1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মান নাগরিকত্ব হারাবার কারণ হতে পারে ‘ইহুদিবিদ্বেষ'

২ এপ্রিল ২০২৫

‘সন্ত্রাসের সমর্থক, ইহুদিবিদ্বেষী ও চরমপন্থিরা' তাদের জার্মান নাগরিকত্ব হারাতে পারেন, যদি তাদের অন্য কোনো দেশের তরফে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকে৷ এমনটা হলে তা অন্যায় হবে বলে মত সমালোচকদের৷

ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি হাতে ধরা আছে জার্মান পাসপোর্ট৷
সিডিইউ/সিএসইউ জোট জার্মান নাগরিকত্ব আইনে এমন কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব করতে চাইছে যার ফলে দ্বৈত নাগরিকদের মধ্যে বাড়ছে শঙ্কা৷ছবি: Winfried Rothermel/picture alliance

২৩ ফেব্রুয়ারি জার্মানির নির্বাচন শেষ হলেও নতুন সরকার এখনও গঠন হয়নি৷ নানা বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া সিডিইউ/সিএসইউ জোটের সাথে মতের মিল হচ্ছে না সম্ভাব্য জোটসঙ্গী এসপিডি দলের৷

সবচেয়ে বেশি দ্বন্দ্বঅভিবাসন ও ইন্টিগ্রেশন বিষয়ে৷ এই বিষয়ে কী ভাবছেন রাজনীতিকরা, তা রয়েছে সম্ভাব্য জোটসঙ্গীদের চুক্তিপত্রে৷ এই চুক্তিপত্র যে নথিগুলির ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে, তেমনই একটি নথি খতিয়ে দেখেছে ডয়চে ভেলে৷

সেখানে ‘নাগরিকত্ব আইন' শিরোনামে বলা হয়, ‘‘নাগরিকত্ব আইনের সংস্কারের প্রতি আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ৷ সাংবিধানিক আইনের আওতায় থেকে আমরা পরীক্ষা করে দেখব যে সেই সব সন্ত্রাস সমর্থক, ইহুদিবিদ্বেষী ও চরমপন্থি ব্যক্তি, যারা মুক্ত ও গণতান্ত্রিক অবস্থার বিনাশ চায় ও অন্য দেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে যাদের, তাদের জার্মান নাগরিকত্ব ফেরত নেওয়া যায় কি না৷''

এসপিডি'র রাজনীতিক ডার্ক ভিজে এই বিষয়টিকে তার দলের সাফল্য হিসাবে তুলে ধরেন৷ তার মতে, এসপিডি-ই নিশ্চিত করেছিল যাতে কেউ তার দ্বৈত নাগরিকত্ব বহাল রাখতে পারেন, কারণ সিডিইউ/সিএসইউ চেয়েছিল তা পুরোপুরি খারিজ করতে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ বছর বসবাসের পর নাগরিকত্ব পাবার সম্ভাবনা এখনও থাকছে৷ যদি আপনি এই দেশে আসেন আর খুব শিগগিরই মাত্র তিন বছরে ভাষা শিখে যান, তাহলেও সেটা সম্ভব৷''

কিন্তু ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে' জার্মান নাগরিকত্ব ফিরিয়ে নেবার সিডিইউ/সিএসইউ জোটের প্রস্তাবকে এসপিডি ঠেকানোর চেষ্টা করলেও সফল হয়নি বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ প্রশ্ন উঠছে, নাগরিকত্ব কি তবে অস্থায়ী হতে চলেছে? এবং দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার অর্থ কি তবে স্থায়ীভাবে জার্মান হবার পথে বাধা?

অস্থায়ী জার্মান পরিচিতি সত্ত্বা

ব্রেমেন শহরের মেয়র আন্দ্রেয়াস বোভেনশুলটে এই বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন৷ তার মতে, জার্মানির ৫০ লাখ মানুষ যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে, তাদের জন্য এটি ‘সত্যিই বড় সমস্যা৷' তিনি বলেন, ‘‘এতে তাদের মনে হবে যে তাদের নারিকত্বের মূল্য কম ও তারা আসলে এই দেশের নন৷''

বুন্ডেসটাগ সদস্য বাম দল ডি লিংকের সংসদ সদস্য ক্লারা ব্যুনগারের মতে এই প্রস্তাব ‘‘দুই শ্রেণির নাগরিকত্ব দেওয়া আইন'৷ তিনি বলেন, ‘‘কে এই দেশের? আর কে নয়? অভিবাসনবান্ধব সমাজেএই প্রশ্নটাই আমরা চাইনা৷ আমরা চাই স্পষ্ট নিয়ম ও সবার জন্য আইনি নিশ্চয়তা, সাথে জার্মানিতে সকলের জন্য সমান আইন৷''

সন্ত্রাসবাদ, ইহুদিবিদ্বেষ ও নাগরিকত্ব

জার্মানির বর্তমান সাংবিধানিক আইন অনুযায়ী, কিছু বিশেষ ক্ষেত্র বাদে জার্মান নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া যায়না৷ উদাহরণস্বরূপ, কোনো ব্যক্তি যদি ইসলামিক স্টেটের মতো জার্মান সরকারের তরফে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বলে চিহ্নিত কোনো দলের হয়ে লড়েন, তাহলে তাদের জার্মান পাসপোর্ট রদ করা যায়৷ তাও শুধু সেক্ষেত্রেই করা যায় যদি তাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকে৷

