জার্মান নারী জাবিনে সিরিয়া ও ইরাকে পাড়ি দিয়েছিলেন আইএস-এর কোনো যোদ্ধাকে বিয়ে করতে৷ নিজের দুই সন্তানকে বার্লিনে ফেলে চরমপন্থি আদর্শের পথে পা বাড়ান তিনি৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার চরমপন্থি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা ‘আইএস'-এর সদস্য হবার অপরাধে ৩২ বছর বয়সি জার্মান নারীর পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করল জার্মানির একটি আদালত৷
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবার পর ২০১৩ সালের শেষের দিকে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন জাবিনে৷ ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইরাকে ইসলামিক স্টেট-এর সাথেই ছিলেন তিনি৷
সে-বছর কুর্দি সেনার হাতে ধরা পড়লে তাকে জার্মানিতে ফেরত পাঠাবার প্রক্রিয়া শুরু হয়৷
২০১৮ সালে তিনি ফিরে এলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ও স্টুটগার্ট শহরের একটি আদালতে আরম্ভ হয় বিচারপ্রক্রিয়া৷
সিরিয়ায় গিয়ে যে আইএস-যোদ্ধাকে বিয়ে করেন জাবিনে, তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে মারা গেছেন বলে আদালতে জানিয়েছেন তিনি৷
সাবেক আইএস জঙ্গিদের যেভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ কয়েকদিন ধরে ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়া নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার পথ খুঁজছে৷ এদিকে, সিরিয়ার শাম্মার গোষ্ঠী ইতিমধ্যে সাবেক আইএস সদস্যদের গ্রহণ করা শুরু করেছে৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
কারা এই শাম্মার?
সিরিয়ার আরব গোষ্ঠী শাম্মারের সশস্ত্র বাহিনী ‘আল সানাদিদ’ এতদিন ধরে মার্কিনপন্থি সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স, এসডিএফ-এর সাথে যুক্ত ছিল৷ সম্প্রতি দল পালটে তারা কুর্দি নেতৃত্বাধীন নাগরিক গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছে৷ উল্লেখ্য, বর্তমান উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বিশাল এলাকা শাম্মার গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
একসাথে প্রার্থনা
শাম্মার নেতা শেখ হুমায়দি দাহাম আল-হাদির বাড়ির চত্বরে প্রতি শুক্রবার প্রার্থনাসভা হয়৷ সেখানে আশেপাশের গ্রামের মানুষজনের সাথে উপস্থিত থাকেন ইসলামিক স্টেটের সাবেক সৈনিকরাও৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
ঘরে বাইরে...
ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়া শাম্মার সদস্যরা শেখের আহ্বানে ফিরে এসেছে৷ শেখের নির্দেশেই প্রথমে তারা এসডিএফের কাছে আত্মসমর্পণ করে ও পরে বিচারের সম্মুখীন হয়৷ বিচারপর্ব শেষ হলে তবেই আবার শাম্মার গোষ্ঠীর সম্পূর্ণ সদস্যপদ ফিরে পাবেন প্রাক্তন জঙ্গিরা৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
ঘরে ফেরা নিয়ে বিতর্ক
শেখ যদিও অস্বীকার করেছেন যে শাম্মারের ঘরে জঙ্গিদের কোনো স্থান নেই, কিন্তু শাম্মার গোষ্ঠীর জনসংযোগকর্তা আবদুলহামিদ আল-আসকারের মতে, এমন ঘটনা আকছার ঘটছে৷ আল-সানাদিদে একাধিক প্রাক্তন আইএস সদস্য রয়েছেন বলে জানান তিনি৷ শেখ হুমায়দির মতে তাদেরও অবস্থান জঙ্গিবাদের বিপরীতেই৷ সে কারণেই বর্তমানে তারা পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলি ও আইএস সৈনিকদের মধ্যে মধ্যস্থতা করছেন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/S. Backhaus
কেন ঘরে ফিরছে সৈনিকরা?
শেখ হুমায়দির মতে, সিরিয়ার শাম্মার সদস্যরা নেতৃত্বের চাপে পড়ে আইএস-এ যোগদান করে৷ এখন নিজেদের গোষ্ঠীর কাছে ফিরে আসতে চাইছে তারা৷ এবং শাম্মার তাদের সেই সুযোগ দিচ্ছে বলেই এমনটা সম্ভব হচ্ছে৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
ফেরার পর...
সাবেক আইএস সৈনিকদের ঘরে ফেরার পরের জীবন মোটেও আরামের নয়৷ কড়া অনুশাসনের মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হয় তাদের৷ শোনা গেছে, ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিরা এসে পর্যবেক্ষণ করে গেছেন প্রাক্তন জঙ্গিদের এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
যুদ্ধক্ষেত্রে ফুটবল
ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যে সংযোগকারী একটি রেলপথ বেশ কয়েক বছর ধরে নিষ্ক্রিয়৷ শেখের মতে, রেলপথের বেশিরভাগ অংশই এখন কয়েকশ’ আইএস জঙ্গিদের দখলে৷ বাতিল হওয়া রেললাইনের পাশেই চলছে ফুটবল খেলা৷ ওপরের ছবিতে রয়েছে সেই দৃশ্য৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
7 ছবি1 | 7
ব্লগে সোচ্চার ‘আইএস'-পত্নী
জাবিনের মতে, ইসলামিক স্টেটের প্রতি তার আকর্ষণের মূল কারণ ছিল শরিয়া আইন, যার প্রতি নিষ্ঠার ফলেই বার্লিনে দুই সন্তানকে রেখে আগে ইসলাম ধর্মগ্রহণ ও পরে দেশত্যাগ করেন তিনি৷
কিন্তু আইএস-এর হয়ে যুদ্ধে নামার ইচ্ছা তার কখনোই ছিলনা বলেও জানান তিনি৷
সরকারপক্ষের আইনজীবীদের মতে, সিরিয়া ও ইরাকে থাকাকালীন অস্ত্রচালনায় প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন জাবিনে৷
বার্লিনে থাকার সময়েই নানা ব্লগের মাধ্যমে ইসলামী চরমপন্থি বার্তা ছড়াতেন জাবিনে৷ তার এই কার্যকলাপ তিনি দেশ ছাড়ার পরেও চালিয়ে যান৷
তবে আদালতকে জাবিনে জানিয়েছেন, একসময় তিনি ইসলামিক স্টেট ছেড়ে দিয়েছিলেন৷