1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শৈশবের হুটোপাটি

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়১৯ এপ্রিল ২০১৩

কলকাতার জার্মান কনসুলেটের বাগানটি বৃহস্পতিবার সকালে খুলে দেওয়া হয়েছিল বাচ্চাদের একটি নেচার অ্যাক্টিভিটি ক্যাম্পের জন্য৷ সমাজের প্রান্তবাসী জনা দশেক বাচ্চা সেখানে মাতল শৈশবের অমলিন আনন্দে৷

German Consul General Rainer Schmiedchen is being presented with memento and bouquet by the South Kolkata Trekkers Association, on the German Consulate Lawn. 18 April 2013 Copyright: sirsho bandopadhyay / DW
ছবি: DW/S. Bandopadhya

দারুণ মজা হল ওদের৷ ১০-১২ বছরের বাচ্চাদের দলটা যে শুধু সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশ থেকে আসা, তা-ই নয়, ওদের অনেকেই মূক ও বধির৷ একটি বাচ্চা কিছুটা মানসিক প্রতিবন্ধীও বটে৷ বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতার জার্মান কনসুলেটের সুন্দর বাগানে ওদের নিয়ে এসেছিল ‘রিচ' নামে একটি শিশুকল্যাণ সংস্থা৷ আর ওদের জন্য চমৎকার এক নেচার অ্যাকটিভিটি ক্যাম্পের আয়োজন করেছিল সাউথ ক্যালকাটা ট্রেকারস অ্যাসোসিয়েশন৷ প্রায় ঘণ্টা দুয়েক ধরে কনসুলেটের বাগানে ওরা শিখল গিটবাঁধা দড়ি বেয়ে উপরে ওঠা-নামা, দড়ির জাল বেয়ে ওঠা থেকে শুরু করে, যে কায়দায় পর্বতারোহীরা গভীর খাদ, গিরিখাত বা সাঁকোবিহীন নদী পার হয় দড়ি বেয়ে, সেই কায়দাও৷ শেখা মানে রীতিমত হাতেকলমে সবকিছু করে দেখল ওরা, অবশ্যই ট্রেকারস অ্যাসোসিয়েশনের অভিজ্ঞ পর্বতারোহী সদস্যদের সতর্ক তদারকিতে৷ এবং ওই কসরৎগুলো করতে ভয় পেল না কোনও বাচ্চাই৷ হ্যাঁ, দড়ি বেয়ে একেবারে উপরে উঠে যাওয়ার পর নেহাতই নার্ভাস হয়ে গিয়ে দু-একজন একটু চ্যাঁ-ভ্যাঁ করল বটে, কিন্তু নেমে এসেই আবার দৌড় দিল পরের তালিমটা নেওয়ার জন্য৷

১০-১২ বছরের বাচ্চাদের দলটা যে শুধু সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশ থেকে আসা, তা-ই নয়, ওদের অনেকেই মূক ও বধিরছবি: DW/S. Bandopadhya

ব্যাপারটা ঘটল কীভাবে ? কলকাতার জার্মান কনসাল জেনারেল রাইনার শ্মিডশেন বললেন, প্রায় প্রতিদিনই তাঁর দপ্তরে বহু চিঠি আসে নানারকম আর্জি জানিয়ে৷ তেমনই একটি চিঠি একদিন তাঁর নজরে পড়ে, যেখানে সাউথ ক্যালকাটা ট্রেকারস অ্যাসোসিয়েশন তাদের পরবর্তী মাউন্ট গঙ্গোত্রী-থ্রি অভিযানের জন্য আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা চেয়েছে৷ সাধারণভাবে জার্মান কনসুলেট বা জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তর এ ধরনের কাজে আর্থিক সহায়তা দিতে পারে না৷ এর জন্য কোনও তহবিল তাদের নেই৷ কিন্তু কনসাল জেনারেল শ্মিডশেন বললেন, তার যেটা ভাল লেগেছিল যে ওই চিঠিতে সংস্থাটি খুব নির্দিষ্টভাবে তাদের উদ্দেশ্য এবং অতীতের কর্মতৎপরতা ও সাফল্য সম্পর্কে গুছিয়ে জানিয়েছিল৷ রাইনার শ্মিডশেন নিজে যেহেতু পর্বতারোহণ নিয়ে খুবই উৎসাহী, তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হন৷

এই পর্যায়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় ওয়াকার মেট্রোআর্ক কেমিক্যালস নামে একটি সিলিকন প্রস্তুতকারক সংস্থা৷ ভারতের স্বাধীনতার বছর, অর্থাৎ ১৯৪৭ সাল থেকে ব্যবসা করে চলা এই বাঙালি প্রতিষ্ঠানটি গত ১৪ বছর ধরে জার্মানির মিউনিখের ওয়াকার সংস্থার সঙ্গে বাণিজ্যিক গাঁটছড়া বেঁধে ব্যবসা করে যাচ্ছে৷ ওয়াকার মেট্রোআর্ক বহুবছর ধরেই নানা সামাজিক সেবা-প্রকল্পে অর্থসাহায্য দিয়ে আসছে, কিন্তু কোনও পর্বতারোহণ অভিযানে আর্থিক সহযোগিতা এই প্রথম, জানালেন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৌমিত্র মুখোপাধ্যায়৷ কনসাল জেনারেল শ্মিডশেনের উৎসাহেই তাঁদের সঙ্গে সাউথ ক্যালকাটা ট্রেকারস অ্যাসোসিয়েশনের কথা হয় এবং ওঁরা রাজি হয়ে যান ট্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের আগামী মাউন্ট গঙ্গোত্রী-থ্রি অভিযানে আর্থিক সহায়তা দিতে৷

এই আলোচনার সূত্রেই ট্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের আরও নানা কর্মকাণ্ডের কথা ওঁরা জানতে পারেন, যার অন্যতম হল বাচ্চাদের নিয়ে নেচার ক্যাম্প৷ যেখানে বাড়ি এবং বাবা-মায়ের স্নেহচ্ছায়া থেকে দুদিনের জন্যে সরিয়ে এনে প্রকৃতির পাঠশালায় বাচ্চাদের জীবনের পাঠ দেওয়া হয়৷ ফায়ার, ফুড, অ্যান্ড শেল্টার – জীবনের এই তিনটি প্রাথমিক এবং আবশ্যিক প্রয়োজন কীভাবে মেটানো যায় অচেনা পরিবেশে, তা-ই শেখানো হয় নেচার ক্যাম্পে, বলছিলেন ট্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের দীপেন সামন্ত৷ সেই প্রশিক্ষণেরই কিছু নমুনা জার্মান কনসুলেটের বাগানে তুলে ধরার প্রস্তাব দেন ওঁরা এবং সানন্দে রাজি হয়ে যান জার্মান কনসাল জেনারেল৷

এই যৌথ উদ্যোগেরই স্বাদ পেল সমাজের প্রান্তবাসী ওই বাচ্চা ছেলেদের দল, যে খুশি হয়তো বাকি জীবন ওদের স্মৃতিতে থেকে যাবে৷ ভবিষ্যতেও এমন ধরনের কর্মসূচির জন্য জার্মান কনসুলেটের দরজা সবসময় খোলা থাকবে, জানিয়েছেন কনসাল জেনারেল শ্মিডশেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