কর্মক্ষেত্রে জার্মান নারীরা এখনো বৈষম্যের শিকার৷ সরকারি পরিসংখ্যান থেকে বেরিয়ে আসছে এমন তথ্য৷ জানা গেছে, জার্মানিতে এখনো উচ্চপদে নারীদের উপস্থিতি কম, পুরুষের তুলনায় নারীদের বেতনও কম৷
বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জার্মানিতে নারী শিক্ষার হার বাড়ছে৷ জার্মানির কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, এ মুহূর্তে ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সি কর্মজীবী নারী ও পুরুষদের মধ্যে অন্তত ৩৫ ভাগ নারী কলেজ বা সর্বোচ্চ পর্যায়ের লেখাপড়া শেষ করেছেন৷ পুরুষদের মধ্যে এই হার শতকরা ৩১ ভাগ৷
তবে উচ্চশিক্ষার প্রবণতা বাড়লেও কর্মক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তিতে জার্মান নারীরা এখনো বৈষম্যের শিকার৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জার্মানির বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত নারীরা পুরুষদের চেয়ে সার্বিকভাবে ২১ দশমিক ৬ ভাগ বেতন কম পান৷ সমপর্যায়ে কর্মরত নারী-পুরুষদের মধ্যে বেতনের এই ব্যবধান শতকরা ৭ ভাগ৷ অর্থাৎ পদ এক, কাজও এক, তবু নারীর বেতন পুরুষের চেয়ে ৭ শতাংশ কম৷
সবার জন্য ভালো জার্মানি, নারীর জন্য সেরা ডেনমার্ক
বিশ্বের সেরা দেশের মর্যাদা এখন জার্মানির৷ তবে নারীর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ দেশ কিন্তু জার্মানি, ক্যানাডা বা যুক্তরাষ্ট্র নয়৷ নারীদের জন্য প্রায় স্বর্গের দেশ এখন ডেনমার্ক৷
ছবি: Fotolia/Creativa
বিশ্বের সেরা দেশ জার্মানি
ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের বৈঠকে প্রকাশ করা বিশ্বের সেরা দেশের তালিকার সবার ওপরে এসেছে জার্মানির নাম৷ ৬০টি দেশ স্থান পেয়েছে এই তালিকায়৷ শরণার্থী সংকট নিরসনে অগ্রণী ভূমিকা রেখে অর্থনৈতিক চাপ সহ্যের পরও, বিশ্বের ৩৬টি দেশের ১৬ হাজার ২৪৮ জনের মাঝে জরিপ চালিয়ে তৈরি করা এই তালিকার শীর্ষে স্থান পেল জার্মানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Reichel
দ্বিতীয় ক্যানাডা, তৃতীয় যুক্তরাজ্য
বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা দেশ এখন ক্যানাডা৷ তারপরই একে একে রয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন ও অস্ট্রেলিয়া৷
ছবি: picture alliance/All Canada Photos
সেরা দশে এশিয়ার দেশ জাপান
সেরা দশে এশিয়ার একমাত্র প্রতিনিধি জাপান৷ তারা আছে ৬ নম্বরে৷ বিশ্বের ষষ্ঠ সেরা দেশ হওয়াও কিন্তু কম কথা নয়৷ ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্কসহ অনেক উন্নত দেশের অবস্থানও কিন্তু জাপানের পেছনে৷
ছবি: picture alliance/dpa
নারীদের জন্য সেরা ডেনমার্ক
জার্মানি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ফ্রান্স এবং নেদাল্যান্ডসকে ডিঙিয়ে নারীদের জন্য সবচেয়ে ভালো দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে ডেনমার্ক৷ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার এই দেশটি বিশ্বের সেরা দেশের তালিকাতেও আছে দশ নম্বরে৷
নারীদের জন্য সেরা দেশের তালিকায় ডেনমার্কের পর রয়েছে যথাক্রমে সুইডেন, ক্যানাডা, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, লুক্সেমবুর্গ ও অস্ট্রিয়া৷ সেরা দশে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক সমৃদ্ধ দেশই নেই৷ এশিয়ার মান রেখেছে জাপান৷ এই তালিকায় তারা আছে ১৪ নাম্বারে৷ ঠিক এক ধাপ আগে, অর্থাৎ ১৩ নম্বরে আছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: Fotolia/Creativa
5 ছবি1 | 5
নারী-পুরুষে এই বেতনের ব্যবধান অবশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশেও আছে৷ ব্যবধান সবচেয়ে কম ইটালিতে৷ সেখানে গড়পড়তা কর্মজীবী নারীর চেয়ে কর্মজীবী পুরুষের বেতন শতকরা ৬ দশমিক ৫ ভাগ বেশি৷
এই মাপকাঠিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে এস্টোনিয়ার নারীদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ৷ সে দেশে সমপর্যায়ে কর্মরত পুরুষ তাঁর নারী সহকর্মীর চেয়ে ২৮ দশমিক ৩ ভাগ বেতন বেশি পান৷
জার্মানিতে নারীদের পদোন্নতির সুযোগও পুরুষদের তুলনায় কম৷ ২০১৪ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, জার্মানিতে ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে কাজ করছেন মাত্র ২৯ ভাগ নারী৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব দেশ মিলিয়ে ওই পর্যায়ে কর্মরত নারী আছে শতকরা ৩৩ ভাগ৷
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি সুযোগ পাচ্ছে লাটভিয়ার নারী৷ সেখানে এই হার শতকরা ৪৪ ভাগের মতো৷
