জার্মান চিড়িয়াখানার এক প্রাণী খাবে অন্য প্রাণীর মাংস
১৬ এপ্রিল ২০২০
করোনা ভাইরাসের কারণে জার্মানির সব চিড়িয়াখানা বন্ধ রয়েছে৷ একটি চিড়িয়াখানা জানিয়েছে, খরচ বাঁচাতে তাদের প্রাণী হত্যা করতে হতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির শ্লেসভিগ-হোলস্টাইন এ নয়ম্যুনস্টার চিড়িয়াখানায় করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর তা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ দীর্ঘসময় বন্ধ থাকায় নেই কোনো আয়৷ তাই খরচ কমাতে তারা সেখানকার প্রাণী হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এরই মধ্যে একটি তালিকা তৈরি করে ফেলেছে কর্তৃপক্ষ৷
ইউরোপের দারুণ কিছু চিড়িয়াখানা
দৃষ্টিভঙ্গি এবং ব্যবস্থাপনার গুণে সব কিছুই ভিন্ন মাত্রা পায়৷ ইউরোপের কিছু চিড়িয়াখানা দেখলেও সে-কথা মনে হয়৷ ছবিঘরে থাকছে এমন কিছু চিড়িয়াখানার কথা, যেগুলো বারবার দেখতে ইচ্ছে করে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/A. Lander
টিয়ারপার্ক হাগেনবেক
জার্মানির হামবুর্গের এই চিড়িয়াখানাটির প্রতিষ্ঠাতা কার্ল হাগেনবেক৷ তাই এর নামও টিয়ারপার্ক হাগেনবেক৷ জার্মান ভাষায় টিয়ার মানে প্রাণী৷ এক সময় বিশ্বের সব চিড়িয়াখানাতেই খাঁচায় পুরে রাখা হতো প্রাণীদের৷ ১৯০৭ সালে হাগেনবেকই প্রথম বেষ্টনীতে ঘেরা পরিখায় প্রাণীদের রাখা শুরু করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Bockwoldt
জুম এরলেবনিসভেল্ট
জার্মানির আরেক শহর গেলজেনকির্শেনের এই চিড়িয়াখানাটিতে রয়েছে একদিনে আলাস্কা, আফ্রিকা বা এশিয়ার আদলে গড়া প্রাকৃতিক পরিবেশে অনেক প্রাণী দেখার সুযোগ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
বার্লিনের জুয়োলজিক্যাল গার্ডেন
জার্মানির এই চিড়িয়াখানায় রয়েছে এক হাজার তিনশ প্রজাতির ২০ হাজারেরও বেশি প্রাণী৷ ওপরের ছবির মেরু ভালুকের ছানাটি এই চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ৷ ওর নাম হ্যার্থা৷ বার্লিনের ফুটবল ক্লাব হ্যার্থা বার্লিন থেকেই ওর নাম রাখা হয়েছে হ্যার্থা৷ ওর স্পন্সরও হ্যার্থা বার্লিন৷ ভালুক ছানা হ্যার্থাও এখন ফুটবল খেলে৷ চিড়িয়াখানায় গেলেই দেখবেন ও ফুটবলে লাথি মেরে মেরে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷
ছবি: Imago/A. Hilse
আলভেটার জু
জার্মান ভাষায় আলভেটার মানে সব আবহাওয়া৷ মিউনিখের এই চিড়িয়াখানা শীত-গ্রীষ্ম সব মৌসুমেই ঘুরে দেখার সুব্যবস্থা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Thissen
হাইমাট-টিয়ারপার্ক ওল্ডারডিসেন
এই চিড়িয়াখানাটিও জার্মানিতে৷ বিলেফেল্ডের এই চিড়িয়াখানা ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে এবং এর ভেতরে যেতে কোনো টিকিট কাটতে হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gentsch
টিয়ারগার্টেন শ্যোনব্রুন
বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন চিড়িয়াখানা অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরের এই টিয়ারগার্টেন শ্যোনব্রুন৷ ১৭৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ চিড়িয়াখানা প্রথম দর্শনার্থীদের মাঝে সাড়া ফেলেছিল ১৮২৮ সালে৷ সে বছরই প্রথম নিয়ে আসা হয় জিরাফ৷ শীতের দেশ বলে কোনো প্রাণীকে সারা বছর খোলা জায়গায় রাখা যায় না৷ তাই জিরাফের উপযুক্ত উচ্চতার আবাস গড়তে নিতে হয়েছিল বিশেষ উদ্যোগ৷ জিরাফ দেখতে রীতিমতো দর্শনার্থীর ঢল নেমেছিল তখন৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/G. Flegar
