সিরিয়ার আল-হোল শরণার্থী ক্যাম্প থেকে তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ওই নির্দেশ দেওয়া হয়৷ আইএসপত্নী ও সন্তানদের একসঙ্গে ফেরত আনতে এমন নির্দেশ এই প্রথম৷
এ আদেশের মাধ্যমে জার্মানির মৌলিক আইনের ওই বিধানের উপরে জোর দিয়েছেন বিচারকরা, যেখানে বিদেশে অপরাধমূলক কাজে গেলেও কূটনৈতিক সহায়তা পাওয়ার অধিকারের কথা বলা হয়েছে৷
জার্মানির লোয়ার স্যাক্সনি থেকে যাওয়া ওই আইএস-পত্নীর প্রত্যাবাসনে সায় না দিলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছিল৷ আদেশে বিচারক বলেছেন, এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ না নিলে এই শিশুরা ‘ভয়ানক, অযৌক্তিক এবং অনিবার্য সংকটের' মুখোমুখি হবে৷
বৃহস্পতিবার প্রকাশ হওয়া ওই আদেশের বিষয়ে আদালতের একজন মুখপাত্র বলেন, দ্রুত বিচারের মাধ্যমে আসা এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে৷ যারা ফেরত আসতে চায়, তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে শনাক্তের কথাও বলা হয়েছে আদেশে৷
গত মে মাসের হিসাবে দেখা যায়, আইএসের বিরুদ্ধে কুর্দি-নেতৃত্বাধীন বাহিনীর জয়ের পর আল-হোল ক্যাম্পে ৭৬ হাজার জন বন্দী ছিলেন৷ ওই ক্যাম্পের আলাদা জায়গায় ১২ হাজার বিদেশি নারী ও শিশু ছিল বলে জুন মাসের শুরুতে জানিয়েছিল এএফপি৷
ধর্ম, বর্ণ, স্বাধীনতা নানা নামে উগ্রবাদ ছড়ায় বিশ্বে৷ বিভিন্ন মতাদর্শের উপর ভর করে গড়ে ওঠে জঙ্গি সংগঠন কিংবা সশস্ত্র বাহিনীও, যা অনেক সময় রূপ নেয় সন্ত্রাসে৷
ছবি: Reutersএকসময় পোশাকি নাম ছিল ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দি লিভ্যান্ট’৷ সংক্ষেপে আইএসআইএল কিংবা আইএসআইএস৷ তবে বেশি পরিচিত আইএস বা দায়েশ নামে৷ বিশ্বজুড়ে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে ২০১৪ সালে তারা আত্মপ্রকাশ করে৷ ২০১৫ সালের শেষ পর্যন্ত বিশ্বের ৮৫টি দেশ থেকে প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধা জঙ্গি গোষ্ঠীটিতে যোগ দেয়৷ সিরিয়া, ইরাকের একটি বড় অংশ দখল করে নিয়েছিল তারা৷ তবে সম্প্রতি শেষ ঘাঁটিটিও হারিয়েছে আইএস৷
ছবি: Reutersজর্ডান-প্যালেস্টেনিয়ান মুসলিম ধর্মীয় গুরু আব্দুল্লাহ আজম৷ একটি জিহাদি জার্নালে আফগানিস্তানে লড়াইয়ের জন্য মুজাহিদিন বা বিদেশি যোদ্ধাদের বাহিনী গড়ার ধারণা দেন তিনি৷ ১৯৮৯ সালে মারা গেলেও তাঁর মতবাদই বৈশ্বিক জিহাদি ধারণার জন্ম দেয়৷ যার উপর ভিত্তি করে ১৯৮৮ সালে আল-কায়েদা প্রতিষ্ঠা করেন ওসামা বিন লাদেন৷ আফগানিস্তান থেকে রাশিয়ার সৈন্য প্রত্যাহারের পরে আল-কায়দার শাখা ছড়িয়ে পড়ে অনেক মুসলিম দেশে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Ausafবিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামেও আল-কায়দার জিহাদি মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে জঙ্গি সংগঠন গড়ে ওঠে৷ তারই একটি আল শাবাব৷ সোমালিয়ায় শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০৬ সালে গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ দেশটিতে বহু বিদেশি নাগরিক হত্যার জন্য দায়ী তারা৷ আফ্রিকার এমন আরেকটি জঙ্গি গোষ্ঠী নাইজেরিয়ার বোকো হারাম৷ ২০১৪ সালে ৩০০ স্কুল ছাত্রী অপহরণের ঘটনায় গোষ্ঠীটি আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনায় আসে৷
