জার্মানির ক্ষমতাসীন জোটে থাকা দলগুলো তাদের দায়িত্ব নেয়ার মাত্র চার মাসের মধ্যেই জনসমর্থন হারাচ্ছে৷
জনমত জরিপে জার্মান জোট সরকারের অংশ সিডিইউ এবং এসপিডি, দুই দলেরই জনসমর্থন কমার আভাস পাওয়া গেছেছবি: Virginia Garfunkel/IMAGO
বিজ্ঞাপন
জার্মান গণমাধ্যম বিল্ড আম সনটাগ সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি জরিপ অনুসারে এই তথ্য পাওয়া গেছে৷ জনপ্রিয়তায় শীর্ষে চলে এসেছে অভিবাসনবিরোধী হিসাবে পরিচিত কট্টর ডানপন্থি দল অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচলান্ড- এএফডি৷
আইএনএসএ মতামত গবেষণা ইনস্টিটিউট ৮-১২ সেপ্টেম্বর এই জরিপ পরিচালনা করে৷ জরিপে অংশ নেয়া এক হাজার ২০৪ জনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এই রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) ফেডারেল নির্বাচন হলে তারা কোন দলকে ভোট দিতে চান৷
জরিপের ফলে দেখা গেছে, চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের মধ্য-ডানপন্থি খ্রিস্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়ন - সিডিইউ-এর জনসমর্থন রেটিং আগের সপ্তাহের তুলনায় এক শতাংশ কমে ২৫ শতাংশে চলে এসেছে৷
কট্টর ডানপন্থি দল এএফডির জনসমর্থন আগের সপ্তাহের মতোই ২৫ শতাংশই রয়েছে৷ অর্থাৎ, জরিপের রেটিংয়ে এখন এএফডি এবং সিডিইউ যৌথভাবে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে৷
জার্মান জোট সরকারের আরেক অংশীদার মধ্য-বামপন্থি সামাজিক গণতন্ত্রী দল- এসপিডিও জনসমর্থনে এক পয়েন্ট হারিয়ে ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে৷
জার্মান পার্লামেন্ট বুন্ডেসটাগের নিম্নকক্ষে প্রতিনিধিত্বকারী অন্যান্য দলগুলোর রেটিংয়ে কোনও পরিবর্তন হয়নি৷
স্থানীয় নির্বাচনে জোট সরকারের প্রথম পরীক্ষা
১৪ আগস্ট জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থ-রাইন ওয়েস্টফালিয়াতে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে৷ অনেক বিশ্লেষকই এই নির্বাচনকে সিডিইউ-এসপিডি জোট সরকারের প্রথম পরীক্ষা হিসাবে দেখছেন৷
রাজ্যটিতে কোলন, ডুসেলডর্ফ এবং ডর্টমুন্ডের মতো শহুর রয়েছে এবং এক কোটি ৮০ লাখ বাসিন্দার আবাসস্থল এটি৷
১৪ আগস্টের নির্বাচনে শহর ও পৌর কাউন্সিল, কাউন্টি কাউন্সিল, মেয়র এবং জেলা প্রশাসকদের পদে ভোট নেয়া হবে৷ মোট প্রায় ২০ হাজার আসন রয়েছে এসব কাউন্সিলে৷
রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হেন্ড্রিক ভ্যুস্ট এবং তার রাজ্য সরকারের জন্যও একটি বড় পরীক্ষা৷ সিডিইউ দলের নেতা ভ্যুস্ট ২০২২ সাল থেকে গ্রিন পার্টির সঙ্গে জোট করে রাজ্যটি পরিচালনা করছেন৷ ভ্যুস্টকে বর্তমান সিডিইউ প্রধান ম্যার্ৎেস সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে৷
নির্বাচন-পূর্ববর্তী মতামত জরিপগুলোতে গেলসেনকির্শেন এবং ডুইসবুর্গের মতো কিছু এলাকায় কট্টর ডানপন্থি এএফডির উত্থানের পূর্বাভাস পাওয়া গেছে৷
জার্মান সংসদে এএফডি: হিটলার, ঘৃণা ও গুণ্ডামি ‘পছন্দ করা’ কয়েকজন
আগের বারের তুলনায় জার্মান সংসদ বুন্ডেসটাগে চরম ডানপন্থি দল এএফডির সদস্য সংখ্যা দ্বিগুণ৷ ১৫২জন সংসদ সদস্যের মধ্যে কয়েকজন নানা কারণে বিতর্কিত৷ তাদের নিয়েই এই ছবিঘর...
