1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মান নির্বাচন: ইশতেহারে অভিবাসন নিয়ে কী বলছে এএফডি?

১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনকে সামনে রেখে জার্মানির রাজনৈতিক দলগুলো এরইমধ্যে নিজেদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে৷

আলিস ভাইডেল
এএফডি নেত্রী আলিস ভাইডেলছবি: Ebrahim Noroozi/AP/picture alliance

চলতি বছরের নির্বাচনে অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ জার্মানির কট্টর ডানপন্থি দল এএফডি নিজেদের ইশতেহারে অভিবাসন বিষয়ে কী বলছে তার বিশ্লেষণ রইল প্রতিবেদনে৷

১১ ও ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দলের সম্মেলনে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছে কট্টর ডানপন্থি রাজনৈতিক দল এএফডি৷ আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে চ্যান্সেলর হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন৷

নির্বাচনের আগে করা জনমত জরিপে দেখা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এএফডি৷

নিজেদের ইশতেহারে রাজনীতি, অর্থনীতি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নানা বিষয়েই কথা বলেছে দলটি৷ তবে অভিবাসন নিয়ে দলটির অবস্থান অন্য দলগুলোর চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন৷

দলটি বলছে, ‘‘জার্মানির নাগরিকত্ব কাউকে উপহার হিসেবে দেওয়া উচিত নয়৷’’ ১৯৯০ সালের আগের জার্মান জাতীয়তার ধারায় ফিরে যেতে চায় এএফডি৷ সেসময় জার্মান নাগরিকত্ব পেতে কোনো শিশুর বাবা কিংবা মা কোনো একজনের জার্মান নাগরিক হওয়া বাধ্যতামূলক ছিল৷

জার্মানিকে ‘আশ্রয়ের স্বর্গ' হতে দেওয়া হবে না

জার্মানিতে আশ্রয় পাওয়ার যেই ব্যবস্থা তা কঠোর করতে চায় দলটি৷ দলটি মনে করে, আশ্রয়প্রার্থীদের যে সুযোগসুবিধা দেওয়া হচ্ছে তা অনেক বেশি এবং এর ফলে জার্মান অর্থনীতিতে চাপ পড়ছে৷

এএফডির দাবি, আশ্রয় প্রদান করতে গিয়ে জার্মানি কোটি কোটি ডলার খরচ করছে৷ এক্ষেত্রে দলটি আশ্রয়আবেদন যাচাইবাছাই এবং সাবসিডিয়ারি সুরক্ষায় আশ্রয়ের আবেদন জার্মানির বাইরে অন্য কোনো দেশ থেকে করতে চায়৷

ঝুঁকিতে থাকা আফগানদের জন্য প্রদেয় ফেডারেল অ্যাডমিশন প্রোগ্রাম বাতিল করতে চায় তারা৷

ভূমধ্যসাগরে বেসরকারি সংস্থার জাহাজগুলোর উদ্ধারকাজ বন্ধ করতে চায় এএফডি এবং এর পরিবর্তে উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর সাথে চুক্তি করে সাগরপথে অভিবাসীদের আগমন থামানোর ইচ্ছা তাদের৷ উল্লেখ্য, ভূমধ্যসাগরে নিয়োজিত উদ্ধারকারী জাহাজের অনেকগুলোই জার্মানির বেসরকারি খাতের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে৷

আশ্রয়প্রার্থী ও শরণার্থী

আশ্রয়প্রদান এবং শরণার্থীদের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে দলটি৷

এএফডি বলছে, আশ্রয় চাওয়া ব্যক্তির আবেদনের সাথে তার পরিচয়পত্র ও জাতীয়তার সনদ প্রদান করতে পারলেই আবেদন গ্রহণ করা হবে৷ আবেদনের সময়ে মিথ্যা তথ্য প্রদান করলে প্রার্থী আশ্রয় পাওয়ার অধিকার হারাবে৷

