশ সম্ভাব্য হামলায় ব্যবহার করার অস্ত্রেরও খোঁজ করছে৷ জার্মান গণমাধ্যম জানিয়েছে, তারা হাতে তৈরি অস্ত্র ও হামলার আইডিয়া সম্বলিত ছবি পরস্পরের সঙ্গে শেয়ার করেছেন৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
মসজিদে নিরাপত্তা চান মুসলিমরা
ডানপন্থি সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের পর মুসলিমরা মসজিদগুলোকে সুরক্ষিত করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ জার্মান মুসলিমদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে আইজিএমজি-র চেয়ার আইমান মাজিয়েক পত্রিকা ড্যের স্পিগেলকে বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রের ভাবা উচিত৷’’ যেসব জায়গায় আগেও হামলা হয়েছে সেগুলোতে, বিশেষ করে পুলিশের উপস্থিতি জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি৷
ছবি: Imago Images/M. Schüler
বছরে একশ’ হামলা
জার্মানির বিভিন্ন মসজিদে বছরে প্রায় একশ’ হামলার ঘটনা নিবন্ধিত হয় বলে জানিয়েছে দেশটির মসজিদগুলোর সবচেয়ে বড় অ্যাসোসিয়েশন ডিটিব৷ গত কয়েক সপ্তাহে উনা, হাগেন, এসেন ও বিয়েলফেল্ডের মসজিদগুলোতে বোমা হামলার হুমকি দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Zinken
উগ্র ডানপন্থার উত্থান
গত জুনে ভাল্টার ল্যুবকে নামের এক রাজনীতিককে হত্যা এবং হালেতে একটি সিনাগগে হামলার ঘটনায় জার্মানিতে উগ্র ডানপন্থা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বলে সবার টনক নড়েছে৷ সম্প্রতি সামাজিক গণমাধ্যমে বেশ কিছু পোস্টও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে৷
ছবি: DW/D. Regev
8 ছবি1 | 8
তালেবান আফগানিস্তান দখল করার পর থেকে ইউরোপে শরণার্থী ঢেউ বেশ খানিকটা বেড়েছে। তার সিরিয়া, ইরাক এবং আফ্রিকা থেকে শরণার্থীরা নিয়মিত ইউরোপে ঢুকছিলেন। বেলারুশ হয়ে পোল্যান্ড দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ার একটি নতুন রাস্তা আবিষ্কার করেছিলেন শরণার্থীরা। কিন্তু পোল্যান্ড কার্যত বর্ডার সিল করে দিয়েছে। সীমান্তের শরণার্থীদের তারা ফের বেলারুশে ঠেলে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পোল্যান্ড থেকে বহু শরণার্থী জার্মানিতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছে বলে জার্মান সীমান্তে বসবাসকারীদের একাংশের অভিযোগ। ফলে অতি-দক্ষিণপন্থিরা তাদের আটকাতে ছোট ছোট গোষ্ঠী তৈরি করছে।
পাল্টা গোষ্ঠীও তৈরি হয়েছে। অতি-দক্ষিণপন্থিদের আটকাতে সীমান্ত অঞ্চলে পাল্টা গোষ্ঠীো তৈরি হয়েছে। তারা অতি-দক্ষিণপন্থিদের কার্যকলাপে নজর রাখছে। প্রতিবাদ মিছিলও করছে।