জনাকীর্ণ, বিলম্বিত, বাতিল-জার্মান ট্রেনের সঙ্গে এসব তকমা জুটছে দিনের পর দিন৷ আর এই পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আগে আরো অবনতি হবে৷
ইউরো ২০২৪-এর ফাইনাল শেষ হলেই বিশাল সংস্কার কর্মসূচি শুরু করবে ডয়চে বানছবি: Arnulf Hettrich/IMAGO
বিজ্ঞাপন
জার্মান ট্রেন ডয়চে বানে আগামী কয়েক বছর ভ্রমণ করতে চাইলে কিছু বাড়তি সময় হাতে রাখতে হবে এবং ধৈর্য ধরার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে নিতে হবে৷ আগামী ১৫ জুলাই ইউরোপীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়ানশীপের ফাইনাল খেলা শেষ হওয়ার পরেরদিন থেকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই রেলওয়ে কোম্পানি বিশাল সংস্কার কর্মসূচি শুরু করবে৷
২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিষ্ঠানটি ৪০টি প্রাথমিক ট্রেন রুট সংস্কার করবে৷ নির্মাণ কাজ চলাকালে প্রতিটি রুট কয়েক মাস বন্ধ থাকবে৷ ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং মানহাইমের মধ্যকার ট্রেন রুটটি দিয়ে এই সংস্কার কার্যক্রম শুরু করা হবে৷
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জার্মানিতে ট্রেনবিলম্বের বিষয়টি এখন নিয়মিত ঘটনা৷ গতবছর দূরপাল্লার দুই-তৃতীয়াংশেরও কম ট্রেন সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছে৷ নেতিবাচক দিক থেকে এটা এক নতুন রেকর্ড৷ জার্মানিতে একটি ট্রেন ছয় মিনিটের বেশি বিলম্বিত না হলে সেটিকে সময়নিষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷
আর একটি ট্রেন যদি ৬০ মিনিটের বেশি বিলম্বিত হয় তাহলে সেটির আরোহীরা ভাড়ার অংশবিশেষ ফেরত চাইতে পারেন৷ গতবছর বিলম্বের কারণে ১৩৩ মিলিয়ন ইউরোর মতো ভাড়া ফেরত দিয়েছে ডয়চে বান৷ ২০২২ সালের তুলনায় তা ৪৩ শতাংশ বেশি৷ এই অর্থ রেল নেটওয়ার্কে বিনিয়োগ করা যেতো৷
জার্মান ট্রেন সম্পর্কে যে দশটি বিষয় জানা উচিত
টিকিট, রিজার্ভেশন এবং ট্রেনের ধরন: জার্মানিতে ট্রেনে চলাচলে আগ্রহীদের জন্য এখানে থাকছে দশটি তথ্য বা পরামর্শ যা আপনার কাজে লাগতে পারে৷
ছবি: Deutsche Bahn AG
আপনি কি বুঝতে পারছেন?
জার্মানির ট্রেন স্টেশনগুলোতে প্রায়ই লাউডস্পিকারে নানা ঘোষণা দেয়া হয়৷ তবে, সেগুলো ট্রেন স্টেশনের অন্যান্য শব্দের কারণে অনেকসময়ই বোধগম্য হয়না৷ তাই, সেসব ঘোষণা নিয়ে বেশি ভাবার দরকার নেই৷ বরং এক্ষেত্রে একটি জনপ্রিয় জার্মান বাগধারা মনে রাখবেন, ‘‘ইস্ ফার্স্টেহে ন্যুর বানহফ’’ অর্থাৎ ‘‘আমি শুধু ট্রেন স্টেশন বুঝতে পারছি৷’’ একথার অর্থ হচ্ছে আপনি ঘোষণার অন্য কোন তথ্যই বুঝতে পারেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ট্রেনের নানা ধরন
জার্মানির অধিকাংশ শিশুও এটা জানে: ‘দ্য ইন্টারসিটি-এক্সপ্রেস (আইসিই)’ হচ্ছে ডয়চে বানের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেন৷ এসব ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে৷ আইসিই’র পরেই অবস্থান ‘দ্য ইন্টারসিটি’ ট্রেনের৷ ঘণ্টায় দু’শো কিলোমিটার অবধি গতিতে চলা এসব ট্রেন দেখতে আইসিই’র মতো সাদা এবং লাল রংয়ের হলেও এগুলো আসলে একটু পুরনো৷ এই দুই ধরনের ট্রেন ছাড়াও রয়েছে লালরংয়ের ‘রিজিওনাল বান (আরবি)’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
সব ট্রেন সময়মত আসে না
সময়ানুবর্তিতার জন্য জার্মানদের সুখ্যাতি থাকলেও সময়মত ট্রেন আসার বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে৷ বরং ইদানিংকালে ট্রেন দেরিতে আসার বিষয়টি নিয়ে অনেককে আলোচনা করতে দেখা যায়৷ ডয়চে বান অবশ্য দাবি করেছে, ২০১৮ সালে প্রায় ৭৫ শতাংশ ইন্টারসিটি ট্রেন সময়মত বা নির্ধারিত সময় অতিক্রম করার পাঁচ মিনিটের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Tschauner
টিকিট অপরিহার্য