সাবসিডিয়ারি প্রোটেকশন বা অস্থায়ী সুরক্ষার আওতায় থাকা ব্যক্তিদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাওয়া পারিবারিক পুনর্মিলনের অধিকার বাতিল করা হবে৷

শরণার্থীর মর্যাদা পাওয়া ব্যক্তিরা শুধুমাত্র ১০ বছর পর স্থায়ী বসবাসের অনুমতির আবেদন করতে পারবেন৷ প্রতিবছর যাচাইবাছাই করে দেখা হবে, তাদেরকে আশ্রয়ের সুবিধা প্রদান চালিয়ে যাওয়া উচিত কি না৷

আশ্রয়ের জন্য আবেদন করা ব্যক্তিদের একটি বিশেষ কেন্দ্রে রাখা হবে৷ আশ্রয় আবেদন যাচাইবাছাইয়ের সময়ে তাদেরকে এই কেন্দ্রে অবস্থান করতে হবে৷

প্রত্যাবাসন

প্রত্যাবাসন বিষয়ে নতুন এক পদ্ধতি চালু করতে চায় এএফডি৷ প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের উল্লেখ করেছে দলটি৷ এর একটি হলো, আশ্রয় চাওয়া ব্যক্তিদেরকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো৷ আর দ্বিতীয়টি হলো, ডাবলিন নীতি অনুযায়ী, আশ্রয় আবেদনকারী ব্যক্তি প্রথমে ইউরোপের যেই দেশে প্রবেশ করেছিল সেই দেশে ফেরত পাঠানো৷

টেলিভিশন বিতর্কে জার্মানির দুই চ্যান্সেলর প্রার্থী

02:44

This browser does not support the video element.

এএফডি বলছে, ইউরোপের বাইরের যে দেশগুলো তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে আগ্রহী নয় তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করা হবে৷ এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা কিংবা ওই দেশের সাথে চলমান উন্নয়ন প্রকল্প কিংবা ভিসা নীতি থামিয়ে দেওয়া৷

অপরাধের সাথে যুক্ত হলে কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে তাৎক্ষণিকভাবে ওই ব্যক্তিকে তৃতীয় কোনো দেশে বা নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে৷

আশ্রয় প্রদানের ক্ষেত্রে চার্চের নীতিমালা বাতিল করা হবে এবং সরকার ও চার্চের সাথে হওয়া এই বিষয়ক চুক্তি বাতিল করা হবে৷

সিরীয়দের নিয়ে ভাবনা

জার্মানির ম্যুনস্টারের প্রশাসনিক আদালতের একটি রেফারেন্স উল্লেখ করে দলটি বলছে, গৃহযুদ্ধের কারণে সিরিয়া আর ঝুঁকিপূর্ণ দেশ নয়৷ জার্মানিতে আশ্রয় নেওয়া সিরীয়দের বিষয়ে দলটি যেই পদক্ষেপ নিতে চায় তা হলো:

অপরাধের সাথে যুক্ত কিংবা ঝুকিপূর্ণ প্রতীয়মান সকল সিরীয় নাগরিকের সুযোগসুবিধা বাতিল করা৷

সাবসিডিয়ারি সুরক্ষার আওতায় থাকা ব্যক্তিদের সুরক্ষা সুবিধা নবায়নের সুযোগ না দেওয়া৷

সিরীয়দের নিজ দেশে ফেরত নেওয়ার সর্বোৎকৃষ্ট পথ বের করতে সিরিয়ার প্রশাসনের সাথে আলোচনা করা৷

সিরীয়দের নিজ দেশে ফেরত যেতে উৎসাহিত করতে ব্যাপক আকারে বিজ্ঞাপনী ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা৷

কল্যাণ সুবিধা

শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদেরর কল্যাণসুবিধার বিষয়েও প্রস্তাবনা দিয়েছে দলটি৷ এরমধ্যে রয়েছে:

