1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মান নির্বাচন: অভিবাসন নিয়ে ইশতেহারে কী জানালো এফডিপি?

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

২৩ ফেব্রুয়ারি সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজ নিজ ইশতেহার ঘোষণা করছে জার্মানির রাজনৈতিক দলগুলো৷ অভিবাসন বিষয়ে কী থাকছে তাদের ইশতেহারে? এই পর্বে থাকছে জার্মানির মুক্ত উদারপন্থি দল এফডিপি-এর ইশতেহারের বিশ্লেষণ৷

এফডিপির প্রধান নেতা ক্রিষ্টিয়ান লিন্ডনার৷
চ্যান্সেল ওলাশ শলৎসের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন এফডিপির প্রধান নেতা ক্রিষ্টিয়ান লিন্ডনার৷ ছবি: Ebrahim Noroozi/AP/picture alliance

সাধারণভাবে, এফডিপি-কে ব্যবসাবান্ধব দল হিসেবে দেখা হয়৷ বিশেষত উদ্যোক্তা, কোম্পানির কর্তাব্যক্তি এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক নেতাদের ভোট নিজেদের দিকে টানতে চান তারা৷ মুক্ত ও উদারপন্থি নীতির কারণে বেশিরভাগ বিষয়ে মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে দলটির৷ ফলে অভিবাসন ইস্যুতেও তাদের মনোভাব উদার হবে, এমনটাই প্রত্যাশা করেন অনেকে৷

দলটি নিজেদেরকে মধ্যপন্থি দাবি করলেও তাদের কিছু কিছু অবস্থান ডানপন্থিদের মতোই৷ আসন্ন নির্বাচন ঘিরে হওয়া বিভিন্ন জনমত জরিপে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে রক্ষণশীল দল সিডিইউ/সিএসইউ৷ ধারণা করা হচ্ছে, এফডিপির সমর্থনও তাদের দিকেই যাবে৷

তবে, এফডিপির জনপ্রিয়তা এখন পড়তির দিকে৷ কারণ জার্মানির বিদায়ী জোট সরকারের একটি অংশ তারা৷ সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট এবং গ্রিন পার্টির সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায় রয়েছে এফডিপি৷ কিন্তু জোটের ভাঙনের কারণে সাধারণ নির্বাচন এগিয়েছে সাত মাস৷ ফলে, আগামী নির্বাচনে পাঁচ শতাংশ ভোট পেয়ে জার্মান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগে যাওয়াটাও তাদের জন্য কঠিন হতে পারে৷

এমনকি, দলটি যদি পাঁচ শতাংশ ভোটের সীমা অতিক্রম করতেও পারে সরকার গঠনে সিডিইউ/সিএসইউ-এর একক সহযোগী হওয়াটা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়৷ কারণ, দুটি দলের মোট ভোট পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে৷

বাঁচো এবং বাঁচতে দাও?

করের বোঝা কমানো এফডিপির শীর্ষ এজেন্ডার একটি৷ জনজীবনে অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ করতে চায় না দলটি৷ মোটা দাগে বলতে গেলে, দলটি অনেক ইস্যুতে ‘বাঁচো এবং বাঁচতে দাও' পদ্ধতি গ্রহণ করে৷

২০২৫ সালের নির্বাচনে, দলটি তার ইশতেহারে থিম হিসাবে বলে হয়েছে, ‘‘সবকিছুই পরিবর্তনযোগ্য''৷

৫১ পৃষ্ঠার ইশতেহারের শুরুতে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা সবাই এটি বুঝতে পারি: কোনো কিছুই আগের মতো থাকতে পারে না৷''

ইশতেহারের প্রথম অনুচ্ছেদের মাঝামাঝিতে বলা হয়েছে, দেশের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের সুফলের মধ্যে রয়েছে ‘‘অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে সাফল্য পাচ্ছে জার্মানি৷'' শুরুতে অভিবাসন ইস্যুকে সামনে আনার মধ্য দিয়ে মধ্যপন্থি দাবি করা দলটির ডানদিকে ঝুঁকে পড়ার ইঙ্গিত দেয়৷ সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় সব দলের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা গেছে৷

জার্মানিতে রাজনৈতিক দলগুলির অর্থের উৎস কী?

01:26

This browser does not support the video element.

শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান

ইশতেহারে প্রথম যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, তা হলো শিক্ষা৷ তারা ‘নাগরিকদের জন্য বিশ্বের সেরা শিক্ষা' নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷

অভিবাসী শিশুদের জার্মান ভাষায় স্কুলে পড়াশোনা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত সহায়তা দিতে চায় দলটি৷ দক্ষ কর্মীদের বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া ডিগ্রির স্বীকৃতির প্রক্রিয়াটিও সহজতর করার কথা জানানো হয়েছে৷

গবেষণা করতে আসা উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন অভিবাসীদের কাছে জার্মানিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে চায় এফডিপি৷ উদ্ভাবনের জন্য জার্মানিকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গন্তব্যে পরিণত করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে তারা৷

ফ্রি লিবারেলরা শিক্ষা অনুচ্ছেদে বিদেশিদের ভূমিকার কথা বেশ কয়েকবার উল্লেখ করেছে৷ কিন্তু জার্মানিতে কাজ করতে আসা অভিবাসীদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা এবং বেশিসংখ্যক অভিবাসী কর্মীদের আকৃষ্ট করতে কোনো বাস্তব নীতিমালা প্রস্তাব করেনি৷

‘‘আমাদের দেশের শ্রমবাজারে অভিবাসন জরুরি প্রয়োজনীয়'' বলে ইশতেহারে উল্লেখ করেছে এফডিপি৷ কিন্তু কর্মসংস্থান বিষয়ক প্রস্তাবনায় দেখা গেছে কর কমানো, পাবলিক পেনশন তহবিলের বেসরকারিকরণ, উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা, অর্থনীতি সংস্কার এবং নিয়ম-কানুন সহজ করার দিকে দলটি মনোযোগ দিয়েছে বেশি৷

এফডিপির তুলনায় অন্য রাজনৈতিক দলগুলো আরো পরিষ্কারভাবে জার্মানিকে দক্ষ অভিবাসী কর্মীদের কাছে আকর্ষণীয় করার দিকটিতে গুরুত্ব দিয়েছে৷

অভিবাসনের মাধ্যমে শ্রম ঘাটতি মোকাবিলার প্রসঙ্গে এফডিপি ইশতেহারে জানিয়েছে, এ সংক্রান্ত আইন সহজীকরণ, আর্থিক প্রণোদনা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা হবে৷

তবে, ইশতেহারে দলটি আরো প্রস্তাব করেছে, সব আশ্রয়প্রার্থীর শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ থাকা উচিত৷ কিন্তু বর্তমান নিয়মে, সুরক্ষা মর্যাদার ভিত্তিতে এই সুযোগটি দেয়া হয়৷

আগমন সীমিত করার নতুন কৌশল

অনিয়মিত অভিবাসী এবং আশ্রয় ইস্যুতে দলটি বলছে, ‘‘আশ্রয়প্রার্থীরা যদি নিরাপদ থাকেন এবং আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই নিশ্চিত করা যায়, তবে তৃতীয় দেশগুলোতেও আশ্রয় প্রক্রিয়া করা উচিত৷''

এমনকি, অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধে জার্মান সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে আলোচিত পাইলট প্রকল্পেও সমর্থন জানিয়েছে দলটি৷

দলটি বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অভিবাসন চুক্তিগুলোর সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থীদের মূল দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে, যাতে তারা অভিবাসীদের ফিরিয়ে নেয়৷ প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে দ্বিপাক্ষিক অভিবাসন চুক্তির দিকেও বিশেষ নজর দেয়ার পক্ষে এফডিপি৷

যারা পূর্ণ সুরক্ষা নয় বরং সহায়ক সুরক্ষা পেয়েছেন, তাদের পারবিরাকি পুনর্মিলন স্থগিত করার পক্ষেও নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে দলটি৷

যারা থাকবেন, যাদের যেতে হবে

যারা দক্ষকর্মী হিসাবে জার্মানিতে আসেন, আর যারা সুরক্ষার জন্য আসেন, তাদের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য রাখতে চায় মুক্ত উদারপন্থিরা৷ দলটি বলেছে, তারা অভিবাসন পদ্ধতির আধুনিকীকরণ করতে চায়৷ বেশ জোর দিয়ে তারা জানিয়েছে, অনিয়মিত অভিবাসীদের কারণে চাপের মুখে রয়েছে জার্মান আশ্রয় ব্যবস্থা৷ বিশেষ করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলোকে এই চাপ সইতে হচ্ছে বেশি৷ এ কারণে সমাজে অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রক্রিয়াও ব্যহত হচ্ছে৷