ছবি: Reuters/J. Penneyবর্ণবাদী মতবাদের উপর ভিত্তি করে বিশ্বে যুগে যুগে নানা গোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে৷ বিংশ শতকে ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসি’ বা সাদাদের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণার উপর ভিত্তি করে অ্যামেরিকায় গড়ে ওঠে ‘কু ক্লুক্স ক্ল্যান’ নামের কট্টর বর্ণবাদী গোষ্ঠী৷ বর্ণবাদের উপর ভর করে ইউরোপে উত্থান হয় ফ্যাসিবাদের৷
ছবি: picture alliance / ZUMAPRESS.comসাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে পশ্চিমা দুনিয়ায় উগ্র ডানপন্থার প্রকটতা বাড়ছে৷ অ্যামেরিকা, ইউরোপ থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত এই মতাদর্শ ছড়িয়ে পড়ছে৷ ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও সংস্কৃতির মানুষের প্রতি এর অনুসারীরা রক্ষণশীল৷ সবশেষ নিউজিল্যান্ডে হামলা করে ৫০ জনকে হত্যায় অভিযুক্তও তেমনই একজন৷
ছবি: Reuters/M. Mitchellসমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কিংবা কমিউনিস্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেয় বিশ্বের অনেক উগ্র বামপন্থি সংগঠন৷ রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে, সরকারি কর্মকর্তা, সম্পদশালী মানুষদের তারা শত্রু বিবেচনা করে৷ ফিলিপিন্সের কমিউনিস্ট পার্টি নিও পিপলস আর্মি বা ভারতের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি তারই উদাহরণ - যাদেরকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করে আসছে দেশগুলোর সরকার৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Quraishiইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে একটি স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে আসছে ফিলিস্তিনিরা৷ এজন্য সশস্ত্র যুদ্ধের পথ বেছে নিয়েছে হামাস, প্যালেস্টাইন লিবারেশন ফ্রন্ট, প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ৷ উগ্রতার কারণে এই দলগুলোকে সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এমন স্বাধিনতাকামী সংগঠন আছে আয়ারল্যান্ড, রাশিয়া, পাকিস্তান ভারতসহ বিশ্বের নানা দেশে৷
ছবি: picture-alliance সংবাদদাতাদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে বন্দীদের মধ্যে কয়েক ডজন জার্মান স্ত্রী এবং তাদের শ'খানেক সন্তান রয়েছেন৷
পুরুষ ও নারীদের মধ্যে যারা জার্মানিতে ফিরবেন, তাদেরকে অবশ্যই ফৌজদারি তদন্তের মুখোমুখি হতে বলে জানিয়েছিল জার্মান সরকার৷ তবে, নারীদের ক্ষেত্রে আরো যাচাই-বাছাইয়ের কথা বলেছেন সরকারি কৌঁসুলিরা৷
মে মাসের শেষে জার্মানির গণমাধ্যম জানিয়েছিল, আল-হোল ক্যাম্প থেকে ২ বছর ও ৪ বছর বয়সি দুই অনাথ শিশুকে ফেরত আনতে প্রস্তুত জার্মান সরকার৷ সিরিয়ার বাগুজের যুদ্ধে মারা গিয়েছেন তাদের মা, যার নিবাস ছিল দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির বাডেন-ভ্যুর্টেনবার্গ রাজ্যে৷
জার্মানির বাইরে ফ্রান্স ও ব্রিটেন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, নিজেদের নাগরিকদের সিরিয়া থেকে ফেরত আনবে না৷ এদিকে, জুনের শুরুতে পাঁচ শিশুকে ফিরিয়ে আনে নরওয়ে, যাদের বাবারা যুদ্ধে মারা গেছেন এবং মায়েরা নিখোঁজ৷
এমবি/কেএম (এএফি, ডিপিএ, রয়টার্স, বিবিসি)