বিদেশি নাগরিকদের এক বছরের বেশি সময়ের জন্য সমাজকল্যাণ সুবিধা প্রদান না করা৷ এবং পাঁচ বছর জার্মানিতে অবস্থান করার পর বিদেশিদের ওই সুবিধা পাওয়ার সুযোগ দেওয়া৷

ইউক্রেনের আশ্রয়প্রার্থীদেরকে জার্মানদের সমান সুযোগ না দিয়ে আশ্রয়প্রার্থীদের মতো সুবিধা দেওয়া৷ তাদেরকে কাজে যোগদানে উৎসাহিত করা৷

স্বাস্থ্যসেবা খাতে কর্মরত বিদেশিদের জার্মান ভাষায় দক্ষতা বাড়ানো৷ জার্মানদের জন্য সংরক্ষিত স্বাস্থ্যখাতের পড়াশোনার সুযোগ তৈরি করা৷

দেশত্যাগের আদেশ পাওয়া ব্যক্তিদের সুবিধা ন্যূনতম অবস্থায় নামিয়ে আনা৷

কোনো আশ্রয়প্রার্থী চাকরির অফার প্রত্যাখ্যান করলে তার সামাজিক সুবিধা কমিয়ে দেওয়া৷

অভিবাসনকে ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনা

কট্টর ডানপন্থি এই দলটি মনে করে, বর্তমান জার্মান অভিবাসন নীতির কারণে ‘অনিয়ন্ত্রিতভাবে জনসংখ্যা বাড়ছে, সরকারি টাকার খরচ বাড়ছে, মারাত্মকভাবে অপরাধ বেড়েছে এবং সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা ও দেশের আবাসন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে'৷

এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে অভিবাসনকে ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনতে চায় দলটি৷

তাছাড়া, গত কয়েক বছরে প্রণীত অভিবাসন বিষয়ক যেসকল আইন ‘জার্মান স্বার্থের' অনুকূলে নয় তার পরিবর্তন করার প্রতিজ্ঞা দলটির৷ জার্মানিতে থাকার যার অধিকার নেই তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়৷

সীমান্তে অনিয়মিত অভিবাসীদের পুশব্যাক করার চিন্তা দলটির৷ এর ফলে ক্রসবর্ডার অপরাধ কমে আসবে বলে মনে করছে এএফডি৷

কাজের সুযোগ

তবে জার্মানিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে দক্ষ শ্রমিকদের কাজ করার সুযোগ দিতে চায় এএফডি৷ এক্ষেত্রে দক্ষ পেশাধারী, স্বাস্থ্যকর্মী, বিজ্ঞান ও আইটি এসব খাতের কর্মীদের স্বাগত জানানো হবে৷

দলটির ইশতেহার বলছে, যে-কোনো বিদেশি শ্রমিককে কঠোর নিয়মের মাধ্যমে যোগদানের সুযোগ দেওয়া হবে৷ ইউরোপেরদক্ষ শ্রমিকদের জার্মানিতে কাজের সুযোগ দিতে চায় এএফডি৷ তবে ইউরোপের বাইরের দেশের শ্রমিকদের বেলায় তারা একটি মানদণ্ড যেমন জার্মান ভাষার দক্ষতা ইত্যাদি তৈরি করতে চায়৷ এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু খাতে তারা কাজ করতে পারবেন৷ এমনকি এক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতিও চালু করা হতে পারে৷

গণিত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতের দক্ষ কর্মীদের জন্য ইইউ ব্লু কার্ড চালুর প্রস্তাব করেছে এএফডি৷

অবসরকালীন ভাতা, সামাজিক সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও অভিবাসীদের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছে দলটি৷ এএফডি বলছে, দক্ষ অভিবাসনের বিষয়টি সীমিত করতে চায় দলটি, যেন চাকরির শেষে তারা জার্মান সামাজিক সুরক্ষা সুবিধার ভোগী হতে না পারেন৷

জের্টান জেন্ডানসন/আরআর

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