জার্মানিতে ক্যাথলিক চার্চের শত শত যাজকের বিরুদ্ধে এক হাজারেরও বেশি শিশু ও কিশোরকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে৷ চার্চের বিভিন্ন অংশের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের বিভিন্ন অংশে যাজকদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ অনেকদিন ধরেই উঠছে৷ এমনকি ক্যাথলিকদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপও এ বিষয়ে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ যাজকদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ গোপন রাখার বিধানও গত বছর বাতিল করেন বর্তমান পোপ ফ্রান্সিস৷
কিন্তু জার্মান চার্চের একটি অংশ এতদিন এ নিয়ে নীরব ভূমিকাই পালন করে এসেছে৷ একটি জরিপে দেখা গেছে শিশু, কিশোর থাকা অবস্থায় যাজকদের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন এমন অন্তত ১৪১২টি অভিযোগ জমা পড়েছে চার্চের বিভিন্ন সংগঠনের কাছে৷ জার্মানির ধর্মীয় নেতাদের সংগঠন ডিওকে বুধবার এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে৷ গবেষণায় নেতারা এই ইস্যুকে সঠিকভাবে ‘মোকাবিলা করতে ব্যর্থতার’ কথাও স্বীকার করেছে৷
অভিযোগকারীদের ৮০ শতাংশই পুরুষ, বাকি ২০ শতাংশ নারী৷ অন্তত ৬৫৪ জন যাজক, যাজিকা এবং চার্চ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এসেছে এসব অভিযোগ৷
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
শিশুরা বিকৃতকাম মানুষের সহজ শিকার৷ সারল্যের সুযোগ নিয়ে সহজে ভোলানো যায় তাদের৷ অনেক সময় শিশুরা বুঝতে পারে না, চিনতে পারে না পিশাচের থাবা৷ আর বুঝলেও করতে পারে না প্রতিবাদ, প্রতিরোধ৷ শুধু একটা অস্বস্তি থেকে যায় সারাটা জীবন৷
ছবি: picture alliance/abaca
ভয়াবহ অবস্থা ভারতে
ভারতের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের অর্ধেকেরও বেশি বাচ্চা যৌন নিগ্রহের শিকার৷ তবে সবচেয়ে ভয়ংকর সত্য হলো, নাবালিকা বা শিশুর ওপর যৌন হেনস্থার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে পরিবারের মধ্যে, পরিবারেরই কোনো মানসিক বিকারগ্রস্ত সদস্যের হাতে৷ তাই সে সব ঘটনা পুলিশের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, হচ্ছে না কোনো ডাইরি অথবা মামলা৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব
এভাবে প্রতিদিন বিকৃত যৌন নির্যাতনে হারিয়ে যাচ্ছে অগুন্তি শৈশব৷ অনেকক্ষেত্রেই শিশুরা বুঝে উঠতে পারছে না, বলে উঠতে পারছে না তাদের অমানবিক সেই সব অভিজ্ঞতার কথা৷ তাই শিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত, বিকৃত মানুষগুলো থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে৷ সমাজবিদরা বলছেন, এ জন্য আগাম সতর্কতার দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবক এবং স্কুলের৷ শিশুকে দিতে হবে তার প্রাপ্য শৈশব৷
ছবি: Fotolia/Kitty
যেভাবে বোঝাবেন বাচ্চাদের
সহজ ভাষায় খেলা বা গল্পচ্ছলে শিশুদের এ বিষয়ে একটা ধারণা গড়ে তোলা যেত পারে৷ বাচ্চাদের বলতে হবে যে, তাদের শরীরটা শুধুমাত্র তাদের৷ অর্থাৎ কেউ যেন তাদের ‘গোপন’ জায়গায় হাত না দেয়৷ তাই কোনো আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তির আচরণ অস্বস্তিকর ঠেকলে, কেউ তাদের জোর ঘরে কোনো ঘরে নিয়ে গেলে, খেলার ছলে চুমু দিলে বা শরীরের কোথাও হাত দিলে – তা যেন মা-বাবাকে জানায় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিনিয়ে দিন যৌনাঙ্গ
অনেক বাবা-মা নিজ সন্তানের সঙ্গে যৌনাঙ্গ নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠা বোধ করেন৷ কিন্তু এই লজ্জা কাটিয়ে উঠতে হবে এবং খুব ছোটবেলাতেই ছবি এঁকে অথবা গল্পে-গানে বাচ্চাকে তার শরীরের অন্য সব অঙ্গের মতো যৌনাঙ্গ, লিঙ্গ ইত্যাদি চিনিয়ে দিতে হবে৷ এমনটা করলে কেউ যদি তাদের সঙ্গে পিশাচের মতো ব্যবহার করে, তাহলে শিশুরা সহজেই বলতে পারবে কে, কখন, কোথায় হাত দিয়েছিল৷
