এ হবে যুদ্ধোত্তর জার্মানির সবচেয়ে অনুত্তেজ ও অদ্ভুত নির্বাচন, বলছেন পর্যবেক্ষকরা৷ মুখ্য প্রতিযোগী ম্যার্কেল দীর্ঘকাল নীরব থাকার পর গত শনিবার স্বয়ং মাঠে নেমেছেন৷ প্রতিদ্বন্দ্বী শুলৎস সোচ্চার কিন্তু দৃশ্যত ধারহীন৷
বিজ্ঞাপন
গত মাসের শেষে গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটাতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত আঙ্গেলা ম্যার্কেল যেন ইচ্ছাকৃত ভাবে ২৪শে সেপ্টেম্বরের সংসদীয় নির্বাচনকে উপেক্ষা করেছেন৷ গত শনিবার তিনি ডর্টমুন্ডে – অর্থাৎ প্রতিদ্বন্দ্বী সামাজিক গণতন্ত্রীদের পেটোয়া রুর শিল্পাঞ্চলে একটি জনসভার মাধ্যমে তাঁর নির্বাচনি প্রচার অভিযানের চূড়ান্ত পর্যায় শুরু করেন৷ ম্যার্কেল গোটা জার্মানিতে এ ধরনের প্রায় ৫০টি সমাবেশে আবির্ভূত হবার পরিকল্পনা করছেন – তবে ডর্টমুন্ডের সমাবেশটি ছিল তাঁর সিডিইউ দলের শ্রমিক-কর্মচারী সমিতির সামনে, কাজেই ‘নিজের মাঠে'৷ আগামীতে ম্যার্কেলকে হাটবাজারে প্রকাশ্য ব়্যালিতেও দেখা যাবে৷
ডর্টমুন্ডে আশাবাদী বক্তব্য রাখলেন ম্যার্কেল: ‘‘আমরা ২০২৫ সালের মধ্যে পূর্ণ কর্মসংস্থানের লক্ষ্য অর্জন করতে চলেছি, অর্থাৎ বেকারত্বের হার তিন শতাংশের নীচে পৌঁছাতে চলেছে – এবং আমরা তা করতে পারব, বলে আমার ধারণা৷'' জুলাই মাসে জার্মানিতে বেকারত্বের হার ছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ৷
অপরদিকে ম্যার্কেলকে এই প্রথম জার্মানির মোটর গাড়ি শিল্পের চলতি সংকট সম্পর্কে প্রকাশ্য মন্তব্য করতে শোনা গেল৷ জার্মানির মোটর নির্মাণ শিল্পের সুনামের যে বিপুল ক্ষতি হয়েছে, একমাত্র সেই শিল্পই তা আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারে – বললেন ম্যর্কেল৷ অপরদিকে এই সংকটের জন্য তিনি গাড়ি তৈরির কোম্পানিগুলির পরিচালক মহলকে দায়ী করলেন৷ আসন্ন নির্বাচনে চ্যান্সেলর পদে তাঁর এসপিডি প্রতিদ্বন্দ্বী মার্টিন শুলৎস ইউরোপব্যাপী বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির কোটা চালু করার যে প্রস্তাব দিয়েছেন, এই অবকাশে সে প্রস্তাবটিকেও প্রত্যাখ্যান করলেন ম্যার্কেল৷
জার্মান নির্বাচনের প্রচারণা প্ল্যাকার্ড
আসল? বিদেশিবিদ্বেষী? সেকেলে? জার্মানির নির্বাচনের জন্য তৈরি পোস্টারে এ রকম আরো অনেক শব্দ দেখা যাচ্ছে৷ ভোটারদের দলে ভেড়াতে বড় দলগুলোর পোস্টারে কী দেখা যাচ্ছে দেখে নেই চলুন৷
ছবি: picture alliance/dpa/B.Pedersen
খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল (সিডিইউ)
টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল নির্বাচনি পোস্টারে এখন আর কোনো অপরিচিত মুখ নন৷ তাঁর দল সিডিইউ ২০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে গোটা জার্মানিতে ২২,০০ প্ল্যাকার্ড বসাচ্ছে৷ এতে জার্মান চ্যান্সেলরের ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে জার্মান পতাকা ব্যবহারে করে দলটির দেশপ্রেম বোঝানো হয়েছে৷ আর স্লোগানে প্রাধান্য পেয়েছে নিরাপত্তা, পরিবার এবং কাজের মতো বিষয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/B.Pedersen
সামাজিক গণতন্ত্রী (এসপিডি)
সামাজিক গণতন্ত্রীরা তাদের দীর্ঘদিনের লাল আর বর্গাকারের লোগোকে পোস্টারে প্রাধান্য দিয়েছে৷ তাদের পোস্টারে শিক্ষা, পরিবার, পেনশন, বিনিয়োগ এবং বেতন বৈষম্যের মতো বিষয়াদি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ ২৪ মিলিয়ন ইউরোর নির্বাচনি প্রচারণার পর নির্বাচনের ঠিক আগে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নাকি একটি বোমা ফাটাতে পারে এসপিডি, তবে সেসম্পর্ক কিছু এখনো জানা যায়নি৷
মুক্তগণতন্ত্রী দল (এফডিপি)
মুক্তগণতন্ত্রীদের নির্বাচনি প্রচারণায় খরচ হচ্ছে পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ সাদাকালো ফটোশুটের মাধ্যমে পোস্টারে আধুনিক মার্কেটিংয়ের ছাপ ফুটিয়ে তুলেছে সেদেল৷ তাদের পোস্টারে শোভা পাচ্ছেন একজন: ক্রিস্টিয়ান লিন্ডার৷ তবে পোস্টারে ছোট করে লেখা নানা কথা পড়তে ভোটারদের বেশ কষ্টই করতে হবে৷ ‘অস্থিরতাও একটা গুণ’, লেখা হয়েছে পোস্টারে৷
সবুজ দল
সবুজ দল তাদের দলীয় নীতিকেই নির্বাচনের পোস্টারে তুলে ধরছেন৷ সেদলের স্লোগানে জায়গা করে নিয়েছে পরিবেশ, ইন্টিগ্রেশন এবং শান্তির মতো বিষয়৷ তাদের স্লোগান হচ্ছে, ‘‘পরিবেশই সবকিছু নয়, তবে পরিবেশ ছাড়া সবকিছুই অর্থহীন৷’’
জার্মানির জন্য বিকল্প (এএফডি)
তবে আসন্ন নির্বাচনের সবচেয়ে বিতর্কিত প্ল্যাকার্ড তৈরি করেছে ডানপন্থি এএফডি পার্টি৷ আপাত দৃষ্টিতে এই পোস্টারটি দেখলে মনে হবে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী হাসছেন৷ কিন্তু স্লোগান কী বলছে জানেন? ‘‘নতুন জার্মান? তাদের আমরাই তৈরি করবো৷’’ দলটির আরেক পোস্টারে বিকিনি পরা তিন নারীকে দেখা গেছে৷ আর তাতে লেখা: ‘‘বোরকা? আমরা বিকিনি পছন্দ করি৷’’
বামদল
বামদলের পোস্টারে বিভিন্ন ফস্টের বর্ণিল উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷ ‘‘[বর্নিল] মানুষ৷ স্পষ্টভাবে ডানপস্থি ঘৃণার বিরোধী’’, বলছে তাদের স্লোগান৷ দলটির নির্বাচনি প্রচারণায় গুরুত্ব পাচ্ছে সাশ্রয়ী ভাড়া, আরো স্বচ্ছ পেনশনের নিশ্চয়তা এবং অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের মতো বিষয়৷
6 ছবি1 | 6
সরকারি টেলিভিশন কেন্দ্র এআরডি-র একটি জরিপ অনুযায়ী ম্যার্কেলের ভোটার সমর্থন গত সপ্তাহে হঠাৎ ৬৯ শতাংশ থেকে ৫৯ শতাংশে নেমে আসে৷ তা সত্ত্বেও ম্যার্কেলের সিডিইউ-সিএসইউ দলীয় জোট পূর্বাপর প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পেতে চলেছে, যেখানে তাদের নিকটতম প্রতিযোগী এসপিডি দলের ২৪ শতাংশের বেশি ভোট পাবার আশা নেই৷ প্রসঙ্গত, গত নির্বাচনে এসপিডি ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল৷