বর্তমানে আলোচিত এই নথিতে যেভাবে ‘সন্ত্রাস সমর্থক' ও ‘ইহুদিবিদ্বেষী' শব্দবন্ধ ব্যবহৃত হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা কোথায়? জার্মান আইন অনুযায়ী ইহুদিবিদ্বেষী মনোভাব থাকা কোনো শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়৷

কিন্তু আলোচিত প্রস্তাবের বাস্তবায়ন হলে শুধু তারাই শাস্তি পাবেন যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে৷ যাদের একমাত্র নাগরিকত্বই জার্মান ও যারা ইহুদিবিদ্বেষী কথাবর্তা বলেন, তাদের জন্য কিছুই বদলাবে না৷ লিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইহুদিবিদ্যার অধ্যাপক এলাদ লাপিডো বলেন, ‘‘এতে করে কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীই আলাদাভাবে বিবেচিত হবে, যেমন আরব বা মুসলিম দেশের মানুষ৷''

লাপিডো অ্যাসোসিয়েশন অফ প্যালেস্টিনিয়ান অ্যান্ড জিউয়িশ অ্যাকাডেমিকস সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা৷ জার্মান সংসদ বুন্ডেসটাগ সম্প্রতি ইহুদিবিদ্বেষ আসলে কী, তা নির্দিষ্ট করতে ইন্টারন্যাশনাল হলোকস্ট রিমেমব্রেন্স অ্যালায়েন্স বা আইএইচআরএ'র ব্যাখ্যাকে মান্যতা দেবার কথা আলোচনা করছে৷

লাপিডো এবিষয়েও তার শঙ্কা প্রকাশ করেন কারণ এই ব্যাখ্যায় যে ১১টি ইহুদিবিদ্বেষী উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে, তার বেশিরভাগই ইসরায়েল-সম্পর্কিত৷ যারা এই ব্যাখ্যার সমালোচনা করেছেন, যেমন লাপিডো, তাদেরকেও ইহুদিবিদ্বেষী আখ্যা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি৷

লাপিডো বলেন, ‘‘আপনাকে এই সমালোচনার সাথে একমত হতে হবে না৷ কিন্তু এই সমালোচনা করতে পারাও গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয়৷''

ইহুদিবিদ্বেষের পেছনে থাকা অস্পষ্ট ধারণাসমূহ

13:09

This browser does not support the video element.

নাৎসি অতীতকে মনে করায় এই পন্থা

লাপিডো নিজেও দু'টি দেশের নাগরিক: জার্মান ও ইসরায়েল৷ তার পরিবারকে এক সময় জার্মান নাগরিকত্ব হারিয়ে হামবুর্গ থেকে ১৯৩৪ সালের যুক্তরাজ্যের নির্মিত ফিলিস্তিনে চলে যেতে হয়৷ ‘‘জার্মানি এর আগেও দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক তৈরি করেছে তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়েছিল'', মনে করান তিনি৷

পরে নাৎসি আমলে যারা রাজনৈতিক, ধর্ম ও বর্ণগত কারণে জার্মান নাগরিকত্ব হারান, তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় জার্মান নাগরিকত্ব৷ সেভাবেই লাপিডো ইসরায়েলে বড় হয়েও জার্মান নাগরিকত্ব পান৷

আজকের জার্মানিতে যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে চরম ডানপন্থি চিন্তাধারা, তা নিয়ে চিন্তিত লাপিডো৷ তিনি বলৈন, ‘‘যে সময়ে আমরা দেখছি যে ফ্যাসিস্ট ও নাৎসিদের ১৯৩০-এর দশকের চিন্তাধারা ও নীতি নতুন করে প্রাণ পাচ্ছে, সেই প্রেক্ষিতে ইহুদিবিদ্বেষকে আরব, ফিলিস্তিনি ও মুসলিমদের সাথে আসা বিশ্বাস হিসাবে তুলে ধরাটা বিদ্বেষপূর্ণ ও খুবই বিরক্তিকর৷''

ইহুদিবিদ্বেষ আসলে কখনোই জার্মান সমাজ থেকে পুরোপুরি মুছে যায়নি, জানান তিনি৷

কর্তৃপক্ষের ভূমিকা

কে ঠিক করবে যে কোনো ব্যক্তি ইহুদিবিদ্বেষী, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে৷ জার্মান সরকারের ইহুদিবিদ্বেষ বিষয়ক কমিশনার ফেলিক্স ক্লাইনের কাছে ডয়চে ভেলে এবিষয়ে মতামত চাইলে তিনি বলেন যে যেহেতু এই নথিটি এখনও খসড়া পর্যায়ে আচে তাই তিনি এবিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করবেন না৷

যে অনুচ্ছেদটি ঘিরে এত আলোচনা, তা জার্মান সাংবিধানিক আইনের সাথে সাংঘর্ষিক কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে দেশটির আুদালতে৷

এই অনুচ্ছেদটি আইনের পরীক্ষায় পাস করবে না বলে আশা করছে এসপিডি৷ ডার্ক ভিজের মতে, ‘‘আমার এবিষয়ে ব্যক্তিগত আইনি মতামত রয়েছে বলেই ধারণা করতে পারছি কী হবে৷''

কিন্তু এতটা আশাবাদী নন দেশটিতে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা মানষদের একটি বড় অংশ৷

সারা ইয়ুডিট হফমান/এসএস

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