ইশতেহারে বলা হয়েছে, ‘‘অভিবাসনের ক্ষেত্রে দ্রুত পদ্ধতি এবং স্পষ্ট সিদ্ধান্ত প্রয়োজন৷ আমরা একটি নতুন অভিবাসন নীতি চাই, যা আরো নিয়ন্ত্রিত এবং সুশৃঙ্খল৷ যারা এখানে কাজ করেন এবং আমাদের মূল্যবোধ অনুসারে জীবনযাপন করেন তাদের জন্য এটি সহজ হওয়া উচিত৷ আর যারা আমাদের সামাজিক সুরক্ষাকে বিপন্ন করতে চায়, তাদের জন্য এটি আরো কঠিন হবে৷''

এতে আরো বলা হয়েছে, ‘‘আমরা শ্রমবাজারে অভিবাসন চাই, সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় নয়৷ বাস্তবতার নিরিখেই আমরা আমাদের মানবিক দায়িত্ব পালন করতে চাই৷ অভিবাসনের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা কেবল টেকসই অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমেই সম্ভব৷''

দলটি আরো জানিয়েছে, সমাজে অন্তর্ভুক্তিতে সফল ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব দিতে আপত্তি নেই তাদের৷ তবে,  নাগরিকত্ব অর্জন করতে হলে অবশ্যই জীবিকার সংস্থান থাকতে হবে৷

জার্মানিতে নির্বাচন: ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস বনাম ওলাফ শলৎস

01:43

This browser does not support the video element.

অসহিষ্ণুতায় নেই সহনশীলতা

বিদেশি হস্তক্ষেপের প্রতি তাদের শূন্য-সহনশীল দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে এফডিপি৷ তারা জানিয়েছে, ‘‘আমরা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই করব৷'' বিদেশিদের মাধ্যেম সংগঠিত বা আমদানি করা অপরাধ বরদাস্ত করবে না তারা৷ অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও গুরুত্ব দিয়েছে মুক্ত উদারপন্থি রাজনৈতিক দলটি৷

অভিবাসন ইস্যুতে দলটি বলেছে, অপরাধে জড়িত বা সমাজের জন্য বিপজ্জনক ব্যক্তিদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে৷

সমাজে ইসলাম চর্চা

সব বিষয়ে উদার দৃষ্টিভঙ্গির অংশ হিসাবে ধর্মীয় স্বাধীনতাতেও বিশ্বাস করে এফডিপি৷ তারা জোর দিয়ে বলেছে, ‘‘ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে বিশ্বাসের সমতা এবং বৈচিত্র্য, মৌলিক অধিকার এবং ধর্মানুসারীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের নীতিকে স্বীকৃতি দেয়া হবে৷''

ইসলাম প্রসঙ্গে দলটির ভাষ্য হলো, ‘‘আমরা ইসলামি সম্প্রদায়গুলোর সমালোচনার স্বাধীনতা চাই৷ আমাদের স্পষ্ট করতে হবে কোন চর্চা জার্মান রাষ্ট্রের অংশীদার হতে পারে এবং কোনটি হতে পারে না৷ যারা ইহুদি-বিদ্বেষের নিন্দা করে না, তারা এই দেশে ধর্মীয় নীতিতে অংশীদার হতে পারে না৷''

দলটি আরো বলেছে, ‘‘জার্মান সমাজে মুসলিম উগ্রপন্থিরা সামাজিক বিভাজন, সহিংসতা এবং সন্ত্রাসবাদ পরিচালনা করছে৷ বিশেষ করে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইসলামপন্থি উগ্রতা বেড়েছে৷ ফৌজদারি আইনের পাশাপাশি, অভিবাসন আইনের অধীনে এ সবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত৷''

জের্টান জ্যান্ডারসন/টিএম

প্রথম প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ইনফোমাইগ্রেন্টস

অভিবাসী বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টস তিনটি প্রধান ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমের নেতৃত্বে একটি যৌথ প্লাটফর্ম৷ প্লাটফর্মটিতে রয়েছে জার্মানির আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে, ফ্রান্স মিডিয়া মোন্দ, এবং ইটালিয়ান সংবাদ সংস্থা আনসা৷ এই প্রকল্পের সহ-অর্থায়নে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