শুলৎস এখনও আশা ছাড়েননি
ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা অথবা দলীয় ভোটার সমর্থনে ম্যার্কেলের চেয়ে অনেক পিছিয়ে থাকলেও সামাজিক গণতন্ত্রী দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী মার্টিন শুলৎস রবিবার সরকারি জেডডিএফ টেলিভিশন কেন্দ্রের একটি সাক্ষাৎকারে বলেন যে, তিনি এখনও আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে পরাজিত করার আস্থা রাখেন৷ এমনকি তিনি ‘চ্যান্সেলর হিসেবে' সিডিইউ দলের সঙ্গে জোট সরকারে অংশ নিতে প্রস্তুত, বলে জানান শুলৎস৷
বাস্তব এই যে, শুলৎস তাঁর নির্বাচনি প্রচার অভিযানে শিক্ষা, গবেষণা, অবকাঠামোর উন্নতি ও সামাজিক ন্যায়ের উপর জোর দিয়ে ভোটারদের আগ্রহ অথবা সমর্থন, দু'টোর কোনোটাই এ যাবৎ জাগিয়ে তুলতে পারেননি – অন্তত বিভিন্ন জরিপে তাই দেখা গেছে৷
উদ্বাস্তু সংকটের ক্ষেত্রে শুলৎস ইটালি যাত্রা করে ভূমধ্যসাগর পার হয়ে আসা উদ্বাস্তুদের সারা ইউরোপে বণ্টন করার দাবি তুলেছেন৷ যুগপৎ তিনি ইউরোপে বৈধ অভিবাসনের পন্থা খোলার সপক্ষে বক্তব্য রাখেন৷ কিন্তু এক্ষেত্রেও ম্যার্কেল জার্মানিতে আরো ৪০,০০০ উদ্বাস্তু নেবার অভিপ্রায় ঘোষণা করে শুলৎসের উদ্যোগকে – অন্তত নির্বাচনি প্রচারের দৃষ্টিকোণ থেকে – ব্যর্থ করেছেন৷
জার্মানির যে সাত রাজনৈতিক দলের নামও শোনেননি আপনি
জার্মানরা শুধু সিডিইউ বা এসপিডি নয়, কিছু ছোট এবং বিরল দলকেও ভোট দিতে পারে৷ এই যেমন, প্রাণী সুরক্ষা পার্টি কিংবা মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট পার্টি৷ ভাবছেন, এরা কারা? চলুন দেখে নিই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
প্রাণী সুরক্ষা দল
জার্মানিতে প্রাণী অধিকার বিষয়ক অ্যাক্টিভিস্টরা সুযোগ পেলে পুরো হাইওয়ে বন্ধ করে দেন যাতে ব্যাঙেরা নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারে৷ এমন দেশে তাই ‘অ্যানিমেল প্রোটেকশন পার্টি’ বা প্রাণী সুরক্ষা দল থাকবে না, তা কি হতে পারে? তবে গ্রিন পার্টির কারণে এ দলের পালে হাওয়া কম থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
দ্য রিপাবলিকানস
ব্যাপারটা কিছুটা বিভ্রান্তিকর৷ জার্মানির রয়েছে নিজস্ব রিপাবলিকান পার্টি, নাম আরইপি৷ তবে এই দলের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো সম্পর্ক নেই৷ জার্মান রিপাবলিকনরা হচ্ছেন ডানপন্থি জাতীয়তাবাদী, যারা নিজেদের ‘রক্ষণশীল দেশপ্রেমিক’ এবং দেশের ‘সংস্কৃতি এবং আত্মপরিচয়’ রক্ষায় লড়াইরত বলে মনে করেন৷
ছবি: DW
দ্য পার্টি
