যে মৃত্যু নিয়ে এত কথা, যার কারণে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন জার্মান দক্ষিণপন্থিরা, সেই মৃত্যু হয়েছে হার্ট অ্যাটাকে, মারামারিতে নয়৷ এ কথা জানিয়েছেন এক স্থানীয় কর্মকর্তা৷
বিজ্ঞাপন
ঘটনা হলো, শনিবার দিবাগত রাতে জার্মানির পূর্বাংশের শহর কোথেনে মারামারি হয় দুই জার্মান ও দুই আফগানের মধ্যে৷ এ সময় মারা যান এক জার্মান৷ পরদিন প্রায় আড়াই হাজার মানুষ নেমে আসেন রাস্তায়৷ করেন অভিবাসনবিরোধী মিছিল৷
দুই আফগানকে আটক করা হয়েছে৷ তাদের শারীরিক আঘাতে ঐ জার্মানের মৃত্যু হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
স্থানীয় বিচারমন্ত্রীর বরাত দিয়ে জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ বলছে, মারামারির কারণে নয়, হার্টে দুর্বলতার কারণে মারা যান ঐ জার্মান নাগরিক৷ স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের বিচারমন্ত্রী আনে-মারি কেডিং বলেন, স্থানীয় কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে দাবি করা হয়েছে, তা সঠিক নয়৷ ২২ বছর বয়সি ঐ জার্মান নাগরিক মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা যাননি৷ তাঁর হার্ট আগে থেকেই দুর্বল ছিল৷
জার্মানির কেমনিৎসে ডানপন্থিদের বিক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া
এক জার্মান-কিউবান নাগরিকের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে জার্মানির কেমনিৎস শহরে বিদেশিদের উপর হামলা হয়েছে৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট ও চ্যান্সেলরসহ অনেক নেতা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/O. Andersen
জার্মান-কিউবানের মৃত্যু
রবিবার ভোরে জার্মানির কেমনিৎস শহরে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ডানিয়েল এইচ. নামে ৩৫ বছর বয়সি এক জার্মান-কিউবান নাগরিক ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান৷ পুলিশ বলছে, বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০ জন মানুষ এই বিবাদে জড়িত ছিলেন৷ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ২২ বছর বয়সি এক ইরাকি ও ২৩ বছর বয়সি এক সিরীয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে৷ ‘যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ ছাড়াই’ তারা ডানিয়েলকে কয়েকবার ছুরিকাঘাত করেন বলে অভিযোগ৷
ছবি: DW/B. Knight
বিক্ষোভ ও বিদেশিদের উপর হামলা
ডানিয়েল এইচ. স্থানীয় কয়েকটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ ফলে তাঁর মৃত্যুর প্রতিবাদে রবিবার বিকালে প্রায় ৮০০ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন৷ এদের মধ্যে চরম ডানপন্থিরাও ছিলেন৷ বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বোতল ছোড়েন এবং তাঁরা পুলিশের কাজে সহযোগিতা করেননি বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ ডেকে আনা হয়৷ এই সময় বিক্ষোভকারীরা পথেঘাটে বিদেশিদের উপর নির্বিচারে হামলাও চালায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
সোমবারও বিক্ষোভ এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
সোমবারও কেমনিৎস শহর উত্তপ্ত ছিল৷ সন্ধ্যার সময় প্রায় ২,০০০ চরম দক্ষিণপন্থি বিক্ষোভে নামেন৷ আর তাঁদের বিক্ষোভের প্রতিবাদে মাঠে নামেন প্রায় ১,০০০ মানুষ (ছবিতে তাঁদের একাংশকে দেখা যাচ্ছে), যাদের মধ্যে বামপন্থিরাও ছিলেন৷ চরম দক্ষিণপন্থি ও বামপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬ জন আহত হন৷ দুই পক্ষ একে অপরের উপর আতসবাজিসহ নানা বস্তু নিক্ষেপ করে৷ ৪ জন চরম দক্ষিণপন্থি বিক্ষোভকারীর উপর হামলার ঘটনাও ঘটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Andersen
সরকারের প্রতিক্রিয়া
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলসহ অনেকে রবি ও সোমবারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন৷ ম্যার্কেল বলেন, দেশে আইন-শৃঙ্খলার ভিত্তিতে যে শাসনব্যবস্থা রয়েছে, তার সঙ্গে এমন আচরণ খাপ খায় না৷ প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার বলেন, ছুরিকাঘাতের ঘটনার ফায়দা তুলে বিদেশিবিদ্বেষ ও হিংসা ছড়ানো হয়েছে৷ সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, জনতা ভিন্ন চেহারার মানুষকে বাছাই করে হামলা চালাবে, এমন আচরণ বরদাস্ত করা হবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
তাণ্ডবের পেছনে ‘ভুয়া খবর’
‘ভুয়া খবর ছড়িয়ে কেমনিৎসে দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে স্যাক্সোনি রাজ্য প্রশাসন৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, শুধু স্থানীয় চরম দক্ষিণপন্থিরা নয়, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়িয়ে অনেক রাজ্য থেকে সমমনস্ক মানুষকে কেমনিৎসে আকর্ষণ করা হয়েছে৷ নিহত ডানিয়েল এইচ. নাকি এক নারীর সম্মানরক্ষার জন্য হস্তক্ষেপ করেছিলেন বলে ভুয়া খবর ছড়ানো হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
5 ছবি1 | 5
এমনিতেইকেমনিৎসে কয়েকদিন আগে দুই মধ্যপ্রাচ্যের আশ্রয়প্রার্থীর হাতে আরেক জার্মান নিহতের ঘটনায় উত্তেজিত জনতাকে সামলাতে হিমসিম খেতে হয়েছে জার্মান প্রশাসনকে৷ তারওপর আবার এই ঘটনা অভিবাসীবিরোধী মনোভাবকে আরো উসকে দিতে পারে বলে মনে করেন অনেকে৷
এদিকে, কোথেনে সোমবারের মিছিল থেকে কোনো বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেয়া বা বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছে কিনা তা তদন্ত করছে পুলিশ৷
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ঐ মিছিল থেকে ‘বর্ণযুদ্ধ'-এর কথা বলেছেন একজন বক্তা৷
জার্মানির পূর্বাংশের সরকারের একজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন, ‘‘যিনিই এ ধরনের মনোভাব প্রকাশ করেছেন, তিনি এ অঞ্চলের উদার-গণতান্ত্রিক ভাবধারা থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছেন৷''