জার্মানিতে ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে কর্মরত নারী ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানদণ্ডে কম হলেও ইউরোপের কয়েকটি দেশে কর্মজীবী নারীর অগ্রগতি আরো সীমিত৷ সব চেয়ে খারাপ অবস্থা সাইপ্রাসের নারীদের৷ সেখানে ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে নারী আছে মাত্র ১৭ ভাগ৷
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী নারীরা
২০১৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশীল নারীদের তালিকা প্রকাশ করেছে মার্কিন ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’৷ চলুন দেখে নেই তালিকায় কে কে আছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Douliery
আঙ্গেলা ম্যার্কেল
ফোর্বস-এর বিবেচনায় জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে তিনি সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাচিত সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Nietfeld
হিলারি ক্লিন্টন
মার্কিন প্রেসিডেনশিয়াল ক্যান্ডিডেট হিলারি ক্লিন্টনকে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রেখেছে ফোর্বস৷ একসময়কার ফার্স্ট লেডি সর্বশেষ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷ ২০১৬ সালে ডেমোক্রেট প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/S. Morgan
মেলিন্ডা গেটস
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ার মেলিন্ডা গেটস৷ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৩ দশমিক পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করেছে ফাউন্ডেশনটি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Agostini
জেনেট ইয়েলেন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ার জেনেট ইয়েলেন৷ বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রথম নারী চেয়ার তিনি৷
ছবি: Reuters/J. Ernst
মেরি বাররা
জেনারেল মোটরসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেরি বাররা৷ তাঁর নের্তৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ দশমিক চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করছে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি৷
ছবি: DANIEL ROLAND/AFP/Getty Images
ক্রিস্টিন লাগার্দ
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিন লাগার্দ৷ সর্বশেষ বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার সময় সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে আইএমএফ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Abd
ডিলমা রুসেফ
ব্রাজিলের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট তিনি৷ বর্তমানে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছেন৷ ফোর্বস-এর তালিকায় তাঁর অবস্থান সপ্তম৷
ছবি: Getty Images/AFP/Evaristo Sa
শেরিল স্যান্ডবার্গ
ফেসবুক-এ প্রধান অপারেটিং কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গ৷ তাঁর লেখা বই ‘লিন ইন’-এর চলচ্চিত্র সত্ত্ব কিনে নিয়েছে সোনি পিকচার্স৷
ছবি: Getty Images
সুসান ভয়চিস্কি
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট ইউটিউব-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুসান ভয়চিস্কি৷ প্রতিমাসে গড়ে এক বিলিয়ন মানুষ ইউটিউব ভিজিট করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Google Inc.
মিশেল ওবামা
ফোর্বস-এর তালিকায় দশ নম্বরে আছেন মার্কিন ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামা৷ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যে চমৎকার এক পারিবারিক জীবন উপভোগ করেন তা এই নারীর কল্যাণে৷ দুই সন্তানের জননী মিশেলকে বিভিন্ন অনলাইন প্রচারণাতেও অংশ নিতে দেখা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Douliery
10 ছবি1 | 10
চাকুরিতে জার্মান নারীদের পদোন্নতির সুযোগ কম কেন? এ জন্য কে বা কারা দায়ী? পরিসংখ্যান বলছে, নারীই সবচেয়ে বেশি দায়ী৷ দেখা গেছে, পারিবারিক এবং পারিপার্শ্বিক কিছু কারণে জার্মান নারীরা স্বাস্থ্যসেবা বা বিপণিবিতানের খণ্ডকালীন, স্বল্প বেতনের কাজই বেশি পছন্দ করেন৷ এ সব কাজে পদোন্নতির সুযোগও কম৷ তাই নারীদের তুলে আনার জন্য পুরুষদেরই জীবনের কোনো পর্যায়ে পূর্ণ সময়ের কাজ কম করার অনুরোধ জানিয়েছে জার্মানির ট্রেড ইউনিয়ন৷
এসিবি/ডিজি (ডিপিএ, ইপিডি, ইউরোস্ট্যাট)
কর্মক্ষেত্রে নারীদের এগিয়ে আনার জন্য পুরুষদেরই সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে৷ এভাবে নারীদের এগিয়ে আনার ভাবনা কতটা বাস্তবসম্মত? জানান নীচের ঘরে৷