এডিনবার্গ জু
এডিনবার্গের এই চিড়িয়াখানার বড় আকর্ষণ নানা ধরনের পেঙ্গুইন৷এই চিড়িয়াখানাই প্রথম পেঙ্গুইন রাখা শুরু করে৷ এখনো সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে তারা৷পেঙ্গুইনদের প্যারেড দেখতে প্রতি বছর প্রচুর দর্শক ভিড় করে সেখানে৷
ছবি: picture-alliance/empics/J. Barlow
লোরো প্রাক টেনেরিফ
স্পেনের টেনেরিফ দ্বীপের এই চিড়িয়াখানার প্রতিষ্ঠাতা জার্মানির ভল্ফগাং কিসলিং৷ শুরুতে সেখানে শুধু তোতা পাখি রাখা হতো৷ বিভিন্ন প্রজাতির তোতা পাখি এখনো এই চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ৷
ছবি: picture-alliance/ZB/A. Lander
8 ছবি1 | 8
চিড়িয়াখানাটির পরিচালক ভেরেনা কাশপারি জানালেন, তারা একটি তালিকা তৈরি করেছেন কোন্ প্রাণীগুলোকে আগে মেরে ফেলা হবে৷ সেসব প্রাণীর মাংস খাওয়ানো হবে ঈগল, মেরু ভাল্লুকসহ কয়েকটি প্রাণীকে৷ এখানে রয়েছে জার্মানির সবচেয়ে বড় শ্বেত ভাল্লুক, যেটি লম্বায় ১১ ফুট৷ হত্যার তালিকায় আছে ছাগল ও হরিণ৷ কিন্তু কোন বিরল প্রাণী এই তালিকায় নেই বলে জানিয়েছেন ভেরেনা৷ তহবিলে টান পড়ায় তারা এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানালেন তিনি৷ মাছ ও মাংসের সংকট দেখা দিলেই তারা তালিকা অনুযায়ী প্রাণী মেরে ফেলা শুরু করবেন৷
করোনা সংক্রমণ রোধে জার্মানি পদক্ষেপ নেয়ার পর থেকেই মার্চ মাসের ১৫ তারিখ থেকে বন্ধ রয়েছে এই চিড়িয়াখানা৷ এখানে মোট সাতশো প্রাণী রয়েছে৷ এপ্রিলের শেষ নাগাদ এটি খুলে দেয়া হলেও তাদের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে এক লাখ ৭৫ হাজার ইউরো, যা টিকেট বিক্রি ও অনুদান থেকে পাওয়া যেতো৷ এটি বেসরকারি হওয়ায় সরকারি সহায়তার বাইরে৷
গবেষণা বলছে, ৭৫ ভাগ জার্মান চিড়িয়াখানা যেতে পছন্দ করেন৷ ইস্টারে প্রতি বছর এত পর্যটক আসেন যে সেই অর্থ দিয়ে শীতকালে প্রাণীদের খাবারের ব্যবস্থা হত বলে জানালো এই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ৷
যমজ লাল পান্ডার ছুটোছুটি
01:16
সব চিড়িয়াখানাই সংকটে পড়েছে৷ ডুইসবুর্গ চিড়িয়াখানা জানিয়েছে, তাদের পর্যাপ্ত পশু খাদ্য থাকলেও পর্যটক না থাকায় জনবলের তেমন প্রয়োজন পড়ছে না৷ ফলে অনেক কর্মীকে তারা ছাটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন৷
প্রাণী অধিকার কর্মীরা অবশ্য বলছেন, এ ধরণের প্রাণী হত্যা চিড়িয়াখানাগুলোতে নতুন কিছু নয়৷ যখন চিড়িয়াখানায় স্থান সংকট হয় তখন তারা প্রাণী হত্যা করে সেই মাংস অন্য প্রাণীদের খাওয়ায়৷ প্রাণী অধিকার সংস্থা পিইটিএ এর মুখপাত্র ইওভনে ভ্যুৎস জানালেন, ন্যুরেমব্যর্গ চিড়িয়াখানা প্রতি বছর ৬০টি করে প্রাণী হত্যা করে৷
জার্মান চিড়িয়াখানাগুলোর সংস্থা ভিডিজেড চিড়িয়াখানাগুলোর জন্য ১০ কোটি ইউরো অর্থ সাহায্য চেয়েছে৷ শ্লেসভিগ-হোলস্টাইন রাজ্য সরকার ৫০ লাখ ইউরো অর্থ সাহায্য ঘোষণা করলেও সেটা এখনই হাতে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানালেন নয়ম্যুনস্টার চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ৷