জার্মান নাগরিক আটকের পর যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নতুন পরামর্শ
২০ মার্চ ২০২৫
জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তর অবশ্য জানিয়েছে যে নতুন এই নির্দেশিকা ভ্রমণ সতর্কতা হিসাবে বিবেচিত হবে না৷ যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ একাধিক জার্মান নাগরিককে আটক করার পর এই পরামর্শ দেয়া হলো৷
জার্মানি এবং অন্যান্য ইইউ দেশ থেকে আসা পর্যটকরা সাধারণত ৯০ দিন পর্যন্ত ভিসা ছাড়াই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারেনছবি: Daniel Kalker/picture alliance
বিজ্ঞাপন
ভ্রমণ পরামর্শ আপডেট করে জোর দেওয়া হয়েছে যে, মার্কিন ভিসা বা প্রবেশের অনুমতিপত্র জার্মান নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশের নিশ্চয়তা দেয় না৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় তিন জার্মান নাগরিককে আটক করার পর এই পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয় এই ঘটনাগুলোকে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে৷
তিনি বুধবার জানিয়েছেন, ‘‘কোনও ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মার্কিন সীমান্ত কর্তৃপক্ষের উপর নির্ভর করে৷'' জার্মানিতেও এই সিদ্ধান্ত জার্মান কর্তৃপক্ষই নেয়৷
তবে এই ভ্রমণ পরামর্শে পরিবর্তনটি ভ্রমণ সতর্কতার সমান নয় বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি৷
যুক্তরাষ্ট্রে জার্মানদের কেন আটক করা হয়েছে?
মার্কিন গ্রিন কার্ড রেসিডেন্স পারমিট থাকা এক জার্মান নাগরিককে গত সপ্তাহে লুক্সেমবুর্গ থেকে অ্যামেরিকায় ফেরার পর এক মামলায় বস্টন বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়৷ তার পরিবারের সদস্যদের তথ্য অনুযায়ী তখন থেকেই তাকে আটক রাখা হয়েছে৷
জার্মানির স্পিগেল নিউজ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে, আরেকটি মামলায় ২৫ বছর বয়সি এক জার্মানকে ফেব্রুয়ারিতে তার অ্যামেরিকান বাগদত্তার সঙ্গে মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রম করার সময় আটক করা হয়েছিল৷ জার্মানিতে ফেরত পাঠানোর আগে তাকেও দুই সপ্তাহ আটক করে রাখা হয়েছিল৷
স্পিগেল জানিয়েছে, জানুয়ারিতে মার্কিন-মেক্সিকান সীমান্তে আটক হওয়া ২৯ বছর বয়সি এক নারীকে গত সপ্তাহে জার্মানিতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে৷
যেমন হতে পারে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি
প্রথমবার ক্ষমতায় এসে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা পদক্ষেপের কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ ২০২৫ এ দায়িত্ব নেয়ার পর ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতি কেমন হতে পারে?
ছবি: Drew Angerer/Getty Images
‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ নীতি
নির্বাচনি প্রচারণাজুড়ে ট্রাম্প বার বার যে কথাটি বলেছেন, তা হলো, ক্ষমতায় গেলে তার দল ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ নীতি মেনে চলবে৷ অর্থাৎ, সব কিছুর উপরে তিনি নিজ দেশের স্বার্থকেই গুরুত্ব দেবেন৷ তবে এমন অবস্থা ধরে রাখতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে, অর্থাৎ, আটলান্টিকের অপর পাড়ে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন নীতিও প্রণয়ন করতে হবে৷
ছবি: Tom Brenner/Reuters
দেশের বাইরে কম মনোযোগ!
‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেশের অভ্যন্তরে বেশি মনোযোগী হয়ে উঠতে পারে ট্রাম্প প্রাশাসন৷ নির্বাচনি প্রচারণায় তার ভাইস প্রেসিডেন্ট (নির্বাচিত) জেডি ভ্যান্স এমন মন্তব্য করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে দেশের বাইরে নিজেদের সম্পৃক্ততা কমিয়ে আনা৷
ছবি: John Bazemore/AP Photo/picture alliance
‘চীন ঠেকাও নীতি’
গত কয়েক বছর ধরেই চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দী হিসেবে বিবেচনা করে আসছে৷ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আগেই অবশ্য চীন বিষয়ে নিজের অবস্থান জানিয়েছেন ট্রাম্প৷ বলেছেন, চীনা পণ্যে ৬০ ভাগ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করতে পারেন তিনি৷ চীনকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করতে এমন বাণিজ্য নীতি নিয়েই সামনে এগিয়ে যাবেন ট্রাম্প, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকের৷
ছবি: Brendan Smialowski/AFP/Getty Images
কমে আসতে পারে ইউক্রেনকে সহযোগিতা
নির্বাচনের আগে এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘‘কোনো কিছু ফেরত পাওয়ার আশা ছাড়া আমাদের কাউকে টাকা দেওয়া উচিত নয়৷’’ তার এমন মন্তব্যে অবশ্য বোঝা যায়, ইউক্রেনে সহযোগিতা সামনের দিনগুলোতে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন৷
ছবি: Julia Demaree Nikhinson/AP/picture alliance
ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন চালিয়ে যাওয়া
গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান, লেবাননে হিজবুল্লার বিরুদ্ধে হামলা, ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধাবস্থার মতো পরিস্থিত- এমন ঘটনাপ্রবাহের সময়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন সময়ে ট্রাম্পের দেওয়া বক্তব্যে অনেকইটাই ইঙ্গিত মেলে যে, ইসরায়েলের প্রতি ট্রাম্পের পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত থাকতে পারে৷ গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য ছিল, নেতানিয়াহু সঠিক কাজটিই করছেন৷
ছবি: Amos Ben Gershom/IMAGO/ZUMA Press Wire
ইরানের বিষয়ে কঠোর হবেন ট্রাম্প?
ট্রাম্প মনে করেন, তিনি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে দূরে রাখতে পারবেন৷ আর এজন্য তিনি ইরানের অর্থনীতির উপর আঘাত হানতে চান৷ অক্টোবরে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তার আমলে কেউ ইরানের কাছ থেকে তেল কেনেনি৷ কিন্তু এখন (বাইডেনের আমলে) তেল বিক্রি বাবদ ইরানের ৩০০ বিলিয়ন ডলার রয়েছে৷
ছবি: Taidgh Barron/ZUMA/picture alliance
প্রতিবেশিদের সাথে সম্পর্ক
যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রতিবেশি দেশ মেক্সিকো এবং ক্যানাডার সাথে কেমন হবে ট্রাম্পের নীতি? এরই মধ্যে এই বিষয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা৷ মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, ডনাল্ড ট্রাম্প দুই প্রতিবেশি দেশের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করতে পারে৷ সিএনএন জানায়, প্রতিবেশি এই দুই দেশের আমদানির উপর ২৫ ভাগ শুল্ক আরোপ করতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন৷
ছবি: Sean Kilpatrick/The Canadian Press/empics/picture alliance
অভিবাসন নীতি
নির্বাচনি প্রচারণার সময়ই অভিবাসন নিয়ে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ দেশটিতে অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা এক কোটির বেশি৷ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত জেডি ভ্যান্স বলেন, প্রথম বছরে দশ লাখ অনিয়মিত অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠাতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন৷
ছবি: Joe Raedle/Getty Images
ডলারের আধিপত্য ধরে রাখার পদক্ষেপ