ছবি: DW/S.Rahman
শিশুর কথা শুনুন, তার পক্ষ নিন
শিশু যাতে আপনাকে বিশ্বাস করতে পারে, বন্ধুর মতো সবকিছু খুলে বলতে পারে – সেটা নিশ্চিত করুন৷ আপনার বাচ্চা যদি পরিবারের কাউকে বা আপনার কোনো বন্ধুকে হঠাৎ করে এড়িয়ে যেতে শুরু করে অথবা আপনাকে খুলে বলে বিকৃত সেই মানুষের কৃতকর্মের কথা, তবে সময় নষ্ট না করে শিশুটির পক্ষ নিন আর তিরস্কার করে বাড়ি থেকে বার করে দিন ঐ ‘অসুস্থ’ লোকটাকে৷
ছবি: Fotolia/pegbes
স্কুলেরও দায়িত্ব আছে
বাচ্চারা দিনের অনেকটা সময় স্কুলে কাটায়৷ তাই যৌন শিক্ষার ক্ষেত্রে স্কুলের একটা বড় দায়িত্ব থেকে যায়৷ তবে স্কুলের মধ্যে, বিদ্যালয় চত্বরেও ঘটতে পারে শিশু নির্যাতনের ঘটনা৷ তাই স্কুল থেকে ফেরার পর বাচ্চা যদি অতিরিক্ত চুপচাপ থাকে, একা একা সময় কাটায় বা পড়াশোনা করতে না চায়, তাহলে ওর সঙ্গে কথা বলুন৷ জানতে চান কী হয়েছে, প্রয়োজনে স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জানান৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
ছেলে-মেয়ে সমান!
আমাদের সমাজে ছোট থেকেই মেয়েদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়৷ মেয়ে হলেই হাতে একটা পুতুল আর ছেলে হলে ধরিয়ে দেয়া হয় বল বা খেলনার পিস্তল৷ ছেলের পাতে যখন তুলে দেয়া হয় মাছের বড় টুকরোটা, তখন মেয়েটির হয়ত এক গ্লাস দুধও জোটে না৷ এ বৈষম্য বন্ধ করুন৷ বাবা-মায়ের চোখে ছেলে-মেয়ে সমান – সেভাবেই বড় করুন তাদের৷ তা না হলে নারীর ক্ষমতায়ন হবে কীভাবে? কীভাবে কমবে শিশু নির্যাতন?
ছবি: picture alliance/abaca
7 ছবি1 | 7
অধিকাংশ অভিযোগকারীই মারা গেছেন
ডিওকে জানিয়েছে, অভিযোগকারীদের ৮০ শতাংশই মারা গিয়েছেন, ৩৭ জন চার্চের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন৷ জার্মান চার্চের ৩৯২টি অর্ডারের মধ্যে ২৯১টি জরিপে অংশ নিয়েছে৷ অংশগ্রহণকারীদের এক তৃতীয়াংশই জানিয়েছে তারা এমন যৌন হয়রানির অভিযোগ পেয়েছেন৷ এসব অভিযোগের কিছু কিছু ১৯৫০ এবং ৬০ এর দশকের৷ তখন স্থানীয় অনেক স্কুল এংব বোর্ডিং স্কুল পরিচালিত হতো যাজক ও যাজিকাদের অধীনে৷
জার্মানির চার্চের সদস্যদের ৭৫ শতাংশই নারী হলেও বেশিরভাগ যৌন হয়রানির অভিযোগ এসেছে পুরুষ যাজকদের বিরুদ্ধেই৷ অভিযোগকারী বা অভিযুক্তদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য গবেষণায় প্রকাশ করা হয়নি৷ ডিওকে জানিয়েছে নাম বা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তেই এই গবেষণায় অংশ নিয়েছে চার্চের অংশগুলো৷
চার্চের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছে জার্মান সমাজের বিভিন্ন অংশ৷ কিন্তু ক্যাথলিক সংগঠনগুলো বরাবরাই এর বিরোধীতা করায় তাদের সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে৷
তদন্তের সুবিধার জন্য অভিযোগকারীদের সংগঠন ‘একিগার টিশ’ এই জরিপ এবং গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য ও কাগজ সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়েছে৷ ডিওকে জানিয়েছে গবেষণা ও জরিপে যৌন হয়রানির যেসব ঘটনার উঠে এসেছে, বাস্তবে এ সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি৷
তবে নিজেদের সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ নিয়ে কথা বলার এখনই সময় বলে মনে করে ডিওকে৷ সংগঠনের চেয়ারওম্যান কাটারিনা ক্লুইটমান বলেন, ‘‘হ্যাঁ, আমাদের সম্প্রদায়ের ভাই ও বোনেরা বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি করেছেন৷ এই ধরনের কর্মকাণ্ড অভিযোগকারীদের জীবনে অবর্ণনীয় দুর্দশা বয়ে এনেছে৷''
অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় অনেকেই আবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন কাটারিনা৷