হ্যাঁ, এই দলের নাম ‘দ্য পার্টি’৷ জার্মানির স্যাটায়ার ম্যাগাজিন ‘টাইটানিক’ এর সম্পাদকরা ২০০৪ সালে এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ দলটির প্রধান হচ্ছেন মার্টিন স্যোনেবর্ন (ছবিতে)৷ ২০১৪ সালে তিনি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে দলটির জন্য একটি আসন নিশ্চিত করেন৷ ভবিষ্যতে দলটির অবস্থা আরো ভালো হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/Sven Simon/M. Ossowski
গণভোট দল
জার্মানির রেফারেন্ডাম পার্টি বা গণভোট দলের কাছে সুইজারল্যান্ড এক বিশাল অনুপ্রেরণা৷ দলটি চায় দেশের সব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গনভোটের মাধ্যমে জনগণ নেবে৷ সুইজারল্যান্ডে ২০১৬ সালে তেরোটি গণভোটের আয়োজন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট পার্টি
জার্মানির এমএলপিডি একটি ছোট দল, যদিও দেশটির অর্ধেক মানুষ এক সময় কমিউনিস্ট ছিলেন৷ মানে ১৯৪৯ থেকে ১৯৮৯ সাল অবধি যখন জার্মানি দুই ভাগে বিভক্ত ছিল৷ তৎকালীন পূর্ব জার্মানি তখন শাসন করেছিল সোশ্যালিস্ট ইউনিটি পার্টি৷ বর্তমানে উগ্র বামপন্থি এমএলপিডি’র জার্মান রাজনীতিতে কোনো ভূমিকা নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Link
ক্রিশ্চিয়ানস ফর জার্মানি
‘অ্যালায়েন্স সি - ক্রিশ্চিয়ানস ফর জার্মানি’ একটি ক্রিশ্চিয়ান পার্টি, যেটির যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালে৷ খ্রিষ্টান-মৌলবাদীদের একটি দল এবং শ্রমিক, পরিবেশ এবং পরিবারভিত্তিক একটি দল একত্র হয়ে এই দল গড়ে৷ বাইবেলের মান রক্ষা করে দেশ পরিচালনা করতে চায় এই দল৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. MacDougall
6 ছবি1 | 6
উদ্বাস্তু সংকট ম্যার্কেলের জনপ্রিয়তা কমাতে পারেনি
২০১৫ সালে প্রায় নয় লাখ উদ্বাস্তু জার্মানিতে আসা সত্ত্বেও ম্যর্কেল তাঁর দলীয় সহযোগী সিএসইউ দলের তরফ থেকে উদ্বাস্তু আগমনের একটি বাৎসরিক ঊর্ধ্বসীমা নির্দিষ্ট করার দাবি মেনে নেননি৷ উদ্বাস্তু নীতির ক্ষেত্রে তিনি দক্ষিণ থেকে বাম, সব ধরনের সমালোচনার সম্মুখীন হলেও, ম্যার্কেল নিজের অবস্থানে অনড় থেকেছেন৷
সিডিইউ দল এবার তাদের নির্বাচনি প্রচার অভিযানে ম্যার্কেলের এই স্থায়িত্ব ও স্থিতিশীলতার দিকটাকেই তুলে ধরেছে – ব্রেক্সিট থেকে ট্রাম্প, উদ্বাস্তু থেকে উত্তর কোরিয়া প্রমুখ বিভিন্ন ঝড়ঝঞ্ঝার পরিপ্রেক্ষিতে এই বার্তা দৃশ্যত জার্মান ভোটারদের কাছে মন্ত্রের মতো কাজ করেছে ও করছে৷