ডলারের বিকল্প হিসেবে কোনো মুদ্রা দাঁড় করানো হলে সেসব দেশের উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লিখেছেন, ‘‘এসব দেশের কাছ থেকে আমরা একটি প্রতিশ্রুতি চাই যে তারা নতুন একটি ব্রিকস মুদ্রা তৈরি করবে না বা তারা এমন আর কোনো মুদ্রাকে সমর্থন দেবে না, যা শক্তিমান মার্কিন ডলারকে প্রতিস্থাপিত করবে৷’’
ছবি: Andre Coelho/Agencia EFE/IMAGO
ন্যাটো ও ইউরোপ
আগেরবার ক্ষমতায় এসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি ন্যাটোতে চাঁদা বাড়ানোর দাবি তুলেছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ জার্মানির বার্টেলসম্যান ফাউন্ডেশনের এক গবেষণা বলছে, দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে কিংবা এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে যার ফলে ইউরোপের সামরিক বাজেট বাড়াতে হবে৷ তাছাড়া বাণিজ্য নীতির অংশ হিসেবে ইউরোপীয় পণ্যের উপর শুল্ক বাড়িয়ে দিতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/J. Arriens
জলবায়ু
ড্রিল বেবি ড্রিল! এটি হলো জ্বালানি বিষয়ে ডনাল্ড ট্রাম্পের স্লোগান৷ জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলনের ক্ষেত্রে এমন মন্তব্য ট্রাম্পের৷ অর্থাৎ, যতো বেশি পরিমাণে সম্ভব তেল-গ্যাস উত্তোলন করো৷ এমন নীতির বাস্তবায়ন হলে বিশ্বের পরিবেশ আন্দোলন গতি হারাতে পারে৷ তাছাড়া, অনেক বিশ্লেষকের আশঙ্কা, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে আবারো যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিতে পারে ট্রাম্প৷
ছবি: JIM WATSON/AFP
‘মানবাধিকারের জন্য হুমকি’
বিশ্বজুড়েই মানবাধিকার নিয়ে সরব থাকা যুক্তরাষ্ট্র ট্রাম্পের আমলে কী ধরনের নীতি হাতে নেবে তা বলা মুশকিল৷ তবে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সোচ্চার ছিল বিভিন্ন সংগঠন৷ যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতি জানায়, দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসা যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বে মানবাধিকারের জন্য হুমকি৷
ছবি: Reuters/L. Millis
12 ছবি1 | 12
অন্যান্য দেশ কি তাদের পরামর্শ পরিবর্তন করেছে?
যুক্তরাজ্যও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে ইচ্ছুক নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ পরামর্শ আপডেট করেছে৷
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে দেয়া নতুন তথ্যে বলা হয়েছে, ভ্রমণকারীদের ‘সমস্ত প্রবেশ, ভিসা এবং প্রবেশের অন্যান্য শর্তাবলী মেনে চলতে হবে৷ মার্কিন কর্তৃপক্ষ প্রবেশের নিয়ম কঠোরভাবে নির্ধারণ করে এবং প্রয়োগ করে৷ আপনি যদি নিয়ম ভঙ্গ করেন তবে আপনাকে গ্রেপ্তার বা আটক করার জন্য দায়ী করা হতে পারে৷'
পরামর্শটি শেষ আপডেট করা হয়েছে ১৪ মার্চ৷
আর্কাইভ সংস্করণে দেখা যাচ্ছে, ফেব্রুয়ারিতে একই অংশে বলা ছিল, ‘মার্কিন কর্তৃপক্ষ প্রবেশের নিয়ম নির্ধারণ করে এবং প্রয়োগ করে৷'
সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এক ব্রিটিশ নারীকে তার ভিসার শর্ত লঙ্ঘনের কারণে মার্কিন সীমান্তে ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে আটক রাখা হয়েছিল৷ পররাষ্ট্র দপ্তর পরে নিশ্চিত করেছে যে তারা অ্যামেরিকান কর্তৃপক্ষের আটক করা এক ব্রিটিশ নাগরিককে সহায়তা প্রদান করছে৷
ব্রিটিশ গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, সেই নারী পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যে ফিরে এসেছেন৷
মার্কিন নীতিতে পরিবর্তন
জানুয়ারি মাসে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং ভিসা যাচাই পদ্ধতি কঠোর করার জন্য বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন৷
জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সপ্তাহের শুরুতে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক আটকগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নাকি অ্যামেরিকান নীতিতে পরিবর্তনের অংশ, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
জার্মানি এবং ইইউভুক্ত অন্যান্য দেশগুলোর পর্যটকরা সাধারণত ৯০ দিন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার পান৷