আফগানিস্তানের মাজার-ই শরিফে জার্মান কনস্যুলেটের সামনে একটি গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ছয়জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে৷ হামলার দায় স্বীকার করেছে তালেবান৷ বৃহস্পতিবার রাতের এ হামলায় নিহতের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী একটি ট্রাক চালিয়ে উত্তর আফগানিস্তানের শহর মাজার-ই শরিফে জার্মান কনস্যুলেটের কাছে চলে যায়৷ সেখানে গিয়েই সে শরীরে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়৷ ট্রাকটি ছিল বিস্ফোরকে বোঝাই৷ ফলে প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে ওঠে চারপাশ৷ আশপাশের অনেক ভবনের জানালা-দরজার কাঁচ ভেঙে পড়ে৷ বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীসহ মোট ৬ জন নিহত হয়েছে৷
হামলার দায় স্বীকার করে তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন তালেবান জানিয়েছে, গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র কুন্দুসে যে বিমান হামলা চালিয়েছিল তার জবাব দিতেই এ হামলা চালিয়েছে তারা৷ কুন্দুসের সেই বিমান হামলায় ৩০ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত এবং ১৯ জন আহত হয়েছিল৷
এদিকে বৃহস্পতিবার মাজার-ই শরিফে জার্মান কনস্যুলেটের সামনে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে জার্মানি৷ পাশাপাশি জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, কনস্যুলেটে কর্মরত সবাই অক্ষত এবং নিরাপদ আছেন৷
উল্লেখ্য, আফগানিস্তানের কুন্দুসে জার্মান সেনাবাহিনীর ছোট একটি দল রয়েছে৷ মূলত আফগান সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তাঁরা৷
তবে তালেবান মনে করে গত নভেম্বরে জার্মান গোয়েন্দাদের তথ্য পেয়েই কুন্দুসে বিমান হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ জার্মান কনস্যুলেটের সামনে হামলা চালানোর কারণ জানাতে গিয়ে বার্তা সংস্থা ডিপিএ-কে তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, ‘‘কেন আমরা জার্মানিকে টার্গেট করবো না? জার্মান সৈন্যদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তো যুক্তরাষ্ট্র ওই হামলা চালিয়েছিল৷ উত্তর আফগানিস্তানে এখনো তো তাদের (জার্মানি) ঘাঁটি রয়েছে৷ সেখানে এখনো জার্মান সৈন্য আছে৷’’
বিশ্বের ভয়ংকর পাঁচ জঙ্গি সংগঠন
তথাকথিত জঙ্গিদের কারণে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে৷ অনেকেরই ধারণা তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস-ই সবচেয়ে ভয়ংকর জঙ্গি গোষ্ঠী৷ কিন্তু বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচি বা গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্স কিন্তু বলছে ভিন্ন কথা৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Lieman
বোকো হারাম
ইসলামিক স্টেট বা আইএস নয়, বিশ্বের ভয়ংকর জঙ্গি সংগঠনগুলোর তালিকার শীর্ষে রয়েছে নাইজেরিয়ার বোকো হারাম৷ ২০১৫ সালে আবু বকর শেকাউ-এর নেতৃত্বে এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি ৬ হাজার ৬৪৪ জন মানুষকে হত্যা করেছে৷ তাদের হামলায় আহত হয়েছে ১,৭৪২ জন৷ বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক৷ এছাড়া হাজারো কিশোরীকে অপহরণ করেছে বোকো হারাম৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S.Alamba
ইসলামিক স্টেট
যদিও বোকো হারাম আইএস-এর তুলনায় বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, কিন্তু আতঙ্ক সৃষ্টির দিক থেকে সবচেয়ে উপরে আছে আইএস৷ বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলা হচ্ছে আইএসকে৷ ২০১৫ সালে তাদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে ৬ হাজার ৭৩ জন মানুষ এবং আহত হয় ৫ হাজার ৭৯৯ জন৷ ১০৭১টি হামলা চালিয়েছে তারা বিশ্ব জুড়ে৷ আবু বকর আল-বাগদাদির নেতৃত্বে সংগঠনটি সিরিয়া, ইরাক, তুরস্ক ও ইউরোপ জুড়ে এখনো হামলা চালিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তালেবান
১৯৯৪ সালে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ চলার সময় এই জঙ্গি সংগঠনটির আবির্ভাব৷ বিশ্বের সবচেয়ে অভিজ্ঞ জঙ্গি সংগঠন বলা হয় এদের৷ ২০১৫ সালে তালেবানের হাতে প্রাণ হারিয়েছে ৩ হাজার ৪৭৭ জন এবং আহত হয়েছে ৩ হাজার ৩১০ জন৷ গত বছর বিশ্ব জুড়ে ৮৯১ টি হামলা চালিয়েছে তারা৷ হিবাতুল্লাহ আকন্দজাদা এখন তালেবানের নেতৃত্বে রয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Noorullah Shirzada
ফুলানি জঙ্গি গোষ্ঠী
বিশ্বব্যাপী এদের তেমন পরিচিতি নেই৷ এরা নাইজেরিয়ার ফুলা সম্প্রদায়ের মানুষ৷ এদের লক্ষ্য ফুলানির ভূমি মালিকদের হত্যা করা৷ ২০১৫ সালে ১৫০ টি সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে ফুলানি, তাদের হামলায় মারা গেছে ১ হাজার ২২৯ জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Lieman
আল-শাবাব
বোকো হারামকে যদি আইএস-এর সাথে তুলনা করা হয়, তবে আল শাবাবকে তুলনা করা যায় আল-কায়েদার সঙ্গে৷ পূর্ব আফ্রিকায় এদের আধিপত্য অনেক বেশি৷ সোমালিয়াকে ইসলামিক রাষ্ট্র বানানোই তাদের মূল লক্ষ্য৷ গত বছর জঙ্গি গোষ্ঠীটি ৪৯৬টি হামলা চালিয়েছে, হত্যা করেছে ১ হাজার ২১ জন মানুষকে, আহত হয়েছে ৮৫০ জন৷