জাতীয় নির্বাচনের ভোট এখনো শুরু হয়নি৷ তবে তরুণ ভোটাররা এই নির্বাচনে খুব কমই প্রভাব রাখবে তা নিশ্চিত৷ কেননা, তাদের চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ভোটারের সংখ্যা বেশি৷ প্রশ্ন উঠেছে, তরুণদের জন্য এই নির্বাচন কতটা অনুকূলে রয়েছে?
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে কে সরকার গঠন করবে তা নির্ধারণের ক্ষমতা মূলত প্রবীণ প্রজন্মের হাতে রয়েছে৷ আর ত্রিশ বছরের চেয়ে কম বয়সি ভোটারদের ভূমিকা অনেকটা ছোট বিরোধী দলের মতো৷নির্বাচনে প্রভাব ফেলার মতো ক্ষমতা তাদের নেই৷ কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জার্মানিতে ষাট বছরের বেশি বয়সি ভোটারের হার ৩৬ শতাংশ, আর ত্রিশের কম বয়সি ভোটার মাত্র ১৫ শতাংশ৷
জার্মানির ভোটারদের এই পরিসংখ্যান দেখে বিশেষজ্ঞরা দেশটির গণতন্ত্রকে ‘অবসরভোগীদের গণতন্ত্র' হিসেবেও আখ্যা দিচ্ছেন৷ গত নির্বাচনের সময় দেখা গেছে ভোটারদের অর্ধেকের বেশির বয়স পঞ্চাশ বছরের বেশি৷ অথচ ১৯৮০ সাল অবধি নবীন এবং প্রবীণ ভোটারদের সংখ্যা প্রায় সমান ছিল৷
ভবিষ্যতে প্রবীণ ভোটারের সংখ্যা বেড়ে গেলে জার্মান রাজনীতি যে প্রবীণ বান্ধব হয়ে উঠবে তা আগেই আঁচ করেছিলেন সাবেক জার্মান প্রেসিডেন্ট রোমান হ্যারৎসগ৷ ২০০৮ সালে অবসরভাতা হঠাৎ করে বাড়ানো হলে তিনি জার্মানির রাজনীতিকে ‘অবসরভোগীদের গণতন্ত্র' আখ্যা দিয়ে জানান যে, রাজনৈতিক দলগুলো সামঞ্জস্যহীনভাবে বৃদ্ধ ভোটারদের নিয়ে খেলছেন৷
বিভিন্ন গবেষণায় অবশ্য দেখা গেছে যে, প্রবীণ ভোটাররা ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে বর্তমানের চেয়ে ভবিষ্যতের কথাই বেশি চিন্তা করেন৷ ফলে তারা ভোট দেয়ায় নবীনদের একেবারেই স্বার্থরক্ষা হচ্ছে না, এমন যারা মনে করেন তাঁরা ভুল করছেন৷ বরং পরিবার এবং নবীন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ কীভাবে সুন্দর হবে সে চিন্তা প্রবীণ ভোটারদেরও রয়েছে৷
প্রবীণ ভোটারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডি, বিরোধী দল সবুজ দল এবং বাম দল এক নতুন পন্থার কথা ভাবছে৷ তারা চাচ্ছেন ভোটারদের সর্বনিম্ন বয়স আঠারো থেকে কমিয়ে ষোল করা হোক৷ দলগুলোর যুক্তি হচ্ছে, জার্মান সংসদে অনেক সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যা তরুণদের জীবনে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে৷ ফলে ষোল বছরে ভোট দেয়ার অধিকার পেলে তাদের জন্য তা ইতিবাচক হবে৷
কেউ কেউ অবশ্য শিশু-কিশোরদেরকেও ভোট দেয়ার অধিকার দেয়ার পক্ষে৷ তাদের একজন লেখক ভল্ফগাং গ্রুনডিগারের মতে, প্রত্যেক শিশু কিশোরের তারা যখন চাইবে তখন ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া উচিত৷ তাঁর কথা হচ্ছে, যেহেতু প্রবীণ ভোটারদের কোনো বয়স সীমা নেই, নবীন ভোটারদেরও থাকা উচিত নয়৷
সান্দ্রো শ্র্যোডার/এআই
