জার্মানিতে লাগামহীন করোনা সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সে দেশে ভ্রমণ সম্পর্কে সতর্ক করে দিলো৷ এ দিকে জার্মানিতে করোনা টিকা বাধ্যতামূলক করা ও অন্যান্য কড়া পদক্ষেপের জন্য চাপ বাড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের গড় সাপ্তাহিক হার মঙ্গলবার প্রায় ৪০০ ছুঁয়েছে৷ বিদায়ী চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সোমবার পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর দুশ্চিন্তা প্রকাশ করে অভূতপূর্ব সংকটের পূর্বাভাস দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, প্রতি ১২ দিনে সংক্রমণের হার দ্বিগুণ হয়ে ওঠায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে৷ এমন নাটকীয় অবস্থায় করোনা মোকাবিলায় বর্তমান পদক্ষেপ একেবারেই কার্যকর হচ্ছে না বলে মনে করেন ম্যার্কেল৷ কিন্তু কার্যনির্বাহী সরকার প্রধান হিসেবে তিনি নিজে কোনো বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না৷
জার্মানির এমন ‘অসহায়' অবস্থা বিদেশেও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে৷ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সে দেশের নাগরিকদের জার্মানি ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে৷ এমনকি করোনা টিকার সব প্রয়োজনীয় ডোজ থাকলেও বর্তমানে সে দেশে যাওয়া উচিত হবে না বলে অ্যামেরিকা মনে করছে৷ জার্মানি ছাড়াও অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, ক্রোয়েশিয়া ও হাঙ্গেরির মতো দেশ সম্পর্কেও ‘লেভেল ফোর ওয়ার্নিং' জারি করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
বেড়ে চলা করোনা সংক্রমণের জের ধরে জার্মানির হাসপাতালগুলির বেহাল অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন একের পর এক বিশেষজ্ঞ৷ বাভেরিয়া, টুরিঙ্গিয়া ও স্যাক্সনি রাজ্যে ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য পরিষেবা কাঠামো প্রায় ভেঙে পড়ার উপক্রম দেখা যাচ্ছে৷ সে ক্ষেত্রে গুরুতর অসুস্থ হলেও কোনো মানুষকে হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তির নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে না৷ বাঁচার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখে ডাক্তারদের রোগী বাছাই করতে হবে৷
জার্মানিতে এখনো পর্যন্ত ৬৮ শতাংশ মানুষ টিকার সব প্রয়োজনীয় ডোজ নিয়েছেন৷ অনেক আবেদন-নিবেদন করেও এর বেশি মানুষকে টিকা নিতে রাজি করানো যাচ্ছে না৷ এই অবস্থায় অস্ট্রিয়ার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে জার্মানিতেও করোনা টিকা বাধ্যতামূলক করার জন্য জনমতের চাপ বাড়ছে৷ একের পর এক বিশেষজ্ঞ ও রাজনীতিক সেই সুরে সুর মেলাচ্ছেন৷ অনেক আইন বিশেষজ্ঞও এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখছেন না৷ আগামী সরকার ক্ষমতায় এলে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ সেইসঙ্গে সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে অস্ট্রিয়ার মতো গোটা দেশে লকডাউন ঘোষণার সম্ভাবনাও আর উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷
এমন সংকটের মাঝে করোনা টিকা দেবার উদ্যোগ নিয়েও জার্মানিতে বিতর্ক চলছে৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বায়োনটেক-ফাইজার কোম্পানির টিকা সরবরাহে রাশ টেনে আগে মডার্না কোম্পানির টিকার ভাণ্ডার শেষ করার যে উদ্যোগ নিচ্ছে, তার বিরুদ্ধে প্রবল সমালোচনা শোনা যাচ্ছে৷ বিদায়ী স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান সোমবার বিষয়টির উপর আলোকপাত করলেও ক্ষোভ দূর হচ্ছে না৷ স্পান মডার্না কোম্পানির টিকার কার্যকরিতা তুলে ধরে যত দ্রুত সম্ভব বায়োনটেক কোম্পানির টিকার জোগান আরও বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন৷
জার্মানিতে করোনার চতু্র্থ ঢেউ
কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা এক লাখের কাছাকাছি৷ সংক্রমণের হার, দৈনিক মৃতের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে জার্মানিতে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব আসলে চতুর্থ ঢেউ আঘাত হানার ইঙ্গিত৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Philipp von Ditfurth/dpa/picture alliance