ছবি: Elisa Schu/dpa/picture alliance
মাটিয়াস হেলফেরিশ
২০২১ সালে ফেসবুকে ফাঁস হওয়া একটি চ্যাটে হেলফেরিশ নিজেকে ‘এনএসের বন্ধুত্বপূর্ণ মুখ’ হিসাবে তুলে ধরেন৷ এনএস, অর্থাৎ ন্যাশনাল সোশালিজম বা নাৎসিবাদী আদর্শ, যে আদর্শের কারণে জার্মানিতে আডলফ হিটলারের হাত ধরে চরম ডানপন্থা ভয়াবহ নৃশংসতাকে বাস্তবায়িত করে৷ খুন হন লাখ লাখ মানুষ৷ ৩৬ বছর বয়সি এই এএফডি রাজনীতিক দলটির অন্যতম চরমপন্থি সদস্য৷
ছবি: Fabian Strauch/dpa/picture alliance
মাক্সিমিলিয়ান ক্রাহ
ইটালির এক সংবাদপত্রকে ক্রাহ বলেন, নাৎসি আমলের আধাসমরিক সংস্থা এসএস বিশ্বযুদ্ধের সময় ‘তেমন খারাপ’ ছিল না৷ এমন মন্তব্যের পর ইউরোপের অন্যান্য ডানপন্থি দলও ক্রাহকে একটু দূরে রাখতে শুরু করে৷ এএফডিও ২০২৪ সালের প্রচারণার পোস্টার থেকে তার ছবি সরিয়ে নেয়৷ কিন্তু বুন্ডেসটাগে তাকে আলিঙ্গন করে অভ্যর্থনা জানান আলিস ভাইডেল৷
ছবি: Ronny Hartmann/AFP/Getty Images
ইয়ান ভেনজেল শ্মিডট
তার দল এএফডির স্যাক্সনি রাজ্যের সদস্যরাই তার বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলিং ও মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলেছে৷ তা সত্ত্বেও
বুন্ডেসটাগ সদস্য হয়েছেন এবং একজন নব্যনাৎসি ও ঘোষিত ফ্যাসিবাদপ্রেমীকে তার কার্যালয়ে নিয়োগ দিয়েছেন এএফডির এই তরুণ নেতা৷
ছবি: Klaus-Dietmar Gabbert/dpa/picture alliance
স্টেফান প্রচকা
এএফডির শাখা সংগঠন এবং চরম ডানপন্থি হবার কারণে নিষিদ্ধ ঘোষিত ‘ডেয়ার ফ্ল্যুগেল’-এর সদস্য ছিলেন প্রচকা৷ হলোকস্টে নিহতদের ছবির অবমাননাকর মন্তব্য করা একটি ফেসবুক গ্রুপ ‘দ্য পেট্রিয়টস’-এরও সদস্য ছিলেন তিনি৷ আনে ফ্রাঙ্ক, যার বিখ্যাত ডায়েরি গোটা বিশ্বের কাছে পরিচিত, তার মুখের একটি ছবি একটি পিৎজা বক্সে বসিয়ে ঠাট্টা করে পোস্ট করে এই গ্রুপটি৷ সাথে ছিল ক্যাপশন ‘ডি ওফেনফ্রিশে’, অর্থাৎ সদ্য চুল্লি থেকে বেরোনো৷
ছবি: Christoph Hardt/Panama Pictures/picture alliance
ডারিও জাইফার্ট
৩১ বছর বয়সি এই এএফডি রাজনীতিক এৱ আগে নব্য নাৎসি সংগঠন ‘ইয়ং ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটস’-এর সদস্য ছিলেন৷ এই সংগঠনের ডানপন্থার ধরন এতটাই চরম যে, খোদ এএফডিও বাধ্য হয়ে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করে৷ জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল যে আসন থেকে জিতে এসেছিলেন সংসদে, সেই আসনেই এবার জয়যুক্ত হয়েছেন ডারিও জাইফার্ট৷
ছবি: Bernd Wüstneck/dpa/picture alliance
স্টেফান ম্যুনৎসেনমায়ার
বুন্ডেসটাগে এএফডির ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলা হয় স্টেফান ম্যুনৎসেনমায়ারকে, কারণ, তিনিই আলিস ভাইডেলকে তৈরি করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ব্যক্তি৷ ফুটবল ম্যাচে বিশৃঙ্খলার একটি ঘটনায় তাকে দশ হাজার ইউরো জরিমানা দিতে হয় ২০১৮ সালে৷ ওই ঘটনায় একজনকে গুরুতর শারীরিক আঘাত করার অপরাধে তখন ছয় মাসের জন্য দল থেকে বহিস্কার করা হয় তাকে৷