জার্মান পুলিশ বলছে, ২০১৭ সালে জার্মানির নাগরিক নন, এমন সন্দেহভাজন হত্যাকারীর সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে৷ জার্মানির ফেডারেল ক্রিমিনাল পুলিশ অফিস বিকেএ-র এই তথ্য রবিবার প্রকাশ করেছে ‘ভেল্ট আম জনটাগ' পত্রিকা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Schulze
বিজ্ঞাপন
বিকেএ বলছে, ২০১৭ সালে ৮৩টি হত্যা মামলায় জড়িত সন্দেহভাজনদের মধ্যে অন্তত একজন জার্মান নাগরিক ছিলেন না৷ ২০১৬ সালে এমন মামলার সংখ্যা ছিল ৬২টি৷ অর্থাৎ শতকরা হিসেবে এমন মামলার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ৷
জার্মান পুলিশ অবশ্য ঐ ব্যক্তিদের জাতীয়তা প্রকাশ করেনি৷ তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য কোনো দেশের নাগরিক কিনা তা-ও জানা যায়নি৷
পুলিশের ঐ প্রতিবেদনে শুধু নিষ্পত্তি হওয়া মামলার তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷
শরণার্থী হত্যা বেড়েছে
পুলিশ বলছে, ২০১৭ সালে মোট ৭৩১ জন ব্যক্তি হত্যার শিকার হয়েছেন৷ আগের বছর সংখ্যাটি ছিল ৮৭৬ জন৷ অর্থাৎ, গতবছর কমসংখ্যক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে৷
জার্মানির কেমনিৎসে ডানপন্থিদের বিক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া
এক জার্মান-কিউবান নাগরিকের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে জার্মানির কেমনিৎস শহরে বিদেশিদের উপর হামলা হয়েছে৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট ও চ্যান্সেলরসহ অনেক নেতা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/O. Andersen
জার্মান-কিউবানের মৃত্যু
রবিবার ভোরে জার্মানির কেমনিৎস শহরে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ডানিয়েল এইচ. নামে ৩৫ বছর বয়সি এক জার্মান-কিউবান নাগরিক ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান৷ পুলিশ বলছে, বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০ জন মানুষ এই বিবাদে জড়িত ছিলেন৷ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ২২ বছর বয়সি এক ইরাকি ও ২৩ বছর বয়সি এক সিরীয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে৷ ‘যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ ছাড়াই’ তারা ডানিয়েলকে কয়েকবার ছুরিকাঘাত করেন বলে অভিযোগ৷
ছবি: DW/B. Knight
বিক্ষোভ ও বিদেশিদের উপর হামলা
ডানিয়েল এইচ. স্থানীয় কয়েকটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ ফলে তাঁর মৃত্যুর প্রতিবাদে রবিবার বিকালে প্রায় ৮০০ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন৷ এদের মধ্যে চরম ডানপন্থিরাও ছিলেন৷ বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বোতল ছোড়েন এবং তাঁরা পুলিশের কাজে সহযোগিতা করেননি বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ ডেকে আনা হয়৷ এই সময় বিক্ষোভকারীরা পথেঘাটে বিদেশিদের উপর নির্বিচারে হামলাও চালায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
সোমবারও বিক্ষোভ এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
সোমবারও কেমনিৎস শহর উত্তপ্ত ছিল৷ সন্ধ্যার সময় প্রায় ২,০০০ চরম দক্ষিণপন্থি বিক্ষোভে নামেন৷ আর তাঁদের বিক্ষোভের প্রতিবাদে মাঠে নামেন প্রায় ১,০০০ মানুষ (ছবিতে তাঁদের একাংশকে দেখা যাচ্ছে), যাদের মধ্যে বামপন্থিরাও ছিলেন৷ চরম দক্ষিণপন্থি ও বামপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬ জন আহত হন৷ দুই পক্ষ একে অপরের উপর আতসবাজিসহ নানা বস্তু নিক্ষেপ করে৷ ৪ জন চরম দক্ষিণপন্থি বিক্ষোভকারীর উপর হামলার ঘটনাও ঘটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Andersen
সরকারের প্রতিক্রিয়া
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলসহ অনেকে রবি ও সোমবারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন৷ ম্যার্কেল বলেন, দেশে আইন-শৃঙ্খলার ভিত্তিতে যে শাসনব্যবস্থা রয়েছে, তার সঙ্গে এমন আচরণ খাপ খায় না৷ প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার বলেন, ছুরিকাঘাতের ঘটনার ফায়দা তুলে বিদেশিবিদ্বেষ ও হিংসা ছড়ানো হয়েছে৷ সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, জনতা ভিন্ন চেহারার মানুষকে বাছাই করে হামলা চালাবে, এমন আচরণ বরদাস্ত করা হবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
তাণ্ডবের পেছনে ‘ভুয়া খবর’
‘ভুয়া খবর ছড়িয়ে কেমনিৎসে দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে স্যাক্সোনি রাজ্য প্রশাসন৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, শুধু স্থানীয় চরম দক্ষিণপন্থিরা নয়, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়িয়ে অনেক রাজ্য থেকে সমমনস্ক মানুষকে কেমনিৎসে আকর্ষণ করা হয়েছে৷ নিহত ডানিয়েল এইচ. নাকি এক নারীর সম্মানরক্ষার জন্য হস্তক্ষেপ করেছিলেন বলে ভুয়া খবর ছড়ানো হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
5 ছবি1 | 5
তবে গতবছর আগের বছরের তুলনায় আশ্রয়প্রার্থী কিংবা শরণার্থী হত্যার সংখ্যা বেড়েছে৷ ২০১৭ সালে ৪০ জন শরণার্থীকে হত্যা করা হয়েছে৷ ২০১৬ সালে সংখ্যাটি ছিল ২৫৷
উল্লেখ্য, সম্প্রতি জার্মানির কেমনিৎস শহরে এক জার্মান নাগরিকের হত্যাকাণ্ডের পর চরম ডানপন্থিরা বিক্ষোভ করেছেন৷ ঐ হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২৩ বছরের এক সিরীয় নাগরিক ও ২২ বছরের এক ইরাকিকে আটক করা হয়েছে৷
ঐ ঘটনার পর জার্মানিতে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিদেশিদের জড়িত থাকার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে৷