বিদেশে থাকা ইসলামিক স্টেটের জার্মান যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে জার্মানি৷ তবে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রয়েছে ভিন্ন মত৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির যেসব নাগরিক তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেটে' যোগ দিয়েছে, তাদের মধ্যে ১৮ যোদ্ধার বিরুদ্ধেগ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে জার্মানকর্তৃপক্ষ৷ সোমবার বেশ কিছু গণমাধ্যম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে৷ স্যুডডয়চে সাইটুং, এনডিআর এবং ডাব্লিউডিআর জানিয়েছে, সিরিয়া, ইরাক, তুরস্ক আর গ্রিসে এ পর্যন্ত ৬৩ জন জার্মান আইএস জঙ্গি ধরা পড়েছে৷ তবে শিশুসহ আটককৃতদের মোট সংখ্যা শতাধিক বলে জানিয়েছে গণমাধ্যমগুলো৷ বিদেশে বন্দি এই জার্মান আইএস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে জার্মানির ৩২টি আদালত বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে৷
সিরিয়ায় কুর্দিদের হাতে বন্দি ইউরোপীয় জঙ্গিদের ফিরিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের দাবির পরই এমন পদক্ষেপ নিল জার্মানি৷ সোমবার জার্মান সরকারের মুখপাত্র স্টেফান সাইবার্ট জানিয়েছেন, ‘‘কীভাবে এই বন্দিদের ফেরত আনা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে, এ বিষয়ে জার্মানি আরও তদন্ত করবে৷''
জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যেসব জার্মান আইএস যোদ্ধা বিদেশে রয়েছে, তাদের দেশে ফেরার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে৷ তবে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বলেছেন ভিন্ন কথা৷ তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবি বাস্তবায়ন করা বেশ কঠিন৷ কেননা এসব বন্দিদের তখনই দেশে ফেরত আনা যাবে যখন, দেশে ফেরা মাত্র তাদের গ্রপ্তার করা যাবে৷
অ্যালিস্টার ওয়ালশ/এপিবি
সাবেক আইএস জঙ্গিদের যেভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ কয়েকদিন ধরে ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়া নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার পথ খুঁজছে৷ এদিকে, সিরিয়ার শাম্মার গোষ্ঠী ইতিমধ্যে সাবেক আইএস সদস্যদের গ্রহণ করা শুরু করেছে৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
কারা এই শাম্মার?
সিরিয়ার আরব গোষ্ঠী শাম্মারের সশস্ত্র বাহিনী ‘আল সানাদিদ’ এতদিন ধরে মার্কিনপন্থি সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স, এসডিএফ-এর সাথে যুক্ত ছিল৷ সম্প্রতি দল পালটে তারা কুর্দি নেতৃত্বাধীন নাগরিক গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছে৷ উল্লেখ্য, বর্তমান উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বিশাল এলাকা শাম্মার গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
একসাথে প্রার্থনা
শাম্মার নেতা শেখ হুমায়দি দাহাম আল-হাদির বাড়ির চত্বরে প্রতি শুক্রবার প্রার্থনাসভা হয়৷ সেখানে আশেপাশের গ্রামের মানুষজনের সাথে উপস্থিত থাকেন ইসলামিক স্টেটের সাবেক সৈনিকরাও৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
ঘরে বাইরে...
ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়া শাম্মার সদস্যরা শেখের আহ্বানে ফিরে এসেছে৷ শেখের নির্দেশেই প্রথমে তারা এসডিএফের কাছে আত্মসমর্পণ করে ও পরে বিচারের সম্মুখীন হয়৷ বিচারপর্ব শেষ হলে তবেই আবার শাম্মার গোষ্ঠীর সম্পূর্ণ সদস্যপদ ফিরে পাবেন প্রাক্তন জঙ্গিরা৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
ঘরে ফেরা নিয়ে বিতর্ক
শেখ যদিও অস্বীকার করেছেন যে শাম্মারের ঘরে জঙ্গিদের কোনো স্থান নেই, কিন্তু শাম্মার গোষ্ঠীর জনসংযোগকর্তা আবদুলহামিদ আল-আসকারের মতে, এমন ঘটনা আকছার ঘটছে৷ আল-সানাদিদে একাধিক প্রাক্তন আইএস সদস্য রয়েছেন বলে জানান তিনি৷ শেখ হুমায়দির মতে তাদেরও অবস্থান জঙ্গিবাদের বিপরীতেই৷ সে কারণেই বর্তমানে তারা পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলি ও আইএস সৈনিকদের মধ্যে মধ্যস্থতা করছেন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/S. Backhaus
কেন ঘরে ফিরছে সৈনিকরা?
শেখ হুমায়দির মতে, সিরিয়ার শাম্মার সদস্যরা নেতৃত্বের চাপে পড়ে আইএস-এ যোগদান করে৷ এখন নিজেদের গোষ্ঠীর কাছে ফিরে আসতে চাইছে তারা৷ এবং শাম্মার তাদের সেই সুযোগ দিচ্ছে বলেই এমনটা সম্ভব হচ্ছে৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
ফেরার পর...
সাবেক আইএস সৈনিকদের ঘরে ফেরার পরের জীবন মোটেও আরামের নয়৷ কড়া অনুশাসনের মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হয় তাদের৷ শোনা গেছে, ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিরা এসে পর্যবেক্ষণ করে গেছেন প্রাক্তন জঙ্গিদের এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া৷
ছবি: DW/B. Gerdziunas
যুদ্ধক্ষেত্রে ফুটবল
ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যে সংযোগকারী একটি রেলপথ বেশ কয়েক বছর ধরে নিষ্ক্রিয়৷ শেখের মতে, রেলপথের বেশিরভাগ অংশই এখন কয়েকশ’ আইএস জঙ্গিদের দখলে৷ বাতিল হওয়া রেললাইনের পাশেই চলছে ফুটবল খেলা৷ ওপরের ছবিতে রয়েছে সেই দৃশ্য৷