জার্মানির যে সাত রাজনৈতিক দলের নামও শোনেননি আপনি
জার্মানরা শুধু সিডিইউ বা এসপিডি নয়, কিছু ছোট এবং বিরল দলকেও ভোট দিতে পারে৷ এই যেমন, প্রাণী সুরক্ষা পার্টি কিংবা মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট পার্টি৷ ভাবছেন, এরা কারা? চলুন দেখে নিই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
প্রাণী সুরক্ষা দল
জার্মানিতে প্রাণী অধিকার বিষয়ক অ্যাক্টিভিস্টরা সুযোগ পেলে পুরো হাইওয়ে বন্ধ করে দেন যাতে ব্যাঙেরা নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারে৷ এমন দেশে তাই ‘অ্যানিমেল প্রোটেকশন পার্টি’ বা প্রাণী সুরক্ষা দল থাকবে না, তা কি হতে পারে? তবে গ্রিন পার্টির কারণে এ দলের পালে হাওয়া কম থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
দ্য রিপাবলিকানস
ব্যাপারটা কিছুটা বিভ্রান্তিকর৷ জার্মানির রয়েছে নিজস্ব রিপাবলিকান পার্টি, নাম আরইপি৷ তবে এই দলের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো সম্পর্ক নেই৷ জার্মান রিপাবলিকনরা হচ্ছেন ডানপন্থি জাতীয়তাবাদী, যারা নিজেদের ‘রক্ষণশীল দেশপ্রেমিক’ এবং দেশের ‘সংস্কৃতি এবং আত্মপরিচয়’ রক্ষায় লড়াইরত বলে মনে করেন৷
ছবি: DW
দ্য পার্টি
হ্যাঁ, এই দলের নাম ‘দ্য পার্টি’৷ জার্মানির স্যাটায়ার ম্যাগাজিন ‘টাইটানিক’ এর সম্পাদকরা ২০০৪ সালে এই দলটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ দলটির প্রধান হচ্ছেন মার্টিন স্যোনেবর্ন (ছবিতে)৷ ২০১৪ সালে তিনি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে দলটির জন্য একটি আসন নিশ্চিত করেন৷ ভবিষ্যতে দলটির অবস্থা আরো ভালো হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/Sven Simon/M. Ossowski
গণভোট দল
জার্মানির রেফারেন্ডাম পার্টি বা গণভোট দলের কাছে সুইজারল্যান্ড এক বিশাল অনুপ্রেরণা৷ দলটি চায় দেশের সব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গনভোটের মাধ্যমে জনগণ নেবে৷ সুইজারল্যান্ডে ২০১৬ সালে তেরোটি গণভোটের আয়োজন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট পার্টি
জার্মানির এমএলপিডি একটি ছোট দল, যদিও দেশটির অর্ধেক মানুষ এক সময় কমিউনিস্ট ছিলেন৷ মানে ১৯৪৯ থেকে ১৯৮৯ সাল অবধি যখন জার্মানি দুই ভাগে বিভক্ত ছিল৷ তৎকালীন পূর্ব জার্মানি তখন শাসন করেছিল সোশ্যালিস্ট ইউনিটি পার্টি৷ বর্তমানে উগ্র বামপন্থি এমএলপিডি’র জার্মান রাজনীতিতে কোনো ভূমিকা নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Link
ক্রিশ্চিয়ানস ফর জার্মানি
‘অ্যালায়েন্স সি - ক্রিশ্চিয়ানস ফর জার্মানি’ একটি ক্রিশ্চিয়ান পার্টি, যেটির যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালে৷ খ্রিষ্টান-মৌলবাদীদের একটি দল এবং শ্রমিক, পরিবেশ এবং পরিবারভিত্তিক একটি দল একত্র হয়ে এই দল গড়ে৷ বাইবেলের মান রক্ষা করে দেশ পরিচালনা করতে চায় এই দল৷