জার্মানিতে ট্রেনে ওঠার আগে টিকিট কাটা হচ্ছে সাধারণ নিয়ম৷ তবে, যদি কোন কারণে আপনার স্টেশনের টিকিট ভেন্ডিং মেশিনটি কাজ না করে কিংবা টিকিট কাটার পর্যাপ্ত সময় না পান, তাহলে আইসিই বা ইন্টারসিটি ট্রেনে উঠে সঙ্গে সঙ্গে কন্ডাক্টরের কাছ থেকে টিকিট কিনতে পারেন৷ আরবিতে অবশ্য এই সুবিধা নেই৷ সেটিতে বরং টিকিট না কেটে ওঠায় জরিমানা গুনতে হতে পারে৷
ছবি: Deutsche Bahn AG/P. Castagnola
টাকা বাঁচাতে দলবদ্ধ ভ্রমণ
আঞ্চলিক ট্রেনের ক্ষেত্রে অনেক সময় পাঁচজন মিলে এক টিকিট কেটে সস্তায় ভ্রমণ করা যায়৷ একসঙ্গে কোথাও বেড়াতে গেলে এ ধরনের টিকিট লাভজনক হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
সাইকেল নিয়ে ট্রেনে ভ্রমণ কঠিন
আপনার বাইসাইকেলটি যদি ভাঁজ করা না যায়, তাহলে আইসিইতে সেটি নিয়ে চড়া বারণ৷ তবে ইন্টারসিটি এবং অন্যান্য আঞ্চলিক ট্রেনে একটি বিশেষ কামরা রয়েছে, যেখানে সাইকেলসহ ওঠা যায়৷ বলাবাহুল্য, জার্মানিতে গ্রীষ্মের সময় অনেকেই সাইকেল চালাতে পছন্দ করেন৷ তাই সেসময় ট্রেনে সাইকেলসহ উঠতে চাইলে একটু আগেভাগে স্টেশনে গেলে ভালো৷
ছবি: DW/Elizabeth Grenier
সিট রিজার্ভ করাও জরুরি
জার্মানিতে ট্রেনের টিকিটের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিট দেয়া থাকে না৷ দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিট কাটার পর নির্দিষ্ট সিট রিজার্ভ করতে বাড়তি টাকা গুনতে হয়৷ ট্রেনের সিটের সঙ্গে থাকা ট্যাগে সেটি রিজার্ভ করা কিনা, সে তথ্য থাকে৷ তাই সিট রিজার্ভ না করে শুধু টিকিট কেটে ট্রেনে উঠলে এমন সিটে বসাই উত্তম যেটি অন্য কেউ রিজার্ভ করেননি৷
ছবি: Deutsche Bahn AG/O. Lang
সঠিক স্থানে দাঁড়ান
ডয়চে বানের আইসিই ট্রেন ঠিক কোথায় দাঁড়াবে এবং সেটির কোন বগির অবস্থান কোথায় হবে - তা আগে থেকেই নির্ধারণ করা থাকে৷ তাই আপনি টিকিটে উল্লেখিত বগি এবং সিট নম্বর অনুসারে প্লাটফর্মে দাঁড়ালে ট্রেন আসার পর বেশি দৌঁড়ঝাপ করতে হবে না৷
ছবি: DW/Elizabeth Grenier
ট্রেনের নানা জায়গা
আপনি কি টেবিলসহ একটি সিট চান নাকি করিডোরে সিট চান - তা সিট রিজার্ভ করার সময় ঠিক করে দিতে পারেন৷ এমনকি ট্রেনের মধ্যে এমন স্থানও আছে যেখানে বসে জোরে কিংবা ফোনে কথা বলা নিষেধ৷ তাই, সিট রিজার্ভ করার সময় এসব বিষয় খেয়াল রাখলে পরবর্তীতে সুবিধা হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/N. Schmidt
শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
শিশুদের নিয়ে ভ্রমণ করা অভিভাবকদের জন্য ডয়চে বানের আইসিই ট্রেনে রয়েছে বিশেষ কামরা৷ সেখানে শিশুরা শব্দ করলেও কোন সমস্যা নেই৷ তবে, এক্ষেত্রেও সেই কামরা আগে থেকে বুক করে রাখলে ভালো৷ পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুরা ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করতে পারে৷ তবে, পনেরো বছর অবধিও এই সুবিধা পাওয়া যেতে পারে যদি তাদের সঙ্গে টিকিট কেটে ট্রেনে উঠেছেন এমন কোন অভিভাবক থাকেন৷
ছবি: Deutsche Bahn AG/O. Oliver Lang
10 ছবি1 | 10
আর্থিকভাবেও বেশ দৈনদশায় আছে ডয়চে বান৷ বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ঋণের পরিমান ৩৪ বিলিয়ন ইউরো৷ গতবছর অবকাঠামোগত উন্নয়নে ৭.৬ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করেছে সেটি৷ মুশকিল হচ্ছে, রেল ব্যবস্থাটির অনেকাংশই সেকেলে হয়ে পড়েছে৷ ফলে অনেকক্ষেত্রে সেটি মেরামত করা সম্ভব নয়৷ মোটের উপর এই ব্যবস্থা সামগ্রিকভাবে ডিজিটাল কন্ট্রোলের জন্য মানানসই নয়৷ ফলে অনেকটাই সংস্কার করতে হবে৷
নতুন সংস্কার পরিকল্পনায় খরচ হবে ৪৫ বিলিয়ন ইউরোর মতো৷ এর আওতায় ট্রেন লাইন, সুইচ এবং সিগন্যাল প্রযুক্তিতে পরিবর্তন আনা হবে৷ পাশাপাশি শহরের কাছাকাছি থাকা ট্রেন লাইনের শব্দনিরোধক ব্যবস্থাও সংস্কার করা হবে৷
জার্মানির পরিবহণমন্ত্রী ফল্কার ভিসিং ট্রেন লাইন সংস্কারের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন৷ রুট সংস্কারের সময় বিকল্প বাহন হিসেবে বাস থাকবে যেগুলোতে শৌচাগার, ওয়াইফাইসহ নানা আয়োজন থাকবে যাত্রীদের সুবিধা নিশ্চিত করতে৷