জার্মানির কেন্দ্রীয় অভিবাসন ও শরণার্থী সংস্থা, বিএএমএফ বা বাম্ফ-এর প্রধান হিসেবে আশ্রয়প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব দেখান, এমন এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে৷ শুক্রবার ঐ সংস্থার প্রধানকে বরখাস্ত করা হয়৷
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি বাম্ফ-এর ব্রেমেন শাখার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুসের বিনিময়ে শরণার্থীদের আশ্রয়ের আবেদন অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে৷ সংস্থাটি ঘুস নিয়ে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে প্রায় ১,২০০ জনের আবেদন অনুমোদন করে বলে অভিযোগ৷ অবশ্য পরে এক তদন্তে দেখা গেছে, অনুমোদন দেয়ার সংখ্যাটি প্রথমে যত বলা হয়েছিল, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে কম৷
ইউরোপে বাংলাদেশিদের আশ্রয় পাওয়ার হার বাড়ছে
ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান বিষয়ক সংস্থা ‘ইউরোস্ট্যাট’-এর গত ১০ বছরের হিসেব বলছে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের আশ্রয়ের আবেদন সফল হওয়ার হার বাড়তির দিকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. de Sakutin
তিন ধরনের সুরক্ষা
শরণার্থী, হিউম্যানিটারিয়ান ও সাবসিডিয়ারি – এই তিন ক্যাটাগরিতে আশ্রয় দেয়া হয়ে থাকে৷ যাঁরা শরণার্থী স্ট্যাটাসের যোগ্য নন, কিন্তু দেশে ফিরে গেলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ার ঝুঁকিতে আছেন, তাঁদের সাবসিডিয়ারি সুরক্ষা দেয়া হয়৷ আর অসুস্থতা ও অভিভাবকহীন শিশুদের মানবিক (হিউম্যানিটারিয়ান) বিবেচনায় আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/R. Schlesinger
২০১৭
বাংলাদেশি নাগরিকদের পক্ষ থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গতবছর ১৬,০৯৫টি আশ্রয়ের আবেদন পড়েছে৷ আর একই সময়ে বাংলাদেশিদের করা ২,৮৩৫টি আবেদন সফল হয়েছে৷ শতকরা হিসেবে সেটি ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ৷ জার্মানিতে আবেদন পড়েছে ২,৭২৫টি৷ সফল হয়েছে ৩১৫টি৷ এমনিভাবে অন্য কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান এরকম – যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,৬৩০; সফল ৬৫), ইটালি (আবেদন ৫,৭৭৫; সফল ১,৮৮৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৪,১১৫; সফল ৪৪০)৷
ছবি: imago/Cronos
২০১৬
বাংলাদেশিরা ১৪,০৮৫টি আবেদন করেছেন৷ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে ২,৩৬৫টি৷ অর্থাৎ সফলতার হার ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৬৬৫; সফল ১১০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,৪০৫; সফল ৮০), ইটালি (আবেদন ৬,২২৫; সফল ১,৬১০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৪,১১০; সফল ৪৪০)৷
ছবি: picture alliance/dpa/D. Kalker
২০১৫
সেবছর সফলতার হার ছিল ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ৷ আবেদন পড়েছিল ১১,২৫০টি৷ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত ১,৭৮৫টি৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ২৬৫; সফল ৩৫), যুক্তরাজ্য (আবেদন ১,০১৫; সফল ১২০), ইটালি (আবেদন ৫,০১০; সফল ১,২২৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৫৬০; সফল ৩১৫)৷
ছবি: Imago/Frank Sorge
২০১৪
আবেদন ৭,৫৮০টি৷ সফল ৭৮৫৷ শতকরা হার ১০ দশমিক ৩৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪৬৫; সফল ৫০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৭০০; সফল ৭৫), ইটালি (আবেদন ৭৩৫; সফল ৩১৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৮৭০; সফল ২৬৫)৷
ছবি: Megan Williams
২০১৩
সফলতার হার ৭ দশমিক ১ শতাংশ৷ আবেদন ৮,৩৩৫৷ সফল ৫৯৫৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ২৫০; সফল ২০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৮৩০; সফল ৫৫), ইটালি (আবেদন ৫৯০; সফল ৩০০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৬১৫; সফল ১৪৫)৷