দৈনিক মৃত্যু বাড়ছে দ্রুত
ওপরের ছবিটি বন শহরের এক কবরস্থানের৷ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া স্ত্রীকে স্মরণ স্বামী৷ জার্মানির অনেক শহরেই এখন করোনায় মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে৷ রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট (আরকেআই)- এর তথ্য অনুযায়ী, গত পহেলা অক্টোবর সারা দেশে করোনায় মারা গিয়েছিলেন ১৮ জন৷ ১৮ নভেম্বর সেই সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ২০১ জন৷ একদিনে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর নতুন রেকর্ড এটি৷
ছবি: Ute Grabowsky/photothek/imago images
কফিনেও সতর্কবার্তা
কবরস্থানে কফিনের সারি৷ একটি কফিনে জার্মান ভাষায় লেখা, ‘ইনফেকসিয়ন্সগেফার’, যার অর্থ ‘ইনফেকশনের ঝুঁকি’৷
ছবি: Robert Michael/dpa/picture alliance
ঝুঁকিতে বয়স্করা
ছবিতে এক ‘বৃদ্ধাশ্রমে’ একজনকে চিকিৎসাসেবা দেয়ার দৃশ্য৷ করোনায় বয়স্কদের প্রাণহানির শঙ্কা সবসময়ই বেশি৷ সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধাশ্রমে নতুন করে হানা দিয়েছে করোনা৷
ছবি: Jens Kalaene/dpa/picture alliance
শিশুরাও আক্রান্ত
জার্মানিতে শিশুরাও করোনায় সংক্রমিত হচ্ছে৷ পাঁচ থেকে ১৪ বছর বয়সিদের সংক্রমণের হার আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় তিনগুণ বেড়েছে৷ জার্মানির স্কুলে আগে থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়মিত করোনা পরীক্ষা করানো হয়৷ এখন সব শিশুকে টিকা দেয়া শুরুর কথা ভাবা হচ্ছে৷
ছবি: Christian Charisius/dpa/picture alliance
আইসিইউ সংকট
লাইপসিশের এক হাসপাতালের আইসিইউতে করোনার চিকিৎসার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে ওপরের ছবিতে৷ সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে রোগীর ভিড়ও বাড়ছে৷ আইসিইউ খালি পাওয়াও মুশকিল হয়ে যাচ্ছে অনেক হাসপাতালে৷
ছবি: Jan Woitas/dpa/picture alliance
কঠোর স্বাস্থ্যবিধি
হামবুর্গের এই স্টেশনের মতো জার্মানির সব শহরের গণপরিবহনে আবার ভিড় দেখা যাচ্ছে৷ তবে মাস্ক পরার পাশাপাশি স্বাস্থবিধির কঠোর অনুসরণও সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ দুই ডোজ টিকা নেয়া, করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ হওয়া কিংবা করোনা থেকে অতি সম্প্রতি সেরে ওঠা ব্যক্তিরাই কেবল ট্রেন, ট্রাম বা বাসে উঠতে পারেন৷
ছবি: Eibner/imago images
হোম অফিস
একটা সময় সংক্রমণ মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় জার্মানিতে হোম অফিসের বাধ্যবাধকতা অনেক শিথিল করা হয়েছিল৷ কিন্তু ‘ফোর্থ ওয়েভ’-এর আশঙ্কা জাগতেই আবার নড়েচড়ে বসছে প্রশাসন৷ সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে ঘরে বসে কাজ করাকেই আবার অগ্রাধিকার দিচ্ছেন অনেকে৷৷
ছবি: Imago/S. Midzor
ক্রিসমাস মার্কেটে কঠোরতা
ওপরে ফ্রাইবুর্গ শহরের ক্রিসমাস মার্কেটের ছবি৷ স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে সীমিত সংখ্যক দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে ক্রিসমাস মার্কেট চলছে সেখানে৷ জার্মানির বেশিরভাগ শহরেই এভাবে ক্রিসমাস মার্কেট বসেছে৷ তবে বাভারিয়া রাজ্য কর্তৃপক্ষ খুব কঠিন নিয়মে শুরু করেছে ক্রিসমাস মার্কেট৷ কোনো শহরে সপ্তাহে সংক্রমণ এক হাজার হবার সঙ্গে সঙ্গেই পুরো এলাকা লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে বাভারিয়া৷
ছবি: Philipp von Ditfurth/dpa/picture alliance
আবার বিনা পয়সায় করোনা পরীক্ষা
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় সবাইকে নিজের খরচে করোনা পরীক্ষা করানোর কথা বলেছিল জার্মান সরকার৷ কিন্তু করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের ইঙ্গিত দেখা দিতেই আবার বদলে গেছে নিয়ম৷ ফিরে এসেছে বিনে পয়সায় করোনা পরীক্ষা করানোর সুযোগ৷