ইউরো এলাকার সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তির দেশ জার্মানিতে আগামী ২২শে সেপ্টেম্বর সাধারণ নির্বাচন৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেল আবার ক্ষমতায় ফিরবে কিনা, গোটা ইউরো এলাকা তা জানার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির আসন্ন সাধারণ নির্বাচনেও ইউরো এলাকার সংকট অন্যতম বিষয় হয়ে উঠেছে৷ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল কড়া হাতে সংকটগ্রস্ত দেশগুলিকে ব্যয় সংকোচ ও সংস্কার চালাতে বাধ্য করে অনেকের সমালোচনার মুখে পড়েছেন৷ দেশের ভোটারদের কাছে তিনি এই নীতির সাফল্য তুলে ধরার চেষ্টা করছেন৷ তাঁর মতে, এর ফলে এই সব দেশের দুর্বল অর্থনৈতিক কাঠামোর স্থায়ী উন্নতি হবে৷
সকল দলের শীর্ষ প্রার্থীরা
জার্মানির সংসদীয় নির্বাচনের আর বেশি বাকি নেই৷ ফলে বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা এখন শুধু তাদের ভালো দিকটাই সবাইকে দেখানোর চেষ্টা করছেন৷ তবে প্রার্থীদের কিছু অজানা দিকও রয়েছে৷
ছবি: DW
চ্যান্সেলর কে হবেন?
জার্মানির সবচেয়ে বড় দল দুটি হচ্ছে খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী (সিডিইউ) এবং সামাজিক গণতন্ত্রী (এসপিডি)৷ স্বাভাবিকভাবেই সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে এই দু’টি দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী থেকে কোনো একজন চ্যান্সেলর হবেন ধরে নেয়া যায়৷ তাসত্ত্বেও এই পদে অন্যান্য বড় দলগুলোরও প্রার্থী রয়েছে৷ চলুন চ্যান্সেলর প্রার্থীদের জানা-অজানা দিকগুলো জেনে নেয়া যাক৷
ছবি: DW
ক্ষমতার উচ্চশিখরে
৫৯ বছর বয়সি আঙ্গেলা ম্যার্কেল গত আট বছর ধরে জার্মানি শাসন করছেন৷ পূর্ব জার্মানির অন্যতম এক গণতান্ত্রিক দলে ১৯৮৯ সালে তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়৷ এরপর তিনি রক্ষণশীল দল সিডিইউ-তে যোগ দেন৷ চ্যান্সেলর হিসেবে ম্যার্কেল তরুণ জার্মানদের বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা বাতিল করেছেন এবং পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনের ইতি টানার ব্যবস্থা করেছেন৷
ছবি: Johannes Eisele/AFP/Getty Images
ভ্রমণ, রান্না, শাসন
ম্যার্কেলকে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান ক্ষমতাধর নারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ এই নারী প্রকৃতি ভালোবাসেন৷ তাঁর প্রিয় দু’টি শখ হচ্ছে স্বামীর সঙ্গে গ্রামের পথ ধরে হাঁটা এবং রান্না করা৷ ম্যার্কেল বড় হয়েছেন সাবেক পূর্ব জার্মানিতে৷ পদার্থ বিদ্যায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সত্যিকার অর্থেই কঠিন প্রার্থী...
