শনিবার জার্মানির উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের ম্যুনস্টার শহরের সিটি সেন্টারে মানুষের ওপর গাড়ি তুলে দেওয়ার ঘটনায় গাড়ি চালকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন৷ আহত ২০ জনের মধ্যে ছ'জনের অবস্থা আশংকাজনক৷ আত্মঘাতী চালক একজন জার্মান নাগরিক৷
ছবি: picture alliance / Bernd Thissen/dpa
বিজ্ঞাপন
নর্থ রাইন ভেস্টফালেন রাজ্যের ম্যুনস্টার শহরের কেন্দ্রে শনিবার ছুটির দিনে স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ শহরের কেন্দ্র বা সিটি সেন্টারের কিপেনকার্ল পাবের বাইরে এই ঘটনা ঘটে৷ ৪৮ বছর বয়সি একজন জার্মান নাগরিক ধূসর রঙের ফলক্সভাগেন কোম্পানির একটি ক্যাম্পিং গাড়ি নিয়ে রেস্তোরাঁর বাইরে বসে থাকা মানুষের উপর দ্রুত গতিতে চালিয়ে দেন৷ ঘটনার পরপরই গাড়িচালক পিস্তল দিয়ে গাড়ির ভেতরে বসেই আত্মহত্যা করেন৷ পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় গাড়ি চালক ছাড়া দু'জন পথচারীর মৃত্যু হয়েছে৷ আহত হয়েছে ২০ জন৷ যাদের মধ্যে ছ'জনের অবস্থা আশংকাজনক৷
আলোচিত কয়েকটি আত্মঘাতী হামলা
ব্রিটিশ সংস্থা ‘অ্যাকশন অন আর্মড ভায়োলেন্স’ গত নভেম্বরে জানায়, গত ৩০ বছরে বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে আত্মঘাতী বোমা হামলায় কমপক্ষে ৫০ হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছেন৷
ছবি: DW/ISPR
প্রথম আত্মঘাতী হামলা
১৮৮১ সালের ১৩ মার্চ এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন রুশ সম্রাট দ্বিতীয় আলেকজান্ডার৷ তাঁকে বহনকারী ঘোড়ার গাড়ির সামনে বোমা হামলা চালিয়েছিল ২৫ বছরের তরুণ ইগনাটি গ্রিনেভিৎস্কি৷ তিনি ‘দ্য পিপলস উইল’ নামে বামপন্থি একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/Fine Art Images/Heritage Images
ফিলিস্তিনের প্রথম নারী আত্মঘাতী হামলাকারী
ওয়াফা ইদ্রিস নামে ২৮ বছরের এক নারী ২০০২ সালের ২৭ জানুয়ারি জেরুসালেমে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে এক বয়স্ক ইসরায়েলিকে হত্যা করেন৷ আহত হয়েছিলেন প্রায় ১০০ জন৷ ইদ্রিসের পিঠে ঝোলানো ব্যাগে ১০ কেজি ওজনের বোমা ছিল৷ ছবিতে তাঁকে গ্রাজুয়েশন পোশাক পরা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে৷ ‘আল-আকসা মার্টায়ার্স ব্রিগ্রেড’ হামলার দায় স্বীকার করেছিল৷ পরবর্তীতে নারী আত্মঘাতী হামলাকারীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল তারা৷
ছবি: Getty Images
সবচেয়ে প্রাণঘাতী আত্মঘাতী হামলা
২০০১ সালে আল-কায়েদার আত্মঘাতী হামলাকারীরা বিমান ছিনতাই করে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনে হামলা চালিয়েছিল৷ এতে প্রায় তিন হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছিলেন৷
ছবি: AP
বিদেশি বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা
১৯৮৩ সালের অক্টোবরে লেবাননে গৃহযুদ্ধ চলার সময় শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত ৩০০-র বেশি মার্কিন ও ফরাসি সামরিক বাহিনীর সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল৷ দু’টি ট্রাক নিয়ে হামলাকারীরা ব্যারাকে ঢুকে পড়েছিল৷ প্রতিটি ট্রাকে প্রায় ১ দশমিক ৪ টন বিস্ফোরক ছিল৷ ৯/১১ হামলার আগে ওটিই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলা৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Bouchon
শরীরের ভেতর বোমা স্থাপন
২০০৯ সালে সৌদি আরবের তৎকালীন উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নাইফকে (ছবি) হত্যার উদ্দেশ্যে নিজের শরীরের ভেতর বোমা স্থাপন করিয়েছিলেন ২৩ বছরের সৌদি তরুণ আল-আসিরি৷ পরে মোবাইল ফোনের সাহায্যে বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটনা হলেও তাতে শুধু আসিরিই মারা যান৷ প্রিন্স নাইফ সামান্য আহত হয়েছিলেন৷ উল্লেখ্য, শরীরের ভেতরে বোমা স্থাপন করলে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সেটি সহজে ধরা পড়ে না৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/H. Ammar
রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ড
১৯৯১ সালের ২১ মে ভারতের তামিলনাড়ুতে আত্মঘাতী এক বোমা হামলায় নিহত হন দেশটির সেই সময়কার প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী৷ তাঁকে হত্যা করেন শ্রীলঙ্কার তৎকালীন জঙ্গি সংগঠন ‘লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম’ বা এলটিটিই-র এক নারী সদস্য৷ ছবিটি হামলার কয়েক সেকেন্ড আগের মুহূর্তে তোলা৷ শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ বন্ধ করতে সে দেশে শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠিয়েছিল ভারত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাংলাদেশে প্রথম আত্মঘাতী হামলা
বাংলাদেশে নব্য জেএমবি-র সদস্যদের মধ্যে সম্প্রতি আত্মঘাতী প্রবণতা বেশি দেখা গেলেও, আগেও এর নজির ছিল৷ ২০০৫ সালের ২৯শে নভেম্বর গাজীপুরে বাংলাদেশের প্রথম আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে৷ ঐ হামলায় আত্মঘাতী হামলাকারী জেএমবি-র সদস্য আসাদসহ আটজন নিহত হয়েছিলেন৷ উপরের ছবিটি সম্প্রতি সিলেটে এক অভিযানের সময় তোলা৷
ছবি: DW/ISPR
7 ছবি1 | 7
রবিবার সকালে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ম্যুনস্টার পুলিশ ও রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলিরা নিশ্চিত করেছেন ৪৮ বছরের ঐ ব্যক্তি ম্যুনস্টারের বাসিন্দা ছিলেন৷ এর আগে অবশ্য নর্থ রাইন ভেস্টফালেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হ্যারবার্ট রয়েল জানিয়েছিলেন গাড়িচালক একজন জার্মান নাগরিক৷ পূর্ণ তদন্তের পর ঘটনার কারণ জানা সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি৷
মানুষের অভাবনীয় সাড়া
ঘটনার সাথে সাথে স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আহতদের জন্য রক্ত দিতে জড়ো হন অনেক মানুষ৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, মানুষের এমন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আগে কখনো দেখা যায়নি৷
এদিকে, ম্যুনস্টার পুলিশ ঘটনার পরপরই সবাইকে গুজব না ছড়ানোর আহ্বান জানান৷ তারা টুইটারে লেখেন, ‘ফেসবুক ও টুইটারে কেউ যেনো গুজব না ছড়ায়৷ আমরা ঘটনাস্থলে আছি৷ সিটি সেন্টার খালি করে দিন৷ বাড়ি ফিরে যান৷'
এছাড়া ঘটনার সময় যারা প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন, তাদের ডেকে পাঠিয়েছে পুলিশ৷ ঘটনার কোনো ছবি প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে৷
জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ম্যুনস্টার শহরের এই হামলায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের জন্য গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন৷ দুঃখ প্রকাশ করেছেন জার্মানি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও৷
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাঁক্রো টুইটারে হতাহতদের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন৷