২০০৮ সালে একটি মসজিদে হামলার ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে তাকে দিয়ে জোর করে জবানবন্দি নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বিজ্ঞাপন
জার্মান-ইরানি দ্বৈত নাগরিকত্ব ছিল জামশিদ শরমদের। ইরানের সংবাদমাধ্যম সোমবার জানিয়েছে, তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। গত বছর তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারি আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে। অভিযোগ, ২০০৮ সালে শিরাজে একটি মসজিদে হামলা চালিয়েছিল এই ব্যক্তি। যে ঘটনায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, সোমবার সকালে জামশিদকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। বস্তুত, তার বিচার চলাকালীন ইরানের গোয়েন্দারা অভিযোগ করেছিল, জামশিদের সঙ্গে সিআইএ এবং এফবিআইয়ের যোগাযোগ ছিল। মোসাদের সঙ্গেও সে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল।
জামশিদের বিরুদ্ধে আরো বড় অভিযোগ আছে। ইরানের গোয়েন্দাদের দাবি, তোন্দার 'সন্ত্রাসী' গোষ্ঠীর অন্যতম নেতা এই ব্যক্তি। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এই গোষ্ঠী ইরানে বিপ্লব ঘটানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। তারা পুরনো রাজবংশকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে চায় বলে অভিযোগ। সে জন্য তারা ইরানের বর্তমান শাসকের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালাচ্ছে, এমনই দাবি গোয়েন্দাদের। জামশিদ সেই গোষ্ঠীর অন্যতম রিং মাস্টার বলে দাবি করা হয়েছে।
রাইসির আমলের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ইরানের ৬৩ বছর বয়সি প্রেসিডেন্ট এব্রাহিম রাইসি৷ ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তার মেয়াদে দেশ-বিদেশে কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: Iran's Presidency/WANA/Handout via REUTERS
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত
২০২১ সালের জুন মাসে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন অতি রক্ষণশীল এব্রাহিম রাইসি৷ ভোটের আগে হেভিওয়েট রক্ষণশীল ও উদার প্রার্থীদের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল৷
ছবি: Vahid Salemi/AP Photo/picture alliance
কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের নির্দেশ
দায়িত্ব নেওয়ার একবছরের মধ্যে ‘হিজাব ও সতীত্ব আইনের’ কঠোর বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয় রাইসির সরকার৷ এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে পুলিশি হেফাজতে থাকার সময় ২২ বছর বয়সি মাশা আমিনি মারা যান৷ কঠোর পোশাক রীতি না মানার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছিল৷
ছবি: Fatemeh Bahrami/AA/picture alliance
বিক্ষোভ দমন
মাশা আমিনির মৃত্যুর পর নারীদের নেতৃত্বে ইরানজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল৷ রাইসির সরকার সেটি কঠোর হাতে দমন করেছিল৷ এতে কয়েকশ মানুষ, যার মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক ডজন সদস্যও ছিলেন, প্রাণ হারান বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে৷
ছবি: SalamPix/ABACA/picture alliance
পরমাণু আলোচনা স্থগিত
২০১৫ সালে ছয়টি দেশ ও ইরানের মধ্যে যে পরমাণু চুক্তি সই হয়েছিল ২০১৮ সালে ডনাল্ড ট্রাম্প সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছিলেন এবং তারপর ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল৷ রাইসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর পরমাণু আলোচনা বিষয়ে কঠোর মনোভাব গ্রহণ করেন৷ ফলে বাইড্রেন প্রশাসন ও ইরানের সরকারের মধ্যে যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছিল, সেটি স্থগিত হয়ে যায়৷
ছবি: Hamid Foroutan/ISNA/AP/picture alliance
সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন
চীনের মধ্যস্থতায় প্রায় সাত বছর পর ২০২৩ সালের মার্চে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হয়৷ ২০১৬ সালে সৌদি আরবে ইরানের প্রখ্যাত শিয়া নেতা নিমর আর-নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছিল৷
ছবি: daniel0Z/Zoonar/picture alliance
ইসরায়েলে হামলা
গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যে ১৩ এপ্রিল ইরান প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালায়৷ সিরিয়ার দামেস্কে তেহরানের কনস্যুলেটে হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে এই হামলা চালিয়েছিল ইরান৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের মিত্রশক্তিরা ইরানের বেশিরভাগ ড্রোন ও মিসাইল আটকে দিয়েছিল৷
ছবি: Mohammad Hamad/picture alliance/Anadolu
6 ছবি1 | 6
জামশিদ ক্যালিফোর্নিয়াতেই থাকতেন। ২০২০ সালে তাকে দুবাই থেকে অপহরণ করা হয়। এরপর তাকে ইরানে নিয়ে গিয়ে বন্দি করা হয় বলে জানা গেছে। বস্তুত, ২০২৩ সালে জামশিদকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করার পর তার মেয়ে ডিডাব্লিউকে বলেছিলেন, ''ইরানে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রাজত্ব চালাচ্ছে। আমার বাবার মতো অনেককেই তারা দেশের বাইরে থেকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়।'' সে সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অ্যামেরিকা-সহ বহু গোষ্ঠী জামশিদের উপর থেকে মৃত্যুদণ্ড তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করেছিল। সোমবার জামশিদকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর বার্লিন এটিকে হত্যা বলে বর্ণনা করেছে।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শলৎস এর কড়া নিন্দা করেছেন। জার্মানি জানিয়েছে, ইরান যেভাবে একজন জার্মান নাগরিককে হত্যা করেছে, তা নিন্দনীয়। ইরানকে এর ফল ভুগতে হবে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-সহ একাধিক মানবাধিকার সংগঠন এই ঘটনার নিন্দা করেছে। অ্যামেরিকাও এর প্রতিবাদ করেছে।