৬৬ বছর বয়সি পেয়ার স্টাইনব্রুক চলতি নির্বাচনে এসপিডি-র চ্যান্সেলর প্রার্থী৷ ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি ম্যার্কেলের অধীনে অর্থমন্ত্রী ছিলেন৷ স্টাইনব্রুক ভবিষ্যতে আর কখনো ম্যার্কেলের অধীনে কাজ না করার ঘোষণা দিয়েছেন৷ এই অর্থনীতিবিদ নির্বাচনি প্রচারে জার্মানিতে একটি ন্যূনতম মজুরি কাঠামো এবং বাড়ি ভাড়া নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট নীতির কথা বলেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
...কৌশলের দিকে গুরুত্ব
মাত্র ছয় বছর বয়স থেকে দাবা খেলছেন পেয়ার স্টাইনব্রুক৷ কোনো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও একটি দাবা কম্পিউটারকে হারানোর চেষ্টা করছেন তিনি৷ এই এসপিডি প্রার্থী একসময় বলেছিলেন, দাবা হচ্ছে এমন এক খেলা যেখানে একজন ব্যক্তি সবসময় প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ভালো করার চেষ্টা করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
একটি অসম যৌথ নেতৃত্ব
সবুজ দলের দুই প্রার্থী কার্যত সবাইকে প্রতিনিধিত্ব করছেন৷ ৪৭ বছর বয়সি কাটরিন গ্যোরিং-একার্ট মধ্যবিত্ত আর ৫৯ বছর বয়সি ইয়ুর্গেন ট্রিটিন দলের বামপন্থীদের প্রতিনিধি৷ কাটরিন এসেছেন পূর্ব জার্মানি থেকে ইয়ুর্গেন পশ্চিম জার্মানির৷ উভয়েই জার্মানির উচ্চবেতনধারীদের উপর উচ্চকর আরোপের পক্ষে এবং দু’জনই ‘জেনারেল মেম্বারশিপ’ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন – জার্মানিতে প্রথমবারের মতো এটা ঘটেছে৷
ছবি: Reuters
বাইরে সরব, বাড়িতে নিরব
সবুজ দলের শীর্ষ প্রার্থী ইয়ুর্গেন ট্রিটিন বেশ স্থির স্বভাবের মানুষ৷ এমনকি সম্প্রতি এক নৌকা দুর্ঘটনায় ডুবে যাওয়ার শঙ্কায় থাকলেও তিনি খুব একটা উদ্বিগ্ন হননি৷ সাবেক এই পরিবেশমন্ত্রী কোনো রকম বাড়তি নিরাপত্তা ছাড়াই মিছিলে সামিল হয়ে পরিবেশ বাঁচাতে এবং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পছন্দ করেন৷ এই সমাজবিজ্ঞানী বাড়িতে অবশ্য নিরব থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সবুজ নর্তকী
অন্যদিকে কাটরিন গ্যোরিং-একার্ট নাচ শিখেছেন বাবার কাছ থেকে৷ বাবার নাচের স্কুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়ও অংশ নিয়েছেন৷ আর তখন থেকেই বড় আয়োজনে সাবলিলভাবেই অংশ নেন তিনি৷ ব্যক্তিজীবনে দুই সন্তানের জননী ক্যাথরিন৷
ছবি: Getty Images
ব্যবসা, অর্থনীতি, ব্রুডারলে
মুক্তগণতন্ত্রী দলের (এফডিপি) শীর্ষপ্রার্থী রাইনার ব্রুডারলের বয়স এখন ৬৮৷ তিনি পুরোপুরি ব্যবসামনষ্ক রাজনীতিবিদ৷ অর্থমন্ত্রী হিসেবে কেরিয়ার শুরুর পর থেকে তাঁর কাজে অর্থনীতিই প্রাধান্য পাচ্ছে৷ রাজ্য নির্বাচনগুলাতে এফডিপির শোচনীয় হারের পর দলের সব পদ থেকে পদত্যাগ করেন ব্রুডারলে৷ বর্তমানে তিনি জার্মান সংসদের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগে দলের নেতা হিসেবে রয়েছেন৷
ছবি: Getty Images
ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা নয়...
