২২ বছর বয়সি এক জার্মান নাগরিককে হত্যার দায়ে দুই আফগানকে গ্রেপ্তার করেছে জার্মানির পূর্বাঞ্চলের শহর ক্যোথেনের পুলিশ৷ মাত্র দুই সপ্তাহ আগে আরেক জার্মানকে কুপিয়ে হত্যাকে কেন্দ্র করে ডানপন্থিদের প্রতিবাদের মাঝেই এ ঘটনা ঘটলো৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান পুলিশ রবিবার জানিয়েছে, ২২ বছর বয়সি এক জার্মান নাগরিকের হত্যাকারী সন্দেহে দুই আফগানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তবে,ঠিক কোন পরিস্থিতিতে জার্মান নাগরিক খুন হয়েছেন তা এখনো জানা যায়নি৷
পুলিশ এবং সরকারি কৌঁসুলির বিবৃতি থেকে জানা গেছে, শনিবার রাতে ওই জার্মান নাগরিক মারা যান৷ এই ঘটনায় রবিবার দুই আফগানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ পুলিশ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিয়ে এখন পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করছে৷
জার্মানির কেমনিৎসে ডানপন্থিদের বিক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া
এক জার্মান-কিউবান নাগরিকের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে জার্মানির কেমনিৎস শহরে বিদেশিদের উপর হামলা হয়েছে৷ জার্মান প্রেসিডেন্ট ও চ্যান্সেলরসহ অনেক নেতা হামলার নিন্দা জানিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/O. Andersen
জার্মান-কিউবানের মৃত্যু
রবিবার ভোরে জার্মানির কেমনিৎস শহরে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ডানিয়েল এইচ. নামে ৩৫ বছর বয়সি এক জার্মান-কিউবান নাগরিক ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান৷ পুলিশ বলছে, বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০ জন মানুষ এই বিবাদে জড়িত ছিলেন৷ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে ২২ বছর বয়সি এক ইরাকি ও ২৩ বছর বয়সি এক সিরীয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে৷ ‘যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ ছাড়াই’ তারা ডানিয়েলকে কয়েকবার ছুরিকাঘাত করেন বলে অভিযোগ৷
ছবি: DW/B. Knight
বিক্ষোভ ও বিদেশিদের উপর হামলা
ডানিয়েল এইচ. স্থানীয় কয়েকটি রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ ফলে তাঁর মৃত্যুর প্রতিবাদে রবিবার বিকালে প্রায় ৮০০ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন৷ এদের মধ্যে চরম ডানপন্থিরাও ছিলেন৷ বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বোতল ছোড়েন এবং তাঁরা পুলিশের কাজে সহযোগিতা করেননি বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ ডেকে আনা হয়৷ এই সময় বিক্ষোভকারীরা পথেঘাটে বিদেশিদের উপর নির্বিচারে হামলাও চালায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
সোমবারও বিক্ষোভ এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
সোমবারও কেমনিৎস শহর উত্তপ্ত ছিল৷ সন্ধ্যার সময় প্রায় ২,০০০ চরম দক্ষিণপন্থি বিক্ষোভে নামেন৷ আর তাঁদের বিক্ষোভের প্রতিবাদে মাঠে নামেন প্রায় ১,০০০ মানুষ (ছবিতে তাঁদের একাংশকে দেখা যাচ্ছে), যাদের মধ্যে বামপন্থিরাও ছিলেন৷ চরম দক্ষিণপন্থি ও বামপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬ জন আহত হন৷ দুই পক্ষ একে অপরের উপর আতসবাজিসহ নানা বস্তু নিক্ষেপ করে৷ ৪ জন চরম দক্ষিণপন্থি বিক্ষোভকারীর উপর হামলার ঘটনাও ঘটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Andersen
সরকারের প্রতিক্রিয়া
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলসহ অনেকে রবি ও সোমবারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন৷ ম্যার্কেল বলেন, দেশে আইন-শৃঙ্খলার ভিত্তিতে যে শাসনব্যবস্থা রয়েছে, তার সঙ্গে এমন আচরণ খাপ খায় না৷ প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার বলেন, ছুরিকাঘাতের ঘটনার ফায়দা তুলে বিদেশিবিদ্বেষ ও হিংসা ছড়ানো হয়েছে৷ সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, জনতা ভিন্ন চেহারার মানুষকে বাছাই করে হামলা চালাবে, এমন আচরণ বরদাস্ত করা হবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
তাণ্ডবের পেছনে ‘ভুয়া খবর’
‘ভুয়া খবর ছড়িয়ে কেমনিৎসে দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে স্যাক্সোনি রাজ্য প্রশাসন৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, শুধু স্থানীয় চরম দক্ষিণপন্থিরা নয়, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া খবর ছড়িয়ে অনেক রাজ্য থেকে সমমনস্ক মানুষকে কেমনিৎসে আকর্ষণ করা হয়েছে৷ নিহত ডানিয়েল এইচ. নাকি এক নারীর সম্মানরক্ষার জন্য হস্তক্ষেপ করেছিলেন বলে ভুয়া খবর ছড়ানো হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
5 ছবি1 | 5
প্রসঙ্গত, দুই সপ্তাহ আগে জার্মানির কেমনিৎস শহরে এক জার্মান নাগরিককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার সহিংস প্রতিবাদ করেছিল ডানপন্থিরা৷ সেই ঘটনার দুই সপ্তাহের মধ্যে অভিবাসীদের হাতে আরেক জার্মানের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে যাতে সহিংস প্রতিবাদ শুরু না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
জার্মানির স্যাক্সনি-আনহল্ট রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হল্গার স্টালখনেখ্ট ইতোমধ্যে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন৷ ক্যোথেন শহর একই রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত৷ তিনি নিহতের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শোকও প্রকাশ করেছেন৷ তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই আহ্বানকে উপেক্ষা করে ইতোমধ্যে শহরটিতে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দিয়েছেন ডানপন্থিরা৷ শহরের মেয়র এক ফেসবুক বার্তায় স্থানীয়দের সেই কর্মসূচিতে অংশ না নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷
এদিকে, জার্মানির ডি ভেল্ট পত্রিকা জানিয়েছে, দুই আফগান এবং দুই জার্মানের মধ্যে বিরোধকে কেন্দ্র করে সম্ভবত এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে৷ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে জার্মান নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলেও মনে করছে পত্রিকাটি৷
স্যাক্সনি-আনহল্ট কর্তৃপক্ষ নিহতের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে৷