সামাজিক গণতন্ত্রীদের হতাশ করেছে একদিকে জার্মান ভোটারদের যে কোনো ধরণের পরিবর্তনে আপাত অনীহা; অন্যদিকে এমন এক বৈরি, যে দৃশ্যত মল্লযুদ্ধে উত্তীর্ণ হতেই রাজি নয়৷ যে কারণে শুলৎস এ মাসের গোড়ায় ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের ক্ষতি করার অভিযোগ পর্যন্ত তোলেন৷ ‘‘যে চ্যান্সেলর ভোটারদের বলেন না, তিনি কি করতে চান, তেমন একজন চ্যান্সেলর তাঁর দায়িত্বে গাফিলতি করছেন – যা দেশের ভবিষ্যতের পক্ষে বিপজ্জনক'', বলেন শুলৎস৷ এক কথায়, ম্যার্কেল কিছু না বললে, শুলৎস তাঁর যুক্তি খণ্ডন করবেন কি করে বা বিপক্ষ যুক্তি দেখাবেন কি করে? নিজের বিরুদ্ধে তো আর যুদ্ধ করা চলে না৷
সিডিইউ দল মওকা বুঝে একটি ‘সফ্ট ফোকাস' ক্যাম্পেইনের পথ বেছে নিয়েছে, বলছেন পর্যবেক্ষকরা৷ এবার সিডিইউ দলের নির্বাচনি স্লোগান হলো: ‘এমন একটি জার্মানি, যেখানে আমরা সুখে, ভালোভাবে থাকতে পারি'৷ সঙ্গের ছবিটিতে এক তরুণী তৃণভূমির মাঝখানে শুয়ে রয়েছেন – নিদ্রিত অবস্থায়৷
ভোটররা যখন স্ট্যাটাস কুও নিয়ে খুশি, তখন পরিবর্তন আনা – বিশেষ করে সরকারে পরিবর্তন আনা – প্রায় অসম্ভব৷ জার্মান ভোটাররা আপাতত দেশের অর্থনৈতিক সুস্বাস্থ্য, উদ্বাস্তু নীতি থেকে শুরু করে নিরাপত্তা অবধি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন বৃহৎ জোটের সমঝোতা, ও সেই সঙ্গে এএফডি-র মতো নতুন পপুলিস্ট দলগুলিকে উপেক্ষা করার সফল কৌশলে এতই সন্তুষ্ট যে, তারা ম্যার্কেল গরমের ছুটিতে প্রতিবছরের মতো পাহাড়ে হাইকিং করতে গেলেও জরিপে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়ে বৈ কমে না৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ, এএফপি)
জার্মানির জাতীয় নির্বাচন ২০১৭: কবে, কী হচ্ছে
তিনটি রাজ্যে নির্বাচনের পাশাপাশি জার্মানির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২০১৭ সালে৷ চলুন জেনে নেই জাতীয় নির্বাচনের টাইমলাইন৷
ছবি: picture-alliance/R. Goldmann
জার্মানির বড় নির্বাচনের বছর
জার্মানিতে চলতি বছর আয়োজন করা হচ্ছে একের পর এক নির্বাচন৷ একদিকে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল চতুর্থবারের মতো চ্যান্সেলর পদে লড়ছেন, অন্যদিকে পপুলিস্ট পার্টি অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) অভিবাসীবিরোধী অবস্থানের কারণে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে৷ বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এটা নিশ্চিত যে, ২০১৭ সালের শেষে জার্মানির রাজনৈতিক অবস্থা এখনকার মতো থাকবে না৷
ছবি: Getty Images
জুন ১৯: দলের মনোনয়ন জমা দেয়ার দিন ছিল
জার্মানির সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য আবেদনের শেষ দিন ছিল জুন ১৯৷ সেদিন সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে আগ্রহী দলগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আবেদন জানাতে হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Burgi
জুলাই ৭: কোন কোন দল লড়ছে?