জুন মাসের মাঝামাঝি সময় এক দুর্ঘটনায় ব্রুডারলের এক পা এবং এক হাত ভেঙে যায়৷ নির্বাচনের প্রাক্কালে এই দুর্ঘটনা তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছিল, দ্রুত সেরে উঠতে চেয়েছিলেন তিনি৷ সপ্তাহখানেক পুর্নবাসন কেন্দ্রে কাটিয়ে দ্রুত ফিরেছেনও ব্রুডারলে৷ এই তেজস্বী রাজনীতিবিদ তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ব্যক্তিগত রাখতেই পছন্দ করেন৷ যতটুকু সবাই জানে তাহচ্ছে তিনি বিবাহিত, ইভানগেলিকাল এবং মাইনৎসের বাসিন্দা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাম এবং আরো বামপন্থী
বাম দলের উপ-প্রধান সারা ভাগেনক্নেষ্ট (৪৪) এবং প্রধান গ্রেগর গিসি (৬৫) একে অপরকে বিশেষ পছন্দ করেন না৷ একসঙ্গে কাজ করাও কোনো আগ্রহ তাঁদের মধ্যে নেই৷ তাসত্ত্বেও দু’জনই দলের পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন৷ এই দু’জনকে ঝগড়া থেকে দূরে রাখতে দলের অপর ছয় প্রার্থী চেষ্টা করছেন৷
ছবি: dapd
বামপন্থীর ব্যক্তিজীবন
সারা ভাগেনক্নেষ্টকে নিঃসঙ্গ মনে করা হয়, তবে তিনি তাঁর ব্যক্তিজীবনের নানা দিক বাম দলের সাবেক চেয়ারম্যান অস্কার লাফনটেনের সঙ্গে শেয়ার করেন৷ নিজের একাকী জীবন প্রসঙ্গে সারার বক্তব্য হচ্ছে, ‘‘পড়ার এবং ভাবার জন্য আমার সময় এবং স্বাধীনতা প্রয়োজন৷’’ পিএইচডিধারী এই রাজনীতিবিদ আসলে শিক্ষাজীবনে বিজ্ঞানী হতে চেয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
একজন সুবক্তা
ছোটবেলায় সোভিয়েত চলচ্চিত্রের হাস্যরসাত্মক বিভিন্ন চরিত্রের প্রতি আসক্ত ছিলেন গ্রেগর গিসি৷ বর্তমানে তিনি থিয়েটার নিয়ে আলোচনা করতে, গদ্য পড়তে আর ক্ল্যাসিক মিউজিক শুনতে ভালোবাসেন৷ এই প্রশিক্ষিত আইনজীবী এখন খানিকটা সতর্ক জীবনযাপন করছেন৷ তাঁর হৃদযন্ত্রে সমস্যা ধরা পড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
13 ছবি1 | 13
প্রাথমিক সুফলের উদাহরণ দিতে গিয়ে ম্যার্কেল বলেন, ইটালি ও গ্রিসের পরিস্থিতি এখন আগের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে৷ এদিকে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী আন্টনিস সামারাস ইঙ্গিত দিয়েছেন, যে তাঁর দেশে চরম মন্দা ধীরে হলেও কেটে যাচ্ছে৷ মোটকথা গোটা ইউরোপ আগামী ২২শে সেপ্টেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে৷ জনমত সমীক্ষায় ম্যার্কেল এগিয়ে আছেন৷ প্রশ্ন হলো, তিনি আগামী সরকার গড়তে পারবেন কি না এবং সেই সরকারের মধ্যে তিনি তাঁর নিজের মত কতটা প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন৷ আরও শক্তিশালী হয়ে ক্ষমতায় ফিরলে ইউরো এলাকার ভবিষ্যতের উপর তাঁর প্রভাব আরও জোরদার হবে৷
এদিকে ধীরে হলেও ইউরো এলাকায় মন্দা কেটে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে৷ শিল্পোন্নত দেশগুলির সংগঠন ওইসিডি জানিয়েছে, সংকট কাটিয়ে ইউরোপ সহ ধনী দেশগুলি আবার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে এগোচ্ছে৷ কিন্তু ব্রাজিল ও ভারতের মতো দেশের প্রবৃদ্ধি কিছুটা থমকে গেছে৷ ফলে বিশ্ব অর্থনীতির সার্বিক চিত্র এখনো উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারছে না৷
শুধু অভ্যন্তরীণ প্রবণতা নয়, ইউরো এলাকার উপর প্রভাব ফেলছে অন্যান্য কিছু ঘটনাও৷ যেমন সিরিয়ার উপর হামলার আশঙ্কা কেটে যাওয়ায় সোমবার পেট্রোলিয়াম কোম্পানিগুলির শেয়ারের মূল্যও কিছুটা কমে যায়৷ ফলে ইউরোপের পুঁজিবাজারও কিছুটা ধাক্কা খেয়েছিল৷ তবে সিরিয়াকে ঘিরে অনিশ্চয়তা পুরোপুরি না কাটায় বাজারে অস্বস্তি রয়ে গেছে৷