জার্মান নির্বাচন: উন্নত ভবিষ্যতের আশা আফ্রিকান-জার্মানদের
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
জার্মান নির্বাচনের কয়েকদিন আগে পূর্ব জার্মানির মাগডেবুর্গ শহরে ক্রিসমাস মার্কেটে ভিড়ের মধ্যে গাড়ি চালিয়ে দেন সৌদি বংশোদ্ভূত এক শরণার্থী। গাড়ি হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত এবং তিন শতাধির আহত হন।
ঘটনাস্থলে হতাহতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এখনও ছোট ছোট মোমবাতি জ্বলছে। জার্মান শব্দ "ওয়ারাম?" - বা কেন - লেখা একটি কাগজের টুকরো এখনও দৃশ্যমান।
ডিডাব্লিউকে এক তরুণ মুসলিম ভোটার বলেন, "বর্ণবাদ আগে শুধু একটা ইস্যু ছিল। কিন্তু হামলার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গেছে। এটি খুবই বেদনাদায়ক।" আসন্ন নির্বাচন পরিস্থিতি আরো কঠিন করে তুলেছে।
তিনি বলেন, "মাগডেবুর্গের পরিবেশ বদলে গেছে। ঘৃণার পরিবেশ তৈরি হয়েছে।"
নির্বাচনের আগে উত্তেজনার পারদ চড়ছে
রোববারের নির্বাচনে আগ্রহের মূল বিষয়গুলো হচ্ছে অভিবাসন, নিরাপত্তা এবং অর্থনীতি। এআরডি-ডয়েচলান্ডট্রেন্ড এপ জরিপ অনুসারে, প্রতি তিনজন জার্মান ভোটারের মধ্যে একজন এখনও সিদ্ধান্তহীন। মাগডেবুর্গের রাস্তাগুলো উজ্জ্বল এবং আরও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দেয়া পোস্টারে ছেয়ে গেছে।
আইভরি কোস্ট থেকে আসা আমিদু ট্রোরে ১৯৯৪ সাল থেকে মাগডেবুর্গে বাস করছেন। তিনি ক্যাথলিক ত্রাণ ও উন্নয়ন সংস্থা কারিটাসের হয়ে কাজ করেন। সংস্থাটি অভিবাসীদেরও সহায়তা করে। হামলার পর থেকে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
ডিডাব্লিউকে ট্রোরে বলেন, "মানুষ যখন নিজের দেশে ভালো থাকে না তখন তারা সবসময়ই এর জন্য অন্য কাউকে দোষারোপ করার চেষ্টা করে।" ভবিষ্যৎ জার্মান সরকারকে দেশটিতে বাস করা প্রতিটি মানুষের কণ্ঠস্বর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সমাধানের অংশ হিসাবে ভোটারদেরও দায়িত্ব রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। ভোটারদনের তিনি বলেন, "সমাজে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় গুরুত্ব দিন এবং যদি নাগরিকত্ব থাকে, তাহলে ভোট দিন!"
আমিদু ট্রোরে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি - এসপিডি এর সদস্য। তিনি মনে করেন, নির্বাচনের পর অভিবাসীদের পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
'রাজনীতিতে আর সততা নেই'
বার্লিনে আফ্রিকা কাউন্সিলের প্রতিনিধি প্রধান আকিনোলা ফ্যামসন ৩০ বছর ধরে জার্মানিতে বসবাস করছেন। তখন থেকে তিনি যা দেখে আসছেন, তাতে তিনি হতবাক।
ফ্যামসন ডিডাব্লিউকে বলেন, "এই দেশ সম্পর্কে আমি একটি জিনিস পছন্দ করি তা হল খ্রিস্টধর্মের উপর ভিত্তি করে মূল্যবোধ ব্যবস্থা। কিন্তু সেই মূল্যবোধগুলোকে আর সম্মান করা হচ্ছে না। রাজনীতিতে আর সততা নেই। কেউ সাহায্য করতে প্রস্তুত নয়। এখন নীতি হল, আসুন দর কষাকষি করি: আমি যদি আপনাকে সহায়তা করি তবে আমি কী পাব?"
তবে তিনি আশাবাদী যে ক্ষমতায় আসা ব্যক্তিরা বিভিন্ন পটভূমির মানুষের সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাসের গুরুত্ব বুঝতে পারবেন। ফ্যামসন বলেন, "পরবর্তী সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন, এখানে আমাদের উপস্থিতি স্বীকার করা। আমাদের যে সম্পদ আছে তা কাজে লাগান, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার জন্য আমাদের সুযোগ দিন।"
কট্টর ডানপন্থি এএফডি সম্পর্কে ভাবনা
স্ট্রিট শেফার্ড আফ্রিকার এনজিও পরিচালক জোসেফ সেনাইস নির্বাচন নিয়ে উগ্বিগ্ন। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "এটি জার্মান ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলোর একটি, বিশেষ করে উগ্র ডানপন্থিদের উত্থান এবং জার্মানি ও ইউরোপ যে সমস্যার মুখোমুখি সে কারণে।"
উগ্র ডানপন্থি পপুলিস্ট দল জার্মানির জন্য বিকল্প বা অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচলান্ড - এএফডি তার প্রধান উদ্বেগের কারণ।
তিনি বলেন, "এএফডি এর মূল সমস্যা দলটির নেতারা নন, বরং তারা মানুষের মধ্যে কী বার্তা দেন, সেটি নিয়ে আমি চিন্তিত। আর সেটি হচ্ছে আতঙ্ক।" সেনাইস বলেন, এএফডি কারো জন্যই কিছু করার কথা বলে না, "জার্মানদের জন্য নয়, ইউরোপের জন্য নয়, কারও জন্য নয়।"
ঘানার বংশোদ্ভূত জোসেফাইন-রেনি (ছদ্মনাম) একজন জার্মান ভোটার। তিনি বিশ্বাস করেন, এএফডি এর মতো দল জার্মানিতে পরিবর্তন আনতে পারে। গত কয়েক বছরে জার্মানির উন্নয়ন দেখে হতাশ এই তরুণী।
ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, "অনেক উদারপন্থি দল কাজ শেষ করার, পরিবর্তন আনার এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছে। তারা তা করতে পারেনি। যদি তারা যা করার কথা তা না করে, তাহলে তাদের বের করে দাও।" দ্য নিউ ইভ ব্লগের মালিক জোসেফাইন-রেনি বলেন, তিনি প্রকৃত পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত এবং তার রক্ষণশীল রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য যারা তাকে সমালোচনা করছেন তাদের মুখোমুখি হতেও প্রস্তুত।
সিলিয়া ফ্র্যোলিশ/এডিকে