ছবি: picture alliance/robertharding/A. Robinson
২০১২
সফলতার হার ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১৯০; সফল ১০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৮০০; সফল ৫০), ইটালি (আবেদন ১,৪১০; সফল ১,০৪৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৭৫৫; সফল ৮৫)৷
ছবি: Imago/Rainer Weisflog
২০১১
সফলতার হার ২ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১১০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৪৮০; সফল ৪০), ইটালি (আবেদন ৮৬৫; সফল ৬৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ৩,৭৭০; সফল ৪৫)৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/M. Cohen
২০১০
সফলতার হার ৪ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ১০৫; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৪৬০; সফল ৫৫), ইটালি (আবেদন ২১৫; সফল ৪০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ২,৪১০; সফল ২৫)৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Uhlemann
২০০৯
সফলতার হার ৩ দশমিক ৮ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৩৭৫; সফল ৪৫), ইটালি (আবেদন ৮৮৫; সফল ৮৫) এবং ফ্রান্স (আবেদন ১,৭৮০; সফল ৩৫)৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. de Sakutin
২০০৮
সফলতার হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশ৷ কয়েকটি দেশের পরিসংখ্যান – জার্মানি (আবেদন ৪০; সফল ০), যুক্তরাজ্য (আবেদন ৩৯৫; সফল ৯৫), ইটালি (আবেদন ৯৫০; সফল ৫০) এবং ফ্রান্স (আবেদন ১,৬৬০; সফল ৩৫)৷
ছবি: picture alliance/dpa/D. Kalker
৩২ দেশের হিসাব
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮ সদস্যরাষ্ট্র এবং ‘ইউরোপিয়ান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট’ বা ইএফটিএ-এর অন্তর্ভুক্ত আইসল্যান্ড, লিখটেনস্টাইন, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের পরিসংখ্যান অন্তর্ভুক্ত করেছে ইউরোস্ট্যাট৷ আরও পরিসংখ্যান জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Megan Williams
12 ছবি1 | 12
তবে অভিযোগ ওঠায় শুক্রবার বাম্ফ এর প্রধান ইউটা কর্ড্টকে বরখাস্ত করা হয়৷ তাঁর জায়গায় বাভেরিয়া রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করা এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে রবিবার জানায় জার্মান সংবাদ সংস্থা ডিপিএ ও ফোকুস অনলাইন৷ সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে তারা জানায়, সংশ্লিষ্ট ঐ ব্যক্তির নাম হান্স-একহার্ড জমার৷ তিনি বর্তমানে বাভেরিয়া রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিদেশি ও আশ্রয় আইন নিয়ে কাজ করছেন৷ আশ্রয়প্রার্থীদের প্রতি তাঁর কঠোর মনোভাবের কারণে সরকারি মহলে তিনি ‘দুর্ধর্ষ কুকুর’ বলে পরিচিত৷ আবেদন করা শরণার্থী কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত কিনা, তা কঠোরভাবে তদন্ত করে দেখার পক্ষে তিনি৷ তাছাড়া যাদের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, তাদের দ্রুত দেশে ফেরত পাঠাতে চান জমার৷
অবশ্য জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাঁর নিয়োগের খবরে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি৷
উল্লেখ্য, জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফারের সঙ্গে জমারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে৷ আর সেহোফারের দল সিএসইউ হচ্ছে বাভারিয়া রাজ্যে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের দল সিডিইউর জোটসঙ্গী৷
শরণার্থী সংকট নিয়ে বর্তমানে সেহোফারের সঙ্গে ম্যার্কেলের সংকট চলছে৷ কারণ, সেহোফার শরণার্থী নীতি আরও কড়া করতে চান৷ অন্য কোনো দেশে শরণার্থীরা নিজেদের নথিভুক্ত করলে জার্মানির সীমান্ত থেকে তাদের বিদায় করতে চান তিনি৷ আগামী অক্টোবর মাসে বাভেরিয়ায় রাজ্য নির্বাচনের আগে ভোটারদের মন জয় করতে সেহোফার এমন চরম মনোভাব দেখাচ্ছেন বলে সমালোচনাও হচ্ছে৷