সংসদ নির্বাচনে কোন কোন দল অংশ নিতে পারবে তা ঘোষণা করা হবে এই দিনে৷ যদি কোন দল নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হয় তাহলে পরবর্তী চারদিনের মধ্যে জার্মানির সাংবিধানিক আদালতে নালিশ করতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Deck
জুলাই ১৭: কারা কারা থাকছেন?
চলতি বছরের ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের কোন কোন প্রার্থী কোন কোন এলাকায় লড়বেন, তা চূড়ান্ত করতে হবে৷ জার্মানিতে একসঙ্গে দু’টি ভোট দেয়ার সুযোগ রয়েছে৷ প্রথমটি প্রার্থীকে, দ্বিতীয়টি দলকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
জুলাই ২৭: ব্যালটে নাম উঠানোর লড়াই
যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে সাংবিধানিক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে, তাদের বিষয়ে রায় ঘোষণা করা হবে এই দিনে৷ ২০১৩ সালে এই পন্থা চালু করা হয়েছিল৷ সেবছর এগারোটি দল আদালতের স্মরণাপন্ন হলেও কেউই মামলা জেতেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Steinberg
আগস্ট ১৩: আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা
জার্মানিতে নির্বাচন শুরুর ছয় সপ্তাহ আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো আনুষ্ঠানিক প্রচারণার পোস্টার বা টেলিভিশন বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারে না৷ চলতি বছরের জাতীয় নির্বাচনের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর তারিখ ১৩ আগস্ট৷ এই দিন থেকে দলগুলো তাদের প্রচারণায় কোনো ঘাটতি রাখবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Balk
আগস্ট ২০: কে ভোট দিতে পারবেন?
নির্বাচনের মাসখানেক আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তালিকা চূড়ান্ত হবে৷ ভোটার লিস্ট ঘোষণা করবে নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ৷ জার্মানিতে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সি যে কোনো জার্মান নাগরিক ভোট দিতে পারবেন৷ সে হিসেবে চলতি বছর ভোটারের সংখ্যা সাড়ে ৬১ মিলিয়ন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K.-D. Gabbert
সেপ্টেম্বর ৩: তিন সপ্তাহ বাকি
এই সময়ের মধ্যে সকল ভোটার পোস্টে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে ভোট দেয়ার সার্টিফিকেট পাবেন৷ যারা তখন অবধি ভোটার লিস্টে নিজেদের নাম পাননি, তারা রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাবেন৷ আর যারা পোস্টের মাধ্যমে ভোট দিতে চান, তারা ব্যালট পেপার চাইতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/R. Goldmann
সেপ্টেম্বর ২৪: নির্বাচনের দিন
অবশেষে সেই মহেন্দ্রক্ষণ৷ জার্মানির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৪ সেপ্টেম্বর৷ সেদিন সকাল আটটায় নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হবে, চলবে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত৷ ভোটগণনা সেদিনই শেষ হবে এবং নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ রাতে প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা করবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেপ্টেম্বর ২৫: বিজয়ী এবং বিজিত
সকল প্রতিনিধি এবং দলগত ভোট গণনা শেষে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা দেয়া হবে ২৫ সেপ্টেম্বর৷ যদি কোনো প্রার্থী তাঁর নির্বাচনী এলাকায় জিততে ব্যর্থ হন, তা সত্ত্বেও দলগত জয়ের কারণে তিনি সংসদে একটি আসন পেতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
অক্টোবর ২৪: নতুন সাংসদরা সংসদে
নির্বাচন শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে নতুন সাংসদদের সংসদে মিলিত হওয়ার নিয়ম রয়েছে৷ এ বছর সেই দিনটি হচ্ছে অক্টোবর ২৪৷ সেদিন গোপন ব্যালটের মাধ্যমে জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর নির্বাচিত হবেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নভেম্বর ২৪: সবকিছু কি সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়েছে?
যদি কেউ জাতীয় নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চান, তাহলে তার হাতে সময় থাকে নির্বাচন পরবর্তী দুই মাস৷ ভোটাররাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট যে কেউ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার রাখেন এই সময়ের মধ্যে৷