জার্মানির একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, হোয়াইট হাউসের কর্মীদের উপর কয়েক বছর নজরদারি করেছেন জার্মান গোয়েন্দারা৷ এর আগে ২০১৫ সালে ইইউ'র কয়েকটি সদস্যরাষ্ট্রের উপর নজরদারির তথ্য প্রকাশ হওয়ায় বিব্রত হয়েছিল বার্লিন৷
বিজ্ঞাপন
সংবাদ বিষয়ক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘ডের স্পিগেল' বৃহস্পতিবার জানায়, তাদের কাছে এমন সব নথি এসেছে যেখানে হোয়াইট হাউসসহ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সরকারের উপর জার্মানির নজরদারি করার প্রমাণ রয়েছে৷
জার্মানির বিদেশ বিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থা বিএনডি ১৯৯৮ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রায় চার হাজার সিলেক্টর কিওয়ার্ড দিয়ে হোয়াইট হাউসের ইমেল ঠিকানাগুলোর উপর নজর রাখে৷
হোয়াইট হাউস ছাড়াও মার্কিন পররাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়, বিমানবাহিনী ও মেরিন কর্পসসহ কয়েকটি প্রতিরক্ষা সংস্থা এবং নাসার উপরও জার্মান গোয়েন্দারা নজরদারি চালিয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে৷
কয়েকশত বিদেশি দূতাবাস এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফও এই নজরদারির বাইরে ছিল না বলে জানা গেছে৷
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন নিয়ে মন্তব্য জানাতে অস্বীকার করেছে বিএনডি৷
বিব্রত বার্লিন
২০১৩ সালে এডওয়ার্ড স্নোডেনের প্রকাশ করা নথিতে দেখা গিয়েছিল যে, যুক্তরাষ্ট্র জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মোবাইল ফোনে আড়ি পেতেছে৷ সেই সময় বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছিল৷ ম্যার্কেল তখন বলেছিলেন, ‘‘বন্ধুদের ওপর গোয়েন্দাগিরি করা ঠিক নয়৷''
কিন্তু পরবর্তীতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে জার্মানির সহযোগী কয়েকটি রাষ্ট্রের উপর নজরদারি চালাতে মার্কিন সংস্থাকে জার্মানির সহায়তা করার খবর বের হলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিল বার্লিন৷
কে কার উপর গোয়েন্দাগিরি চালাচ্ছে?
চ্যান্সেলর ম্যার্কেল-এর ফোনে এনএসএ-র আড়ি পাতার অভিযোগ নিয়ে জার্মানি উত্তাল হয়ে উঠেছিল৷ এবারের অভিযোগ, জার্মান গোয়েন্দা সংস্থা নাকি এনএসএ-র অনুরোধে ফ্রান্স, ইইউ সহ ইউরোপীয় নেতাদের উপর নজরদারি চালিয়েছে৷ এর পরিণাম কী হবে?
ছবি: imago
সর্বগ্রাসী ক্ষুধা
নাইন-ইলেভেনের পর থেকে এনএসএ সহ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা নিয়ে দেশে-বিদেশে বিতর্কের শেষ নেই৷ অভিযোগ উঠছে, খোদ অ্যামেরিকার আইনও তোয়াক্কা করে না এনএসএ৷ তাদের বিদেশি সহযোগীরাও আইন ও নিয়ন্ত্রণের ঊর্ধ্বে উঠে বে-আইনি কার্যকলাপ চালাচ্ছে বলে বার বার শোনা যাচ্ছে৷ ব্যক্তি, রাজনীতিক, কোম্পানি সংক্রান্ত সব তথ্যের রাক্ষুসে ক্ষুধার যেন শেষ নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বন্ধুদের মধ্যে এ সব চলে না’
মোবাইল-কেলেঙ্কারির জের ধরে ক্ষুব্ধ ম্যার্কেল এমন মন্তব্য করেছিলেন৷ ফলে অ্যামেরিকার উপর আস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল৷ এখন যদি প্রমাণিত হয় যে, খোদ জার্মানির বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএনডি ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ-এর উপর নজরদারি চালিয়েছে – তাও আবার সেই অ্যামেরিকার এনএসএ-র অনুরোধে, তখন ম্যার্কেল কীভাবে মুখ দেখাবেন?
ছবি: Reuters/Y. Herman
শুধুই রাজনীতি, নাকি ব্যবসা?
শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর নজরদারির কী কারণ থাকতে পারে? তাদের সাফল্যের ফর্মুলা চুরি করা? এয়ারবাস প্রস্তুতকারক সংস্থা ইএডিএস এই সন্দেহের বশে পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানিয়েছে – তবে সরাসরি এনএসএ-র বিরুদ্ধে নয়৷ মনে রাখতে হবে, শুধু যাত্রীবাহী বিমান নয়, প্রতিরক্ষা সরঞ্জামও তৈরি করে ফ্রান্স ও জার্মানির এই কোম্পানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
ক্ষুব্ধ ইউরোপ
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার তাঁর দপ্তরের উপর এনএসএ ও বিএনডি-র গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে অত্যন্ত বিচলিত৷ তবে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের কাঠামোর মধ্যে থেকে তিনি বলেছেন, জার্মান কর্তৃপক্ষ ও সংসদকে এর তদন্ত করে সত্য ঘটনা প্রকাশ্যে আনতে হবে৷
ছবি: Reuters/E. Vidal
কেঁচো খুঁড়তে সাপ
এনএসএ কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আনতে মূল ভূমিকা রেখেছিলেন এডওয়ার্ড স্নোডেন৷ রাশিয়ায় নির্বাসিত এই ‘হুইসেলব্লোয়ার’-কে জার্মানিতে এনে সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাব পাবার চেষ্টা করেছিলেন সবুজ দলের সদস্য হান্স ক্লিস্টিয়ান স্ট্র্যোবেলে৷ সে যাত্রায় ফল হয়নি৷ ওয়াশিংটন-কে চটাতে সাহস পায়নি অনেক মহল৷ এবারের কেলেঙ্কারির পর সেই আপত্তি ধোপে টিকবে কিনা, বলা কঠিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কোণঠাসা ম্যার্কেল প্রশাসন
এনএসএ-বিএনডি কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর আস্থার পাত্র বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস দেমেজিয়ের-এর ভূমিকা নিয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠছে৷ চ্যান্সেলর-এর দপ্তরের প্রধান হিসেবে তিনি এ বিষয়ে কতটা জানতেন, কোন তথ্য গোপন করেছেন এবং সংসদে প্রশ্নের মুখে মিথ্যা কথা বলেছেন কিনা, তা জানতে চাপ বেড়েই চলেছে৷ শেষ পর্যন্ত তিনি সহ অনেকেরই গদি নিয়ে টানাটানি হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Hase
6 ছবি1 | 6
জার্মান সংসদ বিএনডির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের অঙ্গীকার করলেও এখন পর্যন্ত তা করতে পারেনি৷ চলতি বছরের শুরুতেএনএসএ অনুসন্ধান কমিটিকে ম্যার্কেল বলেছিলেন, তিনি বিএনডির কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